চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Monday, August 10, 2020

 

কালো জিরা সব রোগের মহৌষধ

 

 

সব রোগের মোহা ঔষুধ হচ্ছে  কালো জিরা। আজকে কালো জিরার  কিছু উপকার সম্পর্কে আপনাদের জানাব। আসুন জেনে নেই কালি জিরার উপকার ও স্বাস্থ্যগুণ:

 ·         খাবারে অরুচি, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা, চুলপড়া, সর্দি, দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, কাশি, উদরাময়,  হাঁপানি নিরাময়ে কালো জিরা সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালো জিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

·         মাথাব্যথা,  চুলপড়া, অনিদ্রা,  মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা,  মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালো জিরা উপযোগী।

·         মাথা ব্যথায়: কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তি স্থানে দৈনিক তিন চার বার কালোজিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।

·         প্রতি দিন চায়ের সাথে নিয়মিত কালো জিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদ ও বিগলিত হয়।

·         মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

·         জ্বর, গায়ের ব্যথা, কফ  দূর করার জন্য কালো জিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায় কালো জিরা ।

·         সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালো জিরা পিষে খেলে শিশু দুধ খেতে পাবে বেশি পরিমাণে।

·         কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল­ এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না।

·         কালো জিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালিজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক।

·         দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালো জিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।

·         মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

·         কালো জিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে।

·         দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে।

·         কালো জিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা হয়।

·         প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালো জিরা খাওয়া হয়।

·         বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।

·         মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রাত্রে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ্ মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা-র ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। যারা জানেন না তাদের জন্য ভর্তা বানানোর প্রক্রিয়া পরে পোস্ট করা হবে।

·         নিয়মিত কালিজিরা খান। এটি মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার দরুন স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে এটি প্রাণশক্তি বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে।

 

কালো জিরার গুনাগুণ, ইসলাম ও বিজ্ঞান কী বলছে

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন: “ তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবেকেননা এতে একমাত্র মৃত্যৃ ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি এতে রয়েছে

তিরমিযী,বুখারী,মুসলিম থেকে নেয়া

হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, “প্রতিদিন ২১টি কালোজিরার ১টি পুটলি তৈরী করে পানিতে ভিজাবে এবং পুটলির পানির ফোঁটা এ নিয়মে নাশারন্দ্রে (নাশিকানাক) ব্যবহার করবে-প্রথমবার ডান নাকেরছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। দ্বিতীয়বার বাম নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। তৃতীয়বার ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা ও বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা।

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনযখন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশী কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে।”– মুজামুল আওসাত: তাবরানী।

 

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কালো জিরার আরো কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা:

কালো জিরাকে সব রোগের ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অন্যান্য সব ভেষজের মতো কালিজিরা নিয়েও গবেষণা কম হয় নি। ১৯৬০ সালে মিসরের গবেষকরা নিশ্চিত হন যেকালো জিরায় বিদ্যমান নাইজেলনের কারণে হাঁপানি উপশম হয়। জার্মানি গবেষকরা বলেনকালো জিরার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইকোটিক প্রভাব রয়েছে। এটি বোনম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উত্তেজিত করে এবং ইন্টারফেরন তৈরি বাড়িয়ে দেয়। আমেরিকার গবেষকরা প্রথম কালো জিরার টিউমারবিরোধী প্রভাব সম্পর্কে মতামত দেন। শরীরে ক্যান্সার উত্পািদনকারী ফ্রি-রেডিক্যাল অপসারিত করতে পারে কালিজিরা। মোটকথাকালো জিরা সব ধরনের রোগের বিরুদ্ধে তুলনাহীন। আসুন জেনে নিই কালিজিরার এমন কিছু ব্যবহারযেগুলো একেবারেই অপ্রচলিত।

·         স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে: কালো জিরা মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে আধা চা চামচ কাঁচা কালিজিরা অথবা ১ চা চামচ কালিজিরার তেল খান।

·         চুল পড়া রোধে: কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুল পড়া রোধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১ চা চামচ কালিজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট মাসাজ করুন। ১ ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

·         ব্যথা কমাতে: যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কালো জিরার জুড়ি নেই। কালিজিরার তেল হালকা গরম করে নিয়ে ব্যথার জায়গায় মালিশ করুনব্যথা সেরে যাবে। বিশেষ করে বাতের ব্যথায় বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।

·         ফোঁড়া সারাতে: ব্যথাযুক্ত ফোঁড়া সারাতে কালো জিরা সাহায্য করে। তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাটা বা কালিজিরার তেল মিশিয়ে ফোঁড়াতে লাগালে ব্যথা উপশম হয় ও ফোঁড়া সেরে যায়।

·         মেদ কমাতে: চায়ের সাথে কালো জিরার মিশিয়ে পান করলে তা বাড়তি মেদ ঝরে যেতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে পানি নিয়ে চুলার ওপরে দিন। পানি ফুটে উঠলে চাপাতা ও সমপরিমাণ কালিজিরা পানিতে দিন। চায়ের রং হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সাধারণ চায়ের মতোই পান করুন।

·         দাঁতের ব্যথায়: দাঁত ব্যথা হলেমাঢ়ি ফুলে গেলে বা রক্ত পড়লে কালো জিরা তা উপশম করতে পারে। পানিতে কালিজিরা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এই পানির তাপমাত্রা কমে উষ্ণ অবস্থায় এলে তা দিয়ে কুলি করুন। এতে দাঁত ব্যথা কমে যাবেমাঢ়ির ফোলা বা রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এছাড়া জিহ্বাতালু ও মুখের জীবাণু ধ্বংস হবে।

·         মাথা ব্যথায়: ঠাণ্ডাজনিত মাথাব্যথা দূর করতে কালো জিরা সাহায্য করে। একটি সুতি কাপড়ের টুকরায় খানিকটা কালিজিরা নিয়ে পুঁটুলি তৈরি করুন। এই পুঁটুলি নাকের কাছে নিয়ে শ্বাস টানতে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা সেরে যাবে।

Friday, August 7, 2020

 

বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়
অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ। এই বসুধার
মৃত্তিকার পাত্রখানি ভরি বারংবার
তোমা অমৃত ঢালি দিবে অবিরত
নানা বর্ণ গন্ধময়। প্রদীপের মতো।
সমস্ত সংসার মোর লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তোমারি শিখায়।

সারমর্ম: সংসারী মানুষ সংসারের মায়া-মমতা, বন্ধনের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের আরাধনা করতে চান। সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি বৈরাগ্যের বেশ ধারণ করতে চান না। সংসারই তার কাছে তীর্থস্থান। এ সংসার তীর্থে থেকেই তিনি ঈশ্বরের সান্নি

মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন,
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে, স্বীয় কীর্তিধ্বজা ধরে,
আমরাও হব বরণীয়।
সময় সাগর তীরে, পদাঙ্ক অঙ্কিত করে,
আমরাও হব যে অমর
সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে, অন্য কোন জন পরে,
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।
করো না মানবগণ, বৃথা ক্ষয় এ জীবন,
সংসার সমরাঙ্গন মাঝে,
সংকল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা,
ব্রতী হয়ে নিজ নিজ কাজে।

সারমর্ম: এ পৃথিবীতে মহৎ ব্যক্তিগণ তাদের কীর্তির মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। আমাদেরও উচিত তাদের পদাংক অনুসরণ করা। নশ্বর পৃথিবীতে বৃথা সময় নষ্ট না করে সাধনা ও কর্ম করা, তবেই জীবন সার্থক হবে।

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে সন্দেহ নাই মাত্র।

সারমর্ম: বিশ্ব প্রকৃতিতে শিক্ষার নানা উপকরণ ছড়িয়ে আছে। মানুষ প্রতিনিয়ত নানাভাবে এই বিশ্বপ্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করছে। এই পাঠশালা থেকেই মানুষ জ্ঞান আহরণ করে তার জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করছে।

বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখ-তাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে, নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্ছনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।

সারমর্ম: বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজন সাহস, শক্তি আর মনের দৃঢ়তা। অনেক সময় দুঃখ, বঞ্চনায় মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। সৃষ্টিকর্তার কাছে সে অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করে। কিন্তু করুণা শিক্ষা নয়, সৃষ্টিকর্তা যেন সকল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সাহস আর শক্তি মানুষকে দেন এটাই হওয়া উচিত মানুষের প্রার্থনা।

 

পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি-তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।
দেশ-দেশান্তর মাঝে যার যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোট ছোট নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে করে।
প্রাণ দিয়ে দুঃখ সয়ে. আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালো মন্দ সাথে।
সার্থ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধরে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া করে।
সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করো নি।

সারমর্ম: জীবনকে জানতে হলে তার ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, সুখ-দুঃখ সবটাকেই জানতে হয়। দুঃখ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। কিন্তু বাঙালি ধর্ম ও সমাজের নানা বাধার কারণে গৃহকোণে কূপমন্তুকের মতো সুখী জীবনযাপন করছে। তাই বাঙালি প্রাণহীন, নিস্তেজ। এ অবস্থা থেকে বাঙালির উত্তরণের জন্য তাকে ঘরের বাইরে আসতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তবু
রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারি এককোণ।
সে ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে
যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।
জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে।

সারমর্ম: এ পৃথিবী যেমন আয়তনে বিশাল তেমনি এর রূপও বৈচিত্র্যময়। কিন্তু তার বেশিরভাগই মানুষের অজানা। অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরকালের। তাই সে তার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে ভ্রমণকাহিনী পাঠ করে। এর মাধ্যমেই সে তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে চায়, তার দীনতাকে ঘোচাতে চায়।

 

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
সুখ সুখ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

সারমর্ম: কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য এ পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেনি। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। অন্যের কল্যাণসাধনে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই মানুষ প্রকৃত সুখ খুঁজে পায়। তাই নিজের কল্যাণ নয় পরের কল্যাণসাধনে মনোনিবেশ করতে হবে।

পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মত কেন বলিস?
পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস?
তোর নিজস্ব সর্বাঙ্গে তোর দিলেন ধাতা আপন হাতে,
মুছে সেটুকু বাজে হলি, গৌরব কি বাড়ল তাতে?
আপনারে যে ভেঙ্গে চুরে গড়তে চায় পরের ছাঁচে
অলীক, ফাঁকি, মেকি সে জন নামটা তার কদিন বাঁচে?
পরের চুরি ছেড়ে দিয়ে আপন মাঝে ডুবে যা রে,
খাঁটি ধন যা সেথায় পাবি, আর কোথাও পাবি না রে।

সারমর্ম: অন্যের অনুকরণ না করে নিজের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা আছে তা বিকশিত করার মাধ্যমেই গৌরব বৃদ্ধি পায়। তাই নিজের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে স্বাভাবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানোর মধ্যেই যথাযথ মর্যাদা নিহিত।

 

নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল।
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান,
কাষ্ঠ দগ্ধ হয়ে করে পরে অন্ন দান।
স্বর্ণ করে নিজ রূপে অপরে শোভিত,
বংশী করে নিজ সুরে অপরে মোহিত।
শস্য জন্মাইয়া নাহি খায় জলধরে
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত তরে।
 

সারমর্ম: তারাই মহৎ যারা অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেন। নদী, গাছপালা, মেঘ-বৃষ্টি, স্বর্ণ-রৌপ্য প্রভৃতি অপরের মঙ্গল সাধনের জন্য আত্মোৎসর্গ করে। যারা প্রকৃত ভালো মানুষ তারা এদের মতোই অপরের কল্যাণ কামনায়, অপরের সুখের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন।

 

নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো,
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে,
নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে,
সাধজকজনে নিস্তারিতে তার মতো কে জানে?
বিনামূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার,
বিশ্ব মাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
নিন্দুক, সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।

সারমর্ম: নিন্দুক তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের কারণে সকলের কাছেই ঘৃণার পাত্র। তার কাজই হলো পরচর্চা করা, যার কারণে কোনো মানুষই তাকে পছন্দ করে না, তার সঙ্গ প্রত্যাশা করে না। কিন্তু এই নিন্দুকই পরচর্চার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের দোষ ত্রুটিগুলো চোখের সামনে তুলে ধরে এবং এর ফলে মানুষ নিজেকে শোধরানোর সুযোগ পায়। তাই প্রকৃতপক্ষে নিন্দুককে ঘৃণা করা উচিত নয়।

 

দৈন্য যদি আসে আসুক, লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস।
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
র্ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস।


সারমর্ম: জীবনের চলার পথে দুঃখ, দারিদ্র্যের মতো নানা প্রতিবন্ধকতা এসে জীবনকে রুদ্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তাতে ভয় পেয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা উচিত নয়। বরং সকল প্রতিকূল অবস্থাকে মোকাবেলা করার সাহস হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

 

ধন্য আশা কুহকিনী। তোমার মায়া
অসার সংসার চক্র ঘোরে নিরবধি।
দাঁড়াইত স্থিরভাবে, চলিত না হায়
মন্ত্রবলে তুমি চক্র না ঘুরাতে যদি।
ভবিষ্যৎ অন্ধ, মূঢ় মানবসকল
ঘুরিতেছে কর্মক্ষেত্রে বর্তুল-আকার,
তব ইন্দ্রজালে মুগ্ধ, পেয়ে তব বল।
বুঝিছে জীবনযুদ্ধে হায় অনির্বার
নাচায় পুতুল যথা দক্ষ বাজিকরে
নাচাও তেমনি তুমি অর্বাচীন নরে।

সারমর্ম: জীবনে চলার পথে প্রতিটি ক্ষেত্রে আশা মানুষকে সঞ্জীবিত করে। আশা আছে বলেই মানুষ তার ভবিষ্যতকে না জেনেও সেই পথেই অগ্রসর হয়, বর্তমানকে সাদরে গ্রহণ করে। অর্থাৎ সংসারচক্রে আশাই মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র প্রেরণা।

 

ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।
মুহূর্তে নিমেষ কাল, তুচ্ছ পরিমাণ,
গড়ে যুগ যুগান্তর-অনন্ত মহান।
প্রত্যেক সামান্য ত্রুটি, ক্ষুদ্র অপরাধ,
ক্রমে টানে পাপপথে, ঘটায় প্রমাদ।
প্রিত করুণার দান, স্নেহপূর্ণ বাণী,
এ ধারায় স্বর্গসুখ নিত্য দেয় আনি।

সারমর্ম: ক্ষুদ্র থেকেই বৃহতের সৃষ্টি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা নিয়ে গড়ে ওঠে মহাদেশ, বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে মহাসাগর, তুচ্ছ মুহূর্ত নিয়ে যুগ যুগান্তর। আবার ছোট অপরাধ থেকেই সংঘটিত হয় বড় পাপ।

 

দন্ডিতের সাথে
দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ
কোন ব্যথা নাহি পায়, তার দন্ডে দান
প্রবলের অত্যাচার। যে দ- বেদনা
পুত্ররে না পার দিতে, সে কারেও দিও না।
যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,
মহাঅপরাধী হবে তুমি তার কাছে।

সারমর্ম: বিচারকের আসনে যিনি বসেন, সুষ্ঠু ন্যায় বিচার সম্পাদন করাই তার দায়িত্ব। দোষীকে শাস্তি দিয়ে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার মহান ব্রত তার। তবে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে তাকে হতে হয় নিরপেক্ষ এবং সহানুভূতিশীল। যাকে শাস্তি প্রদান করা হলো তার দুঃখে যদি বিচারকের প্রাণ কাঁদে তবেই সে বিচার শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে।

 

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনই পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।

সারমর্ম: স্বর্গ ও নরক দূরে কোথাও নয়, মানুষের মাঝেই বিদ্যমান। নিজের কর্মফলের মধ্য দিয়ে মানুষ স্বর্গ ও নরকের ফল ভোগ করে। যারা বিবেকবর্জিত অন্যায় করে বেড়ায় তারা পৃথিবীতেই নরক যন্ত্রণার ফল ভোগ করে। পক্ষান্তরে যারা হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ত্যাগ করে সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে তারা পৃথিবীতেই স্বর্গ সুখ লাভ করে।

 

ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,
হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা।
তোমার আদেশ, যেন রসনায় মম
সত্য বাক্য জ্বলি উঠে খর খড়গ সম।
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।

সারমর্ম: ক্ষমা মহৎ গুণ হলেও তা যেন সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। যদি হয় তাহলে সেখানে দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এজন্য অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় না দেওয়াই উত্তম। কেননা, অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী দুজনেই সমান অপরাধী।

Thursday, August 6, 2020

সেইদিন এই মাঠ

 ১. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।

মাঠে চাষা গান গাচ্ছে। জেলেডিঙ্গি ভেসে চলেছে। বেলা যাচ্ছে, রৌদ্র ক্রমেই বেড়ে উঠেছে, ঘাটে কেউ স্নান করছে, কেউ জল নিয়ে যাচ্ছে-এমনি করে এই শান্তিময়ী নদীর দুই তীরে গ্রামের মধ্যে, গাছের ছায়ায়, শত শত বছর গুনগুন শব্দ করতে করতে ছুটে চলেছে।                                                   


ক. কোন ফুল শিশিরের জলে ভিজবে?   

খ. সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে না কেন?         

গ. ‘সেই দিন এই মাঠ’ কবিতাটির সাথে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর। 

ঘ.  “উদ্দীপক ও ‘সেই দিন এই মাঠ’ কবিতাটিতে প্রকৃতির চিরকালীন সৌন্দর্যকেই বোধের এক বিস্ময়কর শক্তিতে 

উপস্থাপন করা হয়েছে।”- মন্তব্যটি তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। 


২. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।   

পৃথিবীতে সভ্যতার ধ্বংশ আর বিনির্মাণ চলে পাশাপাশি। মানুষ মরে যায়, রেখে যায় মানবতা। মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কোনোকিছু থেমে থাকে না। বস্তুত মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু রহস্যময় প্রকৃতির সৌন্দর্য়ের মৃত্যু নেই; মৃত্যু নেই মানুষের স্বপ্নেরও। 


ক. জীবনানন্দের কবিতার মূল প্রেরণা কোনটি? 

খ. পৃথিবীর কোন গল্প চিরকাল বেঁচে রবে? বুঝিয়ে লেখো। 

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার সাদৃশ্যগত দিকগুলো তুলে ধর। 

ঘ. উদ্দীপক ও ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাব একই ধারায় উৎসারিত -উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।   


৩. যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,

বাইব না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে

চুকিয়ে দেব বেচা কেনা, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা

বন্ধ হবে আনাগোনা এই বাটে;

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে।


ক. নক্ষত্রের তলে কিসে স্বপ্ন দেখবে?

খ. পৃথিবীতে মানুষের শেষ পরিণতি বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণ ‘সেই দিন এই মাঠ’ কবিতার কোন ভাবটি ধারণ করে?ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. উদ্দীপকে কবিতার সমগ্র ভাবনা উপস্থিত আছে কী? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।