চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Saturday, July 17, 2021

 ব্যঞ্জন বর্ণের উচ্চারণ রীতি

‘ঙ’ এর উচ্চারণ

বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীকে ‘ঙ’ হরফটির নাম জানানো হয় ‘উঁয়ো’ রূপে। কিন্তু এর প্রাচীন নাম বা পরিচিতি যাই হোক, আধুনিক বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ বর্ণটি কখনো ‘উঁয়ো’ রূপে উচ্চারিত হয় না, হয় ‘অঙ’ রূপে। যেমনরঙ, ঢঙ, সঙ, রাঙা, সঙিন, কঙ্কন ইত্যাদি।

‘ঞ’ এর উচ্চারণ

‘ঞ’ সাধারণ ‘চ’ বর্গের (চ, ছ, জ, ঝ) চারটি বর্ণের পূর্বে যুক্তাবস্থায় ব্যবহৃত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষ ‘চ’ এর পরে বসে বাংলা উচ্চারণে ‘দন্ত্য ন’ এর মতো হয়। যেমনপঞ্চ, লাঞ্ছিত, রঞ্জ, গঞ্জিত, ব্যঞ্জন ইত্যাদি।

ব-ফলা উচ্চারণ

০১. পদের আদিতে অবস্থিত ব্যঞ্জনবর্ণে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমনজ্বলন্ত (জলোনতো), স্বাগত (শাগতো), ধ্বনি (ধোনি), স্বাধিকার (শাধিকার্), স্বদেশ (শদেশ্) ইত্যাদি।

০২. পদের মধ্যে বা শেষে অবস্থিত কোনো বর্ণের সঙ্গে ‘ব-ফলা’ যুক্ত হলে সংযুক্ত বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমনআশ্বিন (আশশিন), অশ্ব (অশশো) ইত্যাদি।

০৩. ম-ব্যঞ্জনের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমন লম্বা (লমবো), কম্বল (কমবোল) ইত্যাদি।

০৪. ব-ব্যঞ্জনের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমনআব্বা (আববা), ডিব্বা (ডিববা) ইত্যাদি।

০৫. ব-ফলা অন্য কোনো যুক্ত ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ অনুচ্চারিত থাকে। যেমনসান্ত্বনা (শানতোনা), দ্বন্দ্ব (দনদো) ইত্যাদি।

০৬. উৎ (উদ্) উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের ‘ৎ’ (দ্)-এর সঙ্গে ব-ফলার ‘ব’ বাংলা উচ্চারণে লুপ্ত হয় না। যেমনউদ্বেগ (উদবেগ), উদ্বোধন (উদবোধোন্), উদ্বাস্তু (উদ্বাস্তু) ইত্যাদি।

০৭. বাংলা শব্দে ক থেকে সন্ধির সূত্রে আগত ‘গ’-এর সঙ্গে ‘ব’ ফলা যুক্ত হলে ‘ব’-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকবে। যেমনদিগ্বিদিক (দিগিবদিক্), দ্বিগ্বলয় (দিগ্বলয়), দিগ্বিজয় (দিগবিজয়্) ইত্যাদি।

ম-ফলা উচ্চারণ

০১. শব্দের মধ্যে কিংবা শেষে অবস্থিত ‘ম-ফলা’ যুক্ত বর্ণের উচ্চারণ দ্বিত্ব হয় ও কিছুটা নাসিক্য প্রভাবিত হয়। যেমনপদ্ম (পদদোঁ), ভস্ম (ভশশোঁ) ইত্যাদি।

০২. কোনো শব্দের প্রথম বর্ণে ম-ফলা যুক্ত হলে ম-ফলা অনুচ্চারিত থাকে এবং কিছুটা নাসিক্যরূপে উচ্চারিত হয়। যেমনশ্মশান (শঁশান), স্মরণ (শঁরোন্) ইত্যাদি।

০৩. গ, ঙ, ট, ণ, ন, ম ও ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে ম-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমনযুগ্ম (জুগমো), তন্ময় (তনময়) ইত্যাদি।

০৪. শব্দের শেষ ম-ফলা যুক্ত হলে ম-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমনবাগ্মী (বাগমি), যুগ্ম (জুগমো) ইত্যাদি।

০৫. কিছু সংস্কৃত শব্দে ম-ফলার উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমন কুষ্মাণ্ড (কুশমানডো), সুস্মিতা (শুসমিতা) ইত্যাদি।

০৬. পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমনসন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।

০৭. শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমনদক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।

০৮. যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।

য-ফলা-এর উচ্চারণ

০১. আদ্যবর্ণে য-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটি অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত হলে উচ্চারণ ‘অ্যা’ কারান্ত হয়ে যায়। যেমনব্যথা (ব্যাথা), ন্যায় (ন্যায়্) ইত্যাদি।

০২. পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমনসন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসথো), কণ্ঠ্য (কনঠো) ইত্যাদি।

০৩. পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা সংযুক্ত হলে তার উচ্চারণ ও-কারান্ত হয়ে থাকে। যেমনপ্রকাশ (প্রোকাশ্), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।

০৪. শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।

র-ফলা-এর উচ্চারণ

র-ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তবে সে বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যেমনরাত্রি (রাতত্রি), ছাত্র (ছাতেত্রা), মাত্র (মাতেত্রা) ইত্যাদি।

ল-ফলা-এর উচ্চারণ

০১. ল-ফলা শব্দের মধ্যে বা অন্তে বসলে তার র-ফলার মতো দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমনঅশ্লীল (অসিস্লল), শ্লেষ (স্লেশ), শ্লথ (স্লোথো), অম্লান (অম্লান), আপ্লুত (আপ্লুতো), অম্লানমুখে (অম্লানমুখে), অক্লান্ত (অক্লানতো), বিশ্লেষণ (বিস্লেসন) ইত্যাদি।

০২. শব্দ বা পদের প্রথম ব্যঞ্জনের সাথে ল-ফলা থাকলে ল এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমন: ম্লান (ম্লান), প্লুত (প্লুতো), ম্লানমুখে (ম্লানমুখে), ম্লানত্ব (ম্লানোততো, ম্লায়মান (ম্লায়োমান), ক্লান্ত (ক্লানতো), প্লাবন (প্লাবোন), ক্লেশ (ক্লেশ), গ্লানি (গ্লানি), শ্লেষা (শ্লেষা) ও শ্লীলতা (শ্লীলোতা)।

০৩. হ বর্ণের সাথে ল-ফলা যুক্ত হলে হ বাদে ল এর উচ্চারণ বা হ ও ল উভয়ই উচ্চারণ করা যায়। যেমন: হ্লাদিনী (লাদিনী/হলাদিন), আহ্লাদ (আললাদ/আহলাদ) ইত্যাদি।

‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ

১. শব্দের প্রথমে ‘ক্ষ’ থাকলে তার উচ্চারণ হয় ‘খ’। যেমনক্ষমা (খমা), ক্ষণ (খন্) ইত্যাদি।

২. শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমনদক্ষতা (দোকখোতা), পক্ষ (পোকখো)।

‘ঞ্জ’ উচ্চারণ

০১. ঞ্ + জ = ঞ্জ এই যুক্তধ্বনিতে ‘ঞ’-এর উচ্চারণ ‘ন’ হলেও ‘জ’-এর উচ্চারণ অবিকৃত, কিন্তু জ্ + ঞ = জ্ঞ-তে, ‘জ’ এবং ‘ঞ’ বর্ণ দুটোর কোনোটিরই উচ্চারণ নেই। সংস্কৃতে এর উচ্চারণ ছিল ‘জ্ ঞ’ (অর্থাৎ অনেকটা ‘জ্যাঁ’-এর মতো)

০২. ‘ঞ’ সাধারণত ‘চ’ বর্গের (চ, ছ, জ, ঝ) চারটি বর্ণের পূর্বে যুক্তাবস্থায় ব্যবহৃত হয় তবে ক্ষেত্রবিশেষে ‘চ’ এর পরে বসে (যাচ্ঞাজাচ্না) এবং বাংলা উচ্চারণে ‘দন্ত্য ন’-এর মতো হয়। যথা: পঞ্চ (পন্চ), লাঞ্ছিত (লান্ছিত), রঞ্জ (রন্জো), ব্যঞ্জন (ব্যান্জোন্), ঝঞ্ঝা (ঝন্ঝা) ইত্যাদি।

‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ

০১. শব্দের মাঝে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গ্যঁ-এর (গ) মতো হয়। যেমনজ্ঞান (গ্যাঁন্), জ্ঞাপক (গ্যাঁপোক্) ইত্যাদি।

০২. শব্দের আদিতে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গঁ বা গ্যঁ-এর মতো হবে। যেমনজ্ঞাপন (গ্যাঁপোন্), অজ্ঞান (অগ্গ্যাঁন্), বিজ্ঞপ্তি (বিগগোঁপিত) ইত্যাদি।

০৩. শব্দের অন্তে ‘জ্ঞ’ থাকলে উচ্চারণ গঁ, বা গোঁ-এর মতো হবে। যেমনঅবজ্ঞা (অবোগ্গাঁ), অজ্ঞ (অগগোঁ), বিজ্ঞ (বিগেগাঁ) ইত্যাদি।

য-এর উচ্চারণ

য-এর পর প্রাচীন সংস্কৃত উচ্চারণ ছিল ‘ই অ’-এর মতো কিন্তু বাংলা উচ্চারণে এটি পরিষ্কার ‘জ’। এর প্রাচীন উচ্চারণের স্মারক হচ্ছে ‘য’ এর নিচে বিন্দু দিয়ে লেখা ‘য়’ আমরা যেটাকে অন্তঃস্থ ‘অ’ বলি। বাংলা ভাষায় এ দুটি বর্ণের উচ্চারণের কোনো পার্থক্য নেই। যথাযম (জম্), জামাই (জামাই), যদি (জাদি), জগৎ (জগোত) ইত্যাদি।

শ, ষ, স-এর উচ্চারণ

এ তিনটি ‘শ’ বাংলা ভাষার উচ্চারণে কেবল বিশেষ বিশেষণে বিশেষিত। যথা : তালব্য ‘শ’, মূর্ধন্য ‘ষ’ এবং দন্ত্য ‘স’। আসলে এই তিনটি ‘শ’-ই ‘শ’ (ইংরেজির ‘sh’)-এর মতো উচ্চারিত। প্রাচীনকালে এগুলোর পৃথক উচ্চারণ ছিল কিন্তু আধুনিক বাংলা ভাষায় প্রতিটি ‘শ’-ই “বাংলার শিস জাতীয় মূলধ্বনি (phoneme)।” কেবল ত, থ, ন, র, ল-এর পূর্ববর্তী ধ্বনি হিসেবে ‘শ’-এর দন্ত্য স (স) ধ্বনির উচ্চারণ শোনা যায়। এটাকে ‘শ’-এর দন্ত্য সহধ্বনি বা পূরক ধ্বনি (allophone) বলা যায়। যথা :

ত: সমস্ত (শোমোস্তো/ শমোস্তো), ব্যস্ত (ব্যাস্তো), গ্রস্ত (গ্রোস্তো) বস্তি (বোস্তি), আস্তে (আস্তে), রাস্তা (রাস্তা) কাস্তে (কাস্তে), দস্তা (দস্তা), মস্তক (মস্তক্/-তোক্) ইত্যাদি।

থ: আস্থা (আস্থা), স্থান (স্থান্), সুস্থ (শুস্থো), উপস্থিত (উপোস্থিত্), ব্যবস্থা (ব্যাবোস্থা), মুখস্থ (মুখোস্থো), অস্থাবর (অস্থাবোর্) ইত্যাদি।

ন: স্নান (স্নান্) স্নেহ (স্নেহো), প্রশ্ন (প্রোস্নো), স্নায়োবিক (স্নায়োবিক), স্নিগ্ধ (স্নিগ্ধো) ইত্যাদি।

র: শ্রদ্ধা (স্রোদ্ধা), শ্রবণী (স্রোবোনি), শ্রম (স্রোম্), শ্রব্য (স্রোব্বো), শৃঙ্গ (সৃঙ্গো), শৃঙ্খল (সৃঙ্খল্) শৃগাল (সৃগাল্), শ্রাবণ (স্রাবোন্), শ্রোতা (স্রোতা), স্রোত (স্রোতো/স্রোত্), শ্রুতি (স্রুতি), শ্রেষ্ঠ (স্রেশ্ঠো), শ্রেয়সী (স্রেয়োশি), বিশ্রী (বিস্স্রি), শ্রী (স্রি) ইত্যাদি।

ড়, ঢ়-এর উচ্চারণ

‘ড়’ ও ‘ঢ়’ এই বর্ণ দুটো সংস্কৃতে নেই। সংস্কৃতে সর্বত্র ‘ড’ এবং ‘ঢ’ অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হতো। এজস্যে আধুনিক বাংলার ‘নাড়ু’ সংস্কৃতে ছিল ‘নাডু’ এবং বাংলার ‘মূঢ়’ সংস্কৃতে ‘মূঢ’। বর্ণ দুটোর পরিবর্তিত উচআরণের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনিই প্রথম ‘ড’ ও ‘ঢ’ এর নিচে বিন্দু দিয়ে আধুনিক বাংলা বর্ণমালায় স্থান করে দেন। ‘ড শূন্য ড়’ ও ‘ঢ শূন্য ঢ়’ এর উচ্চারণ স্থান ও রীতি প্রায় অভিন্ন। প্রখ্যাত ধ্বনিতত্ত্ববিদ মুহম্মদ আবদুল হাই-এর মতে ‘ধ্বনির দিক থেকে দুটোই নিনাদিত বা ঘোষধ্বনি, পার্থক্য তাদের মধ্যে শুধু বাতাসের নির্গমন পদ্ধতিতে। অন্য কথায় ‘ড়’ স্বল্পপ্রাণ আর ‘ঢ়’ মহাপ্রাণ। ‘ড়’ এর ধ্বনিতত্ত্বগত নাম ঘোষ অল্পপ্রাণ দন্তমূলীয় তাড়নজাত ধ্বনি (voiced unaspirated alveolo flapped sound) আর ‘ঢ়’ এর নাম ঘোষ মহাপ্রাণ দন্তমূলীয় তাড়নজাত ধ্বনি (voiced aspirated alveolo flapped sound) ।

য় (অন্তঃস্থ ‘য়’)-এর উচ্চারণ

অন্তঃস্থ ‘য়’-এর উচ্চারণ পদমধ্যে এর সঙ্গে যুক্তস্বরের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা শব্দের অভ্যন্তরে পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি থাকলে, যদি দুটো স্বর মিলে একটি যৌগিক স্বরে বা সন্ধ্যক্ষরে পরিণত না হয়, তা হলে এই দুটো স্বরের মধ্যে Hiatus বা ব্যঞ্জনের অভাব জনিত ফাঁকটুকুতে উচ্চারণের সুবিধার্থে অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্থ ‘ব’ (w) = ওয় ও-এর আগম হয়। মুহম্মদ আবদুল হাইও তাঁর ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’ গ্রন্থে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।

‘হ’ সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ

০১. ‘হ’-এর সঙ্গে ঋ-কার, র-ফলা কিংবা রেফ সংযুক্ত হলে ‘হ’ নয়, বরং ‘র’ মহাপ্রাণ হয়। যেমনহৃদয় (হৃদয়্), সুহৃদ (সুহৃদ্), হৃদ্য (হৃদেদা) ইত্যাদি।

০২. হ-এর সঙ্গে ণ বা ন যুক্ত হলে উচ্চারণ হৃ-এর মতো হয়। এ ক্ষেত্রে মূলত ‘ন’-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমনপূর্বাহ্ন (পুর্বানহ), অপরাহ্ন (অপোরান্হ), চিহ্ন (চিন্হ) ইত্যাদি।

০৩. হ-কারের সঙ্গে ম সংযুক্ত হলে ম-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমনব্রহ্ম (বোম্হ) ব্রাহ্ম (ব্রাম্হ), ব্রাহ্মণ (ব্রোম্হন্) ইত্যাদি।

০৪. হ-এর সঙ্গে ‘য’ ফলা যুক্ত হলে ‘হ’-এর নিজস্ব উচ্চারণ থাকে না। বরং য-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমনউহ্য (উজেঝা), গ্রাহ্য (গ্রাজেঝা), সহ্য (শোজ্ঝা) ইত্যাদি।

০৫. হ-এর সঙ্গে ‘ব’ যুক্ত হলে ‘ব’ মহাপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়। যেমনবিহ্বল (বিওভল), আহ্বান (আওভান), জিহ্বা (জিওভা) ইত্যাদি।

ং (অনুস্ব্বার)-এর উচ্চারণ

আধুনিক বাংলা ভাষায় উচ্চারণগত দিক থেকে ‘ং’ (অনুস্বার) এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। ং-কার উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমনঅংশ (অংশো), মাংস (মাঙশো), বাংলা (বাঙলা), সংগ্রাম (সঙগ্রাম), সংজ্ঞা (সঙ্গগাঁ) ইত্যাদি।

ঃ (বিগর্স)-এর উচ্চারণ

সংস্কৃতে বিসর্গের উচ্চারণ ছিল অনেকটা অর্ধ হ-এর মতো। বাংলায় আবেগ শব্দ অর্থাৎ বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে বিগর্স ব্যবহৃত হয়। যেমনউঃ (উহ্), আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্) ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) থাকলে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ এর উচ্চারণ ‘ও’ এর মতো হয়। যেমনঅতঃপর (অতোপপর), নিঃশেষ (নিশশেশ্), দুঃখ, (দুকখো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙগো), নিঃশেষ (নিশ্শেশ), নিঃসন্তান (নিশ্শন্তান), নিঃসম্বল (নিশ্শম্বল্/-বোল্), দুঃখ (দুক্খো), অন্তঃসার (অন্তোশ্শার্), দুঃসময় (দুশ্শময়্), পুনঃপুন (পুনোপ্পুনো) দুঃসাহস (দুশ্শাহোশ্) ইত্যাদি।

ৎ (খণ্ড ত)-এর উচ্চারণ

ৎ (খণ্ড ত) প্রকৃত প্রস্তাবে ‘ত’-এর খণ্ডরূপ। প্রাচীন লিপিকারদের হাতে ‘ত’-এ হস্ চিহ্ন দিতে গিয়ে হাত না তোলার কারণে (হসন্ত ত = ৎ) এরূপ হয়েছে। খণ্ড ৎ এবং হসন্ত ত্-এ উচ্চারণগত কোনো পার্থক্য নেই। অনেক স্থানে এই বর্ণটিকে হসন্ত ত্ বলা হয়।

ঁ (চন্দ্রবিন্দু)-এর উচ্চারণ

ঁ (চন্দ্রবিন্দু) এ-ধ্বনির ভূমিকা প্রসঙ্গে মুহম্মদ আবদুল হাই-এর মন্তব্য : “ বাংলায় স্বরধ্বনিকে সানুনাসিক করার চিহ্ন (ঁ) চন্দ্রবিন্দু; ইংরেজি নাম moon-dot ।” এ-সব অনুনাসিক স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় নাক ও মুখের মিলিত দ্যোতনায় (“ Combined resonance of nose and mouth”)। একে অনেকে ‘নাকিসুরে’ উচ্চারণ বলে থাকেন। বাংলাদেশের সর্বত্র এ-উচ্চারণ নিখুঁত হয় না (এমনকি বহু শিক্ষিত লোকেরও)। কিন্তু এর উচ্চারণ বিকৃতি বা বিলুপ্তির জন্যে শব্দের অর্থগত বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। যথা : কাদা (কর্দম), কাঁদা (ক্রন্দন), শাখা (ডাল), শাঁখা (শঙ্খ), রাধা (রাধিকা), রাঁধা (রন্ধন), পাক (পবিত্র, রান্না), পাঁক (পঙ্ক), বাধা (প্রতিবন্ধক), বাঁধা (বন্ধন), ফোড়া (ব্রণ, স্ফোটক), ফোঁড়া (ছিদ্র করা),ছাদ (আচ্ছাদনী), ছাঁদ (ছন্দ, গঠন, ধরন), তাত (আঁচ, উষ্ণতা), তাঁত (তন্তু, কাপড় বোনার যন্ত্র), চাচা (কাকা, পিতৃব্য), চাঁচা (মার্জিত), গাদা (ঠাসা), গাঁদা (ফুলবিশেষ), গাথা (পালাগান), গাঁথা (গ্রন্থন করা), কাটা (ছেদন, কর্তন, বিভক্ত), কাঁটা (কন্টক), ফোটা (বিকশিত হওয়া), ফোঁটা (বিন্দু, তিলক), খাড়া (সোজা), খাঁড়া (খড়্গ), গোড়া (মূল, শিকড়), গোঁড়া (অন্ধবিশ্বাসী), দাড়ি (শ্মশ্রু), দাঁড়ি (তুলাদণ্ড) ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়-- যেসব মূল শব্দ বর্গের পঞ্চম বর্ণ-সহযোগে (ঙ, ঞ, ণ, ম) গঠিত, সেসব মব্দের পরিবর্তিত (তদ্ভব) রূপেই সাধারণত নাসিক্য (ঁ) প্রতীক ব্যবহৃত হয়। যথা : চাঁদ (< চন্দ্র), ছাঁদ (< ছন্দ), দাঁত (< দন্ত), কাঁটা (< কন্টক), ষাঁড় (< ষণ্ড), ভাঁড় (< ভাণ্ড), দাঁড় (< দণ্ড), পাঁচ (< পঞ্চ), আঁচল (< অঞ্চল), আঁধার (< অন্ধকার) ইত্যাদি।

পরিশেষে বলতে হয়, আমাদের উচ্চারণ-দুর্বলতার প্রধান প্রমাণ আমরা বর্ণমালার অনেক বর্ণকেই বিশেষণ-সংযুক্ত করে চিহ্নিত করি। অর্থাৎ তিনটি ‘শ’ (শ, ষ, স), দুটো ‘জ’ (জ, য), দুটো ‘ন’ (ণ, ন) ইত্যাদি সমোচ্চারিত বর্ণের ক্ষেত্রে যেমন, তালব্য, মূর্ধন্য, দন্ত্য, বর্গীয়, অন্তঃস্থ এ-ধরনের বিশেষণ প্রযুক্ত করে লিপি-স্বাতন্ত্র্য জ্ঞাপন করি, তেমনি, ব-এ শূন্য, ড-এ শূন্য এবং ঢ-এ শূন্য বলে র, ড় এবং ঢ়-এর পার্থক্য বুঝিয়ে থাকি। অথচ এদের ধ্বনিগত পার্থক্য বিলুপ্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে শব্দের অর্থ বিপর্যয় ঘটায়। যথা:

ড় স্থানে র : আমড়া--- আমরা, নাড়ী--- নারী, মাড়ী--- মারী, তাড়ি--- তারি, বাড়ি--- বারি, পাড়ি--- পারি, চড়--- চর, ধড়--- ধর, চুড়ি--- চুরি, ঘোড়া--- ঘোরা, সাড়া--- সারা, জোড়--- জোর, মোড়--- মোর, পড়ে--- পরে, মাড়--- মার, জাড়--- জার, দেড়--- দের, পাড়া--- পারা, পোড়া--- পোরা, ভেড়ি--- ভেরি ইত্যাদি। ঢ় স্থানে ড় : মূঢ়--- মুড়, গূঢ়--- গুড়, গাঢ়--- গাড়, প্রৌঢ়--- প্রৌড় ইত্যাদি।

----------যবনিকা----------

Friday, July 16, 2021

নবম শ্রেণি

 0১. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।

দুই পা আছে কিন্তু উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই। তাতে কী? আত্মবিশ্বাস তো আছে। তাই তো জীবনযুদ্ধে দমে যাননি আলমগীর হোসেন। ছোটবেলায় টাইফয়েট জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। তারপর থেকে হাঁটা-চলা ও কাজকর্ম করার কথা কখনো চিন্তা করতে পারেননি আলমগীর। কিন্তু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও জীবিকার তাগিদে রিকশাকে বেছে নিয়েছেন হাতিয়ার হিসেবে।

ক. সুভা জলকুমারী হলে কী করত?
খ. কেন বাণীকণ্ঠকে লোকে নিন্দা করতে শুরু করে?
গ. উদ্দীপকটি আলমগীর হোসেনের সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ উদ্দীপকটি আলমগীর হোসেনের পরিস্থিতি ও পরিণতি সুভার পরিণতির থেকে ভিন্ন।”-মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
 
02. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।  
বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে।
যে বই জুড়ে সূর্য ওঠে
পাতায় পাতায় গোলাপ ফোটে
সে বই তুমি পড়বে।
 
ক. কেতাবি কারা?
খ. ‘মনের দাবি রক্ষা না করলে আত্মা বাঁচে না’ - বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের যে দিকটি ফুটে ওঠেছে - তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে করো উদ্দীপকটি ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের যথার্থ প্রতিচ্ছবি? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
 
 
03. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।
দেখিনু সেদিন রেলে,
কলি বলে এক বাবুসাব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করে কি জগৎজুরিয়া মার খাবে দুর্বল।
 
ক. জমিদারের গোমস্তার নাম কী?
খ. ‘রসিক হত বুদ্ধির মতো দাঁড়াইয়া রহিল’-কেন?
গ. ‘এমনি করে কি জগৎজুরিয়া মার খাবে দুর্বল’-চরণাট ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন দিকটি নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত নিচু শ্রেণির মানুষের নির্যাতন ও লাঞ্ছনা ভোগ করার চিত্র ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে শরৎচন্দ্র দরদী ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। 

Thursday, July 15, 2021

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব

০১. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।    
মুক্তি
মনুষ্যত্ব
শিক্ষা
সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা
অন্নচিন্তা
মানবজীবন
 
ক. জ্ঞান পরিবেশন কিসের উপায়? 
খ. মনুষ্যত্বে উত্তরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা কী ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা কর।
গ. সুন্দর সমাজ গঠনে উদ্দীপকের ধাপগুলো কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।  
ঘ. উদ্দীপকের ছক এবং শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের আলোকে মুক্তির স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।

০২. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।

দশম শ্রেণির বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক বলেন, “মানুষের মনকে আলোকিত করার প্রধান উপায় হলো শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষায় মানুষের কল্যাণ হয় এবং মানব মনের মুক্তি ঘটে। আর মুক্তি না থাকলে মনুষ্যেত্বের স্বাদ পাওয়া যায় না।”

ক. শিক্ষার আসল কাজ কী?  
খ. আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না কেন? 
গ. উদ্দীপকের নীতিবোধের সাথে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের বিষয়ের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মুক্তি না থাকলে মনুষ্যেত্বের স্বাদ পাওয়া যায় না।” -‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

০৩. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।

মেধাবী ছাত্র হাসান লেখাপড়া শেষ করে সরকারী উচ্চ পদে একটি চাকরি পায়। ইচ্ছে করলেই সে অনেক আর্থিক সম্পদের মালিক হতে পারে। কিন্তু সে এটা পছন্দ করে না। তার সহকর্মী সুবা ইতোমধ্যে অনেক অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। সে হাসানকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু হাসান তার অনৈতিক প্রস্তাবকে র্ঘণাভরে প্রত্যাখান করে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে চাকরিজীবন শেষ করে। এখন তার অঢেল ধন-সম্পদ না থাকলেও সবাই তাকে সম্মান করে।

ক. লোভের ফলে কিসের মৃত্যু ঘটে?  
খ. ‘লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়’-কেন? 
গ. উদ্দীপকের সুবা চরিত্রে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন ভাবটি ফুটে উঠেছে-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হাসানের কর্মকাণ্ডে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশার প্যতিফলন ঘটেছে বলে কি তুমি কর? তোমার মতামত দাও।

 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

অ-ধ্বনির উচ্চারণ

শব্দে অবস্থানভেদে ‘অ’ দুইভাবে লিখিত হয়। যেমন:

১. স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন: অমর, অনেক।

২. শব্দের মধ্যে অন্য বর্ণের সঙ্গে বিলীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন: কর, বল। এখানে ক ও র আর ব ও ল বর্ণের সঙ্গে অ বিলীন হয়ে আছে। (ক্+অর্++অ; ব্+অ+ল্+অ)।

 

শব্দের অ-ধ্বনির দুই রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়

১. বিবৃত বা স্বাভাবিক(অ এর উচ্চারণ অ) উচ্চারণ। অর্থাৎ ঠোট গোল হয় না। যেমন: অমল, অনেক, কত।

২. সংবৃত বা ও-ধ্বনির মতো উচ্চারণ। অর্থাৎ ঠোট গোল হয়। যেমন: অধীর, অতুল, মন। এ উচ্চারণগুলোতে অ-এর উচ্চারণ অনেকটা ও-এর মতো (ওধীর, ওতুল, মোন)।

 

‘অ’-ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ

ক. শব্দের আদিতে

১. শব্দের আদিতে না-বোধক ‘অ’ যেমন: অটল, অনাচার।

২. ‘অ’ কিংবা ‘আ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন: অমানিশা, অনাচার, কথা।

 

খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে

১. পূর্ব স্বরের সঙ্গে মিল রেখে স্বরসঙ্গতির কারণে বিবৃত ‘অ’। যেমন: কলম, বৈধতা, যত, শ্রেয়ঃ।

২. ঋ-ধ্বনি, এ-ধ্বনি, ঐ-ধ্বনি এবং ঔ-ধ্বনির পরবর্তী ‘অ’ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমন: তৃণ, দেব, বৈধ, নোলক, মৌন।

৩. অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন: গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।

অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ

অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে চোয়াল বেশি ফাঁক হয়। ঠোঁট তত বাঁকা বা গোল হয় না। কিন্তু সংবৃত উচ্চারণে চোয়ালের ফাঁক কম ও ঠোঁট গোলাকৃত হয়ে ‘ও’-এর মতো উচ্চারিত হয়। সংবৃত উচ্চারণকে ‘বিকৃত’, ‘অপ্রকৃত’ বা ‘অস্বাভাবিক’ উচ্চারণ বলা অপ্রাসঙ্গিক। সংবৃত উচ্চারণও ‘স্বাভাবিক’, ‘অবিকৃত’ ও ‘প্রকৃত’ উচ্চারণ।

 

ক. শব্দের আদিতে

১. পরবর্তী স্বর সংবৃত হলে শব্দের আদি ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: অতি (ওতি), করুণ (কোরুণ), করে (অসমাপিকা ‘কোরে’)। কিন্তু সমাপিকা ‘করে’ শব্দের ‘অ’ বিবৃত।

২. পরবর্তী ই, উ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ববর্তী র-ফলাযুক্ত ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: প্রতিভা (প্রোতিভা), প্রচুর (প্রোচুর) ইত্যাদি। কিন্তু অ, আ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ব ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন: প্রভাত, প্রত্যয়, প্রণাম ইত্যাদি।

৩. শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমনঅদ্য (ওদদো), কন্যা (কোননা) ইত্যাদি।

৪. ‘অ’-এর পরে ‘ক্ষ’ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ ধ্বনির মতো হয়। যেমনঅক্ষ (ওকখো), দক্ষ (দোকখো) ইত্যাদি।

৫. শব্দের প্রথমে ‘অ’-যুক্ত ‘র’ ফলা থাকলে সে ক্ষেত্রেও আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’কারের মতো হয়। যেমনক্রম (ক্রোমো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।

 

খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে

১. তর, তম, তন প্রত্যয়যুক্ত বিশ্লেষণ পদের অন্ত্য স্বর ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: প্রিয়তম (প্রিয়তমো), গুরুতর (গুরুতরো)।

২. ই, উ-এর পরবর্তী মধ্য ও অন্ত্য ‘অ’ সংবৃত। যেমন: পিয় (পিয়ো), যাবতীয় (যাবতীয়য়ো) ইত্যাদি।

 

বাংলায় একাক্ষর / Monosyllabic শব্দে ‘অ’ দীর্ঘ হয়। যেমন: কাজ শব্দের ‘অ’ দীর্ঘ এবং কাল শব্দের ‘আ’ হ্রস্ব। এরূপ: যা, পান, ধান, সাজ, চাল, চাঁদ, বাঁশ।

ই ঈ: বাংলায় সাধারণত হ্রস্ব ই-ধ্বনি এবং দীর্ঘ ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। একাক্ষর শব্দের ই বা ঈ-দুটোই দীর্ঘ হয়। যেমন: বিষ, বিশ, দীন, দিন, শীত।

উ ঊ: বাংলায় উ বা ঊ ধ্বনির উচ্চারণে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। ই বা ঈ-ধ্বনির মতো একাক্ষর শব্দে এবং বহু অক্ষর-বিশিষ্ট বদ্ধাক্ষরে বা প্রান্তিক যুক্তাক্ষরে উচ্চারণ সামান্য দীর্ঘ হয়। যেমন: চুল (দীর্ঘ), চুলা (হ্রস্ব), ভূত, মুক্ত, তুলতুলে, তুফান, বহু, অজু, করুণ।

ঋ: স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে ঋ-এর উচ্চারণ রি অথবা রী-এর মতো হয়। আর ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হলে র-ফলা+ই-কার এর মতো হয়। যেমন: ঋণ, ঋতু, (রীন, রীতু), মাতৃ (মাত্রি), কৃষ্টি (ক্রিষ্টি)।

 

এ-ধ্বনির উচ্চারণ

সংস্কৃত প্রয়োগ অনুসারেই বাংলা বর্ণমালায় এটি স্বরবর্ণের মধ্যে রক্ষিত হয়েছে।

এ: এ-ধ্বনির উচ্চারণ দুই রকম: সংবৃত ও বিবৃত। যেমন: মেঘ, সংবৃত/বিবৃত, খেলা (খ্যালা), বিবৃত।

১. সংবৃত

ক. পদের অন্তে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: পথে, ঘাটে, দোষে, গুণে, আসে ইত্যাদি।

খ. তৎসম শব্দের প্রথমে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন: দেশ, প্রেম, শেষ ইত্যাদি।

গ. একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: কে, সে, যে।

ঘ. ‘হ’ কিংবা আকারবিহীন যুক্তধ্বনি পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: দেহ, কেহ, কেষ্ট।

ঙ. ‘ই’ বা ‘উ’-কার পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: দেখি, রেণু, বেলুন।


২. বিবৃত:

‘এ’ ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ ইংরেজি ক্যাট/ cat ও ব্যাট / bat -এর ‘এ’ /ধ-এর মতো। যেমন: দেখ (দ্যাখ), একা (এ্যাকা) ইত্যাদি।

ধ্বনির এই বিবৃত উচ্চারণ কেবল শব্দের আদিতেই পাওয়া যায়, শব্দের মধ্যে ও অন্তে পাওয়া যায় না।

ক. দুই অক্ষর বিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয় পদে। যেমন: এত, হেন, কেন ইত্যাদি। কিন্তু ব্যতিক্রম-যেমন, সেথা, হেথা।

খ. অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দু যুক্ত ধ্বনির আগের ধ্বনি বিবৃত। যেমন: খেংড়া, চেংড়া, স্যাঁতসেঁতে, গেঁজেল।

গ. খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন: খেমটা, ঢেপসা, তেলাপোকা, তেনা, দেওর।

ঘ. এক, এগার, তের কয়টি সংখ্যাবাচক শব্দে। ‘এক’ যুক্ত শব্দেও। যেমন: একচোট, একতলা, একঘরে ইত্যাদি।

ঙ. ক্রিয়াপদের বর্তমান কালের অনুজ্ঞায়, তুচ্ছার্থ ও সাধারণ মধ্যম পুরুষের রূপে। যেমন: দেখ্ (দ্যাখ), দেখ (দ্যাখো), খেল্ (খ্যাল), খেল (খ্যালো), ফেল (ফ্যাল), ফেল (ফ্যালো) ইত্যাদি।

 

ঐ: ধ্বনিটি একটি যৌগিক স্বরধ্বনি। অ+ই কিংবা ও+ই=অই, ওই। অ, ই দুটো স্বরের মিলিত ধ্বনিতে ঐ-ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যেমন: ক +অ+ই=কই/কৈ, বৃ +ই+ধ=বৈধ ইত্যাদি। এরূপ: বৈদেশিক, ঐক্য, চৈতন্য।

ও: বাংলা একাক্ষর শব্দে ও-কার দীর্ঘ হয়। যেমন: গো, জোর, রোগ, ভোর, কোন, বোন ইত্যাদি অন্যত্র সাধারণত হ্রস্ব হয়। যেমন: সোনা, কারো, পুরোভাগ। ও-এর উচ্চারণ ইংরেজি বোট / boat শব্দের / oa -এর মতো।

--যবনিকা পাত--