# আলো
ও অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে একটিকে বাদ দিলে অন্যটি মূল্যহীন
অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলোর গুরুত্ব
বুঝতে পারি। কেবল আলোর মধ্যে শুধু বসবাস করলে আমরা আলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারতাম
না। অতৃপ্তি না থাকলে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হতে পারত না। আবার মহৎ বেদনা
না থাকলে মহৎ কাব্য কখনো সৃষ্টি হতো না। এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই
মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে। পৃথিবীতে সুখের পরশ আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ
করে। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ সুখের আশায় আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বাধা
বিপত্তি অতিক্রম করলে জীবন সুখী ও সার্থক হবে।
দুঃখ দেখে বিচলিত হলে চলবে না। কারণ
সুখ দুঃখ জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অন্ধকার শেষে যেমন আলো উদয় হয়; তেমনি দুঃখের
শেষে জীবনে এক সময় সুখের সূর্য উদিত হয়। আলো ছাড়া অন্ধকার যেমন মূল্যহীন তেমনি অন্ধকার
ছাড়া আলোও মূল্যহীন।
শিক্ষা: সুখ পেতে হলে যেমন দুঃখকে
অতিক্রম করতে হয়, তেমিন অন্ধকার অতিক্রম করলেই আলোর পথে আসা যায়। দুঃখ না থাকলে সুখ
মধুর হয় না, আবার সুখ আছে বলে আমরা বিষাদের মুহূর্তে দুঃখিত হই।
# ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়
সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ ছিল অসহায়।
সেই অসহায় অবস্থা উত্তরণে কাজ করেছে তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি। এই ইচ্ছাশক্তির বলেই পৃথিবীতে
মানুষ আজ অন্যান্য জীব থেকে শ্রেষ্ঠ। হিংস্র পশুর হাত থেকে বাঁচার তীব্র বাসনা থেকেই
যখন মানুষ পাথরের হাতিয়ার ও আগুন আবিষ্কার করলো, তখন থেকেই মানুষের আবিষ্কারের নেশা
তীব্রতর হয়। আবিষ্কারের সেই তীব্র বাসনা বা ইচ্ছা শক্তির কারণেই সভ্যতা আজ এই পর্যায়ে
উন্নীত। বস্তুত ইচ্ছা শক্তির জোরেই মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম-শিখরে পৌঁছেছে। এক গ্রহ
থেকে অন্য গ্রহে গিয়ে বসবাস করার চিন্তা করছে।
পাহাড় চূড়া থেকে সমুদ্র তলদেশ পর্যন্ত
বিচরণ করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রে প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে
কাজ করেছে তার ইচ্ছাশক্তি। নদীর উপর ভেসে থাকার ইচ্ছা থেকে মানুষ তৈরি করেছে ভেলা,
নৌকা, জাহাজ। আকাশে ওড়ার বাসনা থেকে তৈরি করেছে বেলুন, উড়োজাহাজ। রোগ থেকে বাঁচার তীব্র
বাসনা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে ঔষধ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ইচ্ছা শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে
মানুষ অধ্যবসায়ে হয়েছে মনোযোগী, পেয়েছে চিত্তের একাগ্রতা। যা মানুষকে তার সাফল্যের
চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।
ইচ্ছাশক্তি মানুষের মনোবলকে দৃঢ় করে
এবং কাজে সাফল্যের ইন্ধন যোগায়। ইচ্ছা না থাকলে এক ধরণের জড়তা কাজ করে মানব-হৃদয়ে।
ফলে কোনো আকাঙ্ক্ষাও জাগে না। ইচ্ছাশক্তি প্রচন্ড শক্তিশালী হলে যেকোনো বাধা তার কাছে
নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। পৃথিবী জয় করার প্রবল ইচ্ছা থেকে নেপোলিয়ন ইউরোপ জয় করেছিলেন,
আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছিলেন। স্বাধীন হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকেই
আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তাই ইচ্ছাশক্তিই মানুষের কাজের ও সাফল্যের মূল শক্তি।
শিক্ষা: ইচ্ছাহীন জীবন অর্থহীন। ইচ্ছা
থেকেই প্রয়োজনের সৃষ্টি হয় আর প্রয়োজন থেকেই বের হয় পাওয়ার উপায়। তাই ইচ্ছাকে উপায়ের
মূলমন্ত্র বলা হয়।
No comments:
Post a Comment