চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Saturday, July 18, 2020

রচনা

     তোমার জীবনের লক্ষ্য

ভূমিকা: জীবন গতিময় এবং এই গতি স্বভাবতই এক অনন্য গন্তব্য প্রত্যাশী। গতিকে প্রবাহমান রেখে প্রার্থিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে শুরুতেই সুনির্দিষ্টভাবে স্থির করে নিতে হয় জীবনের লক্ষ্য। না হয় পদে পদে ব্যাহত হয় জীবনের গতি; আর শেষে নৈরাশ্যপীড়িত ব্যর্থতায় ভরা এক জীবন নিয়ে মধুময় এই ধরণী থেকে বেদনাদায়ক বিদায় নিতে হয় মানুষকে। কোনো চিন্তাশীল সজীব মানুষ জীবনের এমন করুণ পরিণতির কথা ভাবতেই পারেন না। তারা স্ব-স্ব জীবন বিকাশের সুন্দরতম ভাবনায় থাকেন সদাবিভোর। আর এই ভাবনাকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই শুরু করে জীবন সাধনা। তারা জানেন, লক্ষ্য নির্দিষ্ট থাকলে শক্ত হাতে জীবনের হাল ধরেই জীবন সমুদ্রে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।

জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আমার ভাবনা: চিন্তাশীল সজীব মানুষ হিসেবে আমারও আছে জীবন বিকাশের এক বর্ণিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের অভিপ্রায়ে আমি স্থির করে নিয়েছি জীবনের লক্ষ্য। আমার সেই লক্ষ্য হলো একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া। জানি, শিক্ষকতার জীবনে বিত্ত-বৈভব জমকালো প্রাচুর্য নেই। নেই কোনো সামাজিক ও রাষ্ট্রিক প্রতিপত্তি। যেমন রয়েছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা ও নেতাদের জীবনে। এও জানি, মানব জীবনে বিত্তের প্রয়োজন আছে, প্রয়োজন আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা ও আরো অনেকের। কিন্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধের। এই মূল্যবোধের উন্মেষ এবং চর্চা ব্যতীত মানব জীবনে সকল সুখের আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানবিক সংগঠন- পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার মূল বুনিয়াদ, ঘুচে যায় মানুষে আর পশুতে প্রভেদ। মানুষের মহত্তম বিকাশ সাধনে তাই মূল্যবোধের জাগরণই প্রথম এবং প্রধান শর্ত। ব্যক্তি ও সামাজজীবনে এই মূল্যবোধের জাগরণে ও নিরন্তর অনুশীলনে নিবেদিত-প্রাণ আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নেই।

লক্ষ্য নির্বাচনের সঠিক সময়: আমি পড়েছি, ছাত্রজীবনেই ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময়ে স্বপ্ন ও কল্পনার যে বীজ বপন করা হয় তাই ভবিষ্যতে ফুল-ফলে বিকশিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কেবল স্বপ্ন ও কল্পনার বীজ বপন করলেই চলে না; শ্রম, নিষ্ঠা, সাধনা, অধ্যবসায় ও দৃঢ় একাগ্রতা দিয়ে তাকে লালন, বর্ধন ও বিকশিত করতে হয়। তাই ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য উপনীত হওয়ার জন্যে আমাকেও এখনই জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্বাচন করতে হয়েছে।

পাঠ্যক্রম নির্বাচন: নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরেই পাঠ্যক্রম নির্বাচনের সুযোগ আমরা পেয়েছি। আমি শিক্ষকতাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে মানবিক শাখাকেই বিশেষভাবে পছন্দ করেছি। আমার ধারণা, বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষের মানসিকতাকে কিছুটা যান্ত্রিক ও তথ্যপ্রবণ করে তোলে, বাণিজ্য শিক্ষায় প্রাধান্য পায় লাভ-ক্ষতির বিচার-বিবেচনা। সেই তুলনায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে ইচ্ছুক একজনের মননশীল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার ক্ষেত্রে মানবিক বিদ্যার ভূমিকাই প্রধান। আর তাই আমি মানবিক বিদ্যা চর্চাকেই বর্তমান শিক্ষাক্রম হিসেবে বেছে নিয়েছি।

লক্ষ্য নির্বাচনের কারণ: আমার সমাজজীবনে একদিকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতার বেড়াজাল কাটে নি, অন্যদিকে ভোগবিলাসিতা, পরিভোগপ্রবণতা ও স্বার্থসর্বস্বতার প্রভাব সমাজে বাড়ছে। তার মধ্যে আজ খুব দরকার দেশব্রতী, সমাজব্রতী, মানবব্রতী শিক্ষার প্রসার। কারণ, এ ধরনের শিক্ষা ছাড়া সমাজের নৈতিক অধঃপতনের অধোমুখী প্রবল ধারাকে ঠেকানো যাবে না। সেদিক থেকে আজকের দিনে যথার্থ শিক্ষকতা একটা চ্যালেঞ্জ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে চালাতে হবে মানবব্রতী শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষা ও শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিরাজমান বাস্তবতা: আজকাল শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকারও অবসান হতে চলেছে। শিক্ষাঙ্গণে আজ জ্ঞানব্রতী ছাত্রের দেখা মেলে খুব কম। অধিকাংশই যেনতেন প্রকারে সার্টিফিকেট অর্জনে প্রত্যাশী পরীক্ষার্থী। শিক্ষকগণও এখন আর নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক নন, তাঁদের একটা বড় অংশ হয়ে বসেছেন অর্থপাগল ‘টিউটর’। এ অবস্থায় প্রকৃত শিক্ষকের ব্রত পালন অত্যন্ত কঠিন। তবু আমি ভবিষ্যৎ জীবনে একজন ব্রতী শিক্ষক হতে চাই। পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে তারুণ্যকে শিক্ষা-সাধনায় উজ্জীবিত করার দৃঢ় প্রত্যাশা রাখি।

আমার দৃষ্টিভঙ্গি: আমি জানি বর্তমান যুগে শিক্ষা এত বেশি বিষয়ভিত্তিক ও বিশেষায়িত হয়ে গেছে যে তাতে শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিভিত্তিক বিষয়ে শিক্ষাদান করাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য হবে না, আমি চাইব প্রধানত শিক্ষার্থীদের আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটাতে, নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে, দেশব্রতী হওয়ার প্রণোদনা প্রদান করতে। কারণ, আত্মশক্তির উদ্বোধন ছাড়া মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়।

শিক্ষকতা পেশায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য: আমাদের দেশে শিক্ষক পেশাধারী লোকের অভাব নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কতজন প্রকৃত শিক্ষক বলা মুশকিল। বেশির ভাগই শিক্ষকতার চাকরি করছেন। কিন্তু শিক্ষকতা একটা সামাজিক দায়বদ্ধ মহৎ পেশা। নানা কারণে শিক্ষকের পেশায় মহৎ আদর্শ এখন ক্ষয়িষ্ণ। এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার অবসান ঘটিয়ে আবার শিক্ষকের পেশায় নতুন চেতনার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষকতা সুদূরপ্রসারী ফলাফল রাখতে পারে তাই আমি শিক্ষার বিষয় হিসেবে শিক্ষাবিজ্ঞান পড়তে চাই এবং পেশা হিসেবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চাই। এই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমি অগ্রসর হবার প্রত্যাশা রাখি।

উপসংহার: একুশ শতকের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী আমরা। যে পেশাই বেছে নিই না কেন জাতীয় অগ্রগতি সাধন, আন্তর্জাতিক সৌভ্রাতৃত্ব অর্জন ও মানবব্রতী ভূমিকা পালনই হবে আমাদের চরম লক্ষ্য। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দালান নির্মিত হচ্ছে, শিক্ষার জন্যে বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষার মান কমছে। তাই একুশ শতকের নবচেতনাসম্পন্ন নতুন মানুষ গড়ে তোলার জন্যে আমাদের চাই গ্রামে গ্রামে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর সেগুলোতে চাই দেশব্রতী, মানবব্রতী অগণিত আদর্শ শিক্ষক। আমি যদি আমার মেধা ও শক্তিকে সাধ্যমতো এ কাজে লাগাতে পারি তাহলেই আমি জীবনকে সার্থক মনে করব। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, পরিভোগে সুখ নেয়, মানবব্রতী, দেশব্রতী ভূমিকাতেই আমি প্রকৃত সুখ খুঁজে পাব।

No comments: