চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Monday, July 6, 2020

      # মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে।

মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে আজকের সভ্যতা। তাই পৃথিবীর সকল ধন সম্পদে প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে। কিন্তু কোটি কোটি অসহায় মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তারা আত্মসুখ, ভোগ, চিত্তবিনোদন ও বিলাসিতায় এই সম্পদের অপব্যবহার করে। তাই তাদেরকে প্রকৃত ধনী ও ক্ষমতাবান বলা যায় না।

প্রকৃত ধনী হতে হলে দেশ, সমাজ ও মানবকল্যাণে সম্পদ ব্যয় করার মহৎ চিন্তা থাকতে হবে। কেননা বিত্তবানের সম্পদের সার্থকতা নির্ভর করে সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর। মহৎ ব্যক্তিরা সম্পদকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করে। তারা অসহায়কে সাহায্য করতে, আর্ত-পীড়িতদের সেবা করতে, দুঃস্থ মানবতার পাশে দাঁড়াতে সম্পদ ব্যয় করে। ব্যক্তি বিশেষের সুখভোগ ও বিলাসিতায় ব্যবহৃত ধন শুধু অপব্যয় নয়, তা সমাজে অকল্যাণ বয়ে আনে। পবিত্র কোরআনে আছে- ‘অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।

সম্পদশালীর অঢেল সম্পদ অর্জিত হয়েছে দরিদ্র-নিপীড়িত জনগণের শ্রমে। যে সমাজে মানুষ নিরন্ন ও নিরাশ্রয় অবস্থায় ধুকে মরে, বিনা চিকিৎসায় রোগযন্ত্রণায় ও ক্ষুধায় ছটফট করে, সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন অন্যায়। এমন সমাজে মনুষ্যত্ব টিকে থাকতে পারে না। মানবকল্যাণ ও সমাজের অগ্রগতিতে সম্পদের ব্যবহারেই সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়।

ধনসম্পদ দুঃখী আর অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যতো বেশি কাজে লাগে তার সার্থকতা ততো বেশি। প্রকৃত সম্পদশালী তার সঞ্চিত সম্পদ দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজে লাগায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনে। অনেক মানুষ নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে কেবল দরিদ্র, অসহায় ও আর্তপীড়িতদের কথা ভাবেন। মানুষের কল্যাণে তারা জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত থাকেন। তাই অর্থ বিত্ত থাকলেই হবে না, মানুষের কল্যাণে তা ব্যয় করার ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। মহৎ কাজে ধন সম্পদের ব্যবহার মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে জীবনকে সার্থক করে তোলে। শিক্ষা: সঞ্চিত ধন-সম্পদ আত্মসুখভোগ ও বিলাসিতায় অপব্যয় না করে মানবতার কল্যাণে ব্যয় করা প্রয়োজন। যে ধন মানবকল্যাণে ব্যয়িত হয় না সে ধনের কোনো মূল্য নেই।

 দন্ডিতের সাথে দন্ড-দাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।

পাপ-পূণ্য নিয়েই মানুষের জীবন। যিনি ন্যায়বান তাকে সবাই পছন্দ করেন। অপরদিকে অন্যায়কারী ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। তাকে শাস্তি পেতে হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায় বিচার সঠিক হয় না। আবার একজনের অপরাধে অন্যজন দন্ড প্রাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে বিচারককে সুকঠিন ও অত্যন্ত বিচক্ষণ হতে হয়।

তিনি তার প্রজ্ঞা ও মেধার সাথে সহানুভূতি ও মমত্ববোধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দন্ড দান করবেন। দন্ডের ভয়ে অনেক সময় অপরাধী পাপকর্ম থেকে দূরে থাকে কিন্তু তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। এ জন্য বিচারককে দয়া প্রদর্শন ও সহানুভূতির মাধ্যমে অপরাধীর বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং তাকে দন্ড দিতে হবে। বিচারক মানবিক বিবেচনা ও সাক্ষ্য প্রমাণের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচারকার্য করবেন। এতেই অপরাধীর অন্তরে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্মাবে। অপরাধীকে শাস্তি নয় বরং তাকে সঠিক পথে আনাই বিচারকের মূল লক্ষ্য। এতে সমাজে অপরাধ কমে আসবে। শুধুমাত্র কঠোরতা নয় দয়া, মমত্ববোধ, নমনীয়তা প্রভৃতি বিষয়ের নিশ্চবয়তাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারের নিদর্শন।

শিক্ষা: পবিত্র বাইবেলে রয়েছে ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়’। তাই অপরাধীকে শুধু শাস্তি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং তার ভেতরের মানুষটাকে সজাগ করে তার মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলাই সমাজ ও জাতির কর্তব্য।
      #  রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে

জীবনের চলার পথে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। সেসব বাধাকে অতিক্রম করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বন্ধুর পথ ডিঙিয়ে সফলতার পানে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের লক্ষ্য। অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে সকল বাধা, ভয়কে অতিক্রম করেই করতে হয় সুখের সন্ধান। বিশ্বসংসারে সকল কিছু একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত হয়। প্রাকৃতিক এই নিয়মে দিনের শেষে রাত, রাতের শেষে দিন আসে।

ঠিক তেমনি জীবন চলার পথে দুঃখ-বেদনা আসে। কিন্তু সুখের আগমনে জীবন আবার সজীব হয়ে ওঠে। পৃথিবী বিপরীতমুখী বস্তুর খেলায় প্রতিনিয়ত আবর্তিত। আলো-আঁধার, দিন-রাত, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বিপরীতমুখী অনুষঙ্গ একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রকৃতির এই বন্ধন পৃথিবীকে দিয়েছে টিকে থাকার মন্ত্রণা। একটির অর্বতমানে অপরটির অবস্থান স্পষ্ট হয়। পার্থিব জীবনেও এই সাদৃশ্য লক্ষণীয়। সফলতা-ব্যর্থতা, উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে জীবনে আসে।

আজ যারা সুখে জীবন-যাপন করছেন তাদের সুখ এসেছে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে। এ জগতে কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না। নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ সাধারণত পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। তাদের পালাবদল ঘটে রাত-দিনের মতোই। রাত যদি দুঃখের প্রতীক হয় তাহলে সুখের প্রতীক হলো দিন। রাতের পর যেমন দিন আসে তেমনি দুঃখের পর আসে সুখ। তবে সুখের সন্ধান পেতে হলে দুঃখকে জয় করতে জানতে হয়। দুঃখ জীবনকে, হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। চলার পথে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে উদ্যমতার সঙ্গে এসব বাধাকে অতিক্রম করে সুখকে ছিনিয়ে আনতে হয়। দুঃখের অন্ধকার যতই গভীর হোক ধৈর্য, সহিষ্ণুতার মাধ্যমে তা জয় করা সম্ভব।

শিক্ষা: দুঃখ দেখে, পরাজয়কে দেখে ভয় পেলে চলবে না। মেধা-মননের সমন্বয়ে সাহসী উদ্যোগে জীবন-চলার পথকে মসৃণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে দুঃখের পরেই সুখ আর আনন্দ জীবনকে ছুঁয়ে যাবে।

# মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা

প্রত্যেক দেশেরই একটি নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যে ভাষায় সে দেশের মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। তাই সম্পর্ক সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। জন্মের পর থেকে শিশু তার মায়ের মুখ থেকে আধো আধো করে যা বলতে শিখে তা হলো তার মায়ের ভাষা। বাংলা হলো আমাদের মায়ের ভাষা। আমাদের হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা, ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা সবকিছুর প্রকাশ ঘটে বাংলা ভাষার মাধ্যমে।

বাংলা ভাষার রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস যা অন্য কোন জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে মানুষ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। কিন্তু বাঙালি এক জাতি যারা ভাষার জন্যে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করে এদেশের মানুষকে তা মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু বাংলার ছাত্রসমাজ তথা আপামর জনতা তা মেনে নেয়নি।

ফলে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে তার প্রতিবাদে মিছিল করতে গিয়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকেই প্রাণ দিয়েছে ভাষার জন্য। ফলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। অবশেষে পাকিস্তানের সংবিধানে ১৯৬৫ সালে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ইউনেস্কো বাঙালিদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। অতএব আন্দোলন সংগ্রামের ফলে বাংলা ভাষা স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের জাতীয় চেতনায়। তাই বাংলা ভাষা আমাদের আশা অকাঙ্ক্ষা ও গর্বের বিষয়।

শিক্ষা: বাংলা ভাষা আজ বিশ্বময় সমাদৃত। এ অর্জন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র মানচিত্রকে উজ্জ্বল করেছে। তাই ভাষার চেতনাকে জাগ্রত রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

Sunday, July 5, 2020

শব্দালঙ্কার

# অলঙ্কার কাকে বলে? শব্দালঙ্কারের শ্রেণিবিভাগ উদাহরনসহ আলোচনা কর।

অলঙ্কার শব্দের আভিধানিক অর্থ আভরণ, ভূষণ অর্থাৎ যা দিয়ে শরীরকে সজ্জিত বা ভূষিত করা যায়। সুতরাং নিরাভরণ দেহকে যেমন হার, দুল, বলয়, কাঁকন ইত্যাদি আভরণে মনের মতো সাজানো যায়, তেমনি কাব্য শরীরকেও কবিগণ বিভিন্ন অলঙ্কার দিয়ে ভূষিত করেন।

হার, দুল, বলয় এসব অলঙ্কার নারীদেহে যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি কাব্যক্ষেত্রে অলঙ্কার মানে সৌন্দর্য।

খ্রীঃ সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর দিকে ভামহ, বামন প্রমুখ সাহিত্যাচার্য মনে করতেন, অলঙ্কারের গুনেই শুধু কাব্য গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। অবশ্য তারা পরে বলে গেছেন যে, সৌন্দর্যই অলঙ্কার।

আচার্য দন্ডী বলেছেন, কাব্যের শোভাকর তথা সৌন্দর্যবিধায়ক ধর্মকে বলা হয় অলঙ্কার।

সুধীরকুমার দাশগুপ্ত বলেছেন, “অলঙ্কারশাস্ত্র এর প্রকৃত অর্থ সৌন্দর্যশাস্ত্র বা কাব্য সৌন্দর্যবিজ্ঞান, ইংরেজিতে যাহাকে বলা যাইতে পারে Aesthetic of poetry”.

ইংরেজিতে Alexander bain বলেছেন, “A figure of speech is a deviation from the plain & ordinary mood of speaking, with a view to greater effect”
এখানেও শব্দের সাধারণ অর্থ-অতিক্রামক সেই বৈচিত্র এবং সৌন্দর্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

Beautifying Instrument.অর্থাৎ কাব্যের শোভাবর্ধন করা তথা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করাই অলঙ্কারের ধর্ম।

যে কোন সুন্দর পরিমিতি মানতে বাধ্য এবং অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা সবসময়ই সৌন্দর্য বিরোধী। অঙ্গদকে কেউ পায়ের মল হিসেবে ব্যবহার করতে রাজি হবে না কারন তা অনিয়ম। তেমনি কাব্যেও যথেচ্ছ অলঙ্কার চাপিয়ে দিলেই হয় না, বিচার করতে হবে সেটা নিয়মমাফিক কিনা, প্রয়োগসিদ্ধ কিনা।

শব্দ ধ্বনিকে শ্রুতিমধুর এবং অর্থকে মনোহর আর হৃদয়গ্রাহী করার জন্যে অলঙ্কারকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে- অ) শব্দালঙ্কার আ) অর্থালঙ্কার।

শব্দালঙ্কার: অর্থবহ ধ্বনি সমষ্টিকে বলা হয় শব্দ। শব্দ বা ধ্বনিই শব্দালঙ্কারের নিয়ন্তা। অর্থাৎ যে অলঙ্কার ধ্বনির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং শ্রুতিসৌন্দর্য বিধায়ক তাকেই শব্দালঙ্কার বলা হয়।

শব্দালঙ্কারগুলো হচ্ছে:
১. অনুপ্রাস
২. যমক
৩. শ্লেষ
৪. বক্রোক্তি
৫. পুনরুক্তবদাভাস

০১. অনুপ্রাস: ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ যদি যুক্ত বা বিযুক্তভাবে বাক্যমধ্যে একাধিকবার ধ্বনিত হয় তবে তাকে অনুপ্রাস বলে। যেমন:

   কান্তা ও কামিনী কৌতুকে যামিনী যাপন রিল।–বিদ্যাসাগর।
   --‘ক’ পাঁচবার আবৃত্ত।
  গুরু গুরু র্জন- গুগুন স্বর।--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
 ‘গ’ পাঁচবার আবৃত্ত।

অনুপ্রাসের প্রকারের অনুপ্রাস দেখা যায়। যেমন:
ক. অন্ত্যানুপ্রাস;
খ. বৃত্তানুপ্রাস;
গ. ছেকানুপ্রাস;
ঘ. শ্রুত্যনুপ্রাস;
ঙ. আদ্যানুপ্রাস।

ক. অন্ত্যানুপ্রাস: কবিতার পাদান্তের সাথে এবং চরণের শেষের শব্দটির সাথে পরবর্তী চরনের শেষ শব্দটির ধ্বনিসাম্য থাকলে তাকে অন্ত্যানুপ্রাস বলে। যেমন:

১. সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের লেন-দেন
    থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বলনতা সেন। --জীবনানন্দ দাশ।

২. আমার অঙ্গন আঁধারে হল বন,
    নিয়েছি বুক পেতে জলের দংশন। --শামসুর রহমান।

৩. নাকি, তুমি অজানিতে ভ’রে দাও ডালি?
    নাকি, তুমি সংস্কৃত, প্রাকৃত ও পালি।–বিষ্ণু দে।

খ. বৃত্তানুপ্রাস: একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে যুক্ত বা বিযুক্তভাবে বহুবার ধ্বনিত হলে বৃত্তানুপ্রাস সৃষ্টি হয়। যেমন:
এটি চারধরনের হতে পারে
১. একটি মাত্র ব্যঞ্জনের দুবার ধ্বনিত হওয়া-
   ধ্বংশান্তির মধ্যে মেরু-দূর প্রভেদ মানি না। --রফিক আজাদ।
এখানে ‘শ’ দ দুবার করে আবৃত্ত।

২. একটিমাত্র ব্যঞ্জনবর্ণ বহুবার ধ্বনিত হলে
বাঙালি কৌমের কেলি ল্লোলিত লাবতী --আল মাহমুদ।
এখানে ক ধ্বনি পাঁচবার ধ্বনিত হয়েছে।

৩. ব্যঞ্জনগুচ্ছ স্বরূপানুসারে মাত্র দুবার ধ্বনিত হলে
ফুটেছে যৌবন বনে আনন্দের ফুল
জেগেছে যৌবন নব বসুধার দেহে --শ্যামাপদ চক্রবর্তী।
বর্ণগুলোর (যৌবন বনে এবং যৌবন নব) ক্রম অক্ষুন্ন এবং ধ্বনিসাদৃশ্য বর্তমান।

৪. যুক্ত বা বিযুক্তভাবে ব্যঞ্জনগুচ্ছ ক্রমানুসারে বহুবার ধ্বনিত হলে
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথ- প্রান্তে ফেলে যেতে হয়। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এখানে যুক্ত ‘ন্ত’ ক্রমানুসারে তিনবার ধ্বনিত হয়েছে।

৫. কাক কালো কোকিকালো কালো ন্যার কেশ।
  ‘ক’ নয় বার ধ্বনিত হয়েছে।

গ. ছেকানুপ্রাস: দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত অবস্থায় ক্রমানুসারে যদি মাত্র দুবার ধ্বনিত হয় তবে তাকে ছেকানুপ্রাস বলে। যেমন:
১. অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? --সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।
২. ভুরুর ভঙ্গিমা হেরি ভুজঙ্গ সকল।–আলাওল।
৩. লঙ্কার পঙ্কজ রবি যাবে অস্তাচলে।–মধুসূদন।
৪. কলঙ্ক যেমন থাকে শশাঙ্কের বুকে।–রবীন্দ্রনাথ।

ঘ. শ্রুত্যনুপ্রাস: বাগযন্ত্রের একই স্থান থেকে যে সকল ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেগুলো একই ধ্বনি হলেও সদৃশ ধ্বনি; সেই সদৃশ ধ্বনির সাম্যে জাত অনুপ্রাসকে শ্রুত্যনুপ্রাস বলে। যেমন:
১.ক-খ:
বলে দাও মোর সারথিরে ডেকে
ঘোড়া বেছে নেয় ভালো ভালো দেখে।--রবীন্দ্রনাথা ঠাকুর।
এখানে লক্ষ্য করুন প্রথম চরনের শেষে ‘ক’ ধ্বনি আছে আবার দ্বিতীয় চরনের শেষে ‘খ’ ধ্বনি আছে। এটাই শ্রুত্যনুপ্রাস।
২. গ-ঘ:
উল্লাসে হাঁকিয়া বলি, তালি দিয়া মেঘে
উন্মাদ উন্মাদ ঘোর তুফানিয়া বেগে।--কাজী নজরুল ইসলাম।
এখানে লক্ষ্য করুন প্রথম চরনের শেষে ‘ঘ’ ধ্বনি আছে আবার দ্বিতীয় চরনের শেষে ‘গ’ ধ্বনি আছে। তাই গ-ঘ যেমন হতে পারে তেমনি ঘ-গ হতে পারে।
এরকম আরো হতে পারে যেমন, চ-ছ, ট-ঠ, ত-থ, দ-ধ, র-ড় ইত্যাদি।

আরো কিছু অনুপ্রাস আছে বলে মনে করা হয়। সেগুলো দেওয়া হল।

ঙ. আদ্যানুপ্রাস: কবিতার আদান্তের সাথে এবং চরণের প্রথম শব্দটির সাথে পরবর্তী চরনের প্রথম শব্দটির ধ্বনিসাম্য থাকলে তাকে আদ্যানুপ্রাস বলে। যেমন:

১. যতবার লেখা শুরু করি
   ততবার ধরা পড়ে, এ খবর সহজ তো নয়।--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এখানে প্রথম চরণের প্রথম শব্দ যতবার এর সাথে পরবর্তী চরণের প্রথম শব্দ ততবার এর সাথে মিল আছে।
২. পাকা যে ফল পড়ল মাটির টানে
    শাখা আবার চায় কি তাহার পানে?--রবীন্দ্রনাথ।

চ. মধ্যানুপ্রাস: সাধারণত কবিতার চরণের মধ্যে ধ্বনিসাম্য থাকলে তাকে মধ্যানুপ্রাস বলা হয়।যেমন:

১. চুল তা কবেকা অন্ধকা বিদিশা নিশা।--জীবনানন্দ দাশ।
এখানে ‘র’ ধ্বনি কয়েকবার উচ্চারিত হয়েছে।

০২. যমক: একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি স্বরধ্বনিসহ নির্দিষ্টক্রমে সার্থক কিংবা নিরর্থকভাবে যদি একাধিকবার উচ্চারিত হয় তাকে যমক অলঙ্কার বলে।যেমন:

১. ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে। --ভারতচন্দ্র।
এখানে ভারত শব্দটি দুইবার উচ্চারিত।
২. কীর্তিবাস কীর্তিবাস কবি
এ বঙ্গের আলঙ্কার। --মধুসূদন।
এখানে কীর্তিবাস শব্দটি দুইবার উচ্চারিত।

প্রচলিত অলঙ্কারসমূহে চার রমক যমক আছে। আদ্য, মধ্য, অন্ত্য, এবং সর্বযমক

# আদ্যযমক: চরণের আদিতে এ যমক ঘটে। যেমন:
১. ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে। --ভারতচন্দ্র।
   এখানে ভারত শব্দটি দুইবার উচ্চারিত।

২. মৌ-লোভী যত মৌলভী আর মোল্লারা ক’ন হাত নেড়ে। --কাজী নজরুল ইসলাম।

# মধ্যযমক: চরণের মধ্যভাগে এ যমক ঘটে। যেমন:

১. তোমার এ বিধি, বিধি, কে পারে বুঝিতে। --মধুসূদন।
২. দুরুহ বিরহকাল কাল যেন দেখি সমুখে! --মধুসূদন।

# অন্ত্যযমক: চরণের শেষে এ যমক ঘটে। যেমন:

১. তখন একটি কবিতা তো নয়,
যখন রক্তে আকুল বিনয়। --সৈয়দ আলী আহসান।

২. কবির রমণী বাঁধি কেশপাশ
    বসি একাকিনী বাতায়ন পাশ।--রবীন্দ্রনাথ।

# সর্বযমক: অনেক সময় বহুর্থক শব্দযোগে বহুবিধ অর্থেও যমক অলঙ্কারে প্রয়োগ দেখা যায়।যেমন:

কুসুমের বাস ছাড়ে কুসুমের বাস,
বায়ু ভরে করে এসে নাসিকায় বাস।
(বাস-আশ্রয়, গন্ধ, বসতি)

০৩. শ্লেষ: একটি শব্দ বাক্যে একবার ব্যবহৃত হলেও যদি তার একাধিক অর্থ বর্তমান থাকে এবং শ্রোতা বা পাঠক উভয় অর্থই গ্রহণ করেন তখন শ্লেষ অলঙ্কার হয়। যেমন:

শ্লেষ দু প্রকার: সভঙ্গ ও অভঙ্গ শ্লেষ।

# সভঙ্গ শ্লেষ: শব্দটি অটুট থাকলে এক অর্থ এবং শব্দটি ভাঙ্গলে যদি ভিন্ন অর্থ দ্যোতিত হয় তবে তাকে সভঙ্গ শ্লেষ বলে।
যেমন:
অর্ধেক বয়স রাজা, এক পাটারাণী।
পাঁচপুত্র নৃপতির, সবে যুব জানি।।

যুবজানি- এক অর্থে, সকলকেই যুবক বলে জানি। অপর অর্থে- সকলেরই যুবতী স্ত্রী। যুবজানি শব্দের বিশ্লেষণে-যুবতী জায়া যার।

# অভঙ্গ শ্লেষ: এখানে শব্দকে না ভেঙ্গেই একাধিক অর্থ পরিস্ফুট হয়। যেমন:

মধুহীন কর না গো তব মন কোকনদে

এক অর্থে মনরূপ পদ্মকে মধুহীন করো না, অপর অর্থে মধুসূদন দত্তকে মন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না।

০৪. বক্রোক্তি: বক্তা বা প্রশ্নকারী যদি কোনো কথাকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেন অথচ শ্রোতা বা উত্তরদাতা সে অর্থ গ্রহন না করে কথাটিকে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন কিংবা সে অনু্সারে উত্তর দেন, তবে সেখানে বক্রোক্তি অলঙ্কার হয়। যেমন:

বক্রোক্তি দুপ্রকার- শ্লেষ ও কাকু বক্রোক্তি।

# শ্লেষ বক্রোক্তি: একটি শব্দ একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে একে বলা হয় শ্লেষ বক্রোক্তি। যেমন:

আপনার ভাগ্যে রাজানুগ্রহ আছে
-তিন মাস জেল খেটেছি; আর কতদিন খাটব?
-রাজানুগ্রহ যে অর্থে বক্তা প্রয়োগ করেছেন-উত্তরদাতা সে অর্থে না ধরে জেলখাটা অর্থ ধরে উত্তর দিলেন।

# কাকু বক্রোক্তি: এখানে বক্তার কণ্ঠস্বরের ভঙ্গিতে অর্থের পরিবর্তন ঘটে যায়; সাধারণতঃ বিধি নিষেধে এবং নিষেধ বিধিরূপে গৃহীত হয়। যেমন:

কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ?
-অর্থাৎ কেউ পদ্মের পর্ণ ছেঁড়ে না।

০৫. পুনরুক্তবদাভাস: আপাতদৃষ্টিতে কোনো বাক্যে যদি মনে হয় একই অর্থে একাধিক শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে অথচ একটু মনোযোগ সহকারে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, তারা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত তাহলে পুনরুক্তবদাভাস হয়। যেমন:

তনু দেহে রক্তাম্বর নীবীবন্ধে বাঁধা
চরণে নূপুরখানি বাজে আধা আধা।
তনু ও দেহ দুয়ের অর্থই এক, কিন্তু এখানে তনু ছিপছিপে অর্থে ব্যবহৃত।



তথ্যসূত্র: অলঙ্কার-অন্বেষা: নরেন বিশ্বাস।
     # সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি থেকে অর্জিত শিক্ষা-এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা মূলত পরীক্ষা পাশের শিক্ষা, জীবিকার্জনের শিক্ষা। সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। তাই স্কুল কলেজের শিক্ষাকে প্রকৃত অর্থে সুশিক্ষা বলা যায় না। সুশিক্ষার অর্থ স্বশিক্ষা।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার পাশাপাশি স্বচেষ্টায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্ঞানান্বেষণ সুশিক্ষার পর্যায়ে পড়ে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি হবেন কুসংস্কারমুক্ত, তার চিন্তা হবে সুদূরপ্রসারী, বৈজ্ঞানিক ও মুক্তবুদ্ধির আলোকে উদ্ভাসিত। এমন অনেক ডিগ্রিধারী লোক আছেন যাদের শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনচর্চার কোনো সামঞ্জস্য ঘটেনা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের বাহ্যিক অবয়ব তৈরি করতে পারলেও তার অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে পারে না।

মূলত শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য জ্ঞানশক্তি অর্জন করা। শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে অর্জন সাপেক্ষ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান আহরণের পথ অনেক সময় সুগম হলেও তাতে পূর্ণতা আসে না। স্বশিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান ছাড়া মানুষের অন্তর্দৃষ্টি প্রসারিত হয় না। স্বশিক্ষা মানুষকে সুদৃঢ়প্রসারী জ্ঞানদান করে।

তখন তিনি বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হয়ে উঠেন, পরিশীলিত রুচিবোধে হয়ে উঠেন উদার ও নম্র স্বভাবের। বস্তুত প্রকৃত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান মুখ্য নয়। পৃথিবীতে অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, যারা প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই মুক্ত চিন্তা ও জ্ঞান দিয়ে মানবতার উপকার করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলামের কথা আমরা উল্লেখ করতে পারি। স্বচেষ্টায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এঁরা জ্ঞান রাজ্যে বিচরণ করেছেন। তাই বলা যায় যারা প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত আর জ্ঞানী তারা সকলেই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।

শিক্ষা: গুরুর শিক্ষা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধ শিক্ষা মানুষকে সুশিক্ষিত করে না। সুশিক্ষা অর্জন হয় আত্মপ্রচেষ্টা, আগ্রহ ও অধ্যয়নের মাধ্যমে।

#  সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

প্রতিটি সমাজেই কিছু আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর মানুষ বাস করে। তারা সমাজের প্রতি দায়িত্ব ভুলে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজ এবং সমাজের সদস্যদের প্রতি প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। সমাজবদ্ধভাবে বসবাসের মধ্য দিয়েই মানুষ সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে মানুষ প্রতিষ্ঠা করেছে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে এই সমাজ।

আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সমাজের অবদান রয়েছে তেমনি সমাজের প্রতিও রয়েছে আমাদের দায়িত্ব। সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে হলে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা পরিহার করে চলতে হয়। স্বার্থবাদী চিন্তা নিয়ে সমাজের উন্নয়ন যেমন সম্ভব না তেমনি ব্যক্তি জীবনেও সাফল্য আসে না। সকলের সহযোগিতায় গড়া সমাজ যেন আনন্দ-কানন। সমাজের অন্য সদস্যরা যাতে ব্যক্তিস্বার্থের সংকীর্ণতার শিকার হয়ে কষ্ট না পায় সেটাই হওয়া উচিত সব মানুষের কামনা।

আর এর জন্য প্রয়োজন স্বীয় স্বার্থ ত্যাগ করা। কারণ অন্যের উপকারে উৎসর্গিত জীবনই প্রকৃত জীবন। পরোপকারী মানুষ অমর এবং সর্বজন পূজনীয় হয়। বিবেক এবং চিন্তার শক্তিই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছে। সুতরাং বিবেকবান কোনো মানুষই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে সমাজ এবং চারপাশের মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে না। বিবেকবান মানুষমাত্রই পরোপকারী এবং সমাজসেবক হয়ে থাকেন। আর সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তাহলে সমাজ হয়ে উঠবে সুন্দর।

শিক্ষা: ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে মানবতার স্বার্থে নিয়োজিত হওয়াই মানবজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এর মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।

    #   পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে

পথ ও পথিক, এ দুটি আলাদা বস্তু হলেও পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পথিক তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নতুন পথ সৃষ্টি করে। মানুষ ঠিক একইভাবে তার চেষ্টা ও সাধনা দিয়ে জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। মানুষের সৃষ্টিশীলতার মূলে নিহিত রয়েছে বিরামহীন অধ্যবসায় ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং ধৈর্য। তীব্র ইচ্ছা শক্তি আর প্রচেষ্টা দিয়ে মানুষ অসাধ্যকে জয় করতে পারে।

সৃজনশীল মানুষ তার চলার পথ নিজেই তৈরি করে নেয়। অন্যের পথে সে হাঁটে না। একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা জীবনে অগ্রসর হতে চায়। প্রতি পদক্ষেপেই তারা একটা নতুন উপায়ের সন্ধান করে। আর জীবনে নানা ব্যর্থতা অতিক্রম করে একদিন সে ঠিকই তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটি তৈরি করে নেয়। অন্যের প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হওয়ার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো গৌরব।

আর এ পথে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অনেক সময়ই অর্জিত হয় না। তাই কৌতূহলী পথিক অবিরাম নতুন পথের সন্ধান করে। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক পথ। এরকম অনেক পথই এ পৃথিবীতে তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু প্রতিটি পথই যে মানুষকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিবে এমনটি নয়। কারণ প্রতিটি মানুষই একে অপরের থেকে পৃথক এবং তাদের মেধা ও চিন্তাশক্তিও পৃথক।

তাই গতানুগতিক পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলে অনেককেই মাঝ পথে থেমে যেতে হয়। এমন দৃষ্টান্তের শেষ নেই। কারো অভিভাবক হয়তো আশা করে যে তাদের সন্তান ডাক্তার হবে। কিন্তু সন্তানটি হয়তো তার মেধা এবং সৃজনশীলতাকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে লাগাতে চায়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক যদি সন্তানের ওপর তাদের ইচ্ছাটাকে চাপিয়ে দেয় তবে দেখা যাবে যে সে মাঝপথেই থমকে গেছে। অন্যদিকে সে যদি নিজের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজ পথের সন্ধান করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে তবে সে প্রকৃত অর্থেই সফল। এরকম প্রতিটি মানুষেরই সফলতার পথ আলাদা। তাই প্রকৃত পথিক প্রতিনিয়ত নতুন পথের সন্ধান করে।

শিক্ষা: অন্যের প্রদর্শিত পথ নয়, নিজের সৃষ্ট পথেই প্রতিটি মানুষ সফলতা অর্জন করে। তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিত নতুন পথের সন্ধান করা এবং সে পথ ধরে এগিয়ে চলা।

# পুণ্য পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে মানুষ হতে দাও তোমার সন্তানে

মানুষের জীবনে চলার পথ মসৃণ নয় বরং তা কাঁটায় ভরা। প্রতিটি পদে পদে রয়েছে কষ্ট-দুঃখ, বাধা-বিপত্তি, সংঘর্ষ, সংঘাত। প্রতিটি পদক্ষেপ সংগ্রামের। মানুষের জীবনে বেদনা আছে, কষ্ট আছে, অপমান আছে, ব্যর্থতা আছে, পরাজয় আছে।

এসব জীবনের অঙ্গ এবং বৈশিষ্ট্য। এই সকল বিরোধী শক্তির সাথে অত্যন্ত সহনশীলতা এবং নিষ্ঠার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হতে হয়। বাঁধাকে জয় করার মধ্যেই রয়েছে জীবনের তাৎপর্য। মানবজীবনের সার্থকতা লুকিয়ে থাকে বাধা জয়ের মধ্যে।

দুঃখ, কষ্ট, শোক, আঘাত মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলে। আগুনে পুড়ে সোনা যেমন খাঁটি হয়, তেমনি দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ জীবনের সকল বাধাকে জয় করার শক্তি অর্জন করে। মানুষের জীবন মানেই সংগ্রামের ইতিহাস।

পৃথিবীতে যুগে যুগে যোগ্যতম প্রাণীগুলো টিকে থাকতে পেরেছে কিন্তু দুর্বল প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে সংগ্রামের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে। কেউ যদি জীবনে সফল একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তবে তাকে দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, অপমান, পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মনীষীদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, তারা কষ্ট, দুঃখ, সংগ্রাম, সংঘাতের মধ্য দিয়ে পথ চলেছেন। অনেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন।

কিন্তু তারা তাদের অটুট মনোবল এবং সাহসের মাধ্যমে সকল বাধাকে অতিক্রম করেছেন। সফলতার খাতায় নিজেদের নামকে লিপিবদ্ধ করেছেন। ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নামকে অঙ্কিত করেছেন এবং হয়েছেন অনুকরণীয় চরিত্র।

শিক্ষা: জীবনে চলার পথে কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবেলা করেই মানুষ, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর জন্যে দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, আঘাত, সংগ্রাম, উত্থান-পতন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
     #  পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়

মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব। স্বীয় বিবেক-বুদ্ধি, মেধা-মননের গুণেই সে শ্রেষ্ঠ। কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে পৃথিবীতে আসে না। প্রতিটি মানুষই নিষ্পাপ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর বিরূপ পরিবেশ, নেতিবাচক পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে অনেক সময় তার বিবেক-বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায়, বিচারবোধ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। তখন সে পাপাচারে লিপ্ত হয়। মানুষের এই পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার পেছনে মুখ্যত সে নিজে দায়ী নয়।

তাই পাপকার্য ঘৃণিত ও বর্জনীয় হলেও পাপীকে বর্জন করা উচিত নয়। বরং তাকে কলুষতামুক্ত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া অন্য সকল মানুষেরই দায়িত্ব এবং কর্তব্য। পাপ এক ধরণের ব্যাধি। মানুষ রোগ-ব্যাধিকে ঘৃণা করলেও রোগাক্রান্ত মানুষকে ঘৃণা করে বর্জন করতে পারে না। পাপ ময়লা-আবর্জনা স্বরূপ। ময়লা-আবর্জনা ধারণকারী ডাস্টবিনকে কেউ সযত্নে ঘরে তুলে রাখে না। পাপরূপী আবর্জনাকে ধারণ করলেও মানুষ কিন্তু ডাস্টবিন নয়। ডাস্টবিন জন্ম থেকেই ডাস্টবিন। আর মানুষ জন্ম থেকেই মানুষ। আবর্জনা পরিষ্কার করলেও ডাস্টবিন গ্রহণীয় নয়।

কিন্তু মানুষ পাপমুক্ত হলে সভ্যসমাজে সাদরে গ্রহণীয়। দিনের পর দিন অপরাধ করলেও মহান স্রষ্টা তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে ঘৃণায় ছুঁড়ে ফেলেন না। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ-সুন্দর জীবনে ফিরে আসার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দান করেন। ভয়ঙ্কর অপরাধীকেও অনুতপ্ত হয়ে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। ইতিহাসে এরূপ বহু নজির আছে। বস্তুত পাপী বড় অসহায়, দুঃখী। তাকে ঘৃণায় দূরে ঠেলে দিলে সে আরও অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়তে পারে। আলোকিত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ না পেয়ে সে গভীর অন্ধকারে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

শিক্ষা: পাপকাজ অবশ্যই ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য। কিন্তু পাপীকে ঘৃণায় দূরে না ঠেলে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তাকে সহানুভূতির সঙ্গে সহায়তা করতে হবে।

     #  জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে

সৃষ্টিকর্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। সবুজ শ্যামলে সুন্দর করে সাজিয়েছেন পৃথিবী। তবে তার সেরা সৃষ্টি হলাম আমরা মানুষ জাতি। তিনি আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন। আমাদের জীবন বড় ক্ষণস্থায়ী আর তা আটকে আছে সুনির্দিষ্ট বাঁধাধরা কিছু নিয়মে। এই জীবনের আয়ু অসীম নয়, অনন্তকালের নয়; এর শেষ আছে। আমাদের জীবন অবিনশ্বর নয় বরং তা নশ্বর। জীবনের শুরু হয় জন্ম দিয়ে আর এর পরিসমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু নিশ্চিত।

পৃথিবীতে এমন কোনো সৃষ্টি নেই, যার জন্ম হয়েছে কিন্তু মৃত্যু হবে না। মৃত্যুকে থামানো যায় না বলেই মানুষ কখনো অমর হতে পারে না। মানুষের পঁচনশীল শরীর মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে মিশে যায় পৃথিবীর মাটিতে। মানুষ হয়তো অন্যের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু স্বশরীরে কেউ কোনোদিন অমর হতে পারে না। মানুষ মৃত্যুকে না চাইলেও মৃত্যুই মানুষকে কেঁড়ে নিয়ে যায় এই সুন্দর বসুধা থেকে। মৃত্যু কাউকে কখনো অমর হতে দেয় না। মৃত্যু প্রত্যেক জীবের জন্য অবধারিত সত্য।

সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কখনোই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি, ঘটে না আর ঘটবেও না। মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কিন্তু অমর থেকে যায় কেবল তার সৃষ্টিকর্ম।

শিক্ষা: মানুষ মরণশীল, প্রতিনিয়ত সে মৃত্যুর দিকে ধাবমান। মৃত্যু এড়িয়ে অমর হওয়া তাই অসম্ভব।
       আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য

    শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে। আত্মশক্তি অর্থাৎ মানুষের নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্যকে বাড়ানোই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। আত্মশক্তি মানুষের মাঝে সুপ্ত অবস্থায় থাকে বলে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের শক্তিকে বুঝতে পারে না। শিক্ষা সেই সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। জগতে নিজের অবস্থানকে মজবুত করে ধরে রাখতে শিক্ষার প্রয়োজন। তাই শিক্ষাকে সারা বিশ্বে একটা নির্দিষ্ট ধাপ পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। কারণ জ্ঞানীগুণীরা জানেন শিক্ষা গ্রহণ না করে কেউ সফল হতে পারে না। আর যারা অশিক্ষিত, শিক্ষা গ্রহণ করে না তারা নিজেদের শক্তিকে বিকশিত করতে পারে না। তবে শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা মানুষকে সফল করতে পারে না। এমন শিক্ষা অর্জন করতে হবে যা মানুষের যোগ্যতা ও সামর্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে এবং প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।

আত্মশক্তি মানুষকে স্বনির্ভর হতে শেখায়, মানুষকে যোগ্য করে গড়ে তোলে এবং দৃঢ় মনোবলের অধিকারী করে। আত্মশক্তি আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিরূপ। তাই প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে পারে এমন শিক্ষা অর্জন করতে হবে। জীবনে সফল হতে হলে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়, অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। নিজের যোগ্যতা না থাকলে কেউ এতসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে পারে না। আর এই যোগ্যতা অর্জিত হয় শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে। এছাড়া মানুষের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের পথ দেখায় শিক্ষা। তবে যে শিক্ষা আত্মবিশ্বাসকে বাড়াতে পারে না সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। কারণ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের সামর্থ্য ও যোগ্যতাকে বাড়ানো।

আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ পরনির্ভরশীল, পরমুখাপেক্ষী হয়ে যায়। যা কারো কাছেই পছন্দনীয় নয়। তাই শিক্ষা গ্রহণ করে আত্মনির্ভর হয়ে নিজেকে দেশ ও সমাজের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

শিক্ষা: জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে চাইলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আত্মশক্তি অর্থাৎ নিজের যোগ্যতা বা সামর্থ্য বৃদ্ধি করে শুধু নিজের জন্য নয় সমাজের জন্যও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

 অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে

সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মানুষ গড়ে তুলেছে অনুশাসন এবং ন্যায়-নীতির মানদ-। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছে যারা এসব ন্যায়-নীতি অমান্য করে অন্যায় ও অবৈধ কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হয়।

এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী এবং আইনের চোখে অপরাধী হিসাবে বিবেচিত। আবার যারা অন্যায়ের প্রতিবিধান বা বিরুদ্ধাচরণ করে না বরং শৈথিল্যের সাথে তা মেনে নেয়, সূক্ষ্ম বিচারে তারাও অপরাধী।

কারণ অন্যায়ের বিচার না করলে তা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। আমরা জানি ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। এ হিসাবে অপরাধীকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে।

আপাতদৃষ্টিতে এমনটি মনে হলেও মনে রাখা দরকার যে, ক্ষমারও নির্দিষ্ট সীমা থাকতে হবে। তা না হলে অন্যায় বেড়ে গিয়ে সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বিবেকবান মানুষ হিসাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেতনার অধিকারী হলেও অনেক সময় মানুষ নানা কারণে দিনের পর দিন অন্যায়কে সহ্য করে।

সরাসরি অন্যায় না হলেও এটি অন্যায়কে সহযোগিতা করার নামান্তর। অনেকে বিপদের ঝুঁকি থাকায় নীরবে অন্যায়কে সহ্য করে চলে। এসব প্রবণতার কারণে আজ আমাদের সমাজে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়ই সম অপরাধে অপরাধী।

শিক্ষা: শুধুমাত্র নিজে অপরাধ না করলে সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। অন্যায়কারীকে এবং অন্যায় সহ্যকারীকে ঘৃণা করতে হবে। সমাজের বিবেকবান ও সচেতন মানুষ হিসাবে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাহলে আমরা দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

     #  আলো ও অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে একটিকে বাদ দিলে অন্যটি মূল্যহীন

অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলোর গুরুত্ব বুঝতে পারি। কেবল আলোর মধ্যে শুধু বসবাস করলে আমরা আলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারতাম না। অতৃপ্তি না থাকলে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হতে পারত না। আবার মহৎ বেদনা না থাকলে মহৎ কাব্য কখনো সৃষ্টি হতো না। এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে। পৃথিবীতে সুখের পরশ আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ সুখের আশায় আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বাধা বিপত্তি অতিক্রম করলে জীবন সুখী ও সার্থক হবে।

দুঃখ দেখে বিচলিত হলে চলবে না। কারণ সুখ দুঃখ জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অন্ধকার শেষে যেমন আলো উদয় হয়; তেমনি দুঃখের শেষে জীবনে এক সময় সুখের সূর্য উদিত হয়। আলো ছাড়া অন্ধকার যেমন মূল্যহীন তেমনি অন্ধকার ছাড়া আলোও মূল্যহীন।

শিক্ষা: সুখ পেতে হলে যেমন দুঃখকে অতিক্রম করতে হয়, তেমিন অন্ধকার অতিক্রম করলেই আলোর পথে আসা যায়। দুঃখ না থাকলে সুখ মধুর হয় না, আবার সুখ আছে বলে আমরা বিষাদের মুহূর্তে দুঃখিত হই।

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়

সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ ছিল অসহায়। সেই অসহায় অবস্থা উত্তরণে কাজ করেছে তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি। এই ইচ্ছাশক্তির বলেই পৃথিবীতে মানুষ আজ অন্যান্য জীব থেকে শ্রেষ্ঠ। হিংস্র পশুর হাত থেকে বাঁচার তীব্র বাসনা থেকেই যখন মানুষ পাথরের হাতিয়ার ও আগুন আবিষ্কার করলো, তখন থেকেই মানুষের আবিষ্কারের নেশা তীব্রতর হয়। আবিষ্কারের সেই তীব্র বাসনা বা ইচ্ছা শক্তির কারণেই সভ্যতা আজ এই পর্যায়ে উন্নীত। বস্তুত ইচ্ছা শক্তির জোরেই মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম-শিখরে পৌঁছেছে। এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে গিয়ে বসবাস করার চিন্তা করছে।

পাহাড় চূড়া থেকে সমুদ্র তলদেশ পর্যন্ত বিচরণ করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রে প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে কাজ করেছে তার ইচ্ছাশক্তি। নদীর উপর ভেসে থাকার ইচ্ছা থেকে মানুষ তৈরি করেছে ভেলা, নৌকা, জাহাজ। আকাশে ওড়ার বাসনা থেকে তৈরি করেছে বেলুন, উড়োজাহাজ। রোগ থেকে বাঁচার তীব্র বাসনা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে ঔষধ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ইচ্ছা শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ অধ্যবসায়ে হয়েছে মনোযোগী, পেয়েছে চিত্তের একাগ্রতা। যা মানুষকে তার সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

ইচ্ছাশক্তি মানুষের মনোবলকে দৃঢ় করে এবং কাজে সাফল্যের ইন্ধন যোগায়। ইচ্ছা না থাকলে এক ধরণের জড়তা কাজ করে মানব-হৃদয়ে। ফলে কোনো আকাঙ্ক্ষাও জাগে না। ইচ্ছাশক্তি প্রচন্ড শক্তিশালী হলে যেকোনো বাধা তার কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। পৃথিবী জয় করার প্রবল ইচ্ছা থেকে নেপোলিয়ন ইউরোপ জয় করেছিলেন, আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছিলেন। স্বাধীন হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তাই ইচ্ছাশক্তিই মানুষের কাজের ও সাফল্যের মূল শক্তি।

শিক্ষা: ইচ্ছাহীন জীবন অর্থহীন। ইচ্ছা থেকেই প্রয়োজনের সৃষ্টি হয় আর প্রয়োজন থেকেই বের হয় পাওয়ার উপায়। তাই ইচ্ছাকে উপায়ের মূলমন্ত্র বলা হয়।

Saturday, July 4, 2020

ব্যাকরণের প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা

১. বর্ণ: ধ্বনিকে লিখে প্রকাশ করার চিহ্ন বা প্রতীককে ধ্বনি বলে।
২. ভাষা: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: মানবজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনি সকল দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে তার নাম ভাষা।
৩. বাংলা ব্যাকরণ: যে শাস্ত্র জানা থাকলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায় তাকে ব্যাকরণ বলে।
৪. অঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের স্বরতন্ত্রী কাঁপে না তাকে অঘোষ ধ্বনি বলে।
৫. ঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের স্বরতন্ত্রী কাঁপে তাকে ঘোষ ধ্বনি বলে।
৬. অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণে ফুসফুস তাড়িত বাতাসের চাপ অল্প থাকে তাকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে।
৭. মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণে ফুসফুস তাড়িত বাতাসের চাপ বেশি থাকে তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।
৮. অপিনিহিতি: শব্দ মধ্যস্থ ই বা উ আগে উচ্চারণ করার রীতিকে অপিনিহিতি বলে।
৯. উষ্ম বর্ণ: যে বর্ণ উচ্চারণের সময় যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায় তাকে উষ্ম বর্ণ বলে।
১০. ধ্বনির পরিবর্তন: উচ্চারণের সময় সহজীকরণের প্রবণতায় শব্দের মূল ধ্বনির যে সব পরিবর্তন হয় তাকে বলে ধ্বনির পরিবর্তন।
১১. প্রাতিপদিক: বিভক্তিহীন নামবাচক শব্দকে প্রাতিপদিক বলে।
১২. ণত্ব বিধান: তৎসম শব্দে ণ ব্যবহারের নিয়মকে ণত্ব বিধান বলে।
১৩. ষত্ব বিধান: তৎসম শব্দে ষ ব্যবহারের নিয়মকে ষত্ব বিধান বলে।
১৪. সন্ধি: পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির এক ধ্বনিতে পরিণত হওয়াকে সন্ধি বলে।
১৫. লিঙ্গ: শব্দের যে বৈশিষ্ট্য থেকে পুরুষ, স্ত্রী বা ক্লীব বোঝা যায় তাকে লিঙ্গ বলে।
১৬. সংখ্যাবাচক শব্দ: যে শব্দে ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যার ধারণা জন্মে তাকে সংখ্যাবাচক শব্দ বলে।
১৭. দিরুক্ত শব্দ বা শব্দ দ্বৈত: একই শব্দ যখন দুই বার উচ্চারিত হয়ে পৃথক পৃথক অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে দিরুক্ত শব্দ বা শব্দ দ্বৈত বলে।
১৮. বচন: ব্যাকরণে বিশেষ্য বা সর্বনামের সংখ্যাগত ধারণা প্রকাশের উপায়কে বচন বলে।
১৯. সমাস: অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন দুই বা বহুপদ একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
২০. উপসর্গ: শব্দ বা ধাতুর পূর্বে কতিপয় সুনির্দিষ্ট অব্যয় জাতীয় শব্দাংশ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ বা সংকোচন ঘটিয়ে থাকে, তাকে উপসর্গ বলে।
২১. ক্রিয়াপদ: বাক্যের অন্তর্গত কার্য-বোধক পদকে বলা হয় ক্রিয়াপদ।
২২. পুরুষ: শব্দের যে বৈশিষ্ট্য দিয়ে বক্তা, শ্রোতা বা বস্তুকে নির্দেশ করা হয় তাকে শব্দের পুরুষ বলে।
২৩. ক্রিয়া বিভক্তি: কাল ও পুরুষ অনুসারে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করে, সেই বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টিকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে।
২৪. অনুজ্ঞা পদ: আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ, প্রার্থণা, অনুনয়, অনুমতি প্রভৃতি অর্থে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদের রূপকে অনুজ্ঞা পদ বলে।
২৫. কারক: বাক্যস্থিত ক্রিয়া পদের সঙ্গে নাম পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে।
২৬. অনুসর্গ: যে সকল অব্যয় বাচক শব্দ বিশেষ্য বা সর্বণামের পরে বসে কারক ও বিভক্তি সূচিত করে তাদের কে অনুসর্গ বলে।
২৭. অনুকার অব্যয়: যে সকল অব্যয় দ্বারা অব্যক্ত শব্দ অনুকরণ করা হয় তাদের অনুকার অব্যয় বলে।
২৮. অনন্বয়ী অব্যয়: বাক্যে কোন পদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রেখে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে এমন অব্যয়ের নাম অনন্বয়ী অব্যয়।
২৯. অভিধা: শব্দের যে শক্তি দ্বারা তার ব্যাকরণ ও অভিধান সম্মত মূল অর্থ বোঝা যায়, তাকে অভিধা বলে।
৩০.অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কোন কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।
৩১. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ করতে পারে না, অন্য ক্রিয়ার সাহায্য দারকার হয় তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
৩২. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ করতে পারে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
৩৩. তৎসম শব্দ: যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোন রূপ পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় এসেছে তাদেরকে তৎসম শব্দ বলে।
৩৪. অর্ধ-তৎসম শব্দ: যে সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদেরকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে।
৩৫. তদ্ভব শব্দ: যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে সে সব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে।
৩৬. কৃদন্ত পদ: কৃৎ প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দকে কৃদন্ত পদ বলে।
৩৭. ক্রিয়া বিভক্তি: ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে।
৩৮. শব্দ বিভক্তি: নামবাচক শব্দের সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে শব্দ বিভক্তি বলে।
৩৯. শব্দ: বাকযন্ত্রসৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে।
৪০. উপধা: প্রকৃতির অন্ত বর্ণের পূর্ব বর্ণকে উপধা বলে।
৪১. কৃৎ প্রত্যয়: ক্রিয়ামূল বা ধাতুর পরে যে অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।
৪২. তদ্ধিত প্রত্যয়: শব্দের পরে যে অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
৪৩. প্রত্যয়: ধাতু বা শব্দের পরে যে অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে।
৪৪. অব্যয়: লিঙ্গ, বচন ও পুরুষভেদে যে পদ গুলোর কোন রূপান্তর হয় না সেগুলোকে অব্যয় বলে।
৪৫. অক্ষর: শব্দের যে অংশটুকু একবারে উচ্চারণ করা যায় তাই অক্ষর।
৪৬. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দুটো কর্ম থাকে, দ্বিকর্মক ক্রিয়া তাকে বলে।
৪৭. গৌণ কর্ম: দ্বিকর্মক ক্রিয়ার প্রাণীবাচক কর্মকে গৌণ কর্ম বলে।
৪৮. মুখ্য কর্ম: দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মকে মুখ্য কর্ম বলে।
৪৯. প্রযোজক ক্রিয়া: যে কর্তা নিজে না করে অন্য কে দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন করালে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।
৫০. পদাশ্রিত নির্দেশক: বিশেষ্য বা সংখ্যাবাচক বিশেষণকে বিশেষভাবে নির্দেশ করার জন্য কতগুলো শব্দ নির্দেশবাচক প্রত্যয়রূপে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে পদাশ্রিত নির্দেশক বলে।
৫১. প্রকৃতি: শব্দ ও ক্রিয়ার মূলকে প্রকৃতি বলে।
৫২. নাম প্রকৃতি: শব্দের মূলকে নাম প্রকৃতি বলে।
৫৩. ক্রিয়া প্রকৃতি: ক্রিয়ার মূলকে ক্রিয়া প্রকৃতি বলে।
৫৪. ণিজন্ত ধাতু: মৌলিক ধাতুর সাথে আ বা ওয়া যুক্ত হয়ে গঠিত ধাতুকে ণিজন্ত ধাতু বলে।
৫৫. সমধাতুজ বা ধাত্বর্থক কর্ম: বাক্যস্থিত ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হলে তাকে সমধাতুজ বা ধাত্বর্থক কর্ম বলে।
৫৬. মৌলিক শব্দ: যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক শব্দ বলে।
৫৭. সাধিত শব্দ: মৌলিক শব্দ ব্যতীত সব শব্দকে সাধিত শব্দ বলে।
৫৮. ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা: ভবিষ্যতে কোন ক্রিয়া বা কাজ করার জন্য আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, নিষেধ বুঝালে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা কাল বলে।
৫৯.বর্তমান অনুজ্ঞা: বর্তমানে কোন ক্রিয়া বা কাজ করার জন্য আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, নিষেধ বুঝালে বর্তমান অনুজ্ঞা কাল বলে।
৬০. ব্যতিহার কর্তা: দুটি কর্তা পারস্পরিক অর্থে ক্রিয়া সম্পাদন করলে তাকে ব্যতিহার কর্তা বলে।
৬১. বিভক্তি: বাক্যের অন্তর্গত শব্দের শেষে যে সব বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ বসে বাক্যের অপরাপর শব্দের সাথে অন্বয় সাধন করে সেগুলোকে বিভক্তি বলে।
 ৬২. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কোন কর্ম আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।
৬৩. যোগরূঢ় শব্দ: সমাস নিস্পন্ন যে সব শব্দ সমস্যমান পদের অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোন বিশেষ অর্থ বোঝায় তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে।
৬৪. রূঢ়ি শব্দ: প্রত্যয় ও উপসর্গযোগে গঠিত যেসব শব্দ প্রত্যয় ও উপসর্গের অর্থ না বুঝিয়ে বিশেষ কোন অর্থ বুঝায় তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে।
৬৫. বাক্য সংক্ষেপণ: ভাষা বিজ্ঞানে ক্রমাগত গবেষণা ও অনুশীলনের ফলে প্রত্যয়, উপসর্গ, সমাস ইত্যাদির সাহায্যে নিষ্পন্ন, সংকোচিত করে সহজতর উপায় এবং সল্প উচ্চারণের মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশের উপায় সাধিত হয়। এই উপায়কে বাক্য সংক্ষেপণ বলে।

মনে কর, তোমার বাবা একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। সম্পতি তোমার বাবার বদরি হয়েছে। তাই তোমাকেও তার সাথে যেতে হবে। এ জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট ছাড়পত্র চেয়ে আবেদনপত্র লেখ।

২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ খৃ:
প্রধান শিক্ষক,
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: বিদ্যালয় হতে ছাড়পত্র পাওযার জন্য আবেদনপত্র।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্র। আমার বাবা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। সম্প্রতি তাকে রাজশাহী শহরে বদলি করা হয়েছে। তাই আমার পরিবারের সবার সঙ্গে আমাকেও রাজশাহীতে যেতে হচ্ছে। সেখানে নতুন করে ভর্তির জন্য এই বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র প্রয়োজন।

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমাকে বিদ্যালয় ত্যাগের ছাড়পত্র দিয়ে বাধিত করবেন।

নিবেদক-

মুমতারিন মালিহা
শ্রেণি: অষ্টম
শাখা: খ
রোল: ০১