চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Showing posts with label নবম-দশম: ভাব-সম্প্রসারণ. Show all posts
Showing posts with label নবম-দশম: ভাব-সম্প্রসারণ. Show all posts

Tuesday, May 4, 2021

ভাব-সম্প্রসারণ

  # দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।

মূলভাব: জ্ঞান মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করে। তবে বিদ্বান হলেই মানুষ চরিত্রবান হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর কোনো চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তাকে এড়িয়ে চলা উচিত। 

সম্প্রসারিত ভাব: শুধু মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ মানবিক গুণসম্পন্ন হয় না। জন্মের পরে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। বিদ্যা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। এজন্য মানুষ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে বিদ্যার্জন করে। বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্রই সম্মানের পাত্র। সকলেই তাঁকে মান্য করে। তাই বিদ্যা মূল্যবান এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তার চেয়েও মূল্যবান। চরিত্র মানুষের সাধনার ফল। সাধনার জন্য প্রয়োজন তপস্যা; যা মানুষের প্রবৃত্তিকে প্রখর করে, বুদ্ধিকে শানিত করে, আচরণকে মার্জিত করে, হৃদয়কে প্রশস্ত করে, মনকে দৃঢ় করে, শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে। চরিত্রই মানুষের মনুষ্যত্বের রক্ষাকবচ। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন। এসব চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি দুর্জন ব্যক্তি হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। সমাজের সকলেই তাকে পরিত্যাগ করে। 

কেননা এসব দুর্জন ব্যক্তি স্বীয় স্বার্থোদ্ধারে অপরের মারাত্মক ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধে করে না। বিদ্যাকে তারা মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করে। এসব লোকের সাহচর্যে গেলে মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সাপের মতো হিংস্র ও বিষাক্ত। প্রবাদ আছে, বিষাক্ত সাপের মাথায় মহামূল্যবান মণি থাকে। বিষাক্ত সাপের মাথার মণি আর চরিত্রহীন ব্যক্তির বিদ্যা প্রায় সমার্থক। মণি লাভের আশায় কেউ বিষাক্ত সাপের সংস্পর্শে যায় না। তার কারণ বিষাক্ত সাপের ধর্ম ছােবল মারা। দুধকলা দিয়ে পুষলেও সুযোগে পেলেই সে ছোবল মারবে। এতে মৃত্যু অবধারিত। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সাপের মতোই বিপজ্জনক। বিদ্যার্জনেরজন্য তার  সংস্পর্শে গেলে সুযোগ পেলেই সে ক্ষতি করবে। একথা সবাই জানে যে, বিদ্বান ব্যক্তি উত্তম চরিত্রের হলে জগতের অশেষ কল্যাণ হয়, আর দুশ্চরিত্রের বিদ্বান ব্যক্তি দ্বারা জগতের অশেষ ক্ষতি হয়। তাই দুর্জন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ কারানো কাম্য নয়। 

মন্তব্য: বিদ্বান অথচ চরিত্রহীন ব্যক্তির সাহচর্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা, বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন হওয়ার কারণে তার সংস্পর্শে গেলে নিজের চরিত্র খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  #   দুর্নীতি জাতীয় জীবনের সকল উন্নতির অন্তরায়।

মূলভাব: যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে নীতিহীনতাই দুর্নীতি। আর যে নীতিহীন সে হয় স্বার্থান্ধ। এ ধরনের লোকে দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

সম্প্রসারিত ভাব: বর্তমানে উন্নতি এবং দুর্নীতি কথা দুটি মানুষের মুখে মুখে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেননা, উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে যেটি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হলো দুর্নীতি। নৈতিকভাবে উন্নত, সৎ, বিবেকবান মানুষ যে পদেই থাকুন কেন, তিনি সমাজ ও জাতির বড় সম্পদ। তাকে দিয়ে উপকার না হলেও অন্তত ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে না। অপরদিকে নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি যতই উচ্চ আসনে অবস্থান করুক না কেন, তিনি মোটেও শ্রদ্ধার পাত্র নন। পদমর্যাদার কারণে তাকে হয়তো মানুষ সামনে কিছু বলে না কিন্তু পেছনে অন্তর থেকে ঘৃণা করে। তার দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি। 

কারণ, তিনি স্বার্থান্ধ, বিবেকবর্জিত। তিনি সবসময় নিজের স্বার্থসিদ্ধির মতলবে থাকেন। স্বার্থান্ধ ব্যক্তি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজেই ব্যস্ত থাকেন। সমাজের কল্যাণ, দেশের মঙ্গলের কথা তিনি ভাবেন না। জাতীয় জীবনের উন্নতি, সমৃদ্ধির কথা ভাবতে তার বিবেক সায় দেয় না। এজন্য বিবেকবর্জিত, দুর্নীতিগ্রস্ত লোকে দেশের সকল উন্নতির পথে বাধাস্বরূপ।

মন্তব্য: বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ছিল লজ্জাজনক অবস্থানে। বর্তমানে তা কিছুটা লাঘব হয়েছে। তবে আমাদেরকে এ লজ্জাজনক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে দেশের জনগণ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও তাদের বিজয়ী হতে হবে। তবেই দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

 মূলভাব: মহান স্রষ্টা নারী ও পুরুষের মধ্য দিয়ে তার সষ্টিকর্মের পূর্ণতা দান করেছেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে, এর স্থপতি কেবল পুরুষই নয়, নারীও বটে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানবসমাজ অধিকাংশই পুরুষশাসিত। বলতে গেলে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই পুরুষজাতি সমাজ শাসন করে আসছে। আর পুরুষশাসিত এ সমাজে নারীকে অন্তঃপুরে আবদ্ধ রাখা হয়। নারীর প্রতিভার কোনো মূল্যায়নই হয় না। নারীকে কেবল সৌন্দর্যের প্রতীক  হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। কখনো কখনো তার মূল্যায়ন ভোগের সামগ্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। কেবল তৃতীয় বিশ্বেই নয়, উন্নত বিশ্বেও নারীরা নিরাপত্তাহীন এবং পুরুষশাসিত সমাজের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত। কিন্তু বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারীরা কর্ম ও মেধাশক্তিতে পুরুষের চেয়ে কোন অংশে  কম নয়। আর এর নজির ইতোমধ্যেই নারীরা রেখেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারারী রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। তাই আজ নারীদের মধ্যে আমরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব, অর্থনীতিবিদ, পুলিশ কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা, পাইলট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখকে দেখছি। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নারীরা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। 

আজকের এই জ্ঞানবিজ্ঞানসমদ্ধ বিশ্ব নারী-পুরুষের মিলিত শ্রমের ফসল। আর এ বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে পুরুষের কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভ আছে। আর এ বিষয়টি অস্বীকার করার মধ্যে পুরুষ-নারী তথা বিশ্ববাসী সকলেরই অকল্যাণ রয়েছে। আসলে নারীকে গৃহলক্ষ্মী আখ্যায়িত করে গৃহবন্দি করে রাখার যুগ শেষ হয়ে গেছে। আজকের আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান দক্ষতায় কাজ করে যাচ্ছে। যে পুরুষ নারীগর্ভে জন্ম নিয়েও নারীর অধিকারকে স্বীকার করে না, নারীর প্রতিভার স্বীকৃতি দেয় না, সে নিশ্চয়ই জ্ঞানহীন মূর্খ। প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষের যৌথ উদ্যোগেই পৃথিবীর সমস্ত কল্যাণধারা প্রবহমান। তাই নারীকে কোনো রকম অবমূল্যায়ন না করে নারী-পুরুষ মিলে বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়াই সময়ের দাবি। আর এ দাবি মেনে নিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই বিশ্বকে সুন্দর করে গড়ে তােলা সম্ভব। আর এ ব্যাপারে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে।

মন্তব্য: সমাজ বিনির্মাণে নারী-পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে। নারীকে বাদ দিয়ে সমাজ উন্নয়নের কথা চিন্তাও করা যায় না। তাই নারীকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবেই সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।

অথবা, ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। 
অথবা, ত্যাগে সুখ নাই, কর্ম-সম্পাদনেই প্রকৃত সুখ।
অথবা, ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের প্রকাশ।
অথবা, ভোগে নয়, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ

 মূলভাব: পরার্থে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতে পারার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। স্বার্থপরতার মাঝে কোনো সুখ নিহিত নেই বরং অন্যের স্বার্থের জন্যে কাজ করার মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রকৃত সুখ এবং মনুষ্যত্ব

সম্প্রসারিত ভাব: ভোগ-লালসার কোনো সীমারেখা নেই। মানুষ যত ভোগ করে, ততই তার ভোগের লালসা বেড়ে চলে। অতৃপ্ত কামনা তার হৃদয়ে এক তীব্র দহন জ্বালা ও দুঃখানুভূতির সৃষ্টি করে। দহন জ্বালা ও দুঃখানুভূতি মানুষকে স্বার্থান্বেষী করে তোলে। আর স্বার্থান্বেষী মানুষ মাত্রই বিচার-বুদ্ধিহীন। তাদের কাছে ভোগের বস্তু যত বেশিই থাকুক না কেন; সেগুলো তাদের কাছে পর্যাপ্ত মনে হয় না। অত্যধিক ভোগে-লালসা তাদেরকে এমনভাবে পেয়ে বসে যে, তাদের কাছে যত সুখ-সম্পদই থাকুক না কেন, আরও বেশি পাওয়ার জন্য তারা সদা তৎপর থাকে। কিন্তু মানুষ সবসময় সবকিছু চাইলেই পায় না। সংগত কারণেই মানুষের সব চাওয়া পূরণ হয় না। কিন্তু এ বিষয়টি তারা সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। ফলে না পাওয়ার দুঃখ তাদের হৃদয়কে দংশন করতে থাকে। তাদের জীবনের সকল আনন্দ নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তাদের কাছে জীবন অর্থহীন মনে হয় । মনের দুঃখে তারা তখন মরণকে আহ্বান করতে থাকে। পক্ষান্তরে, সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা স্বজন, প্রতিবেশী, সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে। 

সমাজ এবং দেশের প্রতি এই দায়িত্ববোধে তাদেরকে মহান ও উদার করে তোলে। ফলে তারা স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থের চেয়ে দেশ-জাতি-সমাজ তথা মানবতার কল্যাণে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই অনাবিল আনন্দ খুঁজে পায়। পৃথিবীর সব ভালো কাজের পিছনে রয়েছে কারো না কারো ত্যাগ। আর ত্যাগের মূর্ত প্রতীক হয়ে আজও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ ), যীশু খ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ, রামকৃষ্ণ, সক্রেটিস, নেনসন মেন্ডেলা, মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখের নাম আজও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। চারপাশের শত-সহস্র অসহায়-দুঃস্থ ও আর্ত-পীড়িতের সেবার মধ্যে তারা স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করে। এ ধরনের অনাবিল আনন্দের লেশমাত্র ভোগের মধ্যে নেই। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ সূর্যসন্তানরা যদি রাজপথে তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ না করতেন তাহলে হয়তো আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে পেতাম না। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ত্যাগ বিলিয়ে দিতে হয়েছিল। জাতি হিসেবে আমরা আজও সেই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। তাই বলা হয়ে থাকে, ভোগে সত্যিকারের সুখ নেই; বরং পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই প্রকৃত সুখ নিহিত।

 মন্তব্য: যথার্থ সুখের নাগাল পেতে হলে অবশ্যই ভোগের মােহ ত্যাগ করতে হবে। ভোগ করার ইচ্ছা মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। পক্ষান্তরে ত্যাগী মানুষের নাম পৃথীর বুকে অমর হয়ে থাকে সম্মানের সাথে।

ভাব-সম্প্রসারণ

 #  মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কাবা নাই।

মূলভাব: পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ উপাসনালয় হচ্ছে মানবহৃদয়। কেননা, স্রষ্টা মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করেন। মানুষের হৃদয় হচ্ছে তার প্রকৃত উপাসনালয়। সৃষ্টিকর্তা সর্বত্র বিরাজমান, তিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্বশ্রোতা। শুধু উপাসনালয়ের মধ্যেই তার অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ নয়। 

সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানুষ সেরা। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অন্যান্য জীবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ এতে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষকে ন্যায়-অন্যায় ও পাপ-পুণ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে চলতে হয়। মানুষকে পাপ-পুণ্য, ভালাে-মন্দ ও ধর্ম-অধর্ম বিচার-বিবেচনা করে চলতে সাহায্য করে তার হৃদয়। হৃদয় বা মন আছে বলেই মানুষ ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য বিচার করে চলতে পারে। হৃদয় বা মন উদার হলে একজন মানুষ যেমন নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে পারে, তেমনই অন্যের দুঃখ-বেদনায় সমব্যথী হতে পারে।

এই হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়েই মানুষ সৎকাজের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষই সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, দয়া প্রভৃতি সগুণ দ্বারা কল্যাণের পথে পরিচালিত হয়। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার যে মনোবৃত্তি মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে, তার উৎসস্থল হচ্ছে হৃদয় বা মন।

আর স্রষ্টার প্রার্থনা করার উৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে মসজিদ-মন্দির। মসজিদ-মন্দিরে দিন-রাত অবস্থান করে প্রার্থনা করার মূলে রয়েছে সুন্দর ও মোহমুক্ত পবিত্র পরিবেশে হৃদয়কে ষড়রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা এবং স্রষ্টার নির্ধারিত পথে চলে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। হৃদয় কলুষিত হলে দিন-রাত প্রার্থনা করলেও কোনো ফল হবে না। অতএব, মানুষের হৃদয়ই হচ্ছে সমস্ত উপাসনালয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপাসনালয়। মানুষের নির্মল ও তুষ্ট হৃদয়ই শ্রেষ্ঠ ইবাদতখানা। নিষ্কলুষ হৃদয় মানুষকে ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে, ধর্মের পথে চালিত করে মসজিদ-মন্দিরের উপাসনাকে সার্থকতা প্রদান করে। 

মন্তব্য: নির্মল ও তুষ্ট হৃদয়ের স্থান বহু অর্থ ব্যয়ে সুশোভিত অট্টালিকায় নির্মিত মসজিদ-মন্দিরের চেয়ে অনেক উপরে। সুতরাং মানুষের হৃদয়কে মনকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

ভাব-সম্প্রসারণ

 স্বদেশের উপকারে নাই যার মন। কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন।

মূলভাব: স্বদেশ বা মাতৃভূমি জননীর মতো। স্বদেশকে ভালোবাসা সবারই কর্তব্য হওয়া উচিত। আমাদের উচিত মাতৃভূমির উপকারে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া। নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে স্বদেশকে নিজ মায়ের মতো ভালোবাসার নামই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।

সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী হলো মানবজাতি। মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্ব কোনো স্বতঃসিদ্ধ বিষয় নয়। মানুষকে বিভিন্ন প্রকার মানবীয় গুণ ও সদাচারের মাধ্যমে এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হয়। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারক গুণগুলোর মধ্যে স্বদেশপ্রেম অন্যতম। স্বদেশকে ভালোবেসেই একজন মানুষ সম্মানিত ও পরিতৃপ্ত হতে পারেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন তারা তাদের সমস্ত মেধা ও ক্ষমতা উৎসর্গ করেছেন স্বদেশের কল্যাণে। তারা তাদের জীবনের চেয়েও মাতৃভূমিকে বেশি ভালোবেসেছেন। স্বদেশের উপকার করার অনেক উপায় আছে। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশের যে কোনো বিপদকালে নিজের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন। দেশের জন্য আত্মদানের ইতিহাস বাঙালি জাতির অনেক পুরনো। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক বাঙালিরা ১৮৫৭, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন। 

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই কেবল নয় দেশের সেবা করার আরও অনেক উপায় রয়েছে। নিরলস পরিশ্রম জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা, সামাজিক প্রগতিতে অবদান রাখা, ব্যক্তিগত জীবনে সততার চর্চা করা স্বদেশপ্রেমের পরিচায়ক। বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রয়ােজনীয় ভূমিকা পালনও দেশসেবার পর্যায়ভুক্ত। গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, জনহিতকর কাজে ভূমিকা পালন, পরিবেশ সুরক্ষা করা, শিক্ষা বিস্তার, জনমত গঠন- এসবও আজকের দিনে দেশসেবার অন্যতম পন্থা। কিন্তু যারা কুঁড়ে, অসদাচারী, দুর্বৃত্ত তারা দেশের অকৃতজ্ঞ সন্তান। যেসব মানুষের কর্ণকুহরে দেশমাতৃকার আকুতি পৌছায় না, যারা শ্রম ও সাধনায় দেশের কল্যাণ করে না, তারা পশুর চেয়েও নীচ। 

মন্তব্য: দেশমাতৃকার সংকটে যিনি আত্মোৎসর্গ করেন, তিনিই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অন্যদিকে, দেশের প্রতি যারা মমতাহীন, দায়িত্বহীন, তারা পশুর সমান। এজন্যই আমাদের উচিত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া।

ভাব-সম্প্রসারণ

 #  স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক মিত্র অপেক্ষা ভালো।
অথবা, স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক বন্ধু অপেক্ষা ভালো
অথবা, অন্তরে অনিষ্ট চিন্তা মখেতে মিষ্টতা, তার চেয়ে ঢের ভালো প্রকাশ্যে শক্রতা।

মূলভাব: মানুষের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া প্রকৃত বন্ধুর কাজ। অথচ নির্বাক বন্ধু এ থেকে বিরত থাকে আর স্পষ্টবাদী শত্রু ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে প্রকৃত বন্ধুর মতোই কাজ করে।

সম্প্রসারিত ভাব: প্রতিটি মানুষেরই শত্রু-মিত্র উভয়ই আছে। শত্রুরা মানুষের অনিষ্ট সাধনে লিপ্ত থাকে, আর মিত্র বুদ্ধি, পরামর্শ ও শক্তি দিয়ে সাহায্য করে। মনীষীরা বলে থাকেন মিত্র হচ্ছে ছায়াদানকারী বৃক্ষের মতো, যার ওপর একজন মানুষ অনেকাংশে নির্ভরশীল থাকে। এক্ষেত্রে মিত্রের কাজ শুধু আশ্রয় বা সমর্থন দান নয়, ভুল-ত্রুটিও ধরিয়ে দেওয়া। আসলে ভুল করাটা মানুষের এ জন্য স্বাভাবিক। মানুষমাত্রই ভুল করে থাকে। মানুষের ভুলটা যদি ধরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে, ভুল ধরিয়ে না দিলে সে বারবার ভুল করতে থাকে। তাই যারা প্রকৃত বন্ধু তারা ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়। কিন্তু অনেক বন্ধু আছে যারা বন্ধুর ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে না দিয়ে নির্বাক থাকে।

তাছাড়া জীবন চলার পথে মানুষকে অসংখ্য কাজ করতে হয়। আর কাজ করতে গেলে, সকল মানুষের পক্ষে সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও অনেক ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধুর কাজ সংঘটিত ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু নির্বাক বন্ধুরা তা করে মৌনতা করে। একে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কাজের ভালো-মন্দ কোনোটাই জানতে পারে না। ফলে সংশোধনও হতে পারে । কিন্তু স্পষ্টবাদী শত্রু নির্বাক বন্ধুর মতো কখনই নির্বাক থাকে না। বরং শত্রুতার জন্য হলেও ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কৃতকর্ম সংশোধন করার সুযোগ পায়।

তাছাড়া স্পষ্টবাদী শত্রুর কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকেই তাদের কাজ-কর্ম যথাসাধ্য ত্রুটিমুক্তভাবে সম্পন্ন করতে সচেষ্ট থাকে। এতেও কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। আর এজন্যই মনীষীরা নির্বাক বন্ধুর চেয়ে স্পষ্টবাদী শত্ৰকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

মন্তব্য: শত্রুর শত্রুতার আশঙ্কায় মানুষ সবসময় সচেতন থাকে। এতে কল্যাণ বৈ অকল্যাণ হয় না। কিন্তু বন্ধু যদি বন্ধুর গঠনমূলক সমালোচনা থেকে বিরত থাকে, তাহলে সীমাহীন অকল্যাণ সাধিত হয়।

ভাব-সম্প্রসারণ

  শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির, লিখে রেখ এক ফোঁটা দিলেম শিশির।

মূলভাব: এ ধরায় কিছু লােক আছে, যারা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না। বরং তারা সামান্য উপকার করতে পারলেই দম্ভভরে তা প্রচার করে বেড়ায়। 

সম্প্রসারিত ভাব: সম্প্রসারিত ভাব: দিঘির অগাধ জলরাশিতে শৈবালের অবস্থান। এই শৈবালের উপর জমেছে ভােরের শিশির। শিশিরের ক্ষুদ্র ফোঁটা গড়িয়ে পড়েছে দিঘির অগাধ জলে। এই সামান্য শিশির-ফোটাকে শৈবাল দিঘির প্রতি তার মহৎ দান বলে গণ্য করছে। অথচ দিঘির বিশাল জলরাশির কাছে এক ফোঁটা শিশির অতি তুচ্ছ। দিঘির জলেই যার অস্তিত্ব, সেই দিঘির প্রতি শৈবালের এমন দম্ভোক্তি সত্যি হীনম্মন্যতার পরিচায়ক। 

শৈবালের মতো মানবসমাজেও এমন অনেক অকৃতজ্ঞ লোকে আছে, যারা পরের দয়াদাক্ষিণ্য দুহাতে গ্রহণ করে কিন্তু সামান্য উপকার করতে পারলেই মনে করে আমি মহৎ কিছু করে ফেলেছি। প্রকৃতপক্ষে যিনি মহৎএবং যথার্থ পরোপকারী তিনি অপরের উপকার করে কখনো দম্ভ প্রকাশ করেন না। নিছক আত্মপ্রচারের জন্য নয়, বরং নিঃস্বার্থভাবেই তিনি পরের উপকার করেন। এজন্য তার মনে কোনো অহংকার জন্ম নেয় না। অহংকার জন্ম নিলে মহতেরা মহৎ কাজ করতেন না। 

মন্তব্য: মন্তব্য: প্রতিদানের প্রত্যাশা নয়, মানবকল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে পরের উপকার করাই মহৎপ্রাণ ব্যক্তির কাজ। সুতরাং উপকারভোগীদের উচিত উপকারকারীর কথা স্মরণ রাখা। 

ভাব-সম্প্রসারণ

  নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা?

মূলভাব:মানুষ জন্মের পরে মায়ের কাছ থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শিখে সে ভাষাই তার মাতৃভাষা বা স্বদেশি ভাষা। স্বদেশি ভাষায় মনের ভাব যত সহজে প্রকাশ করা যায়, অন্য কোন ভাষায় তা সম্ভব নয়।

সম্প্রসারিত ভাব:বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি-গুষ্ঠির লোকের বসবাস করে। এদের কথাবার্তা, চালচলন, আচার-ব্যবহার একেক রকম। ভাষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশের লোক বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। আমরা বাঙালি, বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশে আমাদের বসবাস। এদেশের প্রতিটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। সুতরাং বাংলা এদেশের স্বদেশি ভাষা। বাংলা ভাষায় কথা বলে এদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পায়। পৃথিবীর এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের চেহারার যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনই ভাষারও অনেক পার্থক্য রয়েছে।

চেহারার বৈচিত্র্যের মতো পৃথিবীতে রয়েছে নানা জাতির মানুষের নানা ভাষা। একেক দেশের মানুষ একেক ভাষায় কথা বলে। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে এবং মাতাপিতা যে ভাষা ব্যবহার করে, সেটাই তার স্বদেশি ভাষা। স্বদেশি ভাষার মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞানের যাবতীয় বিষয় সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করতে এবং প্রকাশে সক্ষম। এমন অনেকে আছেন যারা স্বদেশি ভাষার সাথে অন্য ভাষাও আয়ত্ত করে থাকে। কিন্তু অন্য ভাষার কোন কিছু বুঝতে হলেও তা কেবল স্বদেশি ভাষার মাধ্যমেই বুঝতে হয়। কাজকর্মের সুবিধার্থে ক্ষেত্রবিশেষে স্বদেশি ভাষার বাইরে অন্য একাধিক ভাষায় কথা বললেও স্বদেশি ভাষায় কথা বলে মানুষ যত আত্মতৃপ্তি লাভ করে অন্য ভাষায় কথা বলে তা পায় না। তাছাড়া স্বদেশি ভাষাকে উপেক্ষা করে কেউ কোনোদিন তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে না। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মূলত স্বদেশি ভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় কোন  আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় না। যারা দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকে, বিদেশি ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হলেও তাদের আত্মতৃপ্তি ঘটে স্বদেশি ভাষাভাষী মানুষের সাথে কথা বলেই। তাছাড়া। আত্মবিকাশে স্বদেশি ভাষার কোন বিকল্প নেই। মিল্টন পাহাড়ি ঝরনার কলধ্বনিতে স্বদেশি ভাষার সুর শুনতে পেতেন। স্বদেশি ভাষা মানবজীবনে, জাতীয় জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলেই বাঙালিরা স্বদেশি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে।

মন্তব্য:স্বদেশি ভাষা পরিহার করে কোন ব্যক্তি বা জাতির পক্ষে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, স্বদেশি ভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।

  প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।

মূলভাব: পরম করুণাময় স্রষ্টা পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে মানুষও একটি সৃষ্টি। মানুষের প্রাণ আছে। সে হিসেবে মানুষও প্রাণী। কিন্তু মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের মন আছে। এ মন আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণী। 

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে প্রাণের অধিকারী অনেক প্রাণীর মধ্যে একমাত্র মানুষেরই মন আছে। আর মন আছে বলেই মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে পারে। এ হৃদয়বৃত্তির বিকাশের ক্ষেত্রেও মানুষভেদে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। কেউ কেউ বিদ্যার্জন করে হৃদয়বৃত্তির প্রসার ঘটিয়ে জনকল্যাণে অক্ষয় কীর্তি স্থাপনে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ অপার বিদ্যার্জন করেও হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের দ্বারা সমাজ, দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। ফলে তারা মানুষ হয়ে পুরোপুরি মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে না। তারা অনেকটা প্রাণী সদৃশ। 

তাছাড়া মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে অন্য যেসব প্রাণী আছে সেগুলো প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মগ্রহণ করে। প্রাকৃতিক নিয়মে পূর্ণতা লাভ করে। এ পূর্ণতা লাভে তাদের নিজেদের কোনো কৃতিত্ব নেই। কিন্তু মানুষের বেলায় সম্পূর্ণ বিপরীত। মানুষের প্রাণ আছে এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়। মানুষের প্রকৃত পরিচয় হলো তার মন আছে। মন আছে বলেই তার মধ্যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালােবাসা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া একমাত্র মনের কারণেই মানুষের মধ্যে বিবেকবোধের সৃষ্টি হয়। এ বিবেকবোধ মানুষকে ন্যায়-অন্যায় বুঝতে সহায়তা করে, যা অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে চিন্তাও করা যায় না। তবে সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের মন বিবেক থাকলেই তারা তা কাজে লাগায় না। 

খেয়েপরে বেঁচে থাকাতেই তাদের আনন্দ। মানুষ হিসেবে খাওয়াপরাও ছাড়াও আরও দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তারা তা মানতেই চায় না। এরা মানুষ হয়েও, আসলে প্রাণী। এসব মানুষ সদৃশ প্রাণীদের বুঝতেই মনীষীরা আলোচ্য ভাবটির অবতারণা করেছেন।

মন্তব্য:মানুষ হিসাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য সকলেরই উচিত মানবিক গুণাবলি অর্জন এবং চিন্তা-চেতনার উন্নতি সাধন করে যথাযথ মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা।

Wednesday, July 29, 2020

 অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না।

মানুষ যখন থেকেই সভ্যতা নির্মাণ করার শুরু করেছে তখন থেকে অর্থের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমান সভ্যতার মাপকাঠিতে অর্থ একটি বড় ব্যাপার। অর্থ দিয়েই মূলত আমরা সমাজে মানুষের অবস্থান এবং গ্রহণযোগ্যতা পরিমাপ করে থাকি। বিত্তবান হিসেবে সমাজে পরিচিত হওয়াটাও অনেকের কাছে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু এই বিত্ত-বৈভব, ধন-সম্পদ যেকোনো মুহূর্তে হারিয়ে যেতে পারে। আমীর পরিণত হতে পারে ফকিরে।

কিন্তু জ্ঞান এমন এক সম্পদ যা কোনদিন বিনষ্ট হয় না। একজন জ্ঞানী চিরদিনের জন্য জ্ঞানী। কিন্তু একজন ধনী চিরদিন ধনী নাও থাকতে পারে। অর্জিত সম্পদ যেকোনো সময় হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। অর্জিত জ্ঞান কখনোই হারানোর ভয় থাকে না। ধনী ব্যক্তি তার সম্পদ দান করে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু জ্ঞানীর বিতরণ করা জ্ঞান অন্যদেরকেও জ্ঞানীর কাতারে সামিল করে অনিঃশেষ থেকে যায়।

জ্ঞান মানুষকে অমরত্ব দান করে, সম্পদ তা পারে না। সক্রেটিস, প্লেটো, নিউটনরা বহু শতাব্দি আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তাদের জ্ঞান সভ্যতাকে এখনো পথ দেখাচ্ছে। জ্ঞানের শাশ্বত এ সত্য সবারই জানা, সম্পদের বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞান সম্পদের বিনাশ নেই। মানুষের গড়া বহু সভ্যতা বহু ধন সম্পদ সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ যে জ্ঞান পৃথিবীতে রেখে গেছে তা ক্রমশ নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু জ্ঞানের কারণেই মানুষ সকল সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

শিক্ষা: জ্ঞান আহরণ এবং জ্ঞান বিতরণ সভ্যতাকে গুহার অন্ধকার থেকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সুতরাং জ্ঞান কখনোই বিনষ্ট হতে পারে না। অর্থ সম্পদ মানুষকে সাময়িক তৃপ্তি দিলেও জ্ঞানের সমকক্ষ হতে পারে না।

      পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।

মানুষ একা বাস করতে পারে না। তাকে সমাজের মধ্যে বাস করতে হয়। সমাজে প্রতিটি মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাস করে। মানুষের অন্যতম মানবিক এবং নৈতিক গুণ হচ্ছে একে অপরের কল্যাণসাধন করা। মানুষ শুধু নিজের কথা চিন্তা করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না। মানুষকে তার চারপাশের জগৎ নিয়েও ভাবতে হয়।

যে ব্যক্তি সর্বদা অন্যের কল্যাণ এবং উপকারের কথা চিন্তা করে, সেই ব্যক্তি সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হন। কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে কেউ যখন নিজের ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তখন সে অন্যের ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না।

অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা চরম অন্যায় হিসেবে বিবেচিত। অন্যায়কারীরা নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে গিয়ে সমাজ, দেশ এবং জাতির চরম ক্ষতিসাধন করে। এরা সমাজের মানুষের নিকট ঘৃণ্য ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়। অন্যায়কারীরা সব সময় হীনমন্যতায় ভোগে। তাই তাদের মন-মানসিকতায় শুদ্ধি আসে না। ফলে তারা তাদের কর্মক্ষেত্র তথা জীবনে উন্নতি করতে পারে না। পরের অনিষ্টকারী ব্যক্তিরা অপরের জন্য পাতা ফাঁদে নিজেরাই পতিত হয়। নিজ স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে মহাবিপদ ডেকে আনে।

শিক্ষা: প্রত্যেক মানুষেরই উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরের মঙ্গল কামনা করা, অপরের মঙ্গল করার চেষ্টা করা। তবেই নিজের কল্যাণ সাধিত হবে।


ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ।

প্রাণীকূলের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী প্রাণী ধরা হয় পিপড়া এবং মৌমাছিকে। শুধু কর্মই যদি শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড হত তবে মানুষের আগে শ্রেষ্ঠত্ব পেত পিপড়া এবং মৌমাছি। মানুষকে অন্য সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ করেছে তার জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধি এবং চিন্তা করার ক্ষমতা। পরিশ্রমের পাশাপাশি এই তিনের সমন্বয় প্রতিটি মানুষকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে। মানুষ মাত্রই ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করবে। প্রতিটা মানুষের বর্তমান জুড়ে থাকে তার ভবিষ্যতের ভাবনা।

কাজেই ভবিষ্যতই হল মানব জাতির একমাত্র চিন্তার স্থল। ভবিষ্যতের কর্ম-পরিকল্পনাই ঠিক করে দেয় জাতি হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে কারা বসবে। কে নেতৃত্ব দেবে আগামীর পৃথিবীকে। ক্ষুদ্র পিপীলিকা আর মৌমাছি যদি আগত শীতের জন্য সারা বছর খাদ্য সঞ্চয় করে ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে পারে; তবে মানুষ হিসেবে আমাদেরও উচিত ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবা। সাধারণ মানুষ আর জ্ঞানীজনদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় কর্ম পরিকল্পনা। আজকের পৃথিবী উন্নত বিশ্ব আর তৃতীয় বিশ্বে বিভক্ত শুধু ভবিষ্যতের কর্মপন্থা আর তার বাস্তবায়নের জন্য।

প্রকৃত জ্ঞানী যারা তারাই ঠিক করে রাখে আগামী দিন কি করবে। ভবিষ্যতের ভাবনায় যাদের বর্তমান কাটে তারাই প্রকৃত জ্ঞানী। কারণ, বলা হয়ে থাকে “একটি ভাল পরিকল্পনা কর্ম সম্পাদনের অর্ধেক পথ অতিক্রম করে।” কাজেই ভবিষ্যৎ নিযে যে যত ভাবে তার উন্নতি তত বেশি বেগবান হয়।

শিক্ষা: মানুষ অতীত থেকে শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে। জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতকে সাজানোর কোন বিকল্প নেই। আর তাই ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই সকল উন্নয়নশীল জাতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার।
     গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন।

মানুষের জ্ঞানের ধারক ও বাহক হচ্ছে গ্রন্থ। গ্রন্থ পাঠ করে মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়। নিজের ও অন্যের প্রয়োজনে সেই বিদ্যাকে কাজে লাগায়। বিদ্যার আলোকে জগৎকে উদ্ভাসিত করে। শাশ্বত সত্য-সুন্দরের পথ নির্দেশ করে। কিন্তু বিদ্যা যদি কেবল গ্রন্থগতই হয় তবে তা কোনো কাজেই লাগে না।

গ্রন্থগত বা পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে যথার্থ জ্ঞানী করে তুলতে পারে না। বিদ্যাকে জীবনের উপযোগী করে তোলার মধ্যেই এর যথার্থ উদ্দেশ্য নিহিত। কাজেই তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারিক জ্ঞানও থাকা দরকার। বিদ্যা অর্জন করে তাকে কাজে লাগাতে হবে। কেবল মুখস্থ করে লেখাপড়া করলে তা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায় না।

যে জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কোনো কাজে আসে না সে জ্ঞান দ্বারা নিজেরও যেমন কোনো উপকার হয় না তেমনি জগতেরও কোনো কল্যাণসাধন হয় না। আর যে বিদ্যা প্রয়োজনের সময় কাজে ব্যবহার করা যায় না প্রকৃতপক্ষে সে বিদ্যার কোনো মূল্য নেই। তেমনি মানুষের জীবনে ধন-সম্পদেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর পরিশ্রম।

পরের ধন-সম্পদকে নিজের মনে করা কিংবা নিজের ধন-সম্পদ অন্যের কাছে জমা রেখে নিজের বলে হিসাব করা চরম বোকামি। কারণ অন্যের নিকট জমা রাখা ধনসম্পত্তি প্রয়োজনের সময় কাজে লাগানো সম্ভব হয় না। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে যেমন আত্মস্থ করতে হবে, ঠিক তেমনি ধন-সম্পদ অন্যের কাছে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ত্তে রাখতে হবে। যাতে বৃহত্তর মানবকল্যাণে তা কাজে লাগানো যায় তথা দেশ ও দশের মঙ্গলে ব্যবহার করা যায়।

শিক্ষা: গ্রন্থগত বিদ্যা আর অন্যের আয়ত্বে থাকা ধন কোনো প্রয়োজনে আসে না। মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হওয়ার মধ্য দিয়েই এসবের সার্থকতা।

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনি পরে। 
সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

পৃথিবীতে কোনো মানুষই চিরস্থায়ী নয়। মানুষ কেবল চিরস্থায়ী থাকতে পারে তার মহৎ কর্মের মাধ্যমে। কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে দীর্ঘ সময়। মানুষের যথার্থ পরিচয় নিহিত কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার মাধ্যমে। যারা শুধু নিজের সুখ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা প্রকৃত সুখের সন্ধান পায় না।

জীবনে কেউ যদি ভালো কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন। মানবজীবন শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, সবার সুখ তার মধ্যে জড়িয়ে থাকে। কারণ ব্যক্তিস্বার্থের ক্ষুদ্র পরিসরে মানবস্বার্থের চিন্তার অবকাশ থাকে না। অন্যের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে কাজ করার মধ্যেই আত্মা প্রকৃত অর্থে সুখী হয়। মানুষ সুখের জন্য দিশেহারা, তারা কাজের মধ্যে সুখ খুঁজে পেতে চায়।

তাই মানুষের প্রতি স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে পৃথিবীতে কম সংখ্যক মানুষ আছে যারা নিজের কথা চিন্তা না করে, অন্যের সুখ-শান্তি তথা কল্যাণের কথা চিন্তা করে। অপরের সুখ-শান্তির মাঝে নিজের পরম সুখের ঠিকানা খুঁজে পায়। যেমন- মাদার তেরেসা মেসোডেনিয়া ছেড়ে কলকাতায় এসে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জেলে কাটিয়েছেন জীবনের ২৭টি বছর, তাছাড়া মার্টিন লুথার কিং, মহাত্মাগান্ধী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে। বিশ্বের যা কিছু মহান, মহৎ কর্ম, যা মানব সভ্যতাকে স্বর্ণ শিখরে নিয়ে গেছে তার মূলে রয়েছে মহৎ মানুষের ভূমিকা।

অপরের কল্যাণ সাধনের জন্য তারা তাদের নিজেদের সুখ শান্তি, আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস সবকিছু বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করেননি।

শিক্ষা: সংকীর্ণ স্বার্থপরতায় বিভোর মানুষ কোনো দিন সুখ নামক বস্তুটির দেখা পায় না। তাই মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই প্রকৃত মানুষের কাজ।

   সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা।

প্রতিনিয়ত মানুষ পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে চায়। চায় মায়া মমতার বন্ধনে আবদ্ধ সুখের সংসার। কিন্তু মানবজীবন পুষ্পশয্যা নয়। সংসারে আছে জটিলতা, নানা সমস্যা আর চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্ব। কখনো দুঃখ এসে তছনছ করে দেয় সুখের সাজানো সংসার। স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নানা প্রতিবন্ধকতা।

জীবনের চরম বিপর্যয়ের দিনগুলোতেও মানুষ আশায় বুক বাঁধে। সংসার সাগরে একদিকে দুঃখ খেলা করে অন্যদিকে সে খেলায় টিকে থাকার জন্য মানুষের অবলম্বন আশা। মানুষ আশাকে ভরসা করেই জীবনতরীর হাল ধরে শক্ত করে। উত্তাল সাগরের বুকে জাহাজ চালানো খুবই কঠিন। তারপরও নাবিক বেঁচে থাকার আশায় তীরে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে।

তেমনি সংসাররূপ উত্তাল দুঃখের সাগর মানুষ পাড়ি দেয় আশার তরণী ভাসিয়ে। মানুষ রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, তাই জীবনকে সামনের দিকে নিয়ে যায় এই আশাতে যে,্আগামী দিনগুলো সুন্দর হবে। কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না। স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে, ধরা দিবে বাস্তবে এসে। তাই মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হলো আশা। সাফল্যের পথে আশা মানুষকে দেয় প্রেরণা। কেননা, পৃথিবীর সব ছোট-বড় সৃষ্টির পেছনে কাজ করেছে আশা। শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে যারা আশা নিয়ে পরিশ্রম করে গেছেন তারাই হয়েছেন স্মরণীয়-বরণীয়। কখনো দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে হয়তো দুরাশা এসে মন দখল করতে পারে।

কিন্তু সেটা ক্ষণস্থায়ী। দুরাশার দুঃসময়েও মানুষ নতুন করে আশায় উদ্দীপ্ত হয়। চায় নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে। আশাই মানুষের জীবনীশক্তি। তাইতো বলা হয়- ‘আশায় বসতি।’ আশা ভাগ্যহতকে শোনায় জেগে উঠার গান। আশার ভেলায় ভর করেই চলছে পৃথিবী, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সমাজব্যবস্থা। আশা আছে বলেই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিটি মানুষ বাঁচতে শেখে।

শিক্ষা: এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষকে নানা বাধা বিঘ্ন পার হতে হয়, পুড়তে হয় দুঃখের আগুনে। কিন্তু আশা মানুষকে পথ দেখায় কীভাবে দুঃখের আগুনে পুড়ে সুখ লাভ করা যায়, প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়।

      জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। চারপাশের জীব-জগৎ নিয়েই মানুষ জীবনযাপন করে। কেননা, সৃষ্টিকর্তা বহুরকম উপাদান দিয়ে পৃথিবীকে সাজিয়েছেন। প্রত্যেক জীবের সাথে অন্য জীবের কোনো না কোনোভাবে সম্পর্ক রয়েছে। জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারী মানুষও সেই সম্পর্ক বা বন্ধনে আবদ্ধ। যে সৃষ্টিকর্তা তাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মানুষের কর্তব্য তাঁর উপাসনা করা, তাঁকে খুশি করা। মানুষ তাঁকে খুশি করতে পারে উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার মাধ্যমে এবং তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবেসে সেবা করে।

স্রষ্টার সৃষ্টিকে না ভালোবেসে, মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে যদি আমরা সারা দিন রাত তাঁকে ডাকি তিনি খুশি হবেন না। কেননা, সৃষ্টিকর্তা সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন পরম ভালোবেসে। ক্ষুদ্র থেকে বিশাল সবকিছুর প্রতিই তাঁর দৃষ্টি রয়েছে। আর সব কিছু তিনিই লালন-পালন করছেন। তাই তাঁর সৃষ্টির সেবার মাঝেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। সৃষ্টির বৈচিত্র্যতার মাঝেই রয়েছে স্রষ্টার বিশালত্ব। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে, সংসার ত্যাগী হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে তাঁকে খুঁজলে পাওয়া যায় না। আমাদের সমাজে যারা ঐশ্বর্যশালী মানুষ তাদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

এতে অসহায় মানুষগুলো খুশি হবে। মানুষের এই খুশিই সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করবে। সমাজ হবে সুন্দর। শুধু মানুষ নয়, পশু পাখিকেও ভালোবাসতে হবে। তাকে পেতে হলে জীবে দয়া করতে হবে। তাইতো সব ধর্মের মূল কথা জীবে দয়া করা। স্রষ্টার সৃষ্টি যে কত মূল্যবান তা আমরা বৌদ্ধ ধর্মের ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ এই বাণী থেকে বুঝতে পারি। হযরত মুহাম্মদ (স.) সব সময় জীবের সেবা করতেন এবং মানুষকে সবসময় জীবের প্রতি সদয় হতে উৎসাহিত করেতেন। সর্বোপরি সৃষ্টির মাঝেই স্রষ্টার বহিঃপ্রকাশ। তাই ঈশ্বরকে সেবা করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকেই সেবা করতে হবে।

শিক্ষা: সৃষ্টিবিহীন যেমন স্রষ্টার কথা ভাবা যায় না, ঠিক তেমনি সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে স্রষ্টাকে খোঁজা বৃথা চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

       ধনের মানুষ, মানুষ নয় মনের মানুষই মানুষ।

মানুষ জন্ম থেকেই দুটি পরিধির মধ্যে বাস করে। একটি আত্মপরিধি অন্যটি বিশ্বপরিধি। একদিকে থাকে আত্মসুখ ও ঐশ্বর্য আকাক্সক্ষা অন্যদিকে থাকে ত্যাগ ও মানবকল্যাণের চিন্তা। আত্মপরিধি সম্পন্ন মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। কারণ প্রকৃত মানুষ যারা তারা অপরের হিতকামনা করেন। সহানুভূতি, পরার্থপরতা ও সমষ্টিগত কল্যাণবোধ ছাড়া মনুষ্যত্ব থাকে না।

এ গুণগুলো মানুষকে সুন্দর মনের অধিকারী করে তোলে। পরোপকারী ও ত্যাগী মনের মানুষই প্রকৃত মানুষ। জনসাধারণের কাছে সংকীর্ণ মনসম্পন্ন প্রবল অর্থশালী লোকের কোনো মূল্য নেই। তারা আপাত সম্মান পেলেও হৃদয়ের শ্রদ্ধাবোধ পায় না কখনই। মৃত্যুর সাথে সাথে তার নামও বিলীন হয়ে যায় পৃথিবী থেকে। মৃত্যুর পর মানুষ আর তাকে স্মরণ করে না কখনই।

একমাত্র পরোপকারী মনের অধিকারী বিত্তবান মানুষ সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কথায় বলে ‘বিত্তের চেয়ে চিত্ত বড়।’ সুন্দর মনের মানুষ সম্পদহীন হলেও অপরের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পায়। মানুষ তাকে মৃত্যুর পরেও অনন্তকাল মনে রাখে। মৃত্যুর পরও সে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় হয় সিক্ত।

শিক্ষা: ধন-ঐশ্বর্য নয়, মানবকল্যাণকামী সহানুভূতিশীল মনই মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করতে পারে। এ ধরণের মানুষই প্রকৃত মানুষ।


 স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।

প্রত্যেক মানুষের কাছেই স্বাধীনতা একান্ত কাম্য। কেউ পরাধীন থাকতে চায় না। তবে পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়া অনেক কঠিন। আবার স্বাধীন হওয়ার চেয়ে স্বাধীনতা ধরে রাখা আরো কঠিন। কারণ তখন স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি অনেক সোচ্চার থাকে। তাই স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম আরো বড় হয়ে সামনে আসে। শক্তিশালী শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে বহুকষ্টের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলেও নানা কারণে তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়।

কারণ স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রথমদিকে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল থাকে। আর তখন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নানাভাবে এসব দুর্বলতার সুযোগ নিতে চায়। এসময় তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই নতুন স্বাধীন হওয়া দেশকে প্রথমে সুগঠিত করতে হয়। দেশের প্রতিটি মানুষকে তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে অর্থনীতি, শিল্প, কৃষিসহ সকল অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হয়।

ফ্রান্সের বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ রোঁমা রোঁলা বলেছেন- “কোনো দেশ বা জাতিকে শুধু তার সীমান্ত রক্ষা করলেই চলবে না তার শুভ বুদ্ধিকেও রক্ষা করতে হবে। জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে, পাশাপাশি রক্ষা করবে তার চিন্তা ও আত্মার স্বাধীনতা।” স্বাধীনতা অর্জন করতে যেমন সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয় তেমনি রক্ষার জন্যও আরো দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ও সংগ্রামী হতে হবে। স্বাধীনতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সকলকে সচেতন ও সংঘবদ্ধ হতে হবে।

স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হবে এবং স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে সমস্ত বিরোধী শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য দায়িত্ব সচেতন ও নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক হতে হবে।

শিক্ষা: স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একটি জাতিকে বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আবার এই অর্জিত স্বাধীনতাকে ধরে রেখে নিজেদের অবস্থান আরো উন্নত করার জন্য দেশের সকলকে আরো বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।

Monday, July 6, 2020

      # মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে।

মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে আজকের সভ্যতা। তাই পৃথিবীর সকল ধন সম্পদে প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে। কিন্তু কোটি কোটি অসহায় মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তারা আত্মসুখ, ভোগ, চিত্তবিনোদন ও বিলাসিতায় এই সম্পদের অপব্যবহার করে। তাই তাদেরকে প্রকৃত ধনী ও ক্ষমতাবান বলা যায় না।

প্রকৃত ধনী হতে হলে দেশ, সমাজ ও মানবকল্যাণে সম্পদ ব্যয় করার মহৎ চিন্তা থাকতে হবে। কেননা বিত্তবানের সম্পদের সার্থকতা নির্ভর করে সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর। মহৎ ব্যক্তিরা সম্পদকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করে। তারা অসহায়কে সাহায্য করতে, আর্ত-পীড়িতদের সেবা করতে, দুঃস্থ মানবতার পাশে দাঁড়াতে সম্পদ ব্যয় করে। ব্যক্তি বিশেষের সুখভোগ ও বিলাসিতায় ব্যবহৃত ধন শুধু অপব্যয় নয়, তা সমাজে অকল্যাণ বয়ে আনে। পবিত্র কোরআনে আছে- ‘অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।

সম্পদশালীর অঢেল সম্পদ অর্জিত হয়েছে দরিদ্র-নিপীড়িত জনগণের শ্রমে। যে সমাজে মানুষ নিরন্ন ও নিরাশ্রয় অবস্থায় ধুকে মরে, বিনা চিকিৎসায় রোগযন্ত্রণায় ও ক্ষুধায় ছটফট করে, সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন অন্যায়। এমন সমাজে মনুষ্যত্ব টিকে থাকতে পারে না। মানবকল্যাণ ও সমাজের অগ্রগতিতে সম্পদের ব্যবহারেই সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়।

ধনসম্পদ দুঃখী আর অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যতো বেশি কাজে লাগে তার সার্থকতা ততো বেশি। প্রকৃত সম্পদশালী তার সঞ্চিত সম্পদ দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজে লাগায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনে। অনেক মানুষ নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে কেবল দরিদ্র, অসহায় ও আর্তপীড়িতদের কথা ভাবেন। মানুষের কল্যাণে তারা জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত থাকেন। তাই অর্থ বিত্ত থাকলেই হবে না, মানুষের কল্যাণে তা ব্যয় করার ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। মহৎ কাজে ধন সম্পদের ব্যবহার মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে জীবনকে সার্থক করে তোলে। শিক্ষা: সঞ্চিত ধন-সম্পদ আত্মসুখভোগ ও বিলাসিতায় অপব্যয় না করে মানবতার কল্যাণে ব্যয় করা প্রয়োজন। যে ধন মানবকল্যাণে ব্যয়িত হয় না সে ধনের কোনো মূল্য নেই।

 দন্ডিতের সাথে দন্ড-দাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।

পাপ-পূণ্য নিয়েই মানুষের জীবন। যিনি ন্যায়বান তাকে সবাই পছন্দ করেন। অপরদিকে অন্যায়কারী ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। তাকে শাস্তি পেতে হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায় বিচার সঠিক হয় না। আবার একজনের অপরাধে অন্যজন দন্ড প্রাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে বিচারককে সুকঠিন ও অত্যন্ত বিচক্ষণ হতে হয়।

তিনি তার প্রজ্ঞা ও মেধার সাথে সহানুভূতি ও মমত্ববোধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দন্ড দান করবেন। দন্ডের ভয়ে অনেক সময় অপরাধী পাপকর্ম থেকে দূরে থাকে কিন্তু তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। এ জন্য বিচারককে দয়া প্রদর্শন ও সহানুভূতির মাধ্যমে অপরাধীর বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং তাকে দন্ড দিতে হবে। বিচারক মানবিক বিবেচনা ও সাক্ষ্য প্রমাণের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচারকার্য করবেন। এতেই অপরাধীর অন্তরে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্মাবে। অপরাধীকে শাস্তি নয় বরং তাকে সঠিক পথে আনাই বিচারকের মূল লক্ষ্য। এতে সমাজে অপরাধ কমে আসবে। শুধুমাত্র কঠোরতা নয় দয়া, মমত্ববোধ, নমনীয়তা প্রভৃতি বিষয়ের নিশ্চবয়তাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারের নিদর্শন।

শিক্ষা: পবিত্র বাইবেলে রয়েছে ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়’। তাই অপরাধীকে শুধু শাস্তি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং তার ভেতরের মানুষটাকে সজাগ করে তার মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলাই সমাজ ও জাতির কর্তব্য।
      #  রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে

জীবনের চলার পথে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। সেসব বাধাকে অতিক্রম করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বন্ধুর পথ ডিঙিয়ে সফলতার পানে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের লক্ষ্য। অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে সকল বাধা, ভয়কে অতিক্রম করেই করতে হয় সুখের সন্ধান। বিশ্বসংসারে সকল কিছু একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত হয়। প্রাকৃতিক এই নিয়মে দিনের শেষে রাত, রাতের শেষে দিন আসে।

ঠিক তেমনি জীবন চলার পথে দুঃখ-বেদনা আসে। কিন্তু সুখের আগমনে জীবন আবার সজীব হয়ে ওঠে। পৃথিবী বিপরীতমুখী বস্তুর খেলায় প্রতিনিয়ত আবর্তিত। আলো-আঁধার, দিন-রাত, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বিপরীতমুখী অনুষঙ্গ একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রকৃতির এই বন্ধন পৃথিবীকে দিয়েছে টিকে থাকার মন্ত্রণা। একটির অর্বতমানে অপরটির অবস্থান স্পষ্ট হয়। পার্থিব জীবনেও এই সাদৃশ্য লক্ষণীয়। সফলতা-ব্যর্থতা, উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে জীবনে আসে।

আজ যারা সুখে জীবন-যাপন করছেন তাদের সুখ এসেছে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে। এ জগতে কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না। নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ সাধারণত পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। তাদের পালাবদল ঘটে রাত-দিনের মতোই। রাত যদি দুঃখের প্রতীক হয় তাহলে সুখের প্রতীক হলো দিন। রাতের পর যেমন দিন আসে তেমনি দুঃখের পর আসে সুখ। তবে সুখের সন্ধান পেতে হলে দুঃখকে জয় করতে জানতে হয়। দুঃখ জীবনকে, হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। চলার পথে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে উদ্যমতার সঙ্গে এসব বাধাকে অতিক্রম করে সুখকে ছিনিয়ে আনতে হয়। দুঃখের অন্ধকার যতই গভীর হোক ধৈর্য, সহিষ্ণুতার মাধ্যমে তা জয় করা সম্ভব।

শিক্ষা: দুঃখ দেখে, পরাজয়কে দেখে ভয় পেলে চলবে না। মেধা-মননের সমন্বয়ে সাহসী উদ্যোগে জীবন-চলার পথকে মসৃণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে দুঃখের পরেই সুখ আর আনন্দ জীবনকে ছুঁয়ে যাবে।

# মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা

প্রত্যেক দেশেরই একটি নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যে ভাষায় সে দেশের মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। তাই সম্পর্ক সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। জন্মের পর থেকে শিশু তার মায়ের মুখ থেকে আধো আধো করে যা বলতে শিখে তা হলো তার মায়ের ভাষা। বাংলা হলো আমাদের মায়ের ভাষা। আমাদের হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা, ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা সবকিছুর প্রকাশ ঘটে বাংলা ভাষার মাধ্যমে।

বাংলা ভাষার রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস যা অন্য কোন জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে মানুষ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। কিন্তু বাঙালি এক জাতি যারা ভাষার জন্যে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করে এদেশের মানুষকে তা মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু বাংলার ছাত্রসমাজ তথা আপামর জনতা তা মেনে নেয়নি।

ফলে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে তার প্রতিবাদে মিছিল করতে গিয়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকেই প্রাণ দিয়েছে ভাষার জন্য। ফলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। অবশেষে পাকিস্তানের সংবিধানে ১৯৬৫ সালে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ইউনেস্কো বাঙালিদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। অতএব আন্দোলন সংগ্রামের ফলে বাংলা ভাষা স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের জাতীয় চেতনায়। তাই বাংলা ভাষা আমাদের আশা অকাঙ্ক্ষা ও গর্বের বিষয়।

শিক্ষা: বাংলা ভাষা আজ বিশ্বময় সমাদৃত। এ অর্জন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র মানচিত্রকে উজ্জ্বল করেছে। তাই ভাষার চেতনাকে জাগ্রত রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

Sunday, July 5, 2020

     # সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি থেকে অর্জিত শিক্ষা-এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা মূলত পরীক্ষা পাশের শিক্ষা, জীবিকার্জনের শিক্ষা। সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। তাই স্কুল কলেজের শিক্ষাকে প্রকৃত অর্থে সুশিক্ষা বলা যায় না। সুশিক্ষার অর্থ স্বশিক্ষা।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার পাশাপাশি স্বচেষ্টায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্ঞানান্বেষণ সুশিক্ষার পর্যায়ে পড়ে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি হবেন কুসংস্কারমুক্ত, তার চিন্তা হবে সুদূরপ্রসারী, বৈজ্ঞানিক ও মুক্তবুদ্ধির আলোকে উদ্ভাসিত। এমন অনেক ডিগ্রিধারী লোক আছেন যাদের শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনচর্চার কোনো সামঞ্জস্য ঘটেনা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের বাহ্যিক অবয়ব তৈরি করতে পারলেও তার অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে পারে না।

মূলত শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য জ্ঞানশক্তি অর্জন করা। শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে অর্জন সাপেক্ষ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান আহরণের পথ অনেক সময় সুগম হলেও তাতে পূর্ণতা আসে না। স্বশিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান ছাড়া মানুষের অন্তর্দৃষ্টি প্রসারিত হয় না। স্বশিক্ষা মানুষকে সুদৃঢ়প্রসারী জ্ঞানদান করে।

তখন তিনি বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হয়ে উঠেন, পরিশীলিত রুচিবোধে হয়ে উঠেন উদার ও নম্র স্বভাবের। বস্তুত প্রকৃত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান মুখ্য নয়। পৃথিবীতে অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, যারা প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই মুক্ত চিন্তা ও জ্ঞান দিয়ে মানবতার উপকার করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলামের কথা আমরা উল্লেখ করতে পারি। স্বচেষ্টায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এঁরা জ্ঞান রাজ্যে বিচরণ করেছেন। তাই বলা যায় যারা প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত আর জ্ঞানী তারা সকলেই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।

শিক্ষা: গুরুর শিক্ষা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধ শিক্ষা মানুষকে সুশিক্ষিত করে না। সুশিক্ষা অর্জন হয় আত্মপ্রচেষ্টা, আগ্রহ ও অধ্যয়নের মাধ্যমে।

#  সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

প্রতিটি সমাজেই কিছু আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর মানুষ বাস করে। তারা সমাজের প্রতি দায়িত্ব ভুলে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজ এবং সমাজের সদস্যদের প্রতি প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। সমাজবদ্ধভাবে বসবাসের মধ্য দিয়েই মানুষ সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে মানুষ প্রতিষ্ঠা করেছে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে এই সমাজ।

আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সমাজের অবদান রয়েছে তেমনি সমাজের প্রতিও রয়েছে আমাদের দায়িত্ব। সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে হলে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা পরিহার করে চলতে হয়। স্বার্থবাদী চিন্তা নিয়ে সমাজের উন্নয়ন যেমন সম্ভব না তেমনি ব্যক্তি জীবনেও সাফল্য আসে না। সকলের সহযোগিতায় গড়া সমাজ যেন আনন্দ-কানন। সমাজের অন্য সদস্যরা যাতে ব্যক্তিস্বার্থের সংকীর্ণতার শিকার হয়ে কষ্ট না পায় সেটাই হওয়া উচিত সব মানুষের কামনা।

আর এর জন্য প্রয়োজন স্বীয় স্বার্থ ত্যাগ করা। কারণ অন্যের উপকারে উৎসর্গিত জীবনই প্রকৃত জীবন। পরোপকারী মানুষ অমর এবং সর্বজন পূজনীয় হয়। বিবেক এবং চিন্তার শক্তিই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছে। সুতরাং বিবেকবান কোনো মানুষই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে সমাজ এবং চারপাশের মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে না। বিবেকবান মানুষমাত্রই পরোপকারী এবং সমাজসেবক হয়ে থাকেন। আর সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তাহলে সমাজ হয়ে উঠবে সুন্দর।

শিক্ষা: ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে মানবতার স্বার্থে নিয়োজিত হওয়াই মানবজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এর মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।

    #   পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে

পথ ও পথিক, এ দুটি আলাদা বস্তু হলেও পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পথিক তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নতুন পথ সৃষ্টি করে। মানুষ ঠিক একইভাবে তার চেষ্টা ও সাধনা দিয়ে জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। মানুষের সৃষ্টিশীলতার মূলে নিহিত রয়েছে বিরামহীন অধ্যবসায় ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং ধৈর্য। তীব্র ইচ্ছা শক্তি আর প্রচেষ্টা দিয়ে মানুষ অসাধ্যকে জয় করতে পারে।

সৃজনশীল মানুষ তার চলার পথ নিজেই তৈরি করে নেয়। অন্যের পথে সে হাঁটে না। একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা জীবনে অগ্রসর হতে চায়। প্রতি পদক্ষেপেই তারা একটা নতুন উপায়ের সন্ধান করে। আর জীবনে নানা ব্যর্থতা অতিক্রম করে একদিন সে ঠিকই তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটি তৈরি করে নেয়। অন্যের প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হওয়ার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো গৌরব।

আর এ পথে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অনেক সময়ই অর্জিত হয় না। তাই কৌতূহলী পথিক অবিরাম নতুন পথের সন্ধান করে। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক পথ। এরকম অনেক পথই এ পৃথিবীতে তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু প্রতিটি পথই যে মানুষকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিবে এমনটি নয়। কারণ প্রতিটি মানুষই একে অপরের থেকে পৃথক এবং তাদের মেধা ও চিন্তাশক্তিও পৃথক।

তাই গতানুগতিক পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলে অনেককেই মাঝ পথে থেমে যেতে হয়। এমন দৃষ্টান্তের শেষ নেই। কারো অভিভাবক হয়তো আশা করে যে তাদের সন্তান ডাক্তার হবে। কিন্তু সন্তানটি হয়তো তার মেধা এবং সৃজনশীলতাকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে লাগাতে চায়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক যদি সন্তানের ওপর তাদের ইচ্ছাটাকে চাপিয়ে দেয় তবে দেখা যাবে যে সে মাঝপথেই থমকে গেছে। অন্যদিকে সে যদি নিজের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজ পথের সন্ধান করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে তবে সে প্রকৃত অর্থেই সফল। এরকম প্রতিটি মানুষেরই সফলতার পথ আলাদা। তাই প্রকৃত পথিক প্রতিনিয়ত নতুন পথের সন্ধান করে।

শিক্ষা: অন্যের প্রদর্শিত পথ নয়, নিজের সৃষ্ট পথেই প্রতিটি মানুষ সফলতা অর্জন করে। তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিত নতুন পথের সন্ধান করা এবং সে পথ ধরে এগিয়ে চলা।

# পুণ্য পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে মানুষ হতে দাও তোমার সন্তানে

মানুষের জীবনে চলার পথ মসৃণ নয় বরং তা কাঁটায় ভরা। প্রতিটি পদে পদে রয়েছে কষ্ট-দুঃখ, বাধা-বিপত্তি, সংঘর্ষ, সংঘাত। প্রতিটি পদক্ষেপ সংগ্রামের। মানুষের জীবনে বেদনা আছে, কষ্ট আছে, অপমান আছে, ব্যর্থতা আছে, পরাজয় আছে।

এসব জীবনের অঙ্গ এবং বৈশিষ্ট্য। এই সকল বিরোধী শক্তির সাথে অত্যন্ত সহনশীলতা এবং নিষ্ঠার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হতে হয়। বাঁধাকে জয় করার মধ্যেই রয়েছে জীবনের তাৎপর্য। মানবজীবনের সার্থকতা লুকিয়ে থাকে বাধা জয়ের মধ্যে।

দুঃখ, কষ্ট, শোক, আঘাত মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলে। আগুনে পুড়ে সোনা যেমন খাঁটি হয়, তেমনি দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ জীবনের সকল বাধাকে জয় করার শক্তি অর্জন করে। মানুষের জীবন মানেই সংগ্রামের ইতিহাস।

পৃথিবীতে যুগে যুগে যোগ্যতম প্রাণীগুলো টিকে থাকতে পেরেছে কিন্তু দুর্বল প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে সংগ্রামের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে। কেউ যদি জীবনে সফল একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তবে তাকে দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, অপমান, পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মনীষীদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, তারা কষ্ট, দুঃখ, সংগ্রাম, সংঘাতের মধ্য দিয়ে পথ চলেছেন। অনেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন।

কিন্তু তারা তাদের অটুট মনোবল এবং সাহসের মাধ্যমে সকল বাধাকে অতিক্রম করেছেন। সফলতার খাতায় নিজেদের নামকে লিপিবদ্ধ করেছেন। ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নামকে অঙ্কিত করেছেন এবং হয়েছেন অনুকরণীয় চরিত্র।

শিক্ষা: জীবনে চলার পথে কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবেলা করেই মানুষ, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর জন্যে দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, আঘাত, সংগ্রাম, উত্থান-পতন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
     #  পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়

মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব। স্বীয় বিবেক-বুদ্ধি, মেধা-মননের গুণেই সে শ্রেষ্ঠ। কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে পৃথিবীতে আসে না। প্রতিটি মানুষই নিষ্পাপ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর বিরূপ পরিবেশ, নেতিবাচক পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে অনেক সময় তার বিবেক-বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায়, বিচারবোধ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। তখন সে পাপাচারে লিপ্ত হয়। মানুষের এই পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার পেছনে মুখ্যত সে নিজে দায়ী নয়।

তাই পাপকার্য ঘৃণিত ও বর্জনীয় হলেও পাপীকে বর্জন করা উচিত নয়। বরং তাকে কলুষতামুক্ত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া অন্য সকল মানুষেরই দায়িত্ব এবং কর্তব্য। পাপ এক ধরণের ব্যাধি। মানুষ রোগ-ব্যাধিকে ঘৃণা করলেও রোগাক্রান্ত মানুষকে ঘৃণা করে বর্জন করতে পারে না। পাপ ময়লা-আবর্জনা স্বরূপ। ময়লা-আবর্জনা ধারণকারী ডাস্টবিনকে কেউ সযত্নে ঘরে তুলে রাখে না। পাপরূপী আবর্জনাকে ধারণ করলেও মানুষ কিন্তু ডাস্টবিন নয়। ডাস্টবিন জন্ম থেকেই ডাস্টবিন। আর মানুষ জন্ম থেকেই মানুষ। আবর্জনা পরিষ্কার করলেও ডাস্টবিন গ্রহণীয় নয়।

কিন্তু মানুষ পাপমুক্ত হলে সভ্যসমাজে সাদরে গ্রহণীয়। দিনের পর দিন অপরাধ করলেও মহান স্রষ্টা তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে ঘৃণায় ছুঁড়ে ফেলেন না। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ-সুন্দর জীবনে ফিরে আসার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দান করেন। ভয়ঙ্কর অপরাধীকেও অনুতপ্ত হয়ে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। ইতিহাসে এরূপ বহু নজির আছে। বস্তুত পাপী বড় অসহায়, দুঃখী। তাকে ঘৃণায় দূরে ঠেলে দিলে সে আরও অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়তে পারে। আলোকিত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ না পেয়ে সে গভীর অন্ধকারে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

শিক্ষা: পাপকাজ অবশ্যই ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য। কিন্তু পাপীকে ঘৃণায় দূরে না ঠেলে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তাকে সহানুভূতির সঙ্গে সহায়তা করতে হবে।

     #  জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে

সৃষ্টিকর্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। সবুজ শ্যামলে সুন্দর করে সাজিয়েছেন পৃথিবী। তবে তার সেরা সৃষ্টি হলাম আমরা মানুষ জাতি। তিনি আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন। আমাদের জীবন বড় ক্ষণস্থায়ী আর তা আটকে আছে সুনির্দিষ্ট বাঁধাধরা কিছু নিয়মে। এই জীবনের আয়ু অসীম নয়, অনন্তকালের নয়; এর শেষ আছে। আমাদের জীবন অবিনশ্বর নয় বরং তা নশ্বর। জীবনের শুরু হয় জন্ম দিয়ে আর এর পরিসমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু নিশ্চিত।

পৃথিবীতে এমন কোনো সৃষ্টি নেই, যার জন্ম হয়েছে কিন্তু মৃত্যু হবে না। মৃত্যুকে থামানো যায় না বলেই মানুষ কখনো অমর হতে পারে না। মানুষের পঁচনশীল শরীর মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে মিশে যায় পৃথিবীর মাটিতে। মানুষ হয়তো অন্যের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু স্বশরীরে কেউ কোনোদিন অমর হতে পারে না। মানুষ মৃত্যুকে না চাইলেও মৃত্যুই মানুষকে কেঁড়ে নিয়ে যায় এই সুন্দর বসুধা থেকে। মৃত্যু কাউকে কখনো অমর হতে দেয় না। মৃত্যু প্রত্যেক জীবের জন্য অবধারিত সত্য।

সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কখনোই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি, ঘটে না আর ঘটবেও না। মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কিন্তু অমর থেকে যায় কেবল তার সৃষ্টিকর্ম।

শিক্ষা: মানুষ মরণশীল, প্রতিনিয়ত সে মৃত্যুর দিকে ধাবমান। মৃত্যু এড়িয়ে অমর হওয়া তাই অসম্ভব।