চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Showing posts with label নবম-দশম শ্রেণি: সারমর্ম. Show all posts
Showing posts with label নবম-দশম শ্রেণি: সারমর্ম. Show all posts

Tuesday, May 11, 2021

 আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই
সকলের সুখ সখা, সুখ শুধু তাই।
আমার একার আলো সে যে অন্ধকার,
যদি না সবারে অংশ দিতে আমি পাই।
সকলের সাথে বন্ধু, সকলের সাথে,
যাইব কাহারে বলো, ফেলিয়া পশ্চাতে।
একসাথে বাঁচি আর একসাথে মরি,
এসো বন্ধু, এ জীবন সুমধুর করি।


সারমর্ম: আত্মসুখ প্রকৃত সুখ নয়, প্রকৃত সুখ সমষ্টিগত। কেননা মানবকুল একে অন্যের সাথে আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ। তাই সমষ্টিগতভাবে পরস্পরের সান্নিধ্যে জীবনকে সুখময় করে তোলার মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সুখ নিহিত।

বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।

 

সারমর্ম: মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। কিন্তু ইতিহাসে নারীদের তুলনায় পুরুষের কথা বেশি লেখা হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে তার কর্ম-স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন দিন এসেছে সম-অধিকারের। নারী-পুরুষ সবাইকে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

Thursday, September 10, 2020

  ক্ষীন বন্যলতা এক অতি ক্ষুদ্রকায়

    বিশাল বটের তলে ভূমিতে লুটায়।

    বট বলে, ছায়াময় বাহু প্রসারিয়া

      আশ্রয় দিয়াছি তোমা করুণা করিয়া,

     নতুবা তপন-তাপে শুষ্ক হত দেহ

       লতা বলে, ফিরে লহ অযাচিত স্নেহ।

     তোমার করুণা মম হইয়াছে কাল,

       রৌদ্র বিনা হয়ে আছি বিশীর্ণ কঙ্কাল।


সারমর্ম: জগতে অর্থবিত্তের অধিকারী বড়রা সবসময় বিত্তহীন ছোটদের করুণা দেখায়। তারা ভুলে যায় যে, তারা আসলে শোষণ করে অধিকার হরণ করে ছোটদের দমিয়ে রাখে।                                               

নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস

                                                   শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস

                                                     বিদায় নেবার আগে তাই ডাক দিয়ে যাই

                                                        দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে

                                                              প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।

সারমর্ম: জাতীয় জীবনে বর্তমানে নানা দুর্যোগের ঘনঘটা। চক্রান্তকারী বা অপশক্তির চক্রান্তে দেশ ও সমাজ বিপদগ্রস্ত। দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্যে এখন সবাইকে বলিষ্ঠ ও দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করতে হবে।

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান,

জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ পিঠে

চলে যেতে হবে আমাদের।

চলে যাবো- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল,

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি,

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

 

সারমর্ম: নতুন প্রজন্মের জন্য পুরাতন প্রজন্মকে স্থান ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান পৃথিবী নানা সংকটে জর্জরিত। তাই সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য সকল জীর্ণতা, ব্যর্থতা, গ্লানি দূর করে দিয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর আবাসস্থল গড়ে তুলতে হবে।

Friday, August 7, 2020

 

বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়
অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ। এই বসুধার
মৃত্তিকার পাত্রখানি ভরি বারংবার
তোমা অমৃত ঢালি দিবে অবিরত
নানা বর্ণ গন্ধময়। প্রদীপের মতো।
সমস্ত সংসার মোর লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তোমারি শিখায়।

সারমর্ম: সংসারী মানুষ সংসারের মায়া-মমতা, বন্ধনের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের আরাধনা করতে চান। সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি বৈরাগ্যের বেশ ধারণ করতে চান না। সংসারই তার কাছে তীর্থস্থান। এ সংসার তীর্থে থেকেই তিনি ঈশ্বরের সান্নি

মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন,
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে, স্বীয় কীর্তিধ্বজা ধরে,
আমরাও হব বরণীয়।
সময় সাগর তীরে, পদাঙ্ক অঙ্কিত করে,
আমরাও হব যে অমর
সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে, অন্য কোন জন পরে,
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।
করো না মানবগণ, বৃথা ক্ষয় এ জীবন,
সংসার সমরাঙ্গন মাঝে,
সংকল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা,
ব্রতী হয়ে নিজ নিজ কাজে।

সারমর্ম: এ পৃথিবীতে মহৎ ব্যক্তিগণ তাদের কীর্তির মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। আমাদেরও উচিত তাদের পদাংক অনুসরণ করা। নশ্বর পৃথিবীতে বৃথা সময় নষ্ট না করে সাধনা ও কর্ম করা, তবেই জীবন সার্থক হবে।

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে সন্দেহ নাই মাত্র।

সারমর্ম: বিশ্ব প্রকৃতিতে শিক্ষার নানা উপকরণ ছড়িয়ে আছে। মানুষ প্রতিনিয়ত নানাভাবে এই বিশ্বপ্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করছে। এই পাঠশালা থেকেই মানুষ জ্ঞান আহরণ করে তার জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করছে।

বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখ-তাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে, নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্ছনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।

সারমর্ম: বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজন সাহস, শক্তি আর মনের দৃঢ়তা। অনেক সময় দুঃখ, বঞ্চনায় মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। সৃষ্টিকর্তার কাছে সে অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করে। কিন্তু করুণা শিক্ষা নয়, সৃষ্টিকর্তা যেন সকল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সাহস আর শক্তি মানুষকে দেন এটাই হওয়া উচিত মানুষের প্রার্থনা।

 

পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি-তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।
দেশ-দেশান্তর মাঝে যার যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোট ছোট নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে করে।
প্রাণ দিয়ে দুঃখ সয়ে. আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালো মন্দ সাথে।
সার্থ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধরে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া করে।
সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করো নি।

সারমর্ম: জীবনকে জানতে হলে তার ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, সুখ-দুঃখ সবটাকেই জানতে হয়। দুঃখ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। কিন্তু বাঙালি ধর্ম ও সমাজের নানা বাধার কারণে গৃহকোণে কূপমন্তুকের মতো সুখী জীবনযাপন করছে। তাই বাঙালি প্রাণহীন, নিস্তেজ। এ অবস্থা থেকে বাঙালির উত্তরণের জন্য তাকে ঘরের বাইরে আসতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তবু
রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারি এককোণ।
সে ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে
যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।
জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে।

সারমর্ম: এ পৃথিবী যেমন আয়তনে বিশাল তেমনি এর রূপও বৈচিত্র্যময়। কিন্তু তার বেশিরভাগই মানুষের অজানা। অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরকালের। তাই সে তার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে ভ্রমণকাহিনী পাঠ করে। এর মাধ্যমেই সে তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে চায়, তার দীনতাকে ঘোচাতে চায়।

 

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
সুখ সুখ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

সারমর্ম: কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য এ পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেনি। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। অন্যের কল্যাণসাধনে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই মানুষ প্রকৃত সুখ খুঁজে পায়। তাই নিজের কল্যাণ নয় পরের কল্যাণসাধনে মনোনিবেশ করতে হবে।

পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মত কেন বলিস?
পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস?
তোর নিজস্ব সর্বাঙ্গে তোর দিলেন ধাতা আপন হাতে,
মুছে সেটুকু বাজে হলি, গৌরব কি বাড়ল তাতে?
আপনারে যে ভেঙ্গে চুরে গড়তে চায় পরের ছাঁচে
অলীক, ফাঁকি, মেকি সে জন নামটা তার কদিন বাঁচে?
পরের চুরি ছেড়ে দিয়ে আপন মাঝে ডুবে যা রে,
খাঁটি ধন যা সেথায় পাবি, আর কোথাও পাবি না রে।

সারমর্ম: অন্যের অনুকরণ না করে নিজের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা আছে তা বিকশিত করার মাধ্যমেই গৌরব বৃদ্ধি পায়। তাই নিজের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে স্বাভাবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানোর মধ্যেই যথাযথ মর্যাদা নিহিত।

 

নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল।
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান,
কাষ্ঠ দগ্ধ হয়ে করে পরে অন্ন দান।
স্বর্ণ করে নিজ রূপে অপরে শোভিত,
বংশী করে নিজ সুরে অপরে মোহিত।
শস্য জন্মাইয়া নাহি খায় জলধরে
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত তরে।
 

সারমর্ম: তারাই মহৎ যারা অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেন। নদী, গাছপালা, মেঘ-বৃষ্টি, স্বর্ণ-রৌপ্য প্রভৃতি অপরের মঙ্গল সাধনের জন্য আত্মোৎসর্গ করে। যারা প্রকৃত ভালো মানুষ তারা এদের মতোই অপরের কল্যাণ কামনায়, অপরের সুখের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন।

 

নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো,
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে,
নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে,
সাধজকজনে নিস্তারিতে তার মতো কে জানে?
বিনামূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার,
বিশ্ব মাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
নিন্দুক, সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।

সারমর্ম: নিন্দুক তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের কারণে সকলের কাছেই ঘৃণার পাত্র। তার কাজই হলো পরচর্চা করা, যার কারণে কোনো মানুষই তাকে পছন্দ করে না, তার সঙ্গ প্রত্যাশা করে না। কিন্তু এই নিন্দুকই পরচর্চার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের দোষ ত্রুটিগুলো চোখের সামনে তুলে ধরে এবং এর ফলে মানুষ নিজেকে শোধরানোর সুযোগ পায়। তাই প্রকৃতপক্ষে নিন্দুককে ঘৃণা করা উচিত নয়।

 

দৈন্য যদি আসে আসুক, লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস।
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
র্ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস।


সারমর্ম: জীবনের চলার পথে দুঃখ, দারিদ্র্যের মতো নানা প্রতিবন্ধকতা এসে জীবনকে রুদ্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তাতে ভয় পেয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা উচিত নয়। বরং সকল প্রতিকূল অবস্থাকে মোকাবেলা করার সাহস হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

 

ধন্য আশা কুহকিনী। তোমার মায়া
অসার সংসার চক্র ঘোরে নিরবধি।
দাঁড়াইত স্থিরভাবে, চলিত না হায়
মন্ত্রবলে তুমি চক্র না ঘুরাতে যদি।
ভবিষ্যৎ অন্ধ, মূঢ় মানবসকল
ঘুরিতেছে কর্মক্ষেত্রে বর্তুল-আকার,
তব ইন্দ্রজালে মুগ্ধ, পেয়ে তব বল।
বুঝিছে জীবনযুদ্ধে হায় অনির্বার
নাচায় পুতুল যথা দক্ষ বাজিকরে
নাচাও তেমনি তুমি অর্বাচীন নরে।

সারমর্ম: জীবনে চলার পথে প্রতিটি ক্ষেত্রে আশা মানুষকে সঞ্জীবিত করে। আশা আছে বলেই মানুষ তার ভবিষ্যতকে না জেনেও সেই পথেই অগ্রসর হয়, বর্তমানকে সাদরে গ্রহণ করে। অর্থাৎ সংসারচক্রে আশাই মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র প্রেরণা।

 

ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।
মুহূর্তে নিমেষ কাল, তুচ্ছ পরিমাণ,
গড়ে যুগ যুগান্তর-অনন্ত মহান।
প্রত্যেক সামান্য ত্রুটি, ক্ষুদ্র অপরাধ,
ক্রমে টানে পাপপথে, ঘটায় প্রমাদ।
প্রিত করুণার দান, স্নেহপূর্ণ বাণী,
এ ধারায় স্বর্গসুখ নিত্য দেয় আনি।

সারমর্ম: ক্ষুদ্র থেকেই বৃহতের সৃষ্টি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা নিয়ে গড়ে ওঠে মহাদেশ, বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে মহাসাগর, তুচ্ছ মুহূর্ত নিয়ে যুগ যুগান্তর। আবার ছোট অপরাধ থেকেই সংঘটিত হয় বড় পাপ।

 

দন্ডিতের সাথে
দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ
কোন ব্যথা নাহি পায়, তার দন্ডে দান
প্রবলের অত্যাচার। যে দ- বেদনা
পুত্ররে না পার দিতে, সে কারেও দিও না।
যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,
মহাঅপরাধী হবে তুমি তার কাছে।

সারমর্ম: বিচারকের আসনে যিনি বসেন, সুষ্ঠু ন্যায় বিচার সম্পাদন করাই তার দায়িত্ব। দোষীকে শাস্তি দিয়ে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার মহান ব্রত তার। তবে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে তাকে হতে হয় নিরপেক্ষ এবং সহানুভূতিশীল। যাকে শাস্তি প্রদান করা হলো তার দুঃখে যদি বিচারকের প্রাণ কাঁদে তবেই সে বিচার শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে।

 

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনই পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।

সারমর্ম: স্বর্গ ও নরক দূরে কোথাও নয়, মানুষের মাঝেই বিদ্যমান। নিজের কর্মফলের মধ্য দিয়ে মানুষ স্বর্গ ও নরকের ফল ভোগ করে। যারা বিবেকবর্জিত অন্যায় করে বেড়ায় তারা পৃথিবীতেই নরক যন্ত্রণার ফল ভোগ করে। পক্ষান্তরে যারা হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ত্যাগ করে সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে তারা পৃথিবীতেই স্বর্গ সুখ লাভ করে।

 

ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,
হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা।
তোমার আদেশ, যেন রসনায় মম
সত্য বাক্য জ্বলি উঠে খর খড়গ সম।
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।

সারমর্ম: ক্ষমা মহৎ গুণ হলেও তা যেন সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। যদি হয় তাহলে সেখানে দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এজন্য অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় না দেওয়াই উত্তম। কেননা, অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী দুজনেই সমান অপরাধী।

Thursday, July 30, 2020

আসিতেছে শুভ দিন

দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।

হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,

পাহাড়-কাটা সে পথের দুপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,

তোমাদের সেবিতে হইল যাহারা মজুর,মুটে ও কুলি,

তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি,

তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদের গান

তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান।

 

সারমর্ম: দিনে দিনে শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। কিন্তু এই শ্রমজীবী মানুষ শোষিত, বঞ্চিত, ও অবহেলিত। তবে শ্রমজীবী মানুষদের যারা শোষণ করছে তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে। কেননা, শ্রমজীবীদের নব উত্থানের সূচনা আসন্ন।

সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে

সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালবেসে।

জানি না তোর ধন-রতন আছে কিনা রাণীর মতন

শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।

কোন বনেতে জানিনে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল.

কোন গগনে উঠেরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।

আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,

ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।


সারমর্ম: প্রতিটি মানুষের কাছেই তার জন্মভূমি অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য, অসীম ঐশ্বর্য আমাদের চোখ জুড়ায়, মন ভোলায়। এই অপরূপ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমাদের জীবন ধন্য। তাই এদেশের মাটির স্নেহের স্পর্শেই আমরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।

শৈশবে সদুপদেশ যাহার না রোচে,

জীবনে তাহার কভু মূর্খতা না ঘোচে।

চৈত্র মাসে চাষ দিয়া না বোনে বৈশাখে,

কবে সেই হৈমন্তিক ধান্য পেয়ে থাকে?

সময় ছাড়িয়া দিয়া করে পন্ড শ্রম,

ফল চাহে, সেও অতি নির্বোধ অধম।

খেয়াতরী চলে গেলে বসে থাকে তীরে।

কিসে পার হবে, তরী না আসিলে ফিরে?

 

সারমর্ম: জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো শৈশবকাল। এ সময় সদুপদেশ মেনে না চললে ভবিষ্যতে সাফল্য আসে না। সময়ের কাজ সময়ে করাও সফলতা অর্জনের অন্যতম চাবিকাঠি। সময়মত কোনো কাজ না করলে পরবর্তীতে অধিক পরিশ্রম করেও সে কাজে সাফল্য অর্জন করা যায়না।

 

সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,

দেশ-মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।

দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়?

পুণ্য অত হবে না’ক সব করিলেও জড়।

মুক্তিকামী মহাসাধক, মুক্ত কর দেশ,

সবারই সে অন্ন যোগায়, নেইকো গর্ব লেশ।

ব্রত তাহার পরের হিত সুখ নাহি চায় নিজে

রৌদ্র-দাহে তপ্ত তনু শুকায় মেঘে ভিজে।

আমার দেশের মাটির ছেলে, করি নমস্কার,

তোমায় দেখে চূর্ণ হউক সকল অহংকার।

 

সারমর্ম: কৃষকরাই আমাদের দেশের প্রাণ। তাদের চেয়ে বড় সাধক আর কেউ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠোর পরিশ্রম করে তারা আমাদের অন্নের যোগান দেয়। তাদের উদ্দেশ্য দেশ ও দশের কল্যাণসাধন। শ্রম, সাধনা, আর ত্যাগ-তিতিক্ষার মহান আদর্শকে ধারণ করে সকলের ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান।


 বসুমতি, কেন তুমি তই কৃপণা?
কত খোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্যকণা।
দিতে যদি হয় দে মা প্রসন্ন সহাস
 কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস?
 বিনা চাষে শস্য দিলে কি তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কহে বসুমতি
  আমার গৌরব তাতে সামান্যই বাড়ে,
তোমার গৌরব তাতে একেবারে ছাড়ে।

সারমর্ম: শ্রমলব্ধ সম্পদে গৌরব আছে, আছে আনন্দ আর শ্রমহীন প্রাপ্তিতে থাকে দুর্বলতা, থাকে অবসাদ। তাই সকলেরই উচিত পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করা। কারণ, পরের দান গ্রহণে কোনো আত্মতৃপ্তি নেই, শ্রমেই সত্যিকারের গৌরব।

   বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
   বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
  দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
  দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
  দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
   ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
  একটি ধানের শীষের উপরে
  একটি শিশির বিন্দু।

সারমর্ম: মানুষ বহু অর্থ ও সময় ব্যয় করে দূরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যায়। কিন্তু ঘরের কাছের সৌন্দর্যটুকু আর দেখা হয়ে ওঠে না। সৌন্দর্যের বিচিত্র সমারোহ মানুষের চারপাশে বিদ্যমান। তাই দূরে যাওয়ার আগে কাছের জিনিসও সবাইকে চিনতে জানতে হবে।