চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Showing posts with label কবিতা: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়. Show all posts
Showing posts with label কবিতা: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়. Show all posts

Tuesday, December 29, 2020

 

কেউ কথা রাখেনি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---বন্দী জেগে আছো

 

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি

ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল

                      শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে

তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী 

   আর এলোনা পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।


মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর

                      তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো

                      সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে!

নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?  আমার মাথা এ ঘরের ছাদ 

               ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় 

                                 তিন প্রহরের বিল দেখাবে?


একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো

লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা

ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি

                                     ভিতরে রাস-উৎসব

অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা

                      কত রকম আমোদে হেসেছে

                      আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!

বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…

বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই

সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব

                                        আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!


বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,

যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে

                      সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!

ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি

দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়

বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম

তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ

                                         এখনো সে যে-কোনো নারী।

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!


Friday, July 24, 2020

দেখা হবে
             - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি

ভ্রূ-পল্লবে ডাক দিলে, দেখা হবে চন্দনের বনে-
সগন্ধের সঙ্গে পাবো, দ্বিপ্রহরে বিজন ছায়ায়
আহা, কি শীতল স্পর্শ হৃদয়-ললাটে, আহা, চন্দন চন্দন
দৃষ্টিতে কি শান্তি দিলে, চন্দন, চন্দন
আমি বসে থাকবো দীর্ঘ নিরালায়

প্রথম যৌবনে আমি অনেক ঘুরেছি অন্ধ, শিমূলে জরুলে
লক্ষ লক্ষ মহাদ্রুম, শিরা-উপশিরা নিয়ে জীবনের কত বিজ্ঞাপন
তবুও জীবন জ্বলে, সমস্ত অরণ্য-দেশ জ্বলে ওঠে অশোক আাগুনে
আমি চলে যাই দূরে, হরিণের ক্রস্ত পায়ে, বনে বনান্তরে,অন্বেষণ।

ভ্রু-পল্লবে ডাক দিলে .এতকাল ডাকো নি আমায়
কাঙালের মতো আমি এত একা, তোমায় কি মায়া হয়নি
শোনো নি আমার দীর্ঘশ্বাস?
হৃদয় উন্মুক্ত ছিল, তবুও হৃদয় ভরা এমন প্রবাস!

আমার দুঃখের দিনে বৃষ্টি এলো, তাই আমি আগুন জ্বেলেছি,
সে কি ভুল!
শুনিনি তোমার ডাক, তাই মেঘমন্দ্র স্বরে গর্জন করেছি, সে কি ভুল?
আমার অনেক ভুল, অরন্যের একাকীত্ব অসিরতা ভ্রাম্যমান ভুল!
এক মুহুর্তেই
সর্ব অঙ্গে শিহরণ, ক্ষণিক ললাট ছুঁয়ে উপহার দাও সেই
অলৌকিক ক্ষণ
তুমি কি অমূল-তরু, স্নিগ্ধজ্যোতি, চন্দন, চন্দন,
দৃষ্টিতে কি শান্তি দিলে চন্দন, চন্দন
আমার কুঠার দূরে ফেলে দেব, চলো যাই গভীর গভীরতম বনে।
নীরা তোমার কাছে
                                 - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি

সিঁড়ির মুখে কারা অমন শান্তভাবে কথা বললো?
বেরিয়ে গেল দরজা ভেজিয়ে, তবু তুমি দাঁড়িয়ে রইলে সিঁড়িতে
রেলিং-এ দুই হাত ও থুত্‌নি, তোমায় দেখে বলবে না কেউ থির বিজুরি
তোমার রঙ একটু ময়লা, পদ্মপাতার থেকে যেন একটু চুরি,
দাঁড়িয়ে রইলে
নীরা, তোমায় দেখে হঠাৎ নীরার কথা মনে পড়লো।

নীরা, তোমায় দেখি আমি সারা বছর মাত্র দুদিন
দোল ও সরস্বতী পূজোয়দুটোই খুব রঙের মধ্যে
রঙের মধ্যে ফুলের মধ্যে সারা বছর মাত্র দুদিন
ও দুটো দিন তুমি আলাদা, ও দুটো দিন তুমি যেন অন্য নীরা
বাকি তিনশো তেষট্টি বার তোমায় ঘিরে থাকে অন্য প্রহরীরা।
তুমি আমার মুখ দেখোনি একলা ঘরে, আমি আমার দস্যুতা
তোমার কাছে লুকিয়ে আছি, আমরা কেউ বুকের কাছে কখনো
কথা বলিনি পরস্পর, চোখের গন্ধে করিনি চোখ প্রদক্ষিণ
                                       আমি আমার দস্যুতা
তোমার কাছে লুকিয়ে আছি, নীরা তোমায় দেখা আমার মাত্র দুদিন।

নীরা, তোমায় দেখে হঠাৎ নীরার কথা মনে পড়লো।
আমি তোমায় লোভ করিনি, আমি তোমায় টান মারিনি সুতোয়
আমি তোমার মন্দিরের মতো শরীরে ঢুকিনি ছল ছুতোয়
রক্তমাখা হাতে তোমায় অবলীলায় নাশ করিনি;
দোল ও সরস্বতী পূজোয় তোমার সঙ্গে দেখা আমারসিঁড়ির কাছে
                                            আজকে এমন দাঁড়িয়ে রইলে
নীরা, তোমার কাছে আমি নীরার জন্য রয়ে গেলাম চিরঋণী।


প্রেমহীন
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি

শেষ ভালোবাসা দিয়েছি তোমার পূর্বের মহিলাকে
এখন হৃদয় শূন্য, যেমন রাত্রি রাজপথ
ঝকমক করে কঠিন সড়ক, আলোয় সাজানো, প্রত্যেক বাঁকে বাঁকে
প্রতীক্ষা আছে আঁধারে লুকানো তবু জানি চিরদিন
এ-পথ্‌ থাকবে এমনি সাজানো, কেউ আসবে না, জনহীন, প্রেমহীন
শেষ ভালোবাসা দিয়েছি তোমার পূর্বের মহিলাকে!

রূপ দেখে ভুলি কী রূপের বান, তোমার রূপের তুলনা
কে দেবে? এমন মূঢ় নেই কেউ, চক্ষু ফেরায়, চক্ষু ফেরাও
চোখে চোখে যদি বিদ্যুৎ জ্বলে কে বাঁচাবে তবে? এ হেন সাহস
নেই যে বলবো; যাও ফিরে যাও
প্রেমহীন আমি যাও ফিরে যাও
বটের ভীষণ শিকড়ের মতো শরীরের রস
নিতে লোভ হয়, শরীরে অমন সুষমা খুলো না
চক্ষু ফেরাও, চক্ষু ফেরাও!
টেবিলের পাশে হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়ালে তোমার
বুক দেখা যায়, বুকের মধ্যে বাসনার মতো
রৌদ্যের আভা, বুক জুড়ে শুধু ফুলসম্ভার,-
কপালের নিচে আমার দুচোখে রক্তের ক্ষত
রক্ত ছেটানো ফুল নিয়ে তুমি কোন্‌ দেবতার
পূজায় বসবে? চক্ষু ফেরাও, চক্ষু ফেরাও, শত্রু তোমার
সামনে দাঁড়িয়ে, ভূরু জল্লাদ, চক্ষু ফেরাও!
তোমার ও রূপ মূর্ছিত করে আমার বাসনা, তবু প্রেমহীন
মায়ায় তোমায় কাননের মতো সাজাবার সাধ, তবু প্রেমহীন
চোখে ও শরীরে এঁকে দিতে চাই নদী মেঘ বন, তবু প্রেমহীন
এক জীবনের ভালোবাসা আমি হারিয়ে ফেলেছি খুব অবেলায়
এখন হৃদয় শূন্য, যেমন রাত্রির রাজপথ।।

Wednesday, July 22, 2020

পেয়েছো কি?
                     - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---আমার স্বপ্ন

অপূর্ব নির্মাণ থেকে উঠে আসে
ভোরের কোকিল
কোকিল, তুমি কি পারো মুছে দিতে
সব কলরব?
হেলেঞ্চা লতায় কাঁপে
শিশিরের বিদায়ী শরীর
শিশির, না আমার শৈশব?
ভুলে যাওয়া ভালো, কিন্তু
কাঁটার মুকুট পরা মৃত্যু তো
সে নয়!

বৈশাখী আকাশ দেখে গাঢ় হয়
টিয়াঠুঁটি আম
সবই তো উচ্ছিষ্ট করে রেখে গেলে
পেয়েছো কি
যা ছিল পাওয়ার?
মধ্যজীবনের কাছে প্রশ্ন তোলে
স্থির মধ্যযাম।।
কেউ কথা রাখেনি
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---বন্দী জেগে আছো

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
                      শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী 
                                                    আর এলোনা
                      পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।

মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
                      তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
                      সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর 
                                                                  খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?  আমার মাথা এ ঘরের ছাদ 
               ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় 
                                 তিন প্রহরের বিল দেখাবে?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
                                     ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
                      কত রকম আমোদে হেসেছে
                      আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
                                        আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
                      সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
                                         এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!
স্বপ্নের কবিতা
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---মন ভালো নেই

আমি তো দাঁড়িয়েছিলাম পাশে, সামনে বিপুল জনস্রোত
হলুদ আলোর রাস্তা চলে গেছে অতিকায় সুবর্ণ শহরে
কেউ আসে কেউ যায়, কারো আঙুল থেকে ঝরে পড়ে মধু
কেউ দাঁতে পিচ কাটে, সুবর্ণষ্ঠীবীর স্মৃতি লোভ করে
কেউ বা ছুঁয়েছে খুব লঘু যত্নে, সুখী বারবনিতার
তম্বুরাযুগল হেন পাছা
কারো চুলে রত্নচ্ছটা, কারো কণ্ঠে কাঁচা-গন্ধ বাঘনখ দোলে
আমি তো দাঁড়িয়েছিলাম পাশে, সামনে বিপুল জনস্রোত।

কোথায় সুবর্ণ সেই নগরীটি? কোন্‌ রাস্তা হলুদ আলোয় আলোকিত?
কে দাঁড়িয়েছিলাম সেই পথপ্রান্তে? আমি নয়, কোনোদিন দেখিনি সে পথ
আঙুল কী করে ঝরে মধু? কেন কেউ কন্ঠে রাখে কাঁচা বাঘনখ?
কিচুই জানি না আমি, এমনকি সুবর্ণষ্ঠীবীর ঠিক বানানেও রয়েছে সন্দেহ
তবু কেন কবিতা লেখার আগে এই দৃশ্য, অবিকল, সম্পূর্ণ অটুট
স্বপ্ন, কিংবা তার চেয়ে বেশী সত্য হয়ে ওঠে, আমার চৈতন্য বেঁধে সুঁচ
প্রায় কোনো কাটাকাটি না-করেই অফিস- টেবিলে বসে আমি
ঐ দৃশ্য লিখে যাই।।


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (জন্ম: ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪/(২১ ভাদ্র, ১৩৪১ বঙ্গাব্দ)-মৃত্যু: ২৩ অক্টোবর, ২০১২) বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভুর্ত একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিস্টোব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক" ও "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি।

সুনীলের পিতা তাকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দু
টি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল তিনি যাতে দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তাই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, বিড়ি ফুঁকত সুনীল তখন পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেঁয়ে উঠলে তিনিই নিজেই লিখতে শুরু করেন। ছেলেবেলার প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করা লেখা কাবিতাটি তিনি দেশ পাঠালে তা ছাপা হয়।

২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ২৫ অক্টোবর ২০১২ তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

কবিতাঃ
সুন্দরের মন খারাপ মাধুর্যের জ্বর
সেই মুহুর্তে নীরা
স্মৃতির শহর
সুন্দর রহস্যময়
একা এবং কয়েকজন (কবিতার বই)
আমার স্বপ্ন
জাগরণ হেমবর্ণ
আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি
ভালোবাসা খন্ডকাব্য
মনে পড়ে সেই দিন (ছড়া)
নীরা, হারিয়ে যেও না
অন্য দেশের কবিতা
ভোরবেলার উপহার
বাতাসে কিসের ডাক, শোন
রাত্রির রঁদেভু
সাদা পৃষ্ঠা তোমার সঙ্গে
হঠাৎ নীরার জন্য