চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Showing posts with label অষ্টম শ্রেণি: ভাব-সম্প্রসারণ. Show all posts
Showing posts with label অষ্টম শ্রেণি: ভাব-সম্প্রসারণ. Show all posts

Tuesday, July 28, 2020

নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?

মূলভাব: মানুষ মাত্রই তার মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি লাভ করে থাকে। অন্য ভাষা তার কাছে তত সহজে বোধগম্য নয়।

সম্প্রসারিত ভাব: স্বদেশি ভাষা বলতে মাতৃভাষাকেই বোঝায়। মাতৃভাষায় মনের ভাব যত সহজে ও অবলীলায় প্রকাশ করা যায় তা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব নয়। বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হলেও মাতৃভাষার মতো চিন্তা-চেতনার বিকাশ ও তার সাবলীল প্রকাশ ভাষায় সম্ভব হয় না। কারণ শিশুকাল থেকেই মানুষ মাতৃভাষা আয়ত্ত কওে, মাতৃভাষায় কথা বল্ েঅর্থাৎ মাতৃভাষা তার আবাল্য পরিচিত, নিতান্তই মায়ের মতো আপন। স্বদেশের মাটি, পানি, বায়ু আর ভাষাকে ব্যবহার করে বেড়ে ওঠে মানুষ। তাই মানুষের কথা বলার ও মনের ভাব প্রকাশের সর্বোৎকৃষ্ট বাহন মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে মানুষ যতটা স্বাচ্ছন্দবোধ করে এবং আনন্দ পায়, অন্য কোসো ভাষায় তা অসম্ভব। পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মাতৃভাষায় বিশিষ্টতা রয়েছে। মাতৃভাষার সাথে তাদের নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। যে জাতি পৃথিবীতে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানচর্চা, গবেষণা কাজে মাতৃভাষার যত বেশি চর্চা করেছে সে জাতি তত বেশি উন্নত হয়েছে। মাতৃভাষার ব্যাপক চর্চা ও প্রয়োগ ছাড়া জাতীয় বিকাশ সম্ভব নয়। মননশীল সাহিত্য চর্চা মাতৃভাষা ব্যতিরেকে করা যায় না। পৃথিবীর বিদ্বান ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা বিভিন্ন ভাষা শেখেন, সাধনা করেন, জ্ঞান চর্চা করেন। কিন্তু অর্জিত সাধনার ফল প্রকাশ করেন মাতৃভাষায়। কারণ মাতৃভাষার দ্বারা যত সুন্দও ও সাবলীলভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় অন্য ভাষায় তা সম্ভব হয় না।   

মন্তব্য: আমাদের আশা আকাঙ্খা ও বিমূর্ত চিন্তা-চেতনা মূর্তি লাভ কওে মাতৃভাষার মাধ্যমেই। তাই মাতৃভাষাই মানুষের ভাব বিনিময়ের অন্যতম বাহন।

পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন/ নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।

মূলভাব: পরের কুশল কামনাই মঙ্গলজনক। অন্যের অনিষ্ট চিন্তা শুধু পরের ক্ষতিই বয়ে আনে না; পরিণামে নিজেকেও বিপদে পড়তে হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: পারস্পরিক শুভ কামনাই সামাজিক প্রশান্তির পূর্বশর্ত। আত্ম-স্বার্থ ও আত্মকেন্দ্রিকতাকে পরিহার করে মানুষ যদি প্রত্যেকের প্রতি সহানুভূতিশীল ও শুভার্থী হয় তাহলে পারস্পরিক হৃদ্যতার জন্ম হয়। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে মানুষের জীবন সুন্দর ও কল্যানকামী চেতনায় সুশোভিত করার জন্য সকলেই পরশ্রীকাতর মনোবৃত্তি পরিহার করে চলতে হয়। পরোপকারী মানুষ শুধু অন্যের কল্যাণ সাধন করে না, পরোক্ষভাবে নিজের জীবনকেও নিরাপদ করে থাকে।পরোপকারী ও পরদুঃখকাতর মানুষের কোনো শত্রু খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্যের উপকার করার সাথে সাথে নিজের শুভার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলেন, যারা বিপদের মুহূর্তে তার পাশে দাঁড়ায়। অপরদিকে যারা হিংসুক ও পরশীকাতর তারা প্রতি মুহূর্তে অন্যের অনিষ্ট সাধনের কথা ভাবে। তার দ্বারা মানবতা উপকৃত হয় না। তারা অপরের কী করে সর্বনাশ করা যায় সেই চিন্তায় সব সময় মশগুল থাকে। তাদের অনিষ্ট আচরণে শুধু সেই নয়, সাথে ব্যক্তি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যিনি বা যারা নিজের উপকার হবে বলে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা চালায় মূলত সে নিজেই তার নিজের ক্ষতি করে। যাদের অনিষ্ট করে তারা সকলেই তার শত্রুতে পরিণত হয় এবং শত্রুরা সুযোগ পেলেই তার ক্ষতি সাধনে কর্পণ্য করে না। পরের অনিষ্ট করতে গিয়ে বহু লোক নিজেদের জীবনকেই ধ্বংস করেছে। এর বহু নজর ইতিহাসের পাতায় রয়েছে।

মন্তব্য: পরের অনিষ্ট চিন্তা করা কোনো বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষের কাজ নয়। নিজের কল্যাণ চাইলে, নিজের স্বার্থেই সকলকে অন্যের অনিষ্টা চিন্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

মূলভাব: অন্যায়কারী এবং অন্যায়কে নতশিরে সহ্যকারী উভয়েই সমান অপরাধী। এ সমাজে কেউ নিজে অন্যায় না করলেই তার কর্তব্য ফুরায় না। আপ্রাণ চেষ্টা দ্বারা অন্যায়কে প্রতিহত করাই সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সম্প্রসারিত ভাব: ন্যায় নীতি বিধান যারা লঙ্ঘন করে, সমাজে নিঃসন্দেহে তারা ঘৃণার পাত্র। যারা শুভ বুদ্ধির মানুষ, তারা অন্যায় হতে দূরে থাকে, অন্যায়কারীর সান্নিধ্যও তারা এড়িয়ে চলে।কিন্তু শুধু এতটুকুতেই আমাদের কর্তব্য শেষ হতে পারে না। ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় থেকে বিরত থাকাই যথেষ্ট নয়, অপরের কৃত অন্যায়কে প্রতিহত করাও অত্যন্ত জরুরী। সুস্থ এবং সুন্দর সামাজিক জীবনের স্বার্থেই এটি প্রয়োজন। অন্যায়কে প্রতিহত না করে ভালোমানুষের মতো নীরবে সহ্য করে গেলে তা কখনো শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না। কেননা উপযুক্ত প্রতিফলের অভাবে অন্যায়কারীর স্পর্ধা বেড়ে যায় এবং সমাজের বুকে সমূহ অকল্যাণ ঘনিয়ে আসে। আর এই অকল্যাণের দায়িত্ব অন্যায় সহ্যকারী ব্যক্তিরাও অস্বীকার করতে পারে না। কেননা তারাই অন্যায়কারীকে প্রতিরোধ না করে তাকে দুঃসাহসী করে তুলেছে। তাই অন্যায় করার মধ্যে যেমন হীনতা আছে, তেমনি বিনাবাক্যে অন্যায় সহ্য করার মধ্যেও তদরূপ হীনতা বিদ্যামান। এই দুই প্রবণতাই সমানভাবে ধিক্কারযোগ্য। যেখানে প্রয়োজন প্রতিরোধের, সেখানে নীরবতা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অতএব অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়েই নিন্দার পাত্র। বিশ্ববিধাতাও উভয়ের প্রতি সমানভাবে তার ঘৃণা বর্ষণ করবেন।

মন্তব্য: সৃষ্টিকর্তা অন্যায়কারীকে যেমন ঘৃণা করেন, তেমনি অন্যায় সহ্যকারীকেও ঘৃণা করেণ। তাই আমাদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

স্বদেশের উপকারে নাই যার মন/ কে বলে মানুষ তার? পশু সেই জন।

মূলভাব: মা, মাতৃভূমি, মাতৃভাষা প্রত্যেকের একান্ত আপন ধন। আর এসবকে যে অবজ্ঞা করে সে কখনও প্রকৃত মানুষের মর্যাদা পায় না। তার মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না।

সম্প্রসারিত ভাব: দেশপ্রেম প্রতিটি মানুষেরই একটি একান্ত অনুভূতি। প্রত্যেক মনীষীই জন্মভূমিকে সর্বাগ্রে ভালোবাসার স্থান দিয়েছেন। কোন এক দেশপ্রেমিক বলেছেন, জননী জন্ম-ভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী। অর্থাৎ, মা আর মাতৃভূমিকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন। জন্মের পর হতেই প্রতিটি মানুষেরই মাঝে নিজের অজান্তেই দেশপ্রেম গড়ে ওঠে। কেনানা শৈশব হতেই প্রাণের সাথী হয়ে ওঠে জন্মভূমি। তাই প্রতিটি মানুষের নিকটই জন্মভূমি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ও্রঠে। এ স্বদেশের উপকার বা দেমকে রক্ষা করার জন্যে কত লোক যে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তার কোনো হিসেব নেই, দেশের জন্য জীবন দিয়ে মানুষ রিক্ত হন না বরং হন তাঁরা ধন্য। তাঁরা কখনও মরেন না। শহীদ হয়ে অমর হয়ে থাকেন। যেমন—অমর হয়ে আছেন রফিক, সফিক, বরকত, সালাম এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর শহীদেরা বাংলাদেশের ইতিহাসে। দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার মানসে সবার জীবন গড়ে তোলা উচিত। স্বদেশের উপকার করতে গিয়ে মনেরে সংকীর্ণতা দূর করতে হবে। জন্মভূমির মঙ্গল মানুষ মাত্রেই অবশ্য করণীয়। স্বদেশের উপকার এবং কল্যাণের জন্যে যার মন নেই সে ঘৃণ্য। দেশপ্রেম সকল মহত্ত্বের উৎস, মনুষ্যত্বের প্রসূতি। যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই, স্বদেশের হিতার্থে যে হিতাকাঙ্ক্ষী নয় সে পশুর চেয়েও অধম। তাকে দিয়ে কোনো মহৎ কাজ সাধিত হয় না। সে মানুষ নয় পশু সমতুল্য। স্বদেশের সম্মান, স্বাধীনতা, কৃষ্টি, আচার সভ্যতা ও ভাষার জন্য যাঁরা জীবন দিতে পারেন তাঁরাই মানুষ। কেনানা স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।

মন্তব্য: নিজের দেশকে অবজ্ঞা করে কেউ কোনোদনি বড় হতে পারে না। শত দুঃখ লাঞ্চনার মাঝে থেকে আবার ফিরে আসতে হয়েছে স্বদেশের আঙিনায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য নিজের মাতৃভূমিকে ভালোবেসে তার সমৃদ্ধি সাধনে সচেষ্ট থাকা।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।

মূলভাব: মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। আমাদের জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।

সম্প্রসারিত ভাব: ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় বাংলাকে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে গিয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ বাগ লোকের মুখের ভাষা বাংলা হলেও শতকরা ৭ ভাগ লোকের মুখের ভাষা উর্দকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এ লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।  এ ঘোষণার বিরুদ্ধে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলন বিক্ষোভ চরতে থাকে। ১৯৫২ সালের শুরুতেই বাংলা ভাষা আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। ১৯৫২-ও ২১ ফেব্রæয়ারি ‘রাষ্টভাষা দিবস’ পালন করার সিদ্ধান্ত নিলে ছাত্রদের আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল) আম গাছ তলা থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙলে পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, সফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা অনেকে শহিদ হন। তাঁদের এ আত্মত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলার  অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।  

মন্তব্য: যাদের জীবন দানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার দাবি রক্ষা পায় তাদের বাঙালি জাতি কোনো দিন ভুলবে না, চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

মূলভাব: মানবসভ্যতার ইতিহাস বলে, আদিকাল থেকে আজকের যে সভ্যতা তাতে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী- পুরুষের সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টাই সভ্যতা সূচিত হয়েছে। সভ্যতা অর্জনে কারো অবদানই কম নয়।

সম্প্রসারিত ভাব: নারী এবং পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয়েছে সমাজব্যবস্থা। সুতারং সমাজে নারী এবং পুরুষের অবদান সমভাবে বিদ্যমান। এ নর-নারী একে অপরের পরিপূরক সত্তা। মহান স্রষ্টা বিশ্বের আদি মানব হযরত আদম (আ) এবং মনবী বিবি হাওয়া (আ)-এর আবাসস্থল হিসেবে পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। পরবর্তীকালে আদম এবং হাওয়ার অবদানেই এ জগতে মানুষের আবাদ হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে নারীরাও পুরুষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নারীরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে তাদের উপর আেেরাপিত দায়িত্ব পালন করছেন। তাই নারীদের কর্মস্থল শুধু রান্নাঘরে সীমাবদ্ধ নয় বরং পরিব্যাপ্ত সমাজের সকল অঙ্গন। কথায় আছে, “যে শকটের এক চক্র বড় এবং এক চক্র ছোট হয় সে শকট অধিক দূর অগ্রসর হতে পারে না; সে কেবল একই স্থানে ঘুরতে থাকবে।” অর্থাৎ যেখানে পুরুষ জাতিকে প্রাধান্য এবং নারীজাতিকে অবহেলা করা হবে সেখানে জাতির কোন উন্নতি বা পরিবর্তন হবে না।ইসলাম ধর্ম সমাজে নারীরা মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এবং শিক্ষার অধিকারসহ সকল অধিকার দান করেছে—” প্রত্যেক নর-নারীর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।” অন্ধকার যুগে নারীদের কোনো মর্যাদা দেওয়া হতো না। সে যুগে নারীরা দাসী ছিল এবং ন্যায্য অধিকার হতে তাদের বঞ্চিত করে রাখত, যা সময়ের বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়। এখন সারাবিশ্বে পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও কঠিন কর্তব্য পালন করতে হয়। সর্বক্ষেত্রে তারা দক্ষতার ছাপ রাখছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মায়ের কাছে সন্তান যে শিক্ষা লাভ করে তাই পরবর্তী জীবনে তার চরিত্র গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। সেজন্য মায়ের নিকট হতে শেখা উপযুক্ত শিক্ষার গুরুত্ব ও অবদান অপরিসীম। এছাড়া সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নতির ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। কথায় আছে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’

মন্তব্য: নারী ও পুরুষের সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার সৃষ্ট এ সমাজের উন্নতি এবং প্রগতির জন্য নারীরা সমান অংশীদার। তাই যাবতীয় উন্নয়নমূলক কার্যে নারীদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

করিতে পারি না কাজ
সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।

মূলভাব: অপরের সমালোচনার ভয় করলে কোনো কাজেই অগ্রসর হওয়া যায় না। যে কোনো কাজে সাফল্যের জন্য অন্যের কথায় বিচলিত না হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে চলা উচিৎ।

সম্প্রসারতি ভাব: মানুষের জীবন কর্মমুখর। কাজের মাধ্যমেই মানব জীবনের সাফল্য আসে। কাজ করতে গেলে ভুল হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ তার জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এ পৃথিবীতে সবাই কর্মী না আর কাজ করে না। কিছু অলস অকর্মণ্য মানুষ আছে, যারা সবসময় অন্যের পিছনে লেগে থাকে। অন্যের ভালো কাজেও খুঁত ধরে, অন্যের সমালোচনা করে। ফলে অনেক সময় কাজ করতে গেলে কেউ কেউ দ্বিধান্বিত হয়। কে কি মনে করবে, কে কি সমালোচনা করবে তা ভেবে তাদের মনের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। যার জন্য তারা কোনো কাজে এগোতে চায় না। তাই যারা সমাজে অবদান রাখতে চায় তাদের কোনো নেতিবাচক সমারোচনা ও উপহাসে বিব্রত হলে চলবে না। আমাদের সকলের অন্যের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।  সাফল্য অর্জনের জন্য লোকলজ্জা ও সমালোচনার ভয় উপেক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য: মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে সমালোচনা, ভয়ভীতি ও সংকোচকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।

মূলভাব: শ্রমই মানুষের জীবনে সৌভাগ্যের তিলক এঁকে দেয়। প্রতিটি মানুষেরই সৌভাগ্য কাম্য কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া তা অর্জন অসম্ভব। শ্রমই মানুষের জীবনে সৌভাগ্যের তিলক এঁকে দেয়। তাই পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

সম্প্রসারিত ভাব: পরিশ্রম সাধনায় সিদ্ধি এনে দেয়। বিদ্যার্থী যথারীতি পরিশ্রম করে। সে বিদ্যা অর্জন করে যেমন, তেমনি ধন, মন ইত্যাদিও অর্জন করতে পারে। মানবজীবন সংগ্রামের জীবন। সে সংগ্রামে টিকে থাকতে হলে, জয়লাভ করতে হলে, পরিশ্রমকে প্রধান হাতিয়াররূপে বরণ করে নিয়ে সে পথে অগ্রহসর হতে হবে। তাই কর্মময় সংসারে ভাগ্য বলে কোনো অলীক সোনার হরিণের সন্ধান অদ্যবধি মিলে নি। বাহ্যদৃষ্টিতে মানুষ যাকে ভাগ্যদেবী নামে অভিহিত করে, তা মূলত মানুষেরই প্রাণান্ত প্রচেষ্টারই ফসল। মানুষ নিরলস প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত ত্যাগ স্বীকারের বদৌলতে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি হাসিল করে। কর্মবিমুখ ব্যক্তি অলস চিন্তার প্রশ্রয়ে যা কিছু চিন্তা ভাবনা করে তা আকাশ কুসুম রচনার মতোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ভাগ্যদেবী স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কারোর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থন করে দিয়েছেন এমন নজির মর্তলোকে মেলে না। মানব ইতিহাস থেকে প্রমাণ মিলে যে, সৃষ্টির প্রারাম্ভিক স্তরে অসহায় মানুষ যখন হিংস প্রাণীর উপদ্রব ও বৈরী প্রকৃতির নির্মমতার হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য বুকফাটা আহাজারি শুরু করেছিল, তখন কোনো ঐশীশক্তি বা দেবতা তার আহ্বানে সাড়া দেয় নি। তখন মানুষই একে অন্যের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে এবং পরস্পরের সহযোগিতায় বৈরি প্রকৃতির সাথে নিরলস সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তাই নিঃসংশয়ে একথা বলা যায় যে পরিশ্রমের দ্বারাই সৌভাগ্য অর্জন করা যায়; পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি।

মন্তব্য: পারিশ্রমের দ্বারাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে উন্নতি আসে। শ্রমহীন অলস ব্যক্তির জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

Monday, July 27, 2020

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।

মূলভাব: প্রাণী মাত্রই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে জীবন অতিবাহিত করে। কিন্তু মানুষকে সভ্যতার সাথে সংগ্রাম করে মানবিকিতার স্ফুরণ ঘটিয়ে সত্যিকার মানুষ হতে হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: স্রষ্টার সরল সৃষ্টির মধ্যে মানুষের পার্থক্য এখানেই যে, মানুষের মন বলে একটি আলাদা অস্তিত্ব আছে। মন আছে বলেই বিশেষ বিশেষ অনুভূতির বিকাশ ঘটে এবং মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীর পার্থক্য সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাণ আর মন এক নয়। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টির মধ্যে তা একত্রে থাকে না। সজেন্য মানুষ বিশেষ গুণ নিয়ে সৃষ্টির সেরা জীব বলে বিবেচিত। প্রাণের দিক দিয়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য না থাকলেও মনের দিক দিয়ে এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। মন আছে বলেই মানুষ মঙ্গলের পথে, কল্যাণের পথে, সত্য ও সুন্দরের পথে, ন্যায়ের পথে চলতে অভ্যস্ত। মানবিক  মূল্যবোধের কারণে মানুষ আত্মপীড়িত, ব্যথিতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। নিরন্নকে অন্নদান করে, মন আছে বলেই মানুষ অন্যকে ভালোবাসে। মনই মানুষকে জ্ঞানী ও সংবেদনশীল করে গড়ে তুলতে পারে। সুখ-দু:খ, আনন্দ বেদনা, প্রেম-ভালবাসা ইত্যাদি অনুভূতি মানুষের মনের মাধ্যমে প্রক্রাশ পায়। যার মধ্যে এ ধরণের কোন অনুভূতি থাকে না তাকে স্বাভাবিক মানুষ বলে বিবেচনা করা হয় না; সে তখন অন্য প্রাণীর মতোই হয়ে পড়ে। প্রখ্যাত মনীষী দানিয়েলের ভাষায়, “একটি সুন্দর মন অন্ধকারে আলোর মতো, যার মাধ্যমে কলুষতার মাঝেও নিজের অস্তিত্বকে মর্যাদাসম্পন্ন রাখা যায়।” মানুষের এই সৃজনশীল ক্ষমতা ও মননশীলতা অন্যান্য প্রাণীর ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। তাই বলা হয়েছে—মন থাকলে মানুষ হয়, প্রাণ থাকলে প্রাণী। মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনই মানবজীবনের চরম লক্ষ্য।

মন্তব্য: মনুষ্যত্ব বিকাশের মাধ্যমে সত্যিকারের মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে মানুষ হয় পরিপূর্ণ।

 শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।

মুলভাব: শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে না। শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ কুসংস্কার, জড়তা ও হীনমন্যতা থেকে মুক্ত হয়ে জাতিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব: মেরুদণ্ডহীন মানুষ জড় পদার্থের মতো স্থবির, অচল। জীবন্মৃতের মতো সে এ সংসারে জীবনযাপন করে থাকে। তার দ্বারা সমাজ তথা দেশের কোনো মঙ্গল আশা করা যায় না। জীবনসংগ্রামে পরাজিত হয়ে সে তিলে তিলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এ পৃথিবী থেকে। তাই একজন মানুষকে সচল ও দণ্ডায়মান রাখতে যেমন মেরুদণ্ড প্রয়োজন, তদ্রুপ কোনো জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে মেরুদণ্ডসম শিক্ষার গুরুত্বও অপরিসীম। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি পৃথিবীকে তত প্রভাবিত করে। শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা ছাড়া কোনো জাতি বড় হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষাহীন জাতি উন্নতির পথে পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই শিক্ষাকে মেরুদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মেরুদণ্ডহীন মানুষ যেমন জগত-সংসারে অর্থব মূল্যহীন, তেমনই শিক্ষাহীন জাতি পৃথিবীতে ক্রমশ অস্তত্বহীন, অচল ও অসার হয়ে পড়ে। প্রায় এক যুগ আগে ফিলিপাইনের মিন্দানো দ্বীপে প্রাগৈতিহাসিক একটি জনগোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের শিক্ষা বা সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। তাই প্রকৃতির খেয়ালের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায়, তারা প্রায় বিলুপ্ত হতে যাচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে তারা শিক্ষিত মানবসমাজের সংস্পর্শ পেয়ে অনিবার্য ধ্বংস থেকে আত্মরক্ষা করার সুযোগ লাভ করেছে। ঐ মানবগোষ্ঠীটি যদি প্রগতিশীল বিশ্বের মানুষের সঙ্গে একই সময়ে শিক্ষার আলোকে আলোকিত হতো তাহলে তারা বিলুপ্তির পথে ধাবিত হতো না। শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ নানা কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার বেড়াজাল ভেঙে জাতিকে নিয়ে যেতে পারে উন্নতির চরম লক্ষ্যে। তাই শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ডরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মন্তব্য: শিক্ষাই জাতির আত্মপরিচয়ের বাহন। কোনো জাতিকে বিশ্বদরবারে উন্নত মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

মূলভাব: স্বাধীনতা মানুষের আজন্ম সাধনার জিনিস। যা অর্জনেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না বরং এর মর্যাদা ও মাহাত্মাকে সমুন্নত রাখাই দুঃসাধ্য বিষয়।

সম্প্রসারিত ভাব: স্বাধীনতাহীনতায় কোনো ব্যক্তি বা জাতি বাঁচতে চায় না। স্বাধীনতাহীনতা বস্তুত জীবনহীনতারই সমতুল্য। কেননা মৃত ব্যক্তি যেমন অসাড়, তেমনি পরাধীন ব্যক্তির জীবনও অবরুদ্ধ, অসাড়। পরাধীনতা মানবতাকে খর্ব করে, মানুষের জীবনকে করে অপমানিত। পরাধীন মানুষ ও সমাজের আত্মবিকাশের সুযোগ নেই। নেই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। অন্যের নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে মানুষের উচ্চবৃত্তি ও সুন্দর ভাবনাগুলোর অপমৃত্যু ঘটায়। ব্যক্তির মনোজাগতিক বিনাশ সমাজকেও করে অচলায়তন-বন্দি। সে জন্যই যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর পরাধীন জাতিগুলো স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। একদা সারা বিশ্বই কয়েকটি ঔপনিবেশিক জাতির শাসনাধীনে বন্দি হয়ে পড়েছিল। তার থেকে মুক্ত পেতে বিশ্বকে কম রক্ত দিতে হয় নি। আমাদের দেশ দুদশ বছর ইংরেজ শাসনাধীনে এবং পঁচিশ বছর পাকিস্তানি শাসকদের অধীনে ছিল। লাখ লাখ মানুষ এ পরাধীনতা-শৃঙ্খলমুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো পরাধীন জাতিই রক্তের বিনিময় ছাড়া স্বাধীনতার ছোঁয়া পায় নি। তবে প্রকৃত বিচারে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো একে রক্ষা করা। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে একে রক্ষা করার জন্যে সদাপ্রস্তুত থাকা একান্ত প্রয়োজন। স্বাধীনতা লাভের পর পরাধীনতার মতো জীবনযাপন না করে বলিষ্ঠ ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে স্বাধীনতাকে অম্লান রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তবেই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। নতুবা ঈপ্সিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হবে। আপন কর্মপ্রেরণা, চিন্তাধারা ও শৃঙ্খলা বোধের দ্বারাই প্রমাণ করতে হবে কাঙ্ক্ষিত-স্বাধীনতার যৌক্তিকতা। আর মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের মূল উদ্দশ্য হচ্ছে স্বাধীনতাপূর্ণ গৌরবোজ্জ্বল জীবনের বিকাশ।

মন্তব্য: পরাধীন জাতি কঠিন ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম, সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই স্বাধীনতার ব্যাপকতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।

Wednesday, July 15, 2020


# এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গারের ধন চুরি।

মূলভাব: পৃথিবীতে সম্পদশালীর সম্পদের প্রতি তৃষ্ণা প্রবল ও অসীম। তাদের অতৃপ্ত এ তৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার প্রয়াসে তারা নিরন্ন মানুষের সম্পদ কেড়ে নিতে কুণ্ঠা বোধ করে না।

সম্প্রসারিত ভাব: ধনীদের অসীম সম্পদ-ক্ষুধা কোনোদিনই পরিতৃপ্ত হয় না। তারা ক্রমাগত ধন-সম্পদ সঞ্চয় করতে থাকে। সমাজের দুর্বল অংশকে শোষণ করেই দিনের পর দিন তাদের সম্পদ পাহাড় সমান হয়ে ওঠে।  অন্যদিকে, বিশ্বেও বিত্তহীনরা ধনীদের শোষণে সর্বস্বান্ত হয়ে পরিণত হয় ভিক্ষুকে। বিত্তবানের এই অতিরিক্ত বিত্ত সংগ্রহের কারণে সমাজে দেখা দেয় অন্যায় ও অনিয়ম। অনিবার্য হয়ে ওঠে নানা অশান্তি, সংঘাত এবং সংগ্রাম। পৃথিবীতে যারা পর্যাপ্ত সম্পদের মালিক, তাদের সম্পদ তৃষ্ণা কোনোদিনই পরিতৃপ্ত হয় না। তারা যত পায়, তত চায়। বিবেকহীন, হৃদয়হীন এসব মানুষেরা নানাভাবে অপরের সম্পদ অপহরণ
করে নিজেদের স্ফীত করে তোলে। প্রবল সম্পদ তৃষ্ণার কারণে অসহায়, দরিদ্র্যদের সামান্য ঘরবাড়ি ছিনিয়ে নিতে তারা হয়ে ওঠে বিবেকহীন। ফলে দরিদ্র্য মানুষেরা সব কিছু হারিয়ে পথে বসে যায়। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ধনীদের উচিৎ অতিরিক্ত ধন-সম্পদ সঞ্চয় করা থেকে বিরত থাকা। বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের সাধনা হল শোষণ আর সামাজিক অবিচার দূর করে সম্পদের সমবণ্টনের মাধ্যমে এক শান্তির পৃথিবী সৃষ্টি করা। কিন্তু তা সুদূর ভবিষ্যৎ বলে আমার কাছে মনে হয়।

মন্তব্য: ধনীর যত ধন বাড়ুক তার প্রত্যাশা থাকে আরো ধন অর্জনের। তাই ধনীরা গরিবদের মাঝে ধন বিতরণ করে সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।


# জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে/চিরস্থীর কবে নীর হায়রে জীবন নদে।

মূলভাব: প্রাণী মাত্রই মরণশীল। প্রত্যেক প্রাণীকেই অনিবার্য মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। প্রাণী হিসেবে মানুষের মৃত্যুও অনিবার্য। মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে স্মরণী রাখতে পারে কেবল তার সৃষ্টিশীল কর্ম।

সম্প্রসারিত ভাব: মৃত্যুকে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে না। মৃত্যুকে ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই। তাই অযথা মৃত্যুভয়ে ভীত না হয়ে এই সত্যকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। প্রত্যেকের মহৎকাজে আত্মনিয়োগ করা উচিৎ। কেননা মহৎকর্মই মানুষকে পৃথিবীতে স্মরণীয় করে রাখে। পৃথিবীতে স্মরনীয় ব্যক্তিগণ তাঁদের কাজের মাধ্যমেই মানুষের হৃদযে স্মরণী হয়ে আছেন। যারা কোনো কাজ করে না, তাদের জীবন অর্থহীন। এসব অলস, কর্মবিমুখ, স্বার্থপর মানুষেরা মৃত্যুর সাথে সাথে পৃথিবীতে থেকে হারিয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকতে চায়। মানুষের এ আশা পূরণ করার একমাত্র উপায় মহৎকর্ম। তাই সর্বদা আমাদের মহৎকর্ম করা উচিৎ।

মন্তব্য: মানুষ মরে যাবে তা নিয়তি। কাজেই মহিমাময় কর্মই মানুষকে চিরজীবী করে তোলে।

Friday, July 3, 2020

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান।

মূলভাব: মানুষের জীবনে সবচয়েে মূল্যবান জিনিস হল তার জ্ঞান। জ্ঞানহীন মানুষরে সাথে পশুর র্পাথক্য থাকে খুব সামান্যই।

সম্প্রসারতি ভাব: জৈবিক পরিচয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ প্রাণী। প্রাণের অস্তিত্ব হেতু মানুষের সাথে অন্যান্য ইতর প্রাণীর কোনো মৌলিক র্পাথক্য নেই। কিন্তু এ কথা সত্য, মানুষ সৃষ্টির সেরা। তার সম্মান আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে র্সবোচ্চ র্পযায়ে বিশ্বের অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। মানুষও সব কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠা করেছে তার আধিপত্য। ইতর প্রাণী  থেকে  মানুষের শ্নুরেষ্ষঠ হবার রহস্রেয কোথায়? বস্তুত মানুষ জ্ঞান শক্তির কল্যাণে সমগ্র  বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও মূল্যবোধের কারণে মানুষ নিজের জীবন নিজের চেষ্টায় সুন্দর করতে পারে। ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ প্রভৃতির র্পাথক্য করে নিজের জীবন এবং দেশ ও জাতিকে কল্যাণময় করার ক্ষমতা কেবল মানুষেরই আছে। বুদ্ধিমান প্রাণী বলেই প্রাণী বলেই একদিকে মানুষের রয়েছে জ্ঞানশক্ত, অন্যদিকে রয়েছে মনুষ্যত্বের ছোঁয়ায় নৈতিক শক্তি। অথচ অন্যান্য প্রাণী জ্ঞানহীন বলে তাদের জীবন বিকাশ জৈবিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সুন্দর-অসুন্দর, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা এ সবের বালাই নেই পশুজীবনে। পশুরা ইন্দ্রিয় ও প্রানর্সবস্ব। খাওয়া আর অন্যান্য কর্মের মধ্যেই পশুর জীবন আর্বতিত। নিজেদের চেষ্টায়তারা তাদের জীবনকে চালাতে পারে না, করতে পারে না বিকশিত। ফলে তারা প্রাকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কন্তিু পৃথিবীতে সকল মানুষ জন্মমাত্রই যে জ্ঞানবুদ্ধির অধিকারি তথা আশরাফুল মাখলুকাতরূপে শ্রেষ্ঠত্বের র্গব প্রাপ্য তা নয়। যে মানুষ যথাযথ পড়ালেখা, অভজ্ঞিতা ও মানবকি সাহর্চযে জ্ঞার্নাজনে র্ব্যথ হয়, র্ব্যথ হয় নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে, সে মানুষ হয়েও পশুর র্পযায়ভুক্ত। সে ভালমন্দ, সুন্দর-অসুন্দর বলে কোনো কিছুর র্পাথক্য করতে পারে না। সৌজন্য ও নৈতিকতাও তার কাছে ধরা দেয় না। ফলে সে ইন্দ্রিয়পরায়ণ হয়ে  পড়ে । মানবতার কল্যাণ চেতনা থেকে তারা হয় বঞ্চিত।

মন্তব্য: জ্ঞানহীন মানুষের দ্বারা কেউ উপকৃত হয় না। তার সঙ্গও কেউ কামনা করে না। তাই জীবনে জ্ঞানের সঞ্চয় করা দরকার।

আত্মশক্তি র্অজনই শক্ষিার উদ্দশ্যে।

মূলভাব: শক্ষিার প্রকৃত উদ্দশ্যেই হল আত্মশক্তি র্অজন করা। আত্মশক্তি র্অজন করা প্রতটিা মানুষরে র্কতব্য। যে ব্যক্তরি কোনো আত্মশক্তি নইে সে পরনর্ভিরশীল।

সম্প্রসারতি ভাব: মানুষের বিভিন্ন মানবীয় ও মহৎ গুনাবলরি মধ্যে আত্মশক্তি অন্যতম। কেউ আত্মশক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে,  আবার কেউ পারে না। আত্মশক্তির বলে মানুষ নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে ও কাজর্কম করতে পারে। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখন সামান্য কাজেও তাকে অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। আত্মশক্তি মানুষের মাঝে গুপ্তধনের মতোই অজ্ঞাতভাবে থাকে। আত্মশক্তি মানুষের একটি সুপ্ত প্রতিভা। শিক্ষার মাধ্যমেই এটা একজন মানুষের অন্তরে পুরোপুরিভাবে বিকশিত হতে পারে।  যে শিক্ষা মানুষকে তার আত্মপ্রত্যয়ে উজ্জীবতি করে না, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। কারণ শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের এ সুপ্ত প্রতিভাবে পুরোপুরিভাবে বিকশিত করা। শিক্ষা মানুষকে আত্মবশ্বিাস প্রসারে সাহায্য করে। আত্মবশ্বিাস আত্মশক্তিরই নামান্তর। মানুষকে সুন্দর, সমৃদ্ধি ও সুখী জীবন লাভ করার জন্য অন্যকে দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়, অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয় এবং অনেক প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ এ সংগ্রামে বিজয়ী হতে পারে না। আত্মশক্তি দ্বারা মানুষ নিজের দোষ-গুণ, ভালােমন্দ বুঝতে পারে। নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে আস্থাশীল হয়, জীবনরে চরম ও পরম সত্য লাভ করতে সর্মথ হয়। নিজেকে বুঝতে, শিখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। শিক্ষাজীবনকে সুন্দর, সুচারু এবং আত্মনর্ভিরশীলরূপে গড়ে তোলে। জীবন র্সাথক হয়। হাদিসে আছে, যে শিক্ষা গ্রহণ করে, তার মৃত্যু  নেই। মূলকথা হল, মানুষকে আত্মশক্তি র্অজন করতে হলে শিক্ষিত হতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সুতারং শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ যাতে আত্মবশ্বিাসে বলীয়ান হয় সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আর  নিজেকে জানা, নিজের ক্ষমতা-অক্ষমতা, নিজের শক্তি-দুর্বলতা সম্বন্ধে সম্যক উপলব্ধি করতে পারা শিক্ষার উদ্দেশ্য।

মন্তব্য: আত্মশক্তি মানুষেরএকটি সুপ্ত প্রতিভা, শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের অন্তরে যাতে আত্মশক্তি বিকশিত হয় সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ আত্মশক্তিহীন মানুষ পরমুখাপক্ষেী, যা কাম্য নয়।


লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

মূলভাব: লোভ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয় ও তাকে অসৎ উপায় অবলম্বন করতে প্ররোচিত করে। লোভের পরিণাম অতি ভয়াবহ-এমনকী মৃত্যুও বিচিত্র নয়।

সম্প্রসারিত ভাব: লোভী মানুষ পাপকার্য করতে দ্বিধাবোধ করে না। ভোগের নিমিত্তে উদ্ভ্রান্ত আবেগ আর অদম্য বাসনা থেকেই জাগতিক যাবতীয় পাপের উৎপত্তি। লোভের মোহে থেকে মানুষ সত্য ও সুন্দরকে অবজ্ঞা করে। সে পার্থিব ধন-সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন সে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তখন সে পাপাচারে লিপ্ত হয়। সে ক্রমান্বয়ে অবৈধ ও মন্দ পথের দিকে অগ্রসর হয়। ভোগের লালসায় শুরু হয় পাপের উৎসব। মানুষ এ সময় হয়ে ওঠে পশুর মত। তার এ পাপাচার তাকে মৃত্যুও দিকে ঠেলে দেয়। অপরদিকে নির্লোভ ব্যক্তি পাপ মুক্ত সত্য ও সুন্দর জীবন লাভ করে। তার জীবনে লোভের তাড়না থাকে না, থাকে না পাপের অস্তিত্ব। লোভী ব্যক্তি অন্যায়, অসত্য আর পাপের পথে ধাবিত হয়ে অকাল মৃত্যুও মুখোমখি হয়। 

মন্তব্য: লোভ বর্জন না করলে জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায় না। নির্লোভ জীবন সকলের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্জন করে।

একতাই বল।

মূলভাব: সকলে মিলেমিশে কাজ করার মধ্যে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি সবাই মিলে যে কোনো কঠিন কাজও সহজে করা যায়। পৃথিবীতে যে ব্যক্তি নিঃসঙ্গ ও একা, সে নিঃসন্দেহে অসহায়।  

সম্প্রসারিত ভাব: একজন মানুষ যখন একা তখন তার শক্তি থাকে সীমিত। কিন্তু যখন একতাবদ্ধ হয়ে দশজন একসঙ্গে কোনো কাজে হাত দেয় তখন সে হয় অনেক সবল ও শক্তিশালী। এই একতাবদ্ধ শক্তি তখন রূপ নেয় প্রচণ্ড শক্তিতে। তখন যে কোনো কঠিন কাজ আর কঠিন মনে হয় না। এজন্য প্রয়োজন একতার। পৃথিবীর আদিপর্বে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। কারণ তখন সে ছিল একা। সভ্যতার উষালগ্নে মানুষ উপলব্ধি করল যে, ঐক্যবদ্ধ জীবন ছাড়া এ পৃথিবীর সমস্ত প্রতিকূলতার কাছে সে ছিল তুচ্ছ। তাই মানুষ স্বীয় প্রয়োজনে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করার জন্যে গড়ে তোলে সমাজবদ্ধ জীবন, হয়ে ওঠে সামাজিক বলে বলিয়ান। পৃথিবীতে যে একা, সেই অসহায়। আর যে অসহায় তার সামর্থ্য নেই বললেই চলে। বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা মিলে তৈরি হয় বিশাল জলরাশি। ঠিক অনেক ব্যক্তি মিলে গঠিত হয় জাতীয় শক্তি, যা জাতীয় জীবনে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হয়। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ ছিল বলে পাক বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছিল। শুধু জাতীয় জীবনে নয়, আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও একতার প্রয়োজন।

মন্তব্য: সভ্যতার বিকাশে চাই মানুষের একতাবদ্ধ প্রয়াস।

বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।

মূলভাব: বাঙালি জাতি গৌরবময় ইতিহাসে সমৃদ্ধ। কোনো অন্যায়ের সাথে আপোস করে না।

সম্পসারিত ভাব: বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস। এ জাতি কারও অধীনতা কোনো দিন মেনে নেয় নি। অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থান চিরকালই ছিল বজ্রকঠিন। তাই এখানে বার বার বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। দীর্ঘ দুইশ বছরের শাসন, শোষণ শেষে বাংলাকে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে নামমাত্র স্বাধীনতা দেওয়া হয়। পাকিস্তানের বিমাতাসুলভ আচরণ বাঙালিদের অল্প পরেই মুক্তির জন্য সংগ্রামী করে তোলে। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মুক্তি-সংগ্রামের দিকে। ১৯৫৮ ও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসক বাংলার দামাল ছেলেদের ওপর গুলি চালায়। গুলি করে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানেও। বারবার বাঙালির বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তবুও তাদের স্বাধীনতার দাবিকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি জান্তা-বাহিনী। তাই তারা ১৯৭১-এ বাঙালির ওপর চ’ড়ান্ত আঘাত হানে। তখন বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি-সংগ্রামে। বাঙালির বুকের তাজা রক্তে লাল হয় বাংলার মাটি। 

মন্তব্য: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলার স্বাধীনতা।

সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।

মূলভাব: মানুষ যে সমাজের ওপর নির্ভর করে বসবাস করে সে সমাজে আছে নানা ধরনের লোক; ভালো আর মন্দ। সঙ্গ নির্বাচনে একমাত্র বিবেচনার দিক হল গুণী ব্যক্তি-যার সহায়তায় জীবন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেখানে দুর্জন বা চরিত্রহীন মানুষকে জীবন ভর দূরে রাখতে হবে।

সম্প্রসারতি ভাব: মানুষের বড় গুণ তার চরিত্র। চরিত্রের গুণেই মানুষ শ্রেষ্ট আদর্শের মর্যাদা পায়। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো আবশ্যক। তাই কুসঙ্গ নয়, সৎসঙ্গের মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে হবে। কুসঙ্গে মানুষ অমানুষ হয়ে ওঠে, তার সদগুণগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে পশুর মত অধম। জন্মগত ভাবেই মানুষ সত্যকে ভালোবাসে। আর অসৎ পথে যাওয়ার মূল কারণ অসৎসঙ্গ। অসৎসঙ্গের মধ্য দিয়ে মানুষের চরিত্র কুলষিত হয়। যেমন- রোহা ওজনে খুব ভারী বলে তা পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু লোহা যদি হালকা কাঠ বা অসার কোনো পদার্থের সাথে বেঁধে দেওয়া যায়, তাহলে লোহা ভেসে ওঠে, ডুবে না। মানুষও অসৎ সঙ্গের প্রভাবে পাল্টে যায়। কুসঙ্গ চরিত্রহীনতার অন্যতম কারণ। অথচ চরিত্রের মাধ্যমেই ঘোষিত হয় মানুষের জীবনের গৌরব। চরিত্র দিয়ে সত্যিকার মানুষের গৌরবময় বৈশিষ্ট্য তা অন্য কিছু দিয়ে সম্ভব নয় বলে সবার ওপরে চরিত্রের সুমহান মর্যাদা স্বীকৃত। সমাজের মানুষের শ্রদ্ধা, ভারোবাসা পাওয়ার মূলে থাকে তার উত্তম চরিত্র। পরশ পাথরের স্পর্শে যেমন লোহা সোনায় পরিণত হয়, তেমনি সৎ সঙ্গে মানুষ উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়। আবার অসৎসঙ্গে মানুষ পশুর চেয়ে অধম হয়ে পড়ে।

মন্তব্য: এজগতে যত লোকের অধঃপতন হয়েছে তার অন্যতম কারণ অসৎসঙ্গ। তাই সঙ্গ নির্বাচনে আমাদের সর্তক হতে হবে।