চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Thursday, July 30, 2020

আসিতেছে শুভ দিন

দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।

হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,

পাহাড়-কাটা সে পথের দুপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,

তোমাদের সেবিতে হইল যাহারা মজুর,মুটে ও কুলি,

তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি,

তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদের গান

তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান।

 

সারমর্ম: দিনে দিনে শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। কিন্তু এই শ্রমজীবী মানুষ শোষিত, বঞ্চিত, ও অবহেলিত। তবে শ্রমজীবী মানুষদের যারা শোষণ করছে তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে। কেননা, শ্রমজীবীদের নব উত্থানের সূচনা আসন্ন।

সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে

সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালবেসে।

জানি না তোর ধন-রতন আছে কিনা রাণীর মতন

শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।

কোন বনেতে জানিনে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল.

কোন গগনে উঠেরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।

আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,

ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।


সারমর্ম: প্রতিটি মানুষের কাছেই তার জন্মভূমি অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য, অসীম ঐশ্বর্য আমাদের চোখ জুড়ায়, মন ভোলায়। এই অপরূপ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমাদের জীবন ধন্য। তাই এদেশের মাটির স্নেহের স্পর্শেই আমরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।

শৈশবে সদুপদেশ যাহার না রোচে,

জীবনে তাহার কভু মূর্খতা না ঘোচে।

চৈত্র মাসে চাষ দিয়া না বোনে বৈশাখে,

কবে সেই হৈমন্তিক ধান্য পেয়ে থাকে?

সময় ছাড়িয়া দিয়া করে পন্ড শ্রম,

ফল চাহে, সেও অতি নির্বোধ অধম।

খেয়াতরী চলে গেলে বসে থাকে তীরে।

কিসে পার হবে, তরী না আসিলে ফিরে?

 

সারমর্ম: জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো শৈশবকাল। এ সময় সদুপদেশ মেনে না চললে ভবিষ্যতে সাফল্য আসে না। সময়ের কাজ সময়ে করাও সফলতা অর্জনের অন্যতম চাবিকাঠি। সময়মত কোনো কাজ না করলে পরবর্তীতে অধিক পরিশ্রম করেও সে কাজে সাফল্য অর্জন করা যায়না।

 

সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,

দেশ-মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।

দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়?

পুণ্য অত হবে না’ক সব করিলেও জড়।

মুক্তিকামী মহাসাধক, মুক্ত কর দেশ,

সবারই সে অন্ন যোগায়, নেইকো গর্ব লেশ।

ব্রত তাহার পরের হিত সুখ নাহি চায় নিজে

রৌদ্র-দাহে তপ্ত তনু শুকায় মেঘে ভিজে।

আমার দেশের মাটির ছেলে, করি নমস্কার,

তোমায় দেখে চূর্ণ হউক সকল অহংকার।

 

সারমর্ম: কৃষকরাই আমাদের দেশের প্রাণ। তাদের চেয়ে বড় সাধক আর কেউ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠোর পরিশ্রম করে তারা আমাদের অন্নের যোগান দেয়। তাদের উদ্দেশ্য দেশ ও দশের কল্যাণসাধন। শ্রম, সাধনা, আর ত্যাগ-তিতিক্ষার মহান আদর্শকে ধারণ করে সকলের ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান।


 বসুমতি, কেন তুমি তই কৃপণা?
কত খোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্যকণা।
দিতে যদি হয় দে মা প্রসন্ন সহাস
 কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস?
 বিনা চাষে শস্য দিলে কি তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কহে বসুমতি
  আমার গৌরব তাতে সামান্যই বাড়ে,
তোমার গৌরব তাতে একেবারে ছাড়ে।

সারমর্ম: শ্রমলব্ধ সম্পদে গৌরব আছে, আছে আনন্দ আর শ্রমহীন প্রাপ্তিতে থাকে দুর্বলতা, থাকে অবসাদ। তাই সকলেরই উচিত পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করা। কারণ, পরের দান গ্রহণে কোনো আত্মতৃপ্তি নেই, শ্রমেই সত্যিকারের গৌরব।

   বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
   বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
  দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
  দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
  দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
   ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
  একটি ধানের শীষের উপরে
  একটি শিশির বিন্দু।

সারমর্ম: মানুষ বহু অর্থ ও সময় ব্যয় করে দূরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যায়। কিন্তু ঘরের কাছের সৌন্দর্যটুকু আর দেখা হয়ে ওঠে না। সৌন্দর্যের বিচিত্র সমারোহ মানুষের চারপাশে বিদ্যমান। তাই দূরে যাওয়ার আগে কাছের জিনিসও সবাইকে চিনতে জানতে হবে।

খুব ছোট ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যেমন সূর্যকে দেখা যায়, তেমনি ছোট ছোট কাজের ভেতর দিয়েও কোন ব্যক্তির চরিত্র ফুটে ওঠে। বস্তুত মর্যাদাপূর্ণভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন ছোট ছোট কাজেই চরিত্রের পরিচয়। অন্যের প্রতি আমাদের ব্যবহার কীরূপ তাই হচ্ছে আমাদের চরিত্রের শ্রেষ্ঠ পরীক্ষা। বড়, ছোট সমতুল্যের প্রতি সুশোভন ব্যবহার আনন্দের নিরবচ্ছিন্ন উৎস।

সারাংশ: চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর চরিত্র প্রকাশ পায় তার ভালো কাজের মাধ্যমে, তা যত ছোটই হোক। ছোট বড় সবার সাথে ভালো ব্যবহারই চরিত্রের পরিচয় এবং আনন্দের উৎস।


বাল্যকাল হইতেই আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক, তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি। তেমন করিয়া কোনো মতে কাজ চলে মাত্র; কিন্তু মনের বিকাশ লাভ হয় না। হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে; কিন্তু আহারটি রিতিমত হজম করিতে অনেকগুলো অপাঠ্য পুস্থকের সাহায্য আবশ্যক। ইহাতে আনন্দের সহিত পড়িতে পড়িতে পরিবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। গ্রহণ শক্তি, ধারণা শক্তি, চিন্তা শক্তি বেশ সহজে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ফল লাভ করে।

সারাংশ: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। শিক্ষার সাথে আনন্দ না থাকলে সে শিক্ষা হৃদয়ে স্থান লাভ করে না। ধরনের শিক্ষা দিয়ে কোনো রকম কাজ চললেও মানবিক বিকাশ সাধিত হয় না। তাই শিক্ষাকে আনন্দের অনুসঙ্গ করতে হবে।


অপরের জন্য তুমি তোমার প্রাণ দাও, আমি বলতে চাই নে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর করো। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বলো। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটা করুণ কটাক্ষ নিক্ষেপ করো। তাহলেই অনেক হবে। চরিত্রবান, মনুষ্যত্বসম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন, পরের দুঃখকে ঢেকে রাখতে গৌরববোধ করেন।

সারাংশ: অন্যের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই ।জীবন উৎসর্গ না করে ছোট ছোট দুঃখ দূর করার মধ্য দিয়েও অন্যকে সুখী করা যায়। নিজের কথা না ভেবে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে অসহায় মানুষ উপকৃত হয়। মহৎ ব্যক্তিরা এভাবে সর্বদাই নিজের সুখ-দুঃখকে উপেক্ষা করে পরের কল্যাণ কামনায় ব্রতী হন।

 

 শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ কর। কালিধুলার মাঝে, রৌদ্রবৃষ্টিতে কাজের ডাকে নেমে যাও। বাবু হয়ে ছায়ায় পাখার তলে থাকবার কোনো দরকার নেই। হচ্ছে মৃত্যুর আয়োজন। কাজের ভিতর কুবুদ্ধি, কুমতলব মানবচিত্তে বাসা বাঁধতে পারে না। কাজে শরীরে সামর্থ্য জন্মে, স্বাস্থ্য, শক্তি, আনন্দ, স্ফূর্তি সকলই ভাল হয়। পরিশ্রমের পর যে অবকাশ লাভ হয় তা পরম আনন্দের অবকাশ। তখন কৃত্রিম আয়োজন করে আনন্দ করবার কোনো প্রয়োজন হয় না। শুধু চিন্তার দ্বারা জগতের হিত সাধন হয় না। শুধু চিন্তা করে মানুষ পূর্ন জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয় না। মানবসমাজে মানুষের সঙ্গে কজে, রাস্তায়, কারখানায়, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করে। চিন্তা পুস্তক মানব মনের পাঁপড়ি খুলে দেয় মাত্র, বাকি কাজ সাধিত হয় সংসারের কর্মক্ষেত্রে।

সারাংশ: আলস্য মানবজীবনের মৃত্যু ডেকে আনে আর কাজ জীবনকে সুন্দর করে তোলে। শুধু চিন্তা দিয়ে জগতের হিত সাধন হয় না বরং চিন্তার সঙ্গে যখন কর্ম যোগ হয় তখনই মানব কল্যাণ সাধিত হয়, সুন্দর হয় বিশ্বজগৎ।


প্রকৃত জ্ঞানের স্পৃহা না থাকলে শিক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তখন পরীক্ষায় পাসটাই বড় হয় এবং পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠায় জ্ঞান সীমাবৃদ্ধ থাকে। এই কারণেই পরীক্ষায় পাস করা লোকের অভাব নেই আমাদের দেশে, কিন্তু অভাব আছে জ্ঞানীর। যেখানেই পরীক্ষা-পাসের মোহ তরুণ ছাত্রছাত্রীদের উৎকণ্ঠিত রাখে, সেখানেই জ্ঞান নির্বাসিত জীবনযাপন করে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জগতের বুকে অক্ষয় আসন লাভ করতে হলে জ্ঞানের প্রতি তরুণসমাজকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সহজ লাভ আপাতত সুখের হলেও জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচিত হবে না।

সারাংশ: শিক্ষায় জ্ঞানের আগ্রহ না থাকলে সেই শিক্ষা ব্যর্থ হয়। কেবল পরীক্ষা পাস নয়, জ্ঞানার্জনই শিক্ষার লক্ষ্য। জ্ঞানচর্চার মধ্যে স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিহত। কাজেই পরীক্ষা পাসের সহজ লাভ থেকে দৃষ্টি পরিবর্তন করে জ্ঞানচর্চায় মনোযোগী হওয়া আবশ্যক।


অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মতো দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ-কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়। অতএব অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও, আর শুরু করো দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে।

সারাংশ: মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো বর্তমান। অতীত এবং ভবিষ্যতের ভাবনা মানুষের জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনে না। বরং তা মানুষকে শক্তিহীন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং স্নায়ুবিকভাবে দুর্বল করে তোলে। তাই জীবনকে সফল করে তুলতে হলে অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বর্তমানকে গুরুত্ব দিতে হবে।


    মুখে অনেকেই টাকা তুচ্ছ, অর্থ অনর্থের মূল বলিয়া থাকেন। কিন্তু জগৎ এমন ভয়ানক স্থান যে টাকা না থাকিলে তাহার স্থান কোথাও নাই। সমাজে নাই, স্বজাতির নিকট নাই, ভ্রাতা-ভগিনীর নিকটে নাই, স্ত্রীর নিকটে নাই। স্ত্রীর ন্যায় ভালোবাসে এমন বলতে জগতে আর কে আছে? টাকা না থাকিলে অমন অকৃত্রিম ভালোবাসারও আশা নাই। কাহারও নিকট সম্মান নাই। টাকা না থাকিলে রাজায় চিনে না, সাধারণে মান্য করে না, বিপদে জ্ঞান থাকে না। জন্মমাত্র টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তে টাকা, জগতে টাকারই খেলা।

সারাংশ: অর্থকে অনর্থের মূল বলা হলেও মূলত এটি অত্যন্ত মূল্যবান। অর্থ বিত্তহীন মানুষকে তার পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্রই অসম্মানের চোখে দেখা হয়। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাই অর্থই প্রধান অবলম্বন।

 

কিসে হয় মর্যাদা ? দামি কাপড়, গাড়ি, ঘোড়া ও ঠাকুরদাদার কালের উপাধিতে? - মর্যাদা এইসব জিনিসে নাই। আমি দেখতে চাই তোমার ভিতর, তোমার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরোয় কিনা। তোমায় দেখলে দাসদাসী দৌড়ে আসে। প্রজারা তোমায় দেখে সন্ত্রস্ত হয়, তুমি মানুষের ঘাড়ে চড়ে হাওয়া খাও, মানুষকে দিয়ে জুতা খোলাও, তুমি দিনের আলোতে মানুষের টাকা আত্মসাৎ কর। বা-মা-শ্বশুর-শাশুড়ি তোমায় আদর করেন। আমি তোমায় অবজ্ঞায় বলব- যাও।

সারাংশ: সমাজে মানুষের মর্যাদা অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতা, আভিজাত্য ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত হয় না। মিথ্যা আভিজাত্য, অহমিকা, অর্থলোভ, দুশ্চরিত্র ইত্যাদি মানুষকে অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত করে।


Wednesday, July 29, 2020

বাংলাদেশের লোকশিল্প

আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে লোকশিল্পের চর্চা চলে আসছে| গ্রামীণ জীবনে সাধারণ মানুষ দেশীয় কাচাঁমাল ব্যবহার করে সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে শিল্পসম্মতভাবে যেসব সামগ্রী তৈরি করে সেগুলোকে বলা হয় লোকশিল্প| এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কুলা, ডালা, মোড়া, †cv‡jv, ধামা, খালুই, টোপা ইত্যাদি| বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব জিনিস গ্রামের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয়| এগুলো নানা ডিজাইনে বিভিন্ন রং ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি হলেই লোকশিল্প হয়ে যায়| বেত দিয়ে তৈরি শীতলপাটি, মোড়া, চেয়ার, টেবিল, খাট ইত্যাদি শহুরে মানুষের দৃষ্টি কাড়ে| এছাড়া নকশিকাঁথা, মাটি দিয়ে তৈরি নানা তৈজসপত্র, পুতুল, ঘোড়া, হাতি, চুড়ি, দুল, ফুলদানী ইত্যাদি খুবই আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি হয়| এছাড়া শামুক ঝিনুকের তৈরি মালা, কানের দুল, বালা, চাবির রিং ইত্যাদি খুবই আকর্ষণীয়| এসব সামগ্রী বিদেশীদের মন কেড়েছে| এসব রপ্তানি করে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা| এর বাইরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁতে তৈরি শাড়ি, চাদর, জামা বা প্যান্টের কাপড়, লুঙ্গি ইত্যাদির কদর রয়েছে| টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর, নারায়ণগঞ্জের জামদানী গেঞ্জি ইত্যাদির কদর রয়েছে| টাঙ্গাইলের তাতেঁরশাড়ি, কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর, নারায়ণগঞ্জের জামদানি বা গেঞ্জি, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের তৈরি ওড়না, থামি ইত্যাদির খ্যাতি বাংলাদেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে রয়েছে| এগুলোর ডিজাইন রং শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, ব্যবহারেও আরাম দায়ক| এসব লোকশিল্প সামগ্রীর খ্যাতি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে মহীয়ান করে তুলছে|