পুণ্যে পাপে দুঃখে
সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার
সন্তানে।
হে স্নেহার্ত
বঙ্গভূমি-তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো
না ধরে।
দেশ-দেশান্তর মাঝে যার
যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও
করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোট ছোট
নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না
ভালো ছেলে করে।
প্রাণ দিয়ে দুঃখ সয়ে.
আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও
ভালো মন্দ সাথে।
সার্থ শান্ত সাধু তব
পুত্রদের ধরে
দাও সবে গৃহছাড়া
লক্ষ্মীছাড়া করে।
সাত কোটি সন্তানেরে হে
মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙালি করে
মানুষ করো নি।
সারমর্ম: জীবনকে জানতে হলে তার ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, সুখ-দুঃখ সবটাকেই জানতে হয়। দুঃখ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। কিন্তু বাঙালি ধর্ম ও সমাজের নানা বাধার কারণে গৃহকোণে কূপমন্তুকের মতো সুখী জীবনযাপন করছে। তাই বাঙালি প্রাণহীন, নিস্তেজ। এ অবস্থা থেকে বাঙালির উত্তরণের জন্য তাকে ঘরের বাইরে আসতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।
বিপুলা এ পৃথিবীর
কতটুকু জানি
দেশে দেশে কত না নগর
রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি, কত
নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত
না অপরিচিত তবু
রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল
বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে
অতিক্ষুদ্র তারি এককোণ।
সে ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ
ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে
যেথা পাই চিত্রময়ী
বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।
জ্ঞানের দীনতা এই
আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি
ভিক্ষালব্ধ ধনে।
সারমর্ম: এ পৃথিবী
যেমন আয়তনে বিশাল তেমনি এর রূপও বৈচিত্র্যময়। কিন্তু তার বেশিরভাগই মানুষের অজানা।
অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরকালের। তাই সে তার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে
ভ্রমণকাহিনী পাঠ করে। এর মাধ্যমেই সে তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে চায়, তার
দীনতাকে ঘোচাতে চায়।
No comments:
Post a Comment