চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Tuesday, July 21, 2020

সারাংশ

# অভাব আছে বলিয়া জগৎ বৈচিত্র্যময় হইয়াছে। অভাব না থাকিলে জীব-সৃষ্টি বৃথা হইত। অভাব আছে বলিয়া অভাব-পূরণে এত উদ্যোগ। সংসার অভাবক্ষেত্র বলিয়া কর্মক্ষেত্র। অভাব না থাকিলে সকলেই স্থানু-স্থবির হইত, মনুষ্যজীবন বিড়ম্বনাময় হইত। মহাজ্ঞানীগণ অপরের অভাব দূর করিতে সর্বদা ব্যস্ত। জগতে অভাব আছে বলিয়াই মানুষ সেবা করিবার সুযোগ পাইয়াছে। সেবা মানবজীবনের পরম ধর্ম। সুতরাং অভাব হইতেই সেবাধর্মের সৃষ্টি হইয়াছে। আর এই সেবাধর্মের দ্বারাই মানুষের মনুষ্যত্বসুলভ গুণ সার্থকতা লাভ করিয়াছে।

সারাংশ: অভাব মানুষকে কর্মের পথে চালিত করে জগতকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। অভাব আছে বলেই মানবজীবন চলমান। এ অভাব থেকেই সেবাধর্ম উৎপত্তি লাভ করেছে। অপরের অভাব পূরণের ইচ্ছা এবং তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার মধ্য দিয়েই মানুষ মহান হয়ে ওঠে।

# অভ্যাস ভয়ানক জিনিস। একে হঠাৎ স্বভাব থেকে তুলে ফেলা কঠিন। মানুষ হবার সাধনাতেও তোমাকে সহিষ্ণু হতে হবে। সত্যবাদী হতে চাও? তাহলে ঠিক করো, সপ্তাহে অন্তত এক দিন মিথ্যা বলবে না। ছ’মাস ধরে এমনই করে নিজে সত্য কথা বলতে অভ্যাস করো। তারপর এক শুভ দিনে আর একবার প্রতিজ্ঞা করো, সপ্তাহে তুমি দুদিন মিথ্যা বলবে না। এক বছর পরে দেখবে সত্য কথা বলা তোমার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে পড়বে। সাধনা করতে করতে এমন একদিন আসবে যখন ইচ্ছে করলেও মিথ্যা বলতে পারবে না। নিজেকে মানুষ করার চেষ্টায় পাপ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রামে তুমি হঠাৎ জয়ী হতে কখনও ইচ্ছা করো না, তাহলে সব প- হবে।

সারাংশ: মানুষ এমনভাবে অভ্যাস দ্বারা বশীভূত সে সহজে তার অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারে না। তবে প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য খারাপ অভ্যাসগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। হঠাৎ করেই মানুষ তার খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে গেলে সব পন্ড হয়ে যায়। ধীরে ধীরে অনুশীলনের মাধ্যমেই বদ অভ্যাস পরিবর্তন করে একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব।

সারাংশ

# মানুষের সুন্দর মুখ দেখে আনন্দিত হয়ো না। স্বভাবে সে সুন্দর নয়, দেখতে সুন্দর হলেও তার স্বভাব, তার স্পর্শ, তার রীতিনীতিকে মানুষ ঘৃণা করে। দুঃস্বভাবের মানুষ মানুষের হৃদয়ে জ্বালা ও বেদনা দেয়। তার সুন্দর মুখে মানুষ তৃপ্তি পায় না। অবোধ লোকেরা মানুষের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তার ফল ভোগ করে। যার স্বভাব মন্দ, সে নিজেও দুষ্ক্রিয়াশীল, মিথ্যাবাদী, দুর্মতিকে ঘৃণা করে। মানুষ নিজে স্বভাবে সুন্দর না হলেও সে স্বভাবের সৌন্দর্যকে ভালোবাসে। স্বভাব গঠনে কঠিন পরিশ্রম ও সাধনা চাই, নইলে শয়তানকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।

সারাংশ: বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্বভাবের সৌন্দর্যই মানুষকে বিচারের মাপকাঠি। খারাপ স্বভাবের মানুষও বাহ্যিক সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারে। আর যারা খারাপ স্বভাবের তারাও সুন্দর স্বভাবের মানুষকে পছন্দ করে। তাই কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে সুন্দর স্বভাবের অধিকারী হতে হবে।


# মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্রে, মনুষ্যত্বে, জ্ঞানে ও কর্মে। বস্তুত চরিত্র বলেই মানুষের জীবনের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে। চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, মানুষ যদি মানুষকে শ্রদ্ধা করে, সে শুধু চরিত্রের জন্যে, অন্য কোনো কারণে মানুষের মাথা মানুষের সামনে এত নত করার দরকার নেই। জগতে যে সকল মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গৌরবের মূলে এই চরিত্রশক্তি। তুমি চরিত্রবান লোক, একথার অর্থ এই নয় যে, তুমি লম্পট নও। তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করো, তুমি পরদুঃখকাতর ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতাপ্রিয়, চরিত্রবান মানে এই।

সারাংশ: চরিত্র মানবজীবনের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। চরিত্র বলেই মানুষ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়, লাভ করে অপরের শ্রদ্ধা। আর চরিত্রবান বলতে মূলত সত্যবাদী, বিনয়ী, জ্ঞানবান, পরদুঃখকাতর, ন্যায়বান, স্বাধীনতাপ্রিয় ব্যক্তিকে বোঝায়।

Monday, July 20, 2020

    # নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা। 

    এ সংসারে এসেছিলেন ন বছরের মেয়ে তারপরে এই পরিবারের দীর্ঘ গলি বেয়ে দশের ইচ্ছে-বোঝাই করা এই জীবনটা টেনে টেনে শেষে পৌঁছিনু আজ পথের প্রান্তে এসে সুখের দুখের কথা একটু খানি ভাবব এমন সময় ছিল কোথা! 

     ক. যকৃতের পক্ষে কোনটি খুব উপকারী? 
     খ. কবিরাজরা নিমগাছের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন?
     গ. ‘নিমগাছ’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য নির্ণয় কর। 
    ঘ. “উদ্দীপকের গৃহবধূ আর ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউটার জীবন একই সূত্রে গাঁথা।”-মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
       
    # নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা। 
  
     স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে শবনমের বড় সংসার। সব সময় সংসারে তার প্রয়োজন। সাংসারিক দায়িত্বের মায়াজালে আবদ্ধ সে। এভাবেই জীবনের সত্তরটি বছর কেটে গেল। তার কাজ করার শক্তি নেই এখন। সংসারে সে এখন বোঝা। তার ঠাঁই এখন বৃদ্ধাশ্রমে। 
    
     ক. নিমগাছ ছোট গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে? 
     খ. নতুন লোকটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল কেন? 
      গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর। 
      ঘ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। 
   
   # নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা। 

     i. তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর 
      ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর 
      বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙে লয় 
       তরু তবু অকাতর, কিছু নাহি কয়। 

     ii. শুনি নাই তো মানুষের কী বাণী 
         মহাকালের বীণায় বাজে 
         আমি কেবল জানি 
         রাঁধার পরে খাওয়া আবার খাওয়ার পরে রাঁধা 
         বাইশ বছর এক চাকাতেই বাঁধা। 

     ক. লোকে নিমগাছের ডাল ডঢ়বোয় কেন? 
     খ. নিমগাছটার লোকটার সাথে চলে যেতে ইচ্ছা করে কেন? 
     গ. র নং উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের যে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। 
     ঘ. “রর নং উদ্দীপক ও ‘নিমগাছ’ গল্পের মূলভাব অভিন্ন” ধারণ করে না-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
 

সৃজনশীল

মানুষ মুহাম্মদ (স.)
# নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।   

যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি। 
যে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান,
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,-
আপন করি কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

ক. মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী কোন আন্দোলনে যোগ দেন?
খ. মহানবী (স.) কেন স্বেচ্ছায় দারিদ্র্যের কণ্টক পরিধান করেছিলেন?
গ. উদ্দীপকে ‘মানুষ মুহাম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের কোন দিকের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘মানুষ মুহাম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের আংশিক রূপায়ণ মাত্র।”-মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

# নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা। 

                                        আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর, 
                                         আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। 
                                                   যে মোরে করিল পথের বিবাগী, 
                                                  পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি। 
                                         আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর।

ক. সকলের মহাযাত্রা কার দিকে?
খ. কেহবা পাগলের মতো কাÐ শুরু করে।-কেন?
গ. উদ্দীপকের অংশটুকুতে ‘মানুষ মুহাম্মদ (স.)’ এর কোন বৈশিষ্টটি প্রকাশ করে-তা তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকের চেতনা ‘মানুষ মুহাম্মদ (স.)’ এর একটি গুণ মাত্র, সম্পূর্ণ নয়।”-তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

# নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দা।                                     
 অন্ধকার যুগ
 হযরত মুহম্মদ(স.)
 নব্যুয়ত লাভ
আড়ম্বরহীনতা
 মানবতাবোধ

ক. তায়েপের অবস্থান কোন দিকে?
খ. মহানবী (স.) মানুষের একজন হয়েও দুর্লভ কেন?
গ. উদ্দীপকের কোন বিষয়টি হযরত মুহম্মদ (স.) এর জীবনযাপনে ফুটে উঠেছে- ‘মানুষ মুহাম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘ হযরত মুহম্মদ (স.) ছিলেন মানবতাবোধের মূর্ত প্রতীক’ ‘মানুষ মুহাম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন

তৈলচিত্রের ভূত

# নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাবুল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। কাবুলের মায়ের ধারণা তাঁর ছেলেকে ভূতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। তাই তিনি সাধু বাবার কাছে নিয়ে যান। সাধু বাবা ঝাড়ফুঁক ও তাবিজকবচ দিয়ে বিদায় দেন। কাবুলের শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যেতে থাকে। এ অবস্থা দেখে কাবুলের চাচা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তারের চিকিৎসায় কাবুল ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।

ক. নগেনের ঘুম আসছিল না কেন?
খ. নগেন নিজেকে পাগল মনে করার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কাবুলের মায়ের ধারণায় ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “উদ্দীপকের কাবুলের চাচা ও ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়ই আধুনিক মানসিকতার অধিকারী।” –উত্তরের স্বপক্ষে তোমার যুক্তি উপস্থাপন করো। 
      
# নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মাহিনের পরীক্ষা কিন্তু মাহিন রাতের বেলায় একা পড়ার ঘরে থাকতে চায় না। রাতে যখন সে পড়তে বসে, তখন সে বুঝতে পারে কিছু একটা দ্রুত দেয়ালের পাশে লুকিয়ে যাচ্ছে। রাত হলেই তার ভয়টা বেড়ে যায়। তার মা বিষয়টি বুঝতে পেরে মাহিনকে নিয়ে রাতে পড়ার ঘরে যায় এবং সেখান থেকে একটি টিকটিকি উদ্ধার করে।  

ক. পরাশর ডাক্তার কোথায় বসে চিঠি লিখছিল?
খ. নগেনের মন মামার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে ভরে উঠল কেন?
গ. উদ্দীপকের মাহিনের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূলভাব প্রকাশ করেছে।”- বিশ্লেষণ কর।

# নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাবু শহরে চাচার বাসায় থাকে। একদিন রাতে সাবু ঘুমাচ্ছিল। মাঝরাতে হঠাৎ কীসের আওয়াজে জেগে উঠল। দেখল সবকিছু কাঁপছে। সে ভাবল বাসা ভূতে নাড়াচ্ছে। সে খুব ভয় পেল। পরদিন ভূতের কথা চাচার কাছে বলতে চাচা হাসল আর ভূমিকম্পের কথা বুঝিয়ে বলাতে সে বুঝতে পারল।                                                                                                                                                            
ক. নগেনের মামার গায়ে কীসের পাঞ্জাবী ছিল?
খ. নগেনের মামা কেমন মানুষ ছিলেন? ব্যাখ্যা কর। 
গ. উদ্দীপকের সাবু আর ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্যপূর্ণ দিক ব্যাখ্যা কর।    
ঘ. সাবুর চাচার ও ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারের বিজ্ঞানভিত্তিক যৌক্তিকতা গল্পের ভূত-বিশ্বাস দূর করেছে-বিশ্লেষণ কর।                                    

Saturday, July 18, 2020

রচনা

   পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

(সংকেত: ভূমিকা; পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী; পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ; পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণ; পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া; পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন; পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া; প্রতিরোধে করণীয়; বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ; বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপ; উপসংহার।)

ভূমিকা: সৃষ্টির আদিলগ্নে মানুষ ছিল একান্তভাবে পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। মানুষ ও পরিবেশ তখন একই সূত্রে গাঁথা ছিল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবেশ ও মানুষের মধ্যকার মৈত্রী সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। যেদিন মানুষ নিজেদের রুচি অনুসারে পরিবেশ গড়ে তুলতে চায় সেদিন থেকেই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। জীবনের তাগিদে, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে।

পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী: ইংরেজি Environment এর বাংলা প্রতিশব্দ পরিবেশ। এটি এসেছে ফরাসি শব্দ Environment থেকে যার অর্থ বেষ্টন করা বা ঘেরা। সাধারণভাবে বলতে গেলে আমাদের চারপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা, দালানকোঠা, নদ-নদী, খাল-বিল, মাটি, বায়ু, পানি ইত্যাদি সব কিছু মিলেই তৈরি হয় পরিবেশ। কিন্তু ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ ও অনূজীবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককেই পরিবেশ বলে। এস.সি কেন্ডেইগ-এর মতে- ‘পরিবেশ বলতে জৈবিক ও অজৈবিক বস্তুর যোগফল যা কোনো সৃষ্টির পরিবর্তনে সাহায্য করে তাকে বুঝি।’ কোনো কারণে যদি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের কাক্সিক্ষত মাত্রা বিনষ্ট হয় বা পরিবেশ জীব জগতের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে, তবে সেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে পরিবেশ দূষণ বলে।

পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ: পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব প্রাকৃতিক কারণ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী তার মধ্যে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি অন্যতম। এই বিপর্যয়ের ফলে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ব্যাপক ধ্বংসলীলা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এতে পরিবেশে মারাত্মক দূষণের সৃষ্টি হয়। ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে ব্যাপক সম্পদ ও প্রাণহানি ঘটে। বাংলাদেশ, চীন, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ঘূর্ণিঝড়ে, জাপান ও ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে অগ্নুৎপাতে এবং জাপান, ভারত, ইরানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের কারণে পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হয়।

পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণ: পরিবেশ দূষণের জন্য মানুষসৃষ্ট কারণগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী। কারণগুলো হলো-

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ: জনসংখ্যা বিস্ফোরণ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। একটি জরিপে দেখা গেছে ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি, সেখানে ২০১২ সালে তা প্রায় ৭০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই চাপে পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।

শিল্প বিপ্লব: অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শিল্পের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের সাথে সাথে তার প্রসার ঘটেছে। এই শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যাপকহারে বনজ ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শিল্প কারখানার নির্গত ধোয়া ও বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করছে।

বনভূমি ধ্বংস: বর্তমানে পরিবেশ দূষণের বড় কারণ বনজ সম্পদের ধ্বংস। একটি সুস্থ পরিবেশের জন্য যেখানে মোট ভূখন্ডের ২৫% বনভূমি থাকার দরকার তা পৃথিবীর বহু দেশে নেই। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা মেটাতে, ঘরবাড়ি, আসবাপপত্র ও শিল্প কারখানা প্রভৃতির জন্য ব্যাপক পরিমাণে বৃক্ষনিধন চলছে। এক জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে বিশ্বে বার্ষিক বন ধ্বংসের পরিমাণ ২ কোটি হেক্টর। বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষা মতে- পৃথিবীতে বছরে যে পরিমাণে বন ধ্বংস হচ্ছে তার পরিমাণ প্রতি দশ বছরে ভারতের মোট ভূখন্ডের সমান। উপগ্রহের চিত্রের সাহায্যে দেখা গেছে আফ্রিকার ৫৩% এবং এশিয়ায় ৩৫% এলাকায় কোনো না কোনো মাত্রায় মরুময়তা বিরাজ করে। পৃথিবীতে বনজ সম্পদ ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের অনেক অঞ্চলই মরুভূমিতে পরিণত হবে।

যুদ্ধ ও দুর্ঘটনা: যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্র, বোমা ও মরণাস্ত্রের ব্যবহার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৯৪৫ সালে জাপানের আনবিক বোমার বিস্ফোরণ, পরবর্তীতে রাশিয়ার চেরোনবিল দূর্ঘটনা, ভারতের ভূপালে গ্যাস দুর্ঘটনা, ২০০৩-০৪ সালে ইরাকে মরণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার ঐ সকল এলাকার পরিবেশকে ভয়াবহভাবে দূষিত করে তুলেছে।

পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া: প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণগুলোর জন্যই মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই দূষণের ফলেই পরিবেশ হয়ে উঠছে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। বাতাসে অতিমাত্রায় মিশ্রিত ক্ষতিকর গ্যাস এবং বিভিন্ন কলকারখানা, মোটরযান ও জ্বালানির ধোঁয়া থেকে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত হচ্ছে। রাসায়নিক সার, বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় আবর্জনা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে তেমনি মাটি দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন জৈব ও অজৈব, রাসায়নিক পদার্থ ও জীবানু দ্বারা দূষিত হচ্ছে পানি। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রের জোরালো শব্দের জন্য ঘটছে শব্দ দূষণ।

পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের হার বেড়েই চলছে। তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর ওপর। যার ফলে জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইট, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর তাপমাত্রা ব্যাপকহারে বাড়ছে যা গ্রিন হাউজ ইফেক্ট নামে পরিচিত। জার্মান ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘পস্টজাম ইনস্টিটিউট ফল ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ’ এর দেয়া তথ্য মতে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪০ বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে সমুদ্রের পানি ২০ থেকে ১৪০ সে.মি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার অনেক দেশই পানিতে ডুবে যাবে। মানবজাতির জন্য এটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া: পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনজীবনের উপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ যার শতকরা ৭০ ভাগ পানি দূষণের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়া বায়ু দূষণের ফলে সৃষ্ট শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত কারণে ঘটা মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখের মতো। অন্যদিকে জাতিসংঘ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে পরিবেশ দূষণের ফলে এশিয়ার আকাশে তিন কিলোমিটার পুরু ধোঁয়াশা জমেছে। যা এসিড বৃষ্টি ঘটাতে পারে। এটি এশিয়ার কোটি কোটি মানুষের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া প্রাকৃতিক দূষণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হেপাটাইটিস বি, সংক্রামণ সেরিব্রাল, পোলিও, কলেরা ইত্যাদি রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সাথে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে চামড়ার ক্যান্সার ও চোখের ছানি পড়া রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি খাদ্যশষ্যে তেজস্ক্রিয়াও বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়: পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। যন্ত্র ও গাড়ি থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস রোধ করতে হবে। এর বিকল্প স্বরূপ প্রাকৃতিক গ্যাস ও সৌরশক্তি নির্ভর যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ: পরিবেশ দূষণের মারাত্মক প্রতিফলন দেখে বিশ্ববাসী আজ উদ্বিগ্ন। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিভিন্ন সম্মেলন। ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালিত হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ ও ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিওতে, ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে, ২০০৯ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সম্মেলন যাতে পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপ: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে। এজন্যই ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পাশ করা হয় বাংলাদেশে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে সংশোধিত পরিবেশ সংরক্ষণ বিল ও পরিবেশ আদালত বিল পাশ হয়েছে। এছাড়া টু-স্টোক যানবাহন নিষিদ্ধ করে এর পরিবর্তে সিএনজি চালিত যানবাহনের ব্যবহার আরম্ভ হয়েছে। এমনকি ২০০২ সাল থেকে সারাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

উপসংহার: আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ বিশ্বজগতের জন্য একটি বিরাট হুমকি। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের অস্তিত্ব আজ চরম সংকটে। তাই পরিবেশ দূষণরোধে ব্যক্তিগতভাবে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সমষ্টিগতভাবে তা প্রতিরোধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আগামী দিনের জন্য একটি সুস্থ ও বসবাস উপযোগী দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলাই হোক সকলের অঙ্গীকার।

রচনা

   নৈতিক মূল্যবোধ

ভূমিকা: মানুষের জীবনবোধের সঙ্গে নৈতিকতার একটি অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ মানুষ প্রাণীজগতের সদস্য হলেও পশু নয়। মানুষের সাধনা মনুষ্যত্ব অর্জনের সাধনা। সেই সাধনার লক্ষ্য এমন কিছু বিশেষ গুণাবলি অর্জন যা মানুষকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বিচার করার শক্তি দেয় এবং মন্দ, অন্যায় ও অনুচিত কাজকে পরিহার করে নৈতিক আদর্শের অনুবর্তী করে তোলে। এই নৈতিক মূল্যবোধের আশ্রয়েই গড়ে উঠেছে মানব সমাজ। মানুষের জীবনের ভালো-মন্দ, উৎকর্ষ-অপকর্ষ বিচারের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে নৈতিক মূল্যবোধ।

নৈতিক মূল্যবোধের স্বরূপ ও গুরুত্ব: নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের জীবনে অনুসরণযোগ্য এমন কিছু আচরণ বিধি, যা মানুষের জীবনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতিকে করে তোলে সুন্দর, নির্মল ও রুচি স্নিগ্ধ। নৈতিকতা মানুষকে অন্যায়ের পতন-বন্ধুর পথের বিপদ থেকে বাঁচায়। স্বার্থপরতার প্রলুব্ধ কর আকর্ষণ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আত্ম ত্যাগের মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে। নৈতিক মূল্যবোধ মানুষকে দেয় প্রবল ও দৃঢ় মানসিক শক্তি যার বলে মানুষ যাবতীয় দুর্নীতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে, অন্যায় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন সচেতনভাবে পরিহার করতে শেখে।

নৈতিক মূল্যবোধ মানব চরিত্রকে করে তোলে সুষমামণ্ডিত। ধর্মের কল্যাণধর্মী মর্মবাণী অনুসরণ করা, মিথ্যাকে কায়মনোবাক্যে পরিহার করা, সত্য ও ন্যায়ের আদর্শে পরিচালিত হওয়া, সজ্ঞানে অন্যের ক্ষতি না করা, পরহিতব্রতে যথাসম্ভব নিজেকে সমর্পণ করা -এসবের মাধ্যমেই মানুষের জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল প্রকাশ ঘটে। নৈতিক মূল্যবোধে আলোকিত মানুষ সমাজে যতই বাড়ে ততই সমাজজীবন হয়ে ওঠে নিষ্কলুষ ও সৌন্দর্যবিভামণ্ডিত। তাই মানুষের আত্মিক সামাজিক উৎকর্ষের জন্যে এবং জাতীয় জীবনে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্যে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের লালন, চর্চা ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই কারণে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে মানবচিত্তে নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলা।

মূল্যবোধের অবক্ষয়: দুঃখের বিষয় মানব সভ্যতা যখন একুশ শতকের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে তখন মানুষ মূল্যবোধের সংকটে পীড়িত। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য-লালসা ও পরিভোগ-প্রবণতা মানুষকে লোভী ও স্বার্থান্বেয়ী করে তুলছে। মানবধ্বংসী মরণাস্ত্রের বিস্তার বিজ্ঞানের অনৈতিক ব্যবহারেরই মারাত্মক ফল। দুনিয়াজোড়া মাদক ব্যবসা, গণমাধ্যম করায়ত্ত করে স্থূল ভোগবাদী অপসংস্কৃতির প্রচারণা, হলুদ সাংবাদিকতা ইত্যাদি নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়েরই বহঃপ্রকাশ।

আমাদের দেশেও নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবক্ষয়ের লক্ষণ আজ প্রকট। সীমাহীন দুর্নীতি সর্বস্তরে গ্রাস করেছে সমাজজীবনকে। নীতিহীন, বিবেকহীন মানুষ সদম্ভে সমাজে বিচরণ করছে এবং ন্যায়নীতির কণ্ঠরোধ করার জন্যে তারা উঠে-পড়ে লেগেছে। অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় বিত্তের পাহাড় গড়ছে লুটেরা ধনীরা। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। এখন সমাজে অবৈধ পন্থায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ, প্রতিপত্তি, ভোট আদায়ের এক অনভিপ্রেত অস্থির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এর জন্যে বল প্রয়োগও হয়ে গেছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে নৈতিক অবক্ষয় সংক্রমক ভাইরাসের মতো সমাজ জীবনের সর্বত্র বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। এমন কি শিক্ষাঙ্গনে, চিকিৎসা সেবায়, বিচার ব্যবস্থায় পর্যন্ত দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ঘটেছে ব্যাপক বিস্তার। মূল্যবোধের এই অবক্ষয় এখন বিবেকবান সব লোককেই গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।

মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ: মূল্যবোধের এই অবক্ষয়ের কারণ কী? কোনো একক কারণে যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে তা নয়। জাতীয় জীবনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া, রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার রেশ, অর্থনৈতিক জীবনে দারিদ্র্য ও পরিভোগ প্রবণতার ব্যাপক মেরুকরণ, শিক্ষিত সমাজে বিপুল বেকারত্ব, গণমাধ্যমে স্থূল রুচিহীন ও বিকৃত রুচির বিনোদনের ব্যবস্থা, জনজীবনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, জখম, ছিনতাই ইত্যাদির অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার -এমন নানা কারণ ও নানা লক্ষণ আজ মূল্যবোধের অবক্ষয়কে ঘিরে প্রকট হয়ে উঠছে।

অবক্ষয় রোধে পদক্ষেপ: এই নেতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ করা এখন আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্তব্য হসেবে উপস্থিত। এই অবক্ষয় রোধে প্রথম ও প্রধন গুরুত্ব পরিবারের। পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক অঙ্গনে নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে সমঝোতার পরিস্থিতি সৃষ্টি, সমাজ জীবনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধকে বিশেষ গুরুত্ব দান, নীতিবোধ সম্পন্ন দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা আন্তরিকভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।

উপসংহার: আমাদের সামনে আজ একুশ শতকের পথচলা। নতুন শতকে আমাদের জীবন যেন সুন্দর ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেজন্যে সবার আগে নজর দিতে হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ওপর। শিক্ষার্থীদের সামনে রাখা চাই নৈতিক মূল্যবোধের আদর্শ। সত্য ন্যায় ও সুন্দরের প্রতি জাগাতে হবে তাদের ভালোবাসা। নৈতিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এখন আমাদের সবাইকে হবে হবে সচেতন, উদ্যোগী ও সক্রিয়। এর জন্যে প্রয়োজনে গড়ে তুলতে হবে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। তা না হলে নৈতিক অধোগতির যে পিছুটান আমাদের জাপটে ধরেছে তার হাত থেকে আমরা নিস্তার পাব না।

রচনা

  বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন

ভূমিকা: জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেসব অগ্রগতি ও অবদানে আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের। আর সেই বিজ্ঞানের সোনার কাঠি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎই আধুনিক বিজ্ঞান ও সভ্যতাকে পৌঁছে দিয়েছে শব্দাতিগ (supersonic) যুগে এবং জৈব প্রযুক্তির (Bio-technology) অসীম সম্ভাবনাময় যুগের দ্বারপ্রান্তে। বিদ্যুৎকে বাদ দিয়ে বর্তমান বিজ্ঞানের অগ্রগতির কথা কল্পনাই করা যায় না। আধুনিক সভ্যতায় চালিকা শক্তিই হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎবিহীন বর্তমান সভ্যতা হয়ে পড়বে অনুজ্জ্বল, নিথর ও নিষ্প্রাণ। বিদ্যুৎ ছাড়া সভ্যতার সমস্ত গতি ও প্রযুক্তি নিমেষে থমকে যায়। আর সেই জন্যই বিদ্যুৎকে বলা হয় আধুনিক প্রযুক্তির ধাত্রী।

আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ ও বিদ্যুৎ: আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের মূলে বিদ্যুতের ভূমিকা অনন্য। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুতের অপরিহার্য ব্যবহার। সুইচ টিপলেই জ্বলে ওঠে আলো। সে আলোর এমনই শক্তি যে স্টেডিয়ামে রাতের বেলায় দিনের ফুটবল খেলা যায়। প্রচণ্ড গরমে স্বাচ্ছন্দ্য আনে বৈদ্যুতিক পাখা। আরও শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ ঘরবাড়িতে, গাড়িতে, ট্রেনে, বাসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় টেলিফোন, টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা করেছে বিদ্যুৎ। তারই সর্বাধুনিক উদ্ভাবন ই-মেইল, যা মুহুর্তেই পৃথিবীর অপর প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুতের সাহায্যে মানুষ খাবার সংরক্ষণ রাখতে পারছে ফ্রিজে। শুনতে পারছে বেতার অনুষ্ঠান। মানুষের বিনোদন চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভিসিডি ইত্যাদির অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারছে। এভাবে আধুনিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ রাখছে অসামান্য অবদান।

শিল্পোৎপাদনে বিদ্যুৎ: দেশে দেশে আজ স্বল্প খরচে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে কাজে লাগানো হচ্ছে শিল্পোৎপাদনে। বিশাল বিশাল সব যন্ত্রদানব আজ বিদ্যুৎ শক্তির বলে পরিণত হয়েছে মানুষের ক্রীতদাসে। বৈদ্যুতিক তথা ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সারা বিশ্বের উৎপাদন-ব্যবস্থা। এর ফলে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বহু গুণে বেড়েছে। বিদ্যুতের সাহায্যেই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বিমান ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প। বিশালাকৃতি যেসব জাহাজ সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে, যেসব ডুবোজাহাজ সমুদ্র তলে বিচরণ করছে সেগুলো চলছে বিদ্যুৎশক্তিতে। সভ্যতার পুরোভাগে যন্ত্রশিল্প যত বিকশিত হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহারও তত বাড়ছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিদ্যুৎ: চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিদ্যুতের অবদান যুগান্তকারী। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি নির্মাণে বিদ্যুৎ পালন করেছে অনন্য ভূমিকা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা শাখায় রোগ নিরূপণ, উপশম ও নিরাময়ে বিদ্যুৎ-চালিত যন্ত্রপাতি অভাবনীয় অবদান রাখছে। এক্স-রে, ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইকো কার্ডিওগ্রাম, ক্যাটসক্যান ইত্যাদি রোগনিরূপন যন্ত্র এবং পরমাণু চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের থেরাপি চিকিৎসা-বিজ্ঞানে বিপ্লব এনেছে। এ সবই বিদ্যুৎ নির্ভর।

মহাকাশ অভিযানে বিদ্যুৎ: মহাকাশ অভিযান ও মহাকাশ বিজয়ে মানুষের সমস্ত সাফল্যের মূলে বিদ্যুতের অবদান বিস্ময়কর। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গণনা, নির্ভুল দিকস্থিতি নির্ণয়, পরিমিত তাপমাত্রা সংরক্ষণ এবং মহাকাশ অভিযানের হুবহু ছবি পৃথিবীতে প্রেরণ ইত্যাদির মতো অকল্পনীয় কাজ এখন বাস্তবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে বিদ্যুৎ। গ্রহে-উপগ্রহে বিভিন্ন নভোযান ও নভোখেয়া উৎক্ষেপণও চলছে বিদ্যুতের সাহায্যে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা (NASA) সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক প্রযুক্তিনির্ভর।

যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ: যাতায়াত ব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করছে বিদ্যুৎ। বৈদ্যুতিক ট্রেন ও পাতাল রেল দিনকে দিন আয়ত্ত করেছে অভাবনীয় গতি। বুলেট ট্রেন, বিলাসবহুল আরামপ্রদ এয়ারবাস ও শব্দাতিগ বিমান পৃথিবীর এপ্রান্ত এবং ওপ্রান্তের দূরত্ব কমিয়ে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বিপ্লব।

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ: বিশ্বের যে কোনো দেশে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র বিদ্যুৎ ছাড়া আজ চলে না। আধুনিক সভ্যতার আর এক বিস্ময়কর অবদান যে যন্ত্রমানব রোবট তার কাজও চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। সাগর তলের রহস্য সন্ধানের মতো অনেক অসাধ্য ও বিপদজ্জনক কাজে রোবট মানুষকে সাহায্য করছে। বর্তমানে বিস্ময়কর যে জৈব-প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও কাজ চলছে তার পেছনেও পরোক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করছে বিদ্যুৎ। বিশ্বের বহুল আলোচিত পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যেও বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য। আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে জিন প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে তাও সম্পন্ন করার কাজে লাগছে বিদ্যুৎ। এক কথায় বর্তমান সভ্যতা ও আগামী প্রজন্মের অগ্রগতির নিয়ামক হচ্ছে বিদ্যুৎ শক্তি।

বিদ্যুৎ ও বাংলাদেশ: অত্যধিক জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা-পীড়িত বাংলাদেশের বিদ্যুতের ঘাটতি একটা বড়ো সমস্যা। এ ঘাটতি সমাধানে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া বিদ্যুৎ ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে এবং চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে অনুৎপাদনশীল খাতে বিদ্যুতের অপচয়ও একটি বড় সমস্যা। ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকছি।

উপসংহার: জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে হলে এবং উন্নয়ন প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে গেলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের চলবে না। তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশ আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির ধারা থেকে ছিটকে পড়েছে বিদ্যুতের অভাবে। আমাদের দেশেও বিদ্যুৎকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে না পারলে অগ্রগতি ব্যাহত হবে। উপরন্তু অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কবল থেকে জনগণ বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাই বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করা এবং উন্নয়ন প্রযুক্তিতে বিদ্যুতের ব্যবহারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ দরকার। বিদ্যুৎ ছাড়া প্রযুক্তি এখন অকল্পনীয়। আর প্রযুক্তির ছোঁয়া না পেলে আমাদের দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে না।

রচনা

     তোমার জীবনের লক্ষ্য

ভূমিকা: জীবন গতিময় এবং এই গতি স্বভাবতই এক অনন্য গন্তব্য প্রত্যাশী। গতিকে প্রবাহমান রেখে প্রার্থিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে শুরুতেই সুনির্দিষ্টভাবে স্থির করে নিতে হয় জীবনের লক্ষ্য। না হয় পদে পদে ব্যাহত হয় জীবনের গতি; আর শেষে নৈরাশ্যপীড়িত ব্যর্থতায় ভরা এক জীবন নিয়ে মধুময় এই ধরণী থেকে বেদনাদায়ক বিদায় নিতে হয় মানুষকে। কোনো চিন্তাশীল সজীব মানুষ জীবনের এমন করুণ পরিণতির কথা ভাবতেই পারেন না। তারা স্ব-স্ব জীবন বিকাশের সুন্দরতম ভাবনায় থাকেন সদাবিভোর। আর এই ভাবনাকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই শুরু করে জীবন সাধনা। তারা জানেন, লক্ষ্য নির্দিষ্ট থাকলে শক্ত হাতে জীবনের হাল ধরেই জীবন সমুদ্রে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।

জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আমার ভাবনা: চিন্তাশীল সজীব মানুষ হিসেবে আমারও আছে জীবন বিকাশের এক বর্ণিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের অভিপ্রায়ে আমি স্থির করে নিয়েছি জীবনের লক্ষ্য। আমার সেই লক্ষ্য হলো একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া। জানি, শিক্ষকতার জীবনে বিত্ত-বৈভব জমকালো প্রাচুর্য নেই। নেই কোনো সামাজিক ও রাষ্ট্রিক প্রতিপত্তি। যেমন রয়েছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা ও নেতাদের জীবনে। এও জানি, মানব জীবনে বিত্তের প্রয়োজন আছে, প্রয়োজন আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা ও আরো অনেকের। কিন্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধের। এই মূল্যবোধের উন্মেষ এবং চর্চা ব্যতীত মানব জীবনে সকল সুখের আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানবিক সংগঠন- পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার মূল বুনিয়াদ, ঘুচে যায় মানুষে আর পশুতে প্রভেদ। মানুষের মহত্তম বিকাশ সাধনে তাই মূল্যবোধের জাগরণই প্রথম এবং প্রধান শর্ত। ব্যক্তি ও সামাজজীবনে এই মূল্যবোধের জাগরণে ও নিরন্তর অনুশীলনে নিবেদিত-প্রাণ আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নেই।

লক্ষ্য নির্বাচনের সঠিক সময়: আমি পড়েছি, ছাত্রজীবনেই ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময়ে স্বপ্ন ও কল্পনার যে বীজ বপন করা হয় তাই ভবিষ্যতে ফুল-ফলে বিকশিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কেবল স্বপ্ন ও কল্পনার বীজ বপন করলেই চলে না; শ্রম, নিষ্ঠা, সাধনা, অধ্যবসায় ও দৃঢ় একাগ্রতা দিয়ে তাকে লালন, বর্ধন ও বিকশিত করতে হয়। তাই ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য উপনীত হওয়ার জন্যে আমাকেও এখনই জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্বাচন করতে হয়েছে।

পাঠ্যক্রম নির্বাচন: নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরেই পাঠ্যক্রম নির্বাচনের সুযোগ আমরা পেয়েছি। আমি শিক্ষকতাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে মানবিক শাখাকেই বিশেষভাবে পছন্দ করেছি। আমার ধারণা, বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষের মানসিকতাকে কিছুটা যান্ত্রিক ও তথ্যপ্রবণ করে তোলে, বাণিজ্য শিক্ষায় প্রাধান্য পায় লাভ-ক্ষতির বিচার-বিবেচনা। সেই তুলনায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে ইচ্ছুক একজনের মননশীল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার ক্ষেত্রে মানবিক বিদ্যার ভূমিকাই প্রধান। আর তাই আমি মানবিক বিদ্যা চর্চাকেই বর্তমান শিক্ষাক্রম হিসেবে বেছে নিয়েছি।

লক্ষ্য নির্বাচনের কারণ: আমার সমাজজীবনে একদিকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতার বেড়াজাল কাটে নি, অন্যদিকে ভোগবিলাসিতা, পরিভোগপ্রবণতা ও স্বার্থসর্বস্বতার প্রভাব সমাজে বাড়ছে। তার মধ্যে আজ খুব দরকার দেশব্রতী, সমাজব্রতী, মানবব্রতী শিক্ষার প্রসার। কারণ, এ ধরনের শিক্ষা ছাড়া সমাজের নৈতিক অধঃপতনের অধোমুখী প্রবল ধারাকে ঠেকানো যাবে না। সেদিক থেকে আজকের দিনে যথার্থ শিক্ষকতা একটা চ্যালেঞ্জ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে চালাতে হবে মানবব্রতী শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষা ও শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিরাজমান বাস্তবতা: আজকাল শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকারও অবসান হতে চলেছে। শিক্ষাঙ্গণে আজ জ্ঞানব্রতী ছাত্রের দেখা মেলে খুব কম। অধিকাংশই যেনতেন প্রকারে সার্টিফিকেট অর্জনে প্রত্যাশী পরীক্ষার্থী। শিক্ষকগণও এখন আর নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক নন, তাঁদের একটা বড় অংশ হয়ে বসেছেন অর্থপাগল ‘টিউটর’। এ অবস্থায় প্রকৃত শিক্ষকের ব্রত পালন অত্যন্ত কঠিন। তবু আমি ভবিষ্যৎ জীবনে একজন ব্রতী শিক্ষক হতে চাই। পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে তারুণ্যকে শিক্ষা-সাধনায় উজ্জীবিত করার দৃঢ় প্রত্যাশা রাখি।

আমার দৃষ্টিভঙ্গি: আমি জানি বর্তমান যুগে শিক্ষা এত বেশি বিষয়ভিত্তিক ও বিশেষায়িত হয়ে গেছে যে তাতে শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিভিত্তিক বিষয়ে শিক্ষাদান করাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য হবে না, আমি চাইব প্রধানত শিক্ষার্থীদের আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটাতে, নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে, দেশব্রতী হওয়ার প্রণোদনা প্রদান করতে। কারণ, আত্মশক্তির উদ্বোধন ছাড়া মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়।

শিক্ষকতা পেশায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য: আমাদের দেশে শিক্ষক পেশাধারী লোকের অভাব নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কতজন প্রকৃত শিক্ষক বলা মুশকিল। বেশির ভাগই শিক্ষকতার চাকরি করছেন। কিন্তু শিক্ষকতা একটা সামাজিক দায়বদ্ধ মহৎ পেশা। নানা কারণে শিক্ষকের পেশায় মহৎ আদর্শ এখন ক্ষয়িষ্ণ। এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার অবসান ঘটিয়ে আবার শিক্ষকের পেশায় নতুন চেতনার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষকতা সুদূরপ্রসারী ফলাফল রাখতে পারে তাই আমি শিক্ষার বিষয় হিসেবে শিক্ষাবিজ্ঞান পড়তে চাই এবং পেশা হিসেবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চাই। এই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমি অগ্রসর হবার প্রত্যাশা রাখি।

উপসংহার: একুশ শতকের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী আমরা। যে পেশাই বেছে নিই না কেন জাতীয় অগ্রগতি সাধন, আন্তর্জাতিক সৌভ্রাতৃত্ব অর্জন ও মানবব্রতী ভূমিকা পালনই হবে আমাদের চরম লক্ষ্য। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দালান নির্মিত হচ্ছে, শিক্ষার জন্যে বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষার মান কমছে। তাই একুশ শতকের নবচেতনাসম্পন্ন নতুন মানুষ গড়ে তোলার জন্যে আমাদের চাই গ্রামে গ্রামে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর সেগুলোতে চাই দেশব্রতী, মানবব্রতী অগণিত আদর্শ শিক্ষক। আমি যদি আমার মেধা ও শক্তিকে সাধ্যমতো এ কাজে লাগাতে পারি তাহলেই আমি জীবনকে সার্থক মনে করব। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, পরিভোগে সুখ নেয়, মানবব্রতী, দেশব্রতী ভূমিকাতেই আমি প্রকৃত সুখ খুঁজে পাব।

রচনা

   ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

(সংকেত: ভূমিকা; ছাত্রজীবন; ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য; সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য; রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য; পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য; দেশাত্ববোধ; নিয়মানুবর্তিতা; নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার; উপসংহার।)

ভূমিকা: “আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল/ মোদের পায়ের তলায় মূর্চে তুফান/ ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল/ আমরা ছাত্রদল।” কাজী নজরুল ইসলাম

ছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ ও সমাজ। তারা ভোরের শিশির, প্রভাতের আলোর মতো নবজীবনের দ্যুতি ছড়ায়। তারা তাদের কর্মে দেশ ও সমাজের সব অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই। ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে পুরো জাতি, দেশ ও পৃথিবী জেগে উঠে। তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।

ছাত্রজীবন: অধ্যায়নের জীবনটাই ছাত্রজীবন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন গবষেণামূলক অধ্যয়নের সবটুকুই ছাত্রজীবনের অন্তর্ভুক্ত। একজন ছাত্র কোনো কিছুতেই পিছপা হয় না। ছাত্রজীবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছাত্রজীবনেই মানুষ ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত গড়ে তোলে। জীবনকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে তোলার শিক্ষা মানুষ ছাত্রজীবন থেকে পায়। বদান্যতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মহানুভবতার শুরু ছাত্র জীবন থেকেই। প্রতিটি ছাত্রই দেশগড়ার হাতিয়ার। ভবিষ্যতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। M.K Gandhi বলেন, "The students are the Future leaders of the country who could fullill country's hopes being capable."

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য: “ছাত্র নং অধ্যয়নং তপ” এটিই ছাত্রদের মূলমন্ত্র। সংস্কৃত এই কথাটির অর্থ- অধ্যয়নেই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগৎ। যেখান থেকে ছাত্ররা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখবে। আর এ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কর্মমুখী জীবনে প্রবেশ করবে। স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন, সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকেই সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তার পাশাপাশি মানুষ্যত্ববোধও অর্জন করতে হবে। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। শিক্ষকের আদেশ পালন করলে একটি ছাত্র অবশ্যই ভালো গুণের অধিকারী হতে পারবে। কেননা শিক্ষকই একটি ছাত্রকে সৎ ও মেধাবী করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "None but those who have the spirit of forbearance are fit to be teacher." তাই শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করতে হবে। ছাত্রদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থাকা। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে যা তাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য: একটি দেশের সচেতন নাগরিক হচ্ছে ছাত্রসমাজ। অধ্যয়ন ছাত্রদের মূল লক্ষ্য হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তারাই দেশকে সঠিক পথ অনুসরণে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশে এমন অনেক দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত পরিবার রয়েছে যেখানে একটি মাত্র সদস্য শিক্ষিত। সেই সদস্যটি পুরো পরিবারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। শুধু পরিবার কিংবা সমাজ নয় ছাত্রসমাজকে পুরো জাতির নিরক্ষরতা দূরীকরণে সহায়তা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মারাত্মক আকার ধারণ করছে সেসব দেশের ছাত্রসমাজের উচিত সংঘবদ্ধভাবে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে এবং অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সমাজকে এবং শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দায়িত্ব ছাত্রদেরই কাঁধে নিতে হবে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব হয় না ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের উচিত নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। শিক্ষিত যুবকরা যদি কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন, নার্সারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগায় তাহলে দেশের উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য: ছাত্রসমাজ অনাচার, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করা ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যুগে যুগে ছাত্রসমাজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজ কখনো পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাছাড়া মাতৃভাষার জন্য তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা ইতিহাসের পাতায় বিরল। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছিল। তবে বর্তমানে ছাত্ররা রাজনীতির প্রকৃত আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সন্ত্রাসবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতিমূলক কাজে জড়িয়ে নিজেদের মেধাকে নষ্ট করে ফেলছে।

পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য: "Charity begins at home" ছাত্ররা পরিবারের কাছ থেকে যেমন অনেক কিছু পায় তেমনি পরিবারের প্রতিও তাদের অনেক দায়িত্ব থাকে। পরিবারের সকলেই তাদের কাছ থেকে ভালো আচার ব্যবহার প্রত্যাশা করে। আব্বু-আম্মু এবং পরিবারের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, ছোটদের প্রতি স্নেহ করা তাদের কর্তব্য।

দেশাত্মবোধঃ ছাত্ররা দেশপ্রেমকে তাদের অন্তরে লালিত করে। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে দ্বিধাহীনভাবে। ছাত্রদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় তারা দেশকে আরও বেশি আপন করে নিতে পারে। ছাত্রসমাজ মানেই তরুণ সমাজ। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এই তরুণসমাজকে দেশের ও দেশের মানুষের সেবায় মগ্ন থাকতে হবে। তাদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি, কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। বন্যা-দুর্গত, ঝড়ে কবলিত এলাকায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে সবসময় তাদের সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

নিয়মানুবর্তিতা: "Work while you work, play while you play, And that is the way to be happy."-এ নীতি মেনে চললে ছাত্ররা তাদের সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ করতে পারবে। ছাত্রদের প্রথম কাজ পড়াশোনা। কখনোই তাদের একদিনের কাজ অন্যদিনের জন্য রেখে দিলে চলবে না। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছাত্রদের অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতার সাথে সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মানুবর্তিতায় বেড়ে উঠলে কর্মজীবনও এর প্রভাব পড়বে।

নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের শুধু পরীক্ষা পাসের শিক্ষাই দেওয়া হয় না। তাদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ এবং শিষ্টাচারের শিক্ষা দেয়া হয়। নৈতিক মূল্যবোধ ছাত্রকে সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ, নিয়মনিষ্ঠ, পরিশ্রমী সর্বোপরি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করে তোলে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য চাই নৈতিকতা। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ছাত্রসমাজকে নম্র-ভদ্র ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী করে। পরিবারের সকলের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি, সহপাঠীদের প্রতি মার্জিত আচরণে ছাত্ররা সকলের কাছ থেকে ভালোবাসা, দোয়া এবং সাহায্য-সহযোগিতা পায়। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজই পারে ভবিষ্যতে জাতির সুষ্ঠু নেতৃত্ব দিতে। তাই ছাত্রদের শিষ্টাচার ও নৈতিক মূল্যবোধের গুণে অর্জন করতে হবে।

উপসংহার: দেশ ও জাতি সৎ, চরিত্রবান, নিয়মনিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৌজন্যবোধসম্পন্ন পরিশ্রমী ছাত্রসমাজের কামনা করে। সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কাজ করছে। ছাত্র-রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। যা দেশ ও জাতির কাছে মোটেও কাম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে জাতি শেকড়হীন হয়ে পড়বে। তাই ছাত্রসমাজের উচিত তাদের প্রকৃত আদর্শে আলোকিত হওয়া। যে শিক্ষা ও মূল্যবোধ ছাত্ররা অর্জন করে ভবিষ্যতে তা পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগানো, ছাত্রদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।