চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Tuesday, July 28, 2020

করিতে পারি না কাজ
সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।

মূলভাব: অপরের সমালোচনার ভয় করলে কোনো কাজেই অগ্রসর হওয়া যায় না। যে কোনো কাজে সাফল্যের জন্য অন্যের কথায় বিচলিত না হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে চলা উচিৎ।

সম্প্রসারতি ভাব: মানুষের জীবন কর্মমুখর। কাজের মাধ্যমেই মানব জীবনের সাফল্য আসে। কাজ করতে গেলে ভুল হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ তার জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এ পৃথিবীতে সবাই কর্মী না আর কাজ করে না। কিছু অলস অকর্মণ্য মানুষ আছে, যারা সবসময় অন্যের পিছনে লেগে থাকে। অন্যের ভালো কাজেও খুঁত ধরে, অন্যের সমালোচনা করে। ফলে অনেক সময় কাজ করতে গেলে কেউ কেউ দ্বিধান্বিত হয়। কে কি মনে করবে, কে কি সমালোচনা করবে তা ভেবে তাদের মনের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। যার জন্য তারা কোনো কাজে এগোতে চায় না। তাই যারা সমাজে অবদান রাখতে চায় তাদের কোনো নেতিবাচক সমারোচনা ও উপহাসে বিব্রত হলে চলবে না। আমাদের সকলের অন্যের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।  সাফল্য অর্জনের জন্য লোকলজ্জা ও সমালোচনার ভয় উপেক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য: মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে সমালোচনা, ভয়ভীতি ও সংকোচকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।

মূলভাব: শ্রমই মানুষের জীবনে সৌভাগ্যের তিলক এঁকে দেয়। প্রতিটি মানুষেরই সৌভাগ্য কাম্য কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া তা অর্জন অসম্ভব। শ্রমই মানুষের জীবনে সৌভাগ্যের তিলক এঁকে দেয়। তাই পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

সম্প্রসারিত ভাব: পরিশ্রম সাধনায় সিদ্ধি এনে দেয়। বিদ্যার্থী যথারীতি পরিশ্রম করে। সে বিদ্যা অর্জন করে যেমন, তেমনি ধন, মন ইত্যাদিও অর্জন করতে পারে। মানবজীবন সংগ্রামের জীবন। সে সংগ্রামে টিকে থাকতে হলে, জয়লাভ করতে হলে, পরিশ্রমকে প্রধান হাতিয়াররূপে বরণ করে নিয়ে সে পথে অগ্রহসর হতে হবে। তাই কর্মময় সংসারে ভাগ্য বলে কোনো অলীক সোনার হরিণের সন্ধান অদ্যবধি মিলে নি। বাহ্যদৃষ্টিতে মানুষ যাকে ভাগ্যদেবী নামে অভিহিত করে, তা মূলত মানুষেরই প্রাণান্ত প্রচেষ্টারই ফসল। মানুষ নিরলস প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত ত্যাগ স্বীকারের বদৌলতে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি হাসিল করে। কর্মবিমুখ ব্যক্তি অলস চিন্তার প্রশ্রয়ে যা কিছু চিন্তা ভাবনা করে তা আকাশ কুসুম রচনার মতোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ভাগ্যদেবী স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কারোর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থন করে দিয়েছেন এমন নজির মর্তলোকে মেলে না। মানব ইতিহাস থেকে প্রমাণ মিলে যে, সৃষ্টির প্রারাম্ভিক স্তরে অসহায় মানুষ যখন হিংস প্রাণীর উপদ্রব ও বৈরী প্রকৃতির নির্মমতার হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য বুকফাটা আহাজারি শুরু করেছিল, তখন কোনো ঐশীশক্তি বা দেবতা তার আহ্বানে সাড়া দেয় নি। তখন মানুষই একে অন্যের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে এবং পরস্পরের সহযোগিতায় বৈরি প্রকৃতির সাথে নিরলস সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তাই নিঃসংশয়ে একথা বলা যায় যে পরিশ্রমের দ্বারাই সৌভাগ্য অর্জন করা যায়; পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি।

মন্তব্য: পারিশ্রমের দ্বারাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে উন্নতি আসে। শ্রমহীন অলস ব্যক্তির জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

Monday, July 27, 2020

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।

মূলভাব: প্রাণী মাত্রই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে জীবন অতিবাহিত করে। কিন্তু মানুষকে সভ্যতার সাথে সংগ্রাম করে মানবিকিতার স্ফুরণ ঘটিয়ে সত্যিকার মানুষ হতে হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: স্রষ্টার সরল সৃষ্টির মধ্যে মানুষের পার্থক্য এখানেই যে, মানুষের মন বলে একটি আলাদা অস্তিত্ব আছে। মন আছে বলেই বিশেষ বিশেষ অনুভূতির বিকাশ ঘটে এবং মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীর পার্থক্য সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাণ আর মন এক নয়। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টির মধ্যে তা একত্রে থাকে না। সজেন্য মানুষ বিশেষ গুণ নিয়ে সৃষ্টির সেরা জীব বলে বিবেচিত। প্রাণের দিক দিয়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য না থাকলেও মনের দিক দিয়ে এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। মন আছে বলেই মানুষ মঙ্গলের পথে, কল্যাণের পথে, সত্য ও সুন্দরের পথে, ন্যায়ের পথে চলতে অভ্যস্ত। মানবিক  মূল্যবোধের কারণে মানুষ আত্মপীড়িত, ব্যথিতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। নিরন্নকে অন্নদান করে, মন আছে বলেই মানুষ অন্যকে ভালোবাসে। মনই মানুষকে জ্ঞানী ও সংবেদনশীল করে গড়ে তুলতে পারে। সুখ-দু:খ, আনন্দ বেদনা, প্রেম-ভালবাসা ইত্যাদি অনুভূতি মানুষের মনের মাধ্যমে প্রক্রাশ পায়। যার মধ্যে এ ধরণের কোন অনুভূতি থাকে না তাকে স্বাভাবিক মানুষ বলে বিবেচনা করা হয় না; সে তখন অন্য প্রাণীর মতোই হয়ে পড়ে। প্রখ্যাত মনীষী দানিয়েলের ভাষায়, “একটি সুন্দর মন অন্ধকারে আলোর মতো, যার মাধ্যমে কলুষতার মাঝেও নিজের অস্তিত্বকে মর্যাদাসম্পন্ন রাখা যায়।” মানুষের এই সৃজনশীল ক্ষমতা ও মননশীলতা অন্যান্য প্রাণীর ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। তাই বলা হয়েছে—মন থাকলে মানুষ হয়, প্রাণ থাকলে প্রাণী। মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনই মানবজীবনের চরম লক্ষ্য।

মন্তব্য: মনুষ্যত্ব বিকাশের মাধ্যমে সত্যিকারের মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে মানুষ হয় পরিপূর্ণ।

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণ-মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এই বিবেক, বদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। জ্ঞান ও মনুষ্যেত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তিস্থাপন করিয়াছে, জগতের কল্যাণ সাধন করিতেছে; পশুবল ও অর্থবল মানুষকে বড় বা মহৎ করিতে পারে না। মানুষ বড় হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃতি বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়। প্রকৃত মানুষই জাতীয় জীবনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন আনায়নে সক্ষম। 

সারাংশ: বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান আছে বলেই মানুষ জগতের অন্যান্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। পেশিশক্তি ও অর্থবল মানুষকে মহৎ করে না; মনুষ্যত্ব দিয়েই মানুষ বড় হয়। জ্ঞানী মানুষ সর্বদা জাতীয় উন্নয়ন ও পৃথিবীর মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে।

মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্রে, মনুষ্যত্বে, জ্ঞানে ও কর্মে। বস্তুত চরিত্রবলেই মানুষের জীবনের যা কিছু শ্রেষ্ঠ, তা বুঝতে হবে। চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করবার আর কিছুই নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, মানুষ যদি মানুষকে শ্রদ্ধা করে, সে শুধু চরিত্রের জন্যই। অন্য কোন কারণে মানুষের মাথা মানুষের সামনে নত করার দরকার নেই। জগতে যেসকল মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গৌরবের মূল এই চরিত্রশক্তি। তুমি চরিত্রবান লোক, এ কথার অর্থ এই নয় যে, তুমি লম্পট নও। তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ কর; তুিম পরদুঃখকাতর, ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতাপ্রিয় চরিত্র মানে এই।

সারাংশ: মানুষের প্রকৃত মূল্য তার মনুষ্যত্ব, জ্ঞান, ও চরিত্রে। চরিত্রবলে মানুষ শ্রদ্ধা, বক্তি ও সম্মান অর্জন করতে পারে। পৃথিবীর সকল মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূল চরিত্র। পরোপকারী, ন্যায়বান, সত্যবাদী, স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষই চরিত্রবান।
স্বাধীন হবার জন্য যেমন সাধনার প্রয়োজন, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে প্রয়োজন সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার। সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধহীন জাতি যতই চেষ্টা করুক, তাদের আবেদন-নিবেদনে ফল হয় না। যে জাতির অধিকাংশ ব্যক্তি মিথ্যাচারী, সেখানে দু-চার জন সত্যনিষ্ঠকে বহু বিড়ম্বনা সহ্য করতে হবে। দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কিন্তু মানুষ জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে, সে কষ্ট সহ্য না করে উপায় নেই।

সারাংশ: বহু সাধনাসাপেক্ষ স্বাধীনতা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার গুণেই রক্ষিত হয়। মিথ্যাচারী ও অন্যায়করীদের দ্বারা সৃষ্ট দুর্ভোগ মুষ্টিমেয় সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিকেই ভোগ করতে হয়। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে এ কষ্টটুকু স্বীকার করে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।

বাল্যকাল হইতেই আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক, তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি। তেমন করিয়া কোনো মতে কাজ চলে মাত্র; কিন্তু মনের বিকাশ লাভ হয় না। হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে; কিন্তু আহারটি রিতিমত হজম করিতে অনেকগুলো অপাঠ্য পুস্থকের সাহায্য আবশ্যক। ইহাতে আনন্দের সহিত পড়িতে পড়িতে পরিবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। গ্রহণ শক্তি, ধারণা শক্তি, চিন্তা শক্তি বেশ সহজে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ফল লাভ করে।

সারাংশ: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। শিক্ষার সাথে আনন্দ না থাকলে সে শিক্ষা হৃদয়ে স্থান লাভ করে না। এ ধরনের শিক্ষা দিয়ে কোনো রকম কাজ চললেও মানবিক বিকাশ সাধিত হয় না। তাই শিক্ষাকে আনন্দের অনুসঙ্গ করতে হবে।

মানুষের সুন্দর মুখ দেখে আনন্দিত হয়ো না। স্বভাবে যে সুন্দর নয়, দেখতে সুন্দর হলেও তার স্বভাব, তার স্পর্শ, তার রীতিনীতিকে মানুষ ঘৃণা করে। দুঃস্বভাবের মানুষ মানুষের হৃদয়ে জ্বালা ও বেদনা দেয়। তার সুন্দর মুখে মানুষ তৃপ্তি পায় না। অবোধ লোকেরা মানুষের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তার ফল ভোগ করে। যার স্বভাব মন্দ, সে নিজেও দুষ্ক্রিয়াশীল, মিথ্যাবাদী দুর্মতিকে ঘৃণা করে। মানুষ নিজে স্বভাব সুন্দর না হলেও সে স্বাভাবের সৌন্দর্যকে ভালোবাসে। স্বভাব গঠনে কঠিন পরিশ্রম ও সাধনা চাই, নইলে শয়তানকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।

সারাংশ: শুধু সুন্দর মুখ দেখে মানুষকে নির্বাচন করা ঠিক নয়। বরং মানুষকে নির্বাচন করতে হয় সুন্দর স্বভাব দেখে। স্বভাবের সৌন্দর্যকে সবাই ভালোবাসে। স্বভাব গঠন সাধনার ব্যাপার। আর এ সাধনা উপসনারই নামান্তর।

অভ্যাস ভয়ানক জিনিস।একে হঠাৎ স্বভাব থেকে তুলে ফেলা কঠিন।মানুষ হবার সাধনাতেও তোমাকে সহিষ্ণু হতে হবে।সত্যবাদী হতে চাও?তাহলে ঠিক করো, সপ্তাহে অণ্তত একদিন মিথ্যা বলবে না।ছ মাস ধরে এমনি করে নিজে সত্য বলতে অভ্যাস করো। তারপর একসুভ দিনে আর একবার প্রতিজ্ঞা করো, সপ্তাহে তুমি দু দিন মিথ্যা বলবে না। একবছর পরে দেখবে সত্য কথা বলা তোমার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে পড়েছে। সাধনা করতে করতে এমন এক দিন আসবে যখন ইচ্ছে করলে ও মিথ্যা বলতে পারবে না । নিজেকে মানুষ করার চেষ্টায় পাপ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রামে তুমি হঠাত জয়ী হতে কখনো ইচ্ছা করো না, তাহলে সব পণ্ড হবে।

সারাংশ: মানুষ অভ্যাসের কাছে দারুনভাবে বশীভূত। স্বভাব থেকে অভ্যাসের মূলোত্পাটন করা অত্যান্ত কঠিন কাজ।মিথ্যা বলা একটা ভয়ানক বদভ্যাস। যে ব্যাক্তি এ বদভ্যাসে অভ্যাস্ত তাকে কঠোর সাধনা ও ধৈর্যের সঙ্গে মিথ্যা বলার অভ্যাস ত্যাগ করে সত্যবাদী হয়ে উঠতে হয়।হঠাত্ করেই কারও মিথ্যেবাদী থেকে সত্যবাদীতে পরিনত হওয়া সম্ভব নয়।

মাতৃস্নেহের তুলনা নাই। কিন্তু অতি স্নেহ অনেক সময় অমঙ্গল আনায়ন করে। যে স্নেহের উত্তাপে সন্তানের পরিপুষ্টি, তাহারই আধিক্যে সে অসহায় হইয়া পড়ে। মাতৃস্নেহের মমতার প্রাবাল্যে মানুষ আপনাকে হারাইয়া আসল শক্তি মর্যাদা বুঝিতে পারে না। নিয়ত মাতৃস্নেহের অন্তরালে অবস্থান করিয়া আত্মশক্তির সন্ধান সে পায় না-দুর্বল অসহায় পক্ষী-শাবকের মতো চিরদিন স্নেহাতিশয্যে আপনাকে সে একান্ত নির্ভরশীল মনে করে। ক্রমে জননীর পরম সম্পদ সন্তান অলস, ভীরু, দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হইয়া মনুষ্যত্ব বিকাশের পথ হইতে দূরে সরিয়া যায়। অন্ধ মাতৃস্নেহ সে কথা বুঝে না—অলসক সে প্রাণপাত করিয়া সেবা করে—ভীরুতার দুর্দশা কল্পনা করিয়া বিপদের আক্রমণ হইতে ভীরুকে রক্ষা করিতে ব্যপ্ত হয়।

সারাংশ: মাতৃস্নেহ অতুলনীয়। তবে অতিরিক্ত মাতৃস্নেহ কল্যাণের বদলে অকল্যাণই বেশি করে। মায়ের অতিরিক্ত স্নেহাতিশয্যে সন্তানের স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। অন্ধ মাতৃস্নেহ অবোধ সন্তানের দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেয়। এতে সন্তান ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং পরনির্ভশীল হয়ে পড়ে।

 ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। পিঁপড়া, মৌমাছি পর্যন্ত যখন ভবিষ্যতে জন্য ব্যতিব্যস্ত, তখন মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। প্রতিটি মানুষেক প্রত্যেকটি কাজই ভবিষ্যৎ ভেবে করা উচিত। পণ্ডিতেরা বলে গেছেন’ গত বিষয়ের জন্য অনুশোচনা কর না।এটা সেটা বর্তমান কথা বলতে বলতেই অতীত হয়ে গেল। কাজেই নদীর তরঙ্গ গণা আর বর্তমানের চিন্তা করা সামানই অনর্থক। ভবিষ্যৎটা হলো আসল জিনিস। সেটা কখনো শেষ হয় না। তাই মানুষের প্রতিটি কাজ ভবিষ্যৎ ভেবেই করা উচিত।

সারাংশ: মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে অগ্রহসর হওয়া। অতীতের ব্যর্থতার অনুশোচনা করে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। ভবিষ্যৎই সম্ভাবনাময়, তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবেই বর্তমানের কাজ করা উচিত।

  আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই,
সকলের সুখ, সখা, সুখ শুধু তাই।
আমার একার আলো সে যে অন্ধকার
যদি না সবার অংশ আমি দিতে পাই।
সকলের সাথে বন্ধু সকলের সকলের সাথে,
যাইব কাহারে বলো ফেলিয়া পশ্চাতে?
ভাইটি আমার সে তো ভাইটি আমার।
নিয়ে যদি নাহি পারি হতে অগ্রসর,
সে আমার দুর্বলতা, শক্তি সে তো নয়।
সবাই আপন হেথা, কে আমার পর?
হৃদয়ের যোগ সে কি কভু ছিন্ন হয়?
এক সাথে বাঁচি আর এক সাথে মরি
এসো বন্ধু, এ জীবন মধুময় করি।

সারমর্ম: একাকীত্ব জীবনে কখনোই সুখ উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। সমগ্র মানবজাতিই পরস্পর আত্মার নিবিড় বন্ধনে আবব্ধ। সুতরা সবাই মিলে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। 

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; 
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসসতুপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাবো-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

সারমর্ম: পৃথিবীর মানুষকে তাদেও জীবনের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে সরে যেতে হবে। স্থান ছেড়ে দিতে হবে নবাগত শিশুদের জন্যে। যাবার আগে তাদের পুরাতন পৃথিবীর জঞ্জাল পরিষ্কার কওে নবাগত শিশুদের বাসযোগ্য করে যেতে হবে-এ আমাদের কর্তব্য।

 মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন, 
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে, স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে,
আমরাও হব বরণীয়।
সময় সাগর তীরে, পদাঙ্ক অঙ্কিত করে,
আমরাও হব অমর
সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে, অন্য কোন জন পরে,
যশ্বোধারে আসিবে সত্বর।
করো না মানবগণ, বৃথা ক্ষয় এ জীবন,
সংসার সমরাঙ্গন মাঝে,
সংকল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা,
ব্রতী হয়ে নিজ নিজ কাজে।

সারমর্ম: জ্ঞানী-গুণীজন আমাদের কাছে অনুসরণী। তাঁরা যে পথ অনুসরণ করে জীবরে বড় হয়েছেন আমাদেরও সেই পথ অনুসরণ করা উচিত। এ-সংক্ষিপ্ত জীবনে বৃথা সময় নষ্ট না করে তাঁদের মতো অবিরাম কাজে লেগে থাকলেই পৃথিবীতে অমরকীর্তি রেখে যাওয়া সম্ভব।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
শিখছি সেসব কৌতুহলে সন্দেহ নেই মাত্র।

সারমর্ম: বিশ্বের বিচিত্র উৎস থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত শিক্ষা লাভ করে। বিশাল প্রকৃতি রাজ্য থেকে অর্জিত হয় মানুষের বহুমুখী শিক্ষা। পৃথিবীর প্রতিটি অধ্যয় থেকে মানুষের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি মানুষই প্রকৃতির ছাত্র হিসেবে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করছে। 

 পুণ্যে-পাপে দুঃখে-সুখে পতনে-উত্থানে, 
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি-তব গৃহক্রোড়ে,
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধ‘রে।
দেশদেশান্তরে-মাঝে তার সেথা স্থান,
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোট ছোট নিষেধের ডোরে,
বেঁধে বেঁধে বাখিয়ো না ভালো ছেলে করে।
প্রাণদিয়ে, দুঃখ সয়ে আপনার হাতে-
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।

সারমর্ম: চার দেয়ালের গণ্ডিবদ্ধ মানুষ বৃহৎ পৃথিবীতে খাপ-খাওয়াতে পারে না। ঘাত-প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠা মানুষ পৃথিবীতে টিকে থাকার সামর্থ্য অর্জন করে। তাই প্রতিটি মানুষকে মুক্ত পরিবেশে বিচরণের মাধ্যমে নিজের অবস্থান নির্ধারিত করে নেওয়া উচিত।