চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Showing posts with label নবম-দশম শ্রেণি: সারাংশ. Show all posts
Showing posts with label নবম-দশম শ্রেণি: সারাংশ. Show all posts

Tuesday, May 11, 2021

# মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণ- মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এই বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিয়াছে, জগতের কল্যাণ সাধন করিতেছে; পশুবল ও অর্থবল মানুষকে বড় বা মহৎ করিতে পারে না। মানুষ হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়। প্রকৃত মানুষই জাতীয় জীবনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন আনয়নে সক্ষম।

সারাংশ: বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে পৃথক করে তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্ববোধের মাধ্যমে মানুষ সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে জগতের কল্যাণসাধন করছে। জাতীয় উন্নতির জন্যও এই জ্ঞান ও মনুষ্যত্ববোধই প্রয়োজন, অর্থবল বা পেশীশক্তি নয়।


# ছাত্রজীবন আমাদের ভবিষ্যৎ-জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময় যে যেমন বীজ বপন করবে, ভবিষ্যৎ-জীবনে সে সেরূপ ফল ভোগ করবে। এ সময় যদি আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে জ্ঞানের অনুশীলন করে যাই তবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় হবে। আর যদি হেলায় সময় কাটিয়ে দেই, তাহলে জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে শিক্ষা জীবন ও জীবিকার পথে কল্যাণকর, যে শিক্ষা মানুষকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে, তাই সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা। ছাত্রদের জীবন গঠনে শিক্ষকসমাজ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের সুষ্ঠু পরিচালনার মধ্যে দিয়েই ছাত্রদের জীবন গঠিত হয় এবং উন্মুক্ত হয় মহত্তর সম্ভাবনার পথ।

সারাংশ: আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা ছাত্রজীবনের ওপরই নির্ভর করে। জীবন, জীবিকা এবং উন্নত চরিত্র গঠনের পক্ষে সহায়ক এমন শিক্ষাই ছাত্রদেরকে প্রদান করা উচিত। আর এ পথে শিক্ষার্থীদের পরিচালনা করে তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষকসমাজের।

Thursday, July 30, 2020

খুব ছোট ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যেমন সূর্যকে দেখা যায়, তেমনি ছোট ছোট কাজের ভেতর দিয়েও কোন ব্যক্তির চরিত্র ফুটে ওঠে। বস্তুত মর্যাদাপূর্ণভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন ছোট ছোট কাজেই চরিত্রের পরিচয়। অন্যের প্রতি আমাদের ব্যবহার কীরূপ তাই হচ্ছে আমাদের চরিত্রের শ্রেষ্ঠ পরীক্ষা। বড়, ছোট সমতুল্যের প্রতি সুশোভন ব্যবহার আনন্দের নিরবচ্ছিন্ন উৎস।

সারাংশ: চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর চরিত্র প্রকাশ পায় তার ভালো কাজের মাধ্যমে, তা যত ছোটই হোক। ছোট বড় সবার সাথে ভালো ব্যবহারই চরিত্রের পরিচয় এবং আনন্দের উৎস।


বাল্যকাল হইতেই আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক, তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি। তেমন করিয়া কোনো মতে কাজ চলে মাত্র; কিন্তু মনের বিকাশ লাভ হয় না। হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে; কিন্তু আহারটি রিতিমত হজম করিতে অনেকগুলো অপাঠ্য পুস্থকের সাহায্য আবশ্যক। ইহাতে আনন্দের সহিত পড়িতে পড়িতে পরিবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। গ্রহণ শক্তি, ধারণা শক্তি, চিন্তা শক্তি বেশ সহজে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ফল লাভ করে।

সারাংশ: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। শিক্ষার সাথে আনন্দ না থাকলে সে শিক্ষা হৃদয়ে স্থান লাভ করে না। ধরনের শিক্ষা দিয়ে কোনো রকম কাজ চললেও মানবিক বিকাশ সাধিত হয় না। তাই শিক্ষাকে আনন্দের অনুসঙ্গ করতে হবে।


অপরের জন্য তুমি তোমার প্রাণ দাও, আমি বলতে চাই নে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর করো। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বলো। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটা করুণ কটাক্ষ নিক্ষেপ করো। তাহলেই অনেক হবে। চরিত্রবান, মনুষ্যত্বসম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন, পরের দুঃখকে ঢেকে রাখতে গৌরববোধ করেন।

সারাংশ: অন্যের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই ।জীবন উৎসর্গ না করে ছোট ছোট দুঃখ দূর করার মধ্য দিয়েও অন্যকে সুখী করা যায়। নিজের কথা না ভেবে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে অসহায় মানুষ উপকৃত হয়। মহৎ ব্যক্তিরা এভাবে সর্বদাই নিজের সুখ-দুঃখকে উপেক্ষা করে পরের কল্যাণ কামনায় ব্রতী হন।

 

 শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ কর। কালিধুলার মাঝে, রৌদ্রবৃষ্টিতে কাজের ডাকে নেমে যাও। বাবু হয়ে ছায়ায় পাখার তলে থাকবার কোনো দরকার নেই। হচ্ছে মৃত্যুর আয়োজন। কাজের ভিতর কুবুদ্ধি, কুমতলব মানবচিত্তে বাসা বাঁধতে পারে না। কাজে শরীরে সামর্থ্য জন্মে, স্বাস্থ্য, শক্তি, আনন্দ, স্ফূর্তি সকলই ভাল হয়। পরিশ্রমের পর যে অবকাশ লাভ হয় তা পরম আনন্দের অবকাশ। তখন কৃত্রিম আয়োজন করে আনন্দ করবার কোনো প্রয়োজন হয় না। শুধু চিন্তার দ্বারা জগতের হিত সাধন হয় না। শুধু চিন্তা করে মানুষ পূর্ন জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয় না। মানবসমাজে মানুষের সঙ্গে কজে, রাস্তায়, কারখানায়, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করে। চিন্তা পুস্তক মানব মনের পাঁপড়ি খুলে দেয় মাত্র, বাকি কাজ সাধিত হয় সংসারের কর্মক্ষেত্রে।

সারাংশ: আলস্য মানবজীবনের মৃত্যু ডেকে আনে আর কাজ জীবনকে সুন্দর করে তোলে। শুধু চিন্তা দিয়ে জগতের হিত সাধন হয় না বরং চিন্তার সঙ্গে যখন কর্ম যোগ হয় তখনই মানব কল্যাণ সাধিত হয়, সুন্দর হয় বিশ্বজগৎ।


প্রকৃত জ্ঞানের স্পৃহা না থাকলে শিক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তখন পরীক্ষায় পাসটাই বড় হয় এবং পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠায় জ্ঞান সীমাবৃদ্ধ থাকে। এই কারণেই পরীক্ষায় পাস করা লোকের অভাব নেই আমাদের দেশে, কিন্তু অভাব আছে জ্ঞানীর। যেখানেই পরীক্ষা-পাসের মোহ তরুণ ছাত্রছাত্রীদের উৎকণ্ঠিত রাখে, সেখানেই জ্ঞান নির্বাসিত জীবনযাপন করে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জগতের বুকে অক্ষয় আসন লাভ করতে হলে জ্ঞানের প্রতি তরুণসমাজকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সহজ লাভ আপাতত সুখের হলেও জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচিত হবে না।

সারাংশ: শিক্ষায় জ্ঞানের আগ্রহ না থাকলে সেই শিক্ষা ব্যর্থ হয়। কেবল পরীক্ষা পাস নয়, জ্ঞানার্জনই শিক্ষার লক্ষ্য। জ্ঞানচর্চার মধ্যে স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিহত। কাজেই পরীক্ষা পাসের সহজ লাভ থেকে দৃষ্টি পরিবর্তন করে জ্ঞানচর্চায় মনোযোগী হওয়া আবশ্যক।


অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মতো দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ-কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়। অতএব অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও, আর শুরু করো দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে।

সারাংশ: মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো বর্তমান। অতীত এবং ভবিষ্যতের ভাবনা মানুষের জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনে না। বরং তা মানুষকে শক্তিহীন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং স্নায়ুবিকভাবে দুর্বল করে তোলে। তাই জীবনকে সফল করে তুলতে হলে অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বর্তমানকে গুরুত্ব দিতে হবে।


    মুখে অনেকেই টাকা তুচ্ছ, অর্থ অনর্থের মূল বলিয়া থাকেন। কিন্তু জগৎ এমন ভয়ানক স্থান যে টাকা না থাকিলে তাহার স্থান কোথাও নাই। সমাজে নাই, স্বজাতির নিকট নাই, ভ্রাতা-ভগিনীর নিকটে নাই, স্ত্রীর নিকটে নাই। স্ত্রীর ন্যায় ভালোবাসে এমন বলতে জগতে আর কে আছে? টাকা না থাকিলে অমন অকৃত্রিম ভালোবাসারও আশা নাই। কাহারও নিকট সম্মান নাই। টাকা না থাকিলে রাজায় চিনে না, সাধারণে মান্য করে না, বিপদে জ্ঞান থাকে না। জন্মমাত্র টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তে টাকা, জগতে টাকারই খেলা।

সারাংশ: অর্থকে অনর্থের মূল বলা হলেও মূলত এটি অত্যন্ত মূল্যবান। অর্থ বিত্তহীন মানুষকে তার পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্রই অসম্মানের চোখে দেখা হয়। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাই অর্থই প্রধান অবলম্বন।

 

কিসে হয় মর্যাদা ? দামি কাপড়, গাড়ি, ঘোড়া ও ঠাকুরদাদার কালের উপাধিতে? - মর্যাদা এইসব জিনিসে নাই। আমি দেখতে চাই তোমার ভিতর, তোমার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরোয় কিনা। তোমায় দেখলে দাসদাসী দৌড়ে আসে। প্রজারা তোমায় দেখে সন্ত্রস্ত হয়, তুমি মানুষের ঘাড়ে চড়ে হাওয়া খাও, মানুষকে দিয়ে জুতা খোলাও, তুমি দিনের আলোতে মানুষের টাকা আত্মসাৎ কর। বা-মা-শ্বশুর-শাশুড়ি তোমায় আদর করেন। আমি তোমায় অবজ্ঞায় বলব- যাও।

সারাংশ: সমাজে মানুষের মর্যাদা অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতা, আভিজাত্য ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত হয় না। মিথ্যা আভিজাত্য, অহমিকা, অর্থলোভ, দুশ্চরিত্র ইত্যাদি মানুষকে অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত করে।


Tuesday, July 21, 2020

সারাংশ

# অভাব আছে বলিয়া জগৎ বৈচিত্র্যময় হইয়াছে। অভাব না থাকিলে জীব-সৃষ্টি বৃথা হইত। অভাব আছে বলিয়া অভাব-পূরণে এত উদ্যোগ। সংসার অভাবক্ষেত্র বলিয়া কর্মক্ষেত্র। অভাব না থাকিলে সকলেই স্থানু-স্থবির হইত, মনুষ্যজীবন বিড়ম্বনাময় হইত। মহাজ্ঞানীগণ অপরের অভাব দূর করিতে সর্বদা ব্যস্ত। জগতে অভাব আছে বলিয়াই মানুষ সেবা করিবার সুযোগ পাইয়াছে। সেবা মানবজীবনের পরম ধর্ম। সুতরাং অভাব হইতেই সেবাধর্মের সৃষ্টি হইয়াছে। আর এই সেবাধর্মের দ্বারাই মানুষের মনুষ্যত্বসুলভ গুণ সার্থকতা লাভ করিয়াছে।

সারাংশ: অভাব মানুষকে কর্মের পথে চালিত করে জগতকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। অভাব আছে বলেই মানবজীবন চলমান। এ অভাব থেকেই সেবাধর্ম উৎপত্তি লাভ করেছে। অপরের অভাব পূরণের ইচ্ছা এবং তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার মধ্য দিয়েই মানুষ মহান হয়ে ওঠে।

# অভ্যাস ভয়ানক জিনিস। একে হঠাৎ স্বভাব থেকে তুলে ফেলা কঠিন। মানুষ হবার সাধনাতেও তোমাকে সহিষ্ণু হতে হবে। সত্যবাদী হতে চাও? তাহলে ঠিক করো, সপ্তাহে অন্তত এক দিন মিথ্যা বলবে না। ছ’মাস ধরে এমনই করে নিজে সত্য কথা বলতে অভ্যাস করো। তারপর এক শুভ দিনে আর একবার প্রতিজ্ঞা করো, সপ্তাহে তুমি দুদিন মিথ্যা বলবে না। এক বছর পরে দেখবে সত্য কথা বলা তোমার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে পড়বে। সাধনা করতে করতে এমন একদিন আসবে যখন ইচ্ছে করলেও মিথ্যা বলতে পারবে না। নিজেকে মানুষ করার চেষ্টায় পাপ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রামে তুমি হঠাৎ জয়ী হতে কখনও ইচ্ছা করো না, তাহলে সব প- হবে।

সারাংশ: মানুষ এমনভাবে অভ্যাস দ্বারা বশীভূত সে সহজে তার অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারে না। তবে প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য খারাপ অভ্যাসগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। হঠাৎ করেই মানুষ তার খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে গেলে সব পন্ড হয়ে যায়। ধীরে ধীরে অনুশীলনের মাধ্যমেই বদ অভ্যাস পরিবর্তন করে একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব।

সারাংশ

# মানুষের সুন্দর মুখ দেখে আনন্দিত হয়ো না। স্বভাবে সে সুন্দর নয়, দেখতে সুন্দর হলেও তার স্বভাব, তার স্পর্শ, তার রীতিনীতিকে মানুষ ঘৃণা করে। দুঃস্বভাবের মানুষ মানুষের হৃদয়ে জ্বালা ও বেদনা দেয়। তার সুন্দর মুখে মানুষ তৃপ্তি পায় না। অবোধ লোকেরা মানুষের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তার ফল ভোগ করে। যার স্বভাব মন্দ, সে নিজেও দুষ্ক্রিয়াশীল, মিথ্যাবাদী, দুর্মতিকে ঘৃণা করে। মানুষ নিজে স্বভাবে সুন্দর না হলেও সে স্বভাবের সৌন্দর্যকে ভালোবাসে। স্বভাব গঠনে কঠিন পরিশ্রম ও সাধনা চাই, নইলে শয়তানকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।

সারাংশ: বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্বভাবের সৌন্দর্যই মানুষকে বিচারের মাপকাঠি। খারাপ স্বভাবের মানুষও বাহ্যিক সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারে। আর যারা খারাপ স্বভাবের তারাও সুন্দর স্বভাবের মানুষকে পছন্দ করে। তাই কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে সুন্দর স্বভাবের অধিকারী হতে হবে।


# মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্রে, মনুষ্যত্বে, জ্ঞানে ও কর্মে। বস্তুত চরিত্র বলেই মানুষের জীবনের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে। চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, মানুষ যদি মানুষকে শ্রদ্ধা করে, সে শুধু চরিত্রের জন্যে, অন্য কোনো কারণে মানুষের মাথা মানুষের সামনে এত নত করার দরকার নেই। জগতে যে সকল মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গৌরবের মূলে এই চরিত্রশক্তি। তুমি চরিত্রবান লোক, একথার অর্থ এই নয় যে, তুমি লম্পট নও। তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করো, তুমি পরদুঃখকাতর ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতাপ্রিয়, চরিত্রবান মানে এই।

সারাংশ: চরিত্র মানবজীবনের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। চরিত্র বলেই মানুষ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়, লাভ করে অপরের শ্রদ্ধা। আর চরিত্রবান বলতে মূলত সত্যবাদী, বিনয়ী, জ্ঞানবান, পরদুঃখকাতর, ন্যায়বান, স্বাধীনতাপ্রিয় ব্যক্তিকে বোঝায়।

Friday, July 10, 2020

# সময় ও স্রোত কারও অপেক্ষায় বসে থাকে না। চিরকাল চলতে থাকে। সময়ের নিকট অনুনয় কর, একে ভয় দেখাও, ভ্রুক্ষেপও করবে না, সময় চলে যাবে আর ফিরবে না। নষ্ট স্বাস্থ্য ও হারানো ধন পুনঃপ্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু সময় একবার গত হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। গত সময়ের জন্য অনুশোচনা করা নিষ্ফল। যতই কাঁদ না কেন, গত সময় কখনও ফিরে আসবে না।

সারাংশ: সময় থেমে থাকে না। স্বাস্থ্য ও ধন হারালে তা পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব, কিন্তু যে সময় চলে গেছে তা আর ফিরে পাওয়া যায়না। তাই সময়ের কাজ সময়ে করা উচিত।

# ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই হল জ্ঞানীর কাজ। পিপঁড়ে-মৌমাছি পর্যন্ত যখন ভবিষ্যতের জন্য ব্যতিব্যস্ত, তখন মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। ফকির-সন্ন্যাসী যে ঘরবাড়ী ছেড়ে, আহার-নিদ্রা ভুলে, পাহাড়-জঙ্গলে চোখ বুজে বসে থাকে, সেটা যদি নিতান্ত গঞ্জিকার কৃপায় না হয়, তবে বলতে হবে ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে। সমস্ত জীব-জন্তুর দুটো চোখ সামনে থাকবার মানে হল ভবিষ্যতের দিকে যেন নজর থাকে। অতীতের ভাবনা ভেবে লাভ নেই। পণ্ডিতেরা তা বলে গেছেন, ‘গতস্য শোচনা নাস্তি’। আর বর্তমানে নেই বললেই চলে। এই যেটা বর্তমান সেই-এই কথা বলতে বলতে অতীত হয়ে গেল। কাজেই তরঙ্গ গোণা আর বর্তমানের চিন্তা করা সমানই অনর্থক। ভবিষ্যত হল আসল জিনিস। সেটা কখনও শেষ হয় না। তাই ভবিষ্যতে মানব কেমন হবে সেটা একবার ভেবে দেখা উচিত।

সারাংশ: ভবিষ্যতই মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। বর্তমান প্রতি মুহূর্তে অতীতের গহ্বরে মিশে যায়। অফুরন্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ। জ্ঞানীদের মতো ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে কাজ করতে পারলেই জীবন সার্থক ও সুন্দর হয়ে ওঠে।

সারাংশ


আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থের বা বিত্তের ওপর নির্ভরশীল।

আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থের বা বিত্তের ওপর নির্ভরশীল। লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি কেবল আগে যাবার নেশায় লক্ষ্যহীন প্রচ-বেগে শুধু আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় না করতে পারে, তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই হয়তো লোপ পেয়ে যাবে। মানুষের জীবন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেখান থেকে আর হয়তো নামবার উপায় নেই, এবার উঠবার সিঁড়ি না খুঁজলেই নয়। উঠবার সিঁড়িটা না খুঁজে পেলে আমাদের আত্মবিনাশ যে অনিবার্য তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না।

সারাংশ: অর্থ-বিত্তের লোভে মানুষ এতটা উন্মত্ত হয়েছে যে, সে তার বাস্তব জ্ঞানও হারিয়ে ফেলছে। মানুষ তার মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে ক্রমশ আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। এ অবস্থা থেকে পিছিয়ে আসার উপায় হয়তো নেই। কিন্তু গোটা মানব জাতির মঙ্গলের জন্য এ নেশা পরিত্যাগের পথ খোঁজাটা আজ অপরিহার্য।

#   এটা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, পৃথিবীতে যেখানে তুমি থামবে,

এটা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, পৃথিবীতে যেখানে তুমি থামবে, সেখান হতেই তোমার ধ্বংস আরম্ভ হবে। কারণ তুমিই কেবল একলা থামবে, আর কেউ থামবে না। জগৎ-প্রবাহের সঙ্গে সমগতিতে যদি না চলতে পারে তো প্রবাহের সমস্ত সচল বেগ তোমার ওপর এসে আঘাত করবে, একেবারে বিদীর্ণ বিপর্যস্ত হবে কিংবা অল্পে অল্পে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কালস্রোতের তলদেশে অন্তর্হিত হয়ে যাবে। হয় অবিরাম চলো এবং জীবনচর্চা করো, নয় বিম্রাম করো এবং বিলুপ্ত হও পৃথিবীর এই রকম নিয়ম।

সারাংশ: গতিশীল ও কর্মময় জীবনে সর্বদা মানুষকে সমানতালে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। অন্যথায়, গতির আঘাতে জীবন স্থবির, ক্ষয়প্রাপ্ত, বিলুপ্ত ও বিপর্যপ্ত হয়ে সাগরের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। তাই কর্মময় জীবন চর্চায় গতিশীলতা পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়ম।

সারাংশ

# স্বাধীন হবার জন্য যেমন সাধনার প্রয়োজন, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার। সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধহীন জাতি যতই চেষ্টা করুক, তাহাদের আবেদন নিবেদনে ফল হয় না। যে জাতির অধিকাংশ ব্যক্তি মিথ্যাচারী, সেখানে দু-চার জন সত্যনিষ্ঠকে বহু বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু মানুষ জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে, সে কষ্ট সহ্য না করে উপায় নেই।

সারাংশ: কঠোর সাধনার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। আবার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যও প্রয়োজন সত্যনিষ্ঠা এবং ন্যায়পরায়নতা। যে দেশে মিথ্যাচারীর সংখ্যা বেশি সে দেশে মুষ্টিমেয় সত্যনিষ্ঠকে অনেক যন্ত্রণা এবং দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু জাতিকে মর্যাদাবান করে তোলার জন্য এ দুর্ভোগ সহ্য না করে উপায় নেই।


# মাতৃস্নেহের তুলনা নাই, কিন্তু অতি স্নেহ অনেক সময় অমঙ্গল আনয়ন করে। যে স্নেহের উত্তাপে সন্তানের পরিপুষ্টি, তাহারই আধিক্যে সে অসহায় হইয়া পড়ে। মাতৃহৃদয়ের মমতার প্রাবল্যে মানুষ আপনাকে হারাইয়া আপন শক্তির মর্যাদা বুঝিতে পারে না। নিয়ত মাতৃস্নেহের অন্তরালে অবস্থান করিয়া আত্মশক্তির সন্ধান সে পায় না-দুর্বল, অসহায় পক্ষীশাবকের মতো চিরদিন স্নেহাতিশয্যে আপনাকে সে একান্ত নির্ভরশীল মনে করে। ক্রমে জননীর পরম সম্পদ সন্তান অলস, ভীরু, দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হইয়া মনুষ্যত্ব বিকাশের পথ হইতে দূরে সরিয়া যায়। অন্ধ মাতৃস্নেহ সে কথা বুঝে না-অলসকে সে প্রাণপাত করিয়া সেবা করে-ভীরুতার দুর্দশা কল্পনা করিয়া বিপদের আক্রমণ হইতে ভীরুকে রক্ষা করিতে ব্যর্থ হয়।

সারাংশ: সন্তানের জন্য মাতৃস্নেহ প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত স্নেহ পরিণামে সন্তানের জন্য অমঙ্গলই বয়ে আনে। অন্ধ মাতৃস্নেহের সুযোগে আত্মশক্তির, মানুষ্যত্বের বিকশে বাধাগ্রস্থ হয়, সন্তান হয়ে পড়ে পরনির্ভরশীল।

সারাংশ

# শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুশিক্ষত লোকমাত্রই স্বশিক্ষিত। আজকের বাজারে বিদ্যাদাতার অভাব নেই, এমনকি এক্ষেত্রে দাতাকর্ণেরও অভাব নেই এবং আমরা আমাদের ছেলেদের তাদের দ্বারস্থ করেই নিশ্চিন্ত থাকি। এ বিশ্বাসে যে, সেখান থেকে তারা এতটা বিদ্যার ধন লাভ করে ফিরে আসবে যার সুবাদে তারা বাকি জীবন আরামে কাটিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এ বিশ্বাস নিতান্ত অমূলক। মনোরাজ্যের দান গ্রহণসাপেক্ষ, অথচ আমরা দাতার মুখ চেয়ে গ্রহীতার কথাটা একেবারে ভূলে যাই। এ সত্য ভূলে না গেলে আমরা বুঝতাম যে, শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষার পথ দেখিয়ে দিতে পারেন, তার কৌতুহল উদ্রেক করতে পারেন, তার বুদ্ধি-বৃত্তিকে জাগ্রত করতে পারেন, মনোরাজ্যেও ঐশ্বর্যের সন্ধান দিতে পারেন, তার জ্ঞান পিপাসাকে জ্বলন্ত করতে পারেন, এর বেশি আর কিছু পারেন না।

সারাংশ: জ্ঞানার্জনের প্রতি সুতীব্র ইচ্ছা থেকে মানুষ জ্ঞানী হয়ে উঠে। প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষক কখনোই কারো জ্ঞান পিপাসা জাগ্রত করতে পারে মাত্র। জ্ঞান অর্জনের আকাক্সক্ষা শুধু ব্যক্তির অন্তর দ্বারা উপলব্ধি হতে হয়, অন্যথায় শিক্ষা হয়ে পড়ে নাম সর্বস্ব।


# সকল প্রকার কায়িক শ্রম আমাদের দেশে অমর্যাদাকর বলিয়া বিবেচিত হইয়া আসিতেছে। শ্রম যে আত্মসম্মানের অনুমাত্রও হানিজনক নহে এবং মানুষের শক্তি, সম্মান ও উন্নতির ইহাই প্রকৃষ্ট ভিত্তি এ বোধ আমাদের মধ্যে এখনও জাগে নাই। জগতের অন্যত্র মানবসমাজ শ্রম সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করিয়া সৌভাগ্যের সোপানে উঠিতেছে, আর আমরা কায়িক শ্রমকে ঘৃণা করিয়া দিন দিন দুর্গতি ও হীনতায় ডুবিয়া যাইতেছি। যাহারা শ্রমবিমুখ বা পরিশ্রমে অসমর্থ, জীবনসংগ্রামে তাহাদের পরাজয় অনিবার্য। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে অযোগ্যর পরিত্রাণ নাই। যাহারা যোগ্যতম, তাহাদেরই বাঁচিবার অধিকার এবং অযোগ্যর উচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং পরিশ্রমের অমর্যাদা আত্মহত্যারই নামান্তর।

সারাংশ: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কায়িক শ্রমের ওপর ভিত্তি করে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করলেও আমাদের দেশে সকল প্রকার কায়িক শ্রমকে অমর্যাদাকর বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে শ্রমবিমুখ এবং পরিশ্রমে অসমর্থ হয়ে আমরা ক্রমশ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছি।