চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Friday, July 24, 2020

তোমার এলাকার বন্যার্তদের জন্য সাহায্য চেয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি পত্র লেখ।


২০ মার্চ, ২০১৭ খৃ:

সম্পাদক,

দৈনিক ইত্তেফাক,

১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,

ঢাকা-১২০৩।


বিষয়: চিঠিপত্র কলামে নিচের সংবাদটি প্রকাশের আবেদন।


জনাব,

আপনার সম্পাদিত বহুল প্রচলিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিম্নোক্ত পত্রটি প্রকাশ করে এলাকাবাসীর উপকারে অবদান রাখার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।


নিবেদক-

মো: মোহায়মিন

ডহরপাড়া, বরিশাল।


বন্যার্তদের জন্য সাহায্য চাই

বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার অন্তর্গত ডহরপাড়া গ্রাম এখন পানিতে ভাসছে। বন্যার সর্বনাশা করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পায় নি আশেপাশের অন্যান্য গ্রামগুলো। এবারের বন্যা স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়াবহ বন্যা। অসহায় বন্যার্ত মানুষের জীবন এখন নানামুখী দুঃখ-দুর্দশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রকৃতির নির্মম বৈরিতার মধ্যে দুর্গত মানবতা মানুষের সাহায্য কামনা করছে। সকলকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি।


উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ষাটটি গ্রাম এখন সম্পূর্ণরূপে জলমগ্ন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। ডুবে আছে তিন হাত পানির নিচে মানুষের বাসস্থান। ভেসে গেছে অসহায় কৃষকদের গরু-ছাগল, মাঠের ফসল ও সদ্য তোলা রবিশস্য। অনেকে ঘরের চালে, মাচার ওপর কিংবা উঁচু রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এখন অনাহারে-অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে দেখা দিয়েছে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়সহ নানারকম পানিবাহিত রোগ। বন্যার পানিতে সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় ইতেমধ্যেই খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার-দলীয় সংসদ সদস্য নিজ উদ্যোগে কিছু ত্রাণ কর্যক্রম চালু করেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এমতাবস্থায় বন্যা দুর্গত মানুষদের রক্ষাকল্পে জররী ভিত্তিতে শুষ্ক খাবার, তৈরি খাবার ও পানি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে বন্যা দুর্গতদের এ মরণ ছোবল থেকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।


উপরিউক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, এ ব্যপারে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।


নিবেদক-

এলাকাবাসীর পক্ষের

মো: মোহায়মিন



  প্রেরক,

   মো:মোহায়মিন

   গ্রা:+পোডহড়পাড়া

   উপজেলাউজিরপুর

   জেলাবরিশাল

                                         ডাক টিকিট

 প্রাপক,                                

   সম্পাদক,

   দৈনিক ইত্তেফাক,

   রামকৃষ্ণ মিশন রোড,

   ঢাকা-১২০৩

যানজট একটি ভয়াবহ সমস্যা এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।


প্রতিবেদনের প্রকৃতি : বিশেষ প্রতিবেদন/সংবাদ প্রতিবেদন

প্রতিবেদনের শিরোনাম : ঢাকা শহরে যানজট: কারণ ও সমাধান

সরোজমিনে পরিদর্শন : এই বিষয়ে সংশিষ্টদের সাক্ষাৎকার

প্রস্তুতের সময় ও তারিখ : রাত ৯টা, ১৮ জুন, ২০১৮

প্রতিবেদকের নাম : মুমতারিন মালিহা


ঢাকা শহরে যানজট: কারণ ও সমাধান


ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং বর্তমানে এটি বিশ্ব পরিচিত একটি শহর। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঢাকা শহরে সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে যানজট সমস্যা। যানজট সমস্যা বর্তমানে এতই প্রকট যে, তাতে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক জীবন যাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ যানজটের কারণে অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাথী, ব্যবসায়ী, হকার, মজুর, দোকানদার কারো পক্ষেই সময়মতো নির্ধারিত কর্মসূচী পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সবার মূল্যবান সময় প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানের এ অস্বাভাবিক যানজটের কারণসমূহ নিম্নরূপ:


০১. প্রায় সব রাস্তাঘাট অপ্রশস্ত।

০২. বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক রাস্তা খোড়াখুড়ি করা।

০৩. ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের ছোট রাস্তার ভিতরে প্রবেশ।

০৪. হকারসহ অন্যান্য দোকানদারদের ফুটপাত দখল।

০৫. রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা।

০৬. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শৈথিল্য।

০৭. চালকদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা।

০৮. রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি।

০৯. লাইসেন্সবিহীন রিকশার বেপরোয়া চলাচল।

১০. সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব।

১১. রাস্তা পারাপারে জনগণের ভীড় বেশি থাকা।

১২. পর্যাপ্ত পরিমাণে ওভার ব্রীজের অভাব থাকা। ইত্যাদি।

১৩. ওভার ব্রীজ ব্যবহার না করার মানসিকতা।

১৪. জেব্রা ক্রসিং এ রাস্তা পারাপার না হওয়া ইত্যাদি।


উল্লিখিত কারণগুলো দূরীকরণের উপয়সমূহ-


০১. রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পণা গ্রহণ করতে হবে।

০২. ট্রাফিক আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করতে হবে।

০৩. লাইসেন্সবিহীন রিকশা চালাতে না দেওয়া।

০৪. ম্যাক্সি জাতীয় গাড়ি সকল রোডে চালু করা।

০৫. ট্রাক চলাচলের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া।

০৬. অবৈধ দখল থেকে ফুটপাত মুক্ত করা।

০৭. রিকশার মতো যানবাহন তুলে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

০৮. বড় বড় মোড়গুলোতে ওভার ব্রীজ তৈরি করা।

০৯. যানজট দূরীকরণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।

১০. জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

১১. রাস্তা ওয়ান ওয়ে করতে হবে।

১২. প্রাইভেটকারের আধিক্য কমাতে হবে।

১৩. রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা বন্ধ করতে হবে।

১৪. মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, ওয়াদা, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, ডি.আই.টি. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সকলের কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন করা ইত্যাদি।


সরকার যত তাড়াতাড়ি ঢাকা শহরের যানজট দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, ততই জনগণের মঙ্গল হবে। অন্যথায় রাজধানীর জনজীবন সার্বিকভাবে স্থবির হয়ে আসবে।


প্রতিবেদক-

মুমতারিন মালিহা

উজিরপুর, বরিশাল।


প্রেরক, 

মুমতারিন মালিহা 

গ্রাম + পো: ডহরপাড়া 

উপজেলা: উজিরপুর 

জেলা: বরিশাল।

                        ডাক টকিটি

প্রাপক, 

সম্পাদক 

দৈনিক ইত্তেফাক, 

১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, 

ঢাকা-১২০৫।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে তোমার এলাকার দরিদ্র মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে তা জানিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি পত্র লেখ।


২০ মার্চ, ২০১৮ খৃঃ

সম্পাদক,

দৈনিক ইত্তেফাক,

১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,

ঢাকা-১২০৩।


বিষয়: চিঠিপত্র কলামে নিচের সংবাদটি প্রকাশের আবেদন।


জনাব,

আপনার সম্পাদিত বহুল প্রচলিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিম্নোক্ত পত্রটি প্রকাশ করে এলাকাবাসীর উপকারে অবদান রাখার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক-

মো: মোহায়মিন

ডহরপাড়া, বরিশাল।


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বল্প আয়ের। সামান্য আয়ে তাদের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। যেভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে চলছে তাতে করে জনসাধারণ আতঙ্কিত না হয়ে পারছে না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের ঘুম হারাম হতে বসেছে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্যে। সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাপন এমনিতে বহুমুখী সমস্যায় বিপর্যস্ত, তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন গৃহকর্তাকে বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা, কৃত্রিম অভাব সৃষ্টিকারী, মজুতদারী, ফটকাবাজি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য পণ্য মজুত করে রাখে। ফলে জনসাধারণের ভোগান্তির সীমা শতগুণ বেড়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারি ও অসাধু ব্যবসায়ীরা আজ সারাদেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করছে। এই ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে এক অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে শীঘ্রই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগামকে টেনে ধরতে হবে। তা না হলে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে তা যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। আর সেরকম কিছু হলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া খুব কঠিন হবে। অতএব অর্থনীতিবিদ, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী, ভোক্তা সকলের মতামত নিয়ে এখনই দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আশা করছি, এ পত্রটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে এবং সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারবে।


সুতরাং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।


নিবেদক-

এলাকাবাসীর পক্ষের

মো: মোহায়মিন



  প্রেরক,

   মো:মোহায়মিন

   গ্রা:+পোডহড়পাড়া

   উপজেলাউজিরপুর

   জেলাবরিশাল

                                         ডাক টিকিট

 প্রাপক,                                

   সম্পাদক,

   দৈনিক ইত্তেফাক,

   রামকৃষ্ণ মিশন রোড,

   ঢাকা-১২০৩

# সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার উপায় সম্পর্কে পরামর্শ জানিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি পত্র লেখ।

২০ মার্চ, ২০১১খৃঃ
সম্পাদক,
দৈনিক ইত্তেফাক,
১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,
ঢাকা-১২০৩।

বিষয়: চিঠিপত্র কলামে নিচের সংবাদটি প্রকাশের আবেদন।

জনাব,
আপনার সম্পাদিত বহুল প্রচলিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিম্নোক্ত পত্রটি প্রকাশ করে এলাকাবাসীর উপকারে অবদান রাখার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক-
মো: মোহায়মিন
ডহরপাড়া, বরিশাল।

চাই সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ
বাংলদেশ নামের আমাদের দেশটি দীর্ঘদিনের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৩৫ বছর আগে। ইতিহাসের পাতায় নজর দিলে দেখা যায় কোনো দেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর সে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি আসে। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনোটারই মুক্তি আসে নি। বরং অসাধুদের দৌড়াত্ম্য বেড়ে গেছে। সন্ত্রাসের করাল থাবায় মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক সন্ত্রাস, মিডিয়া সন্ত্রাস আজ সমাজকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুনপোকার মতো অন্তঃসারশূন্য করে তুলেছে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে সন্ত্রাসমুক্ত বাংলদেশ গড়া।

সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার উপায় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হল-
১. সন্ত্রাসের ধরন ও সন্ত্রাসী চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. সন্ত্রাসী তৈরিতে মুখোশের আড়ালে যারা কাজ করে তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. বেকার সমস্যা সন্ত্রাসের একটি অন্যতম কারণ। সুতারং বেকার সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।
৪. সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের, বিশেষ করে যুবশ্রেণীর নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। দ্রুত সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস বন্ধ করার
   জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. শিক্ষাকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মমুখী করা এবং প্রয়োজনমতো কর্মস্থল সৃষ্টি করা।
৬. কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব রোধ করা।

 আমি মনে করি উপরিউক্ত পরামর্শগুলো গ্রহণ করা হলে সমাজ ও জাতি সন্ত্রাসের কড়াল থাবা থেকে মুক্তি পাবে। গড়ে 
 ওঠবে সোনার বাংলা

নিবেদক-
মো: মোহায়মিন
৩৮/২, বাংলাবাজার, ঢাকা-১২০০।


প্রেরক, 
মুমতারিন মালিহা 
গ্রাম + পো: ডহরপাড়া 
উপজেলা: উজিরপুর 
জেলা: বরিশাল।
                        ডাক টকিটি
প্রাপক, 
সম্পাদক 
দৈনিক ইত্তেফাক, 
১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, 
ঢাকা-১২০৫।
      স্বদেশপ্রেম

(সংকেত: ভূমিকা; স্বদেশপ্রেম কী; স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ; স্বদেশ প্রেমের উৎস; স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ; দেশপ্রেমের ভিন্নতর বহিঃপ্রকাশ; স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম; সাহিত্যের আয়নায় স্বদেশপ্রেম; ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম; স্বদেশপ্রেমের প্রভাব; স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত; বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম; উগ্র দেশপ্রেম; উপসংহার।)

ভূমিকা: নিজ দেশ ও জন্মভূমির প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসাই স্বদেশপ্রেম। স্বদেশের প্রকৃতি ও ধূলিকণা আমাদের নিকট অতি প্রিয় ও পবিত্র। শিশুকাল থেকেই মানুষ স্বদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠে। মায়ের বুক যেমন সন্তানের নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত আশ্রয়, স্বদেশের কোলে মানুষ তেমনি নিরাপদ ও নিশ্চিত আশ্রয় লাভ করে। স্বদেশকে ভালোবাসার মাঝেই মানব জীবনের চরম সার্থকতা নিহিত। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-

“সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে।”

স্বদেশপ্রেম কী: স্বদেশপ্রেম মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ও সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে সেটিই তার জন্মভূমি। জন্মভূমির প্রতি, স্বজাতির প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধাবোধই স্বদেশপ্রেম। দেশপ্রেমীর নিজ দেশের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা, সীমাহীন আনুগত্য। বিশ্বের উন্নত জাতিগুলো স্বদেশের জন্য আত্মত্যাগ করেই উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছে। স্বদেশপ্রেম না থাকলে দেশ ও জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সুখী দেশ গড়তে হলে তাই নাগরিকদের অবশ্যই স্বদেশপ্রেমী হতে হবে।

স্বদেশপ্রেমের উৎস: প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের দেশকে ভালোবাসে। সকল জীবের মধ্যেই এ গুণ বিদ্যমান। বন্যপশুকে বনভূমি ছেড়ে লোকালয়ে আনলে, পাখিকে নীড়চ্যুত করলে তারা আর্তনাদ শুরু করে। এটি করে নিজ আবাসস্থানের প্রতি ভালোবাসার টানে। নিজ আবাসের প্রতি ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। স্বদেশের মাটি, পানি, আলো, বাতাস যেন আমাদের জীবনেরই অঙ্গ। এগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অঙ্গহানির শামিল। এগুলোর প্রতি মমত্ববোধ থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশপ্রেম। দেশের মাটির প্রতি মমত্ববোধের সাথে মিশে থাকে শ্রদ্ধা, প্রীতি ও গৌরববোধের আকাঙ্ক্ষা।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ: মানুষ সমগ্র বিশ্বের বাসিন্দা হলেও একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সে বেড়ে উঠে। একটি বিশেষ দেশের অধিবাসী হিসেবে সে পরিচয় লাভ করে। এ দেশই তার জন্মভূমি, তার স্বদেশ। মানুষ স্বদেশে জন্মগ্রহণ করে ও স্বদেশের ভালোবাসায় লালিত-পালিত হয়। নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সকল উপাদান সে স্বদেশ থেকে পায়। ফলে স্বদেশের প্রতি প্রবল মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। এ জন্য মানুষ স্বদেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হয় এবং স্বদেশের অপমানে অপমাণিত হয়। স্বদেশের স্বাধীনতা ও মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে। কবি ঈশ্বচন্দ্র গুপ্ত তাই লিখেছেন-

“মিছা মনিমুক্তা হেম স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নাই আর।”

স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ: স্বদেশপ্রেম মানব হৃদয়ে লালিত হয়। আর স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পায় জাতীয় জীবনের দুঃসময়ে মানুষের কর্মের মাধ্যমে। স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, স্বদেশের মানুষের কল্যাণ সাধনে মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম জেগে ওঠে। যাঁরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাদের নাম ও কীর্তি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁদের সে প্রেম ও আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে চিরকাল। স্বদেশের তরে জীবন উৎসর্গকারীরা সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়-

ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।

দেশপ্রেমের ভিন্নতর বহিঃপ্রকাশ: কেবল দেশকে ভালোবাসার মধ্যে দেশপ্রেম সীমাবদ্ধ নয়। দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়া যেমন শিল্প সাহিত্য, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অবদান রাখাও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাইতে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন মানুষের একত্রিত হওয়া দেশপ্রেমরই বহিঃপ্রকাশ। দেশের কল্যাণ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে বিশ্বসভ্যতায় গৌরব বাড়ানো যায়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, সাকিব আল হাসান প্রমুখের গৌরবময় অবদানের জন্য বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। দেশপ্রেমের উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ আমরা নবী করীম (স.) এর মধ্যে দেখতে পাই, দেশকে ভালোবেসে তিনি বলেছিলেন- “হে মাতৃভূমি তোমার লোকেরা যদি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করত তবে আমি কখনই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।”

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম: স্বদেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। স্বদেশপ্রেম কখনও বিশ্বপ্রেমের বাধা হয় না। দেশপ্রেম যদি বিশ্ববন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সহায়ক না হয় তবে তা প্রকৃত দেশপ্রেম হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই দেশপ্রেমের চেতনায় উৎসাহিত হতে হবে। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে না সে অন্য দেশ, ভাষা, গোষ্ঠী তথা মানুষকে ভালোবাসতে পারবে না। তাই দেশপ্রেমের মধ্যেই বিশ্বপ্রেমের প্রকাশ ঘটে।

সাহিত্যের আয়নায় দেশপ্রেম: বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক তাদের কবিতা, কাব্য, নাটক, গান, উপন্যাস প্রভৃতি লেখনির মাধ্যমে তাদের দেশপ্রেমকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেমের বিকাশ ঘটে ব্রিটিশ আমল থেকেই। নীলদর্পণ, আনন্দমঠ, মেঘনাদ বধ প্রভৃতি গ্রন্থে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে। এছাড়া নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখের সাহিত্যে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে।

ছাত্রজীবনে স্বদেশ প্রেমের শিক্ষা: স্বদেশপ্রেম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলেও এ গুণটি তাকে অর্জন করতে হয়। তাই ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেমের দীক্ষা গ্রহণ করতে হয়। দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। ছাত্রজীবনে যে দেশপ্রেম মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় তা মনে আজন্ম লালিত হয়। আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশের ভালো-মন্দ তাদের উপর অর্পিত হবে। সবার আগে দেশের বিপদে-আপদে ও প্রয়োজনে ছাত্রদেরকেই এগিয়ে আসেত হবে। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে ছাত্রদেরকে জীবন উৎসর্গ করতে হবে। যেমনটি ছাত্ররা করেছিল ১৯৫২ সালের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে।

স্বদেশপ্রেমের প্রভাব: স্বদেশেপ্রেমের মহৎ চেতনায় মানব চরিত্রের সৎ গুণাবলি বিকশিত হয়। মানুষের মন থেকে সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা দূর হয়। স্বদেশপ্রেম মানুষকে উদার ও মহৎ করে, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করতে প্রেরণা দেয়। স্বদেশপ্রেমের কারণেই মানুষ আত্মসুখ ত্যাগ করে দেশ ও জাতির কল্যাণ করে, দেশবাসীকে ভালোবাসো।

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত: যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী স্বদেশের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নাম না জানা লক্ষ লক্ষ শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য জীবন দিয়ে অমর হয়েছেন। বিশ্ব অঙ্গনে দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত রেখেছেন চীনের মাওসেতুং, রাশিয়ার লেলিন ও স্ট্যালিন, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন প্রমুখ ব্যক্তি। দেশেপ্রেমের জন্যেই তাদের সকলের নাম বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম: নগর কেন্দ্রীক সভ্যতায় মানুষ তার পাশের বাড়ির মানুষের কথাই ভুলে গেছে। মানুষ আজ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। দেশের মানুষের চিন্তা করার মানসিকতা তার নেই। মানুষের মধ্যে বাঁচার তাগিদ আজ আর কেউ অনুভব করে না। কেননা মানুষের মধ্যে বাঁচা মানে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য বাঁচা। কিন্তু সবাই এখন নিজের জন্য বাঁচতে চায়। তাই দেশ ও জাতির জন্য আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

উগ্র দেশপ্রেম: দেশপ্রেম দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের। কিন্তু উগ্র দেশপ্রেম ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুটি বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদ তথা উগ্র দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। জার্মানির হিটলার ও ইতালির মুসোলিনির উগ্র জাতীয়তা ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাই উগ্র দেশপ্রেম সব সময় অশুভ, চির অকল্যাণকর ও চির অশান্তির।

উপসংহার: জন্মভূমি সকলেরই প্রিয়, তা রক্ষার দায়িত্বও সকলের। তবে মনে রাখতে হবে নিজের দেশকে রক্ষার নামে অপরকে আক্রমণ করা মানবতাবিরোধী। স্বদেশপ্রেমের মতো পবিত্র গুণ আর নেই। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের উচিত স্বদেশকে ভালোবাসা। প্রকৃত দেশপ্রেমী মানুষ সকলের কাছে পরম পূজনীয়। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকারী ব্যক্তিই বিশ্ববরেণ্য
     শ্রমের মর্যাদা

(সংকেত: ভূমিকা; শ্রম কী এবং শ্রমের ধরণ; শ্রমের ক্ষেত্র; শ্রমের আবশ্যকতা; শ্রমের মহিমা; শ্রম ও সভ্যতা; ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে শ্রমের মর্যাদা; শ্রমের জয়; শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ; কর্ম ও শ্রমবিমুখ ব্যক্তির অবস্থা; শ্রমিক লঞ্চনা; মানসিক বিকাশে শ্রমের গুরুত্ব; ছাত্র-জীবনে শ্রমের গুরুত্ব; জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব; উপসংহার।)

ভূমিকা: 
“কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন
হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন”
-ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

পৃথিবীর সব জিনিস মানুষের শ্রমলব্ধ। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম করেই বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবন-যাত্রার মান বাড়াতে হলে, জীবনকে সুখী করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। জীবনে অর্থ, বিদ্যা, যশ, প্রতিপত্তি অর্জন করতে হলে তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। কর্মসাধনার মাধ্যমেই জীবনে সফলতার স্বর্ণ দুয়ারে পৌঁছানো সম্ভব। তাই শ্রমেই সফলতা, শ্রমেই সুখ, শ্রমই জীবন।

শ্রম কী এবং শ্রমের ধরণ: 
মানুষ কোনো কাজ সম্পন্ন করতে যে শারীরিক বা মানসিক শক্তি দিয়ে থাকে তাকে শ্রম বলে। শ্রম সাধারণত দু’ধরণের । যথা: মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করতে হলে সব মানুষকেই কম-বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম করতে হয়। প্রত্যেক মানুষই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে থাকে।

মানসিক শ্রম: 
মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে মানুষ তার মেধা মনন দিয়ে যে শ্রম দেয় তাই মানসিক শ্রম। মানুষের জীবনে মানসিক শ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক শ্রম ব্যতীত মানুষের মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়। কথায় বলে- “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ শ্রমবিমুখ ব্যক্তির মনে কখনও ভালো চিন্তার উদয় হয় না। পক্ষান্তরে পরিশ্রমী ব্যক্তির মন সব সময় সতেজ হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও শিল্পীর পরিশ্রম মূলত মানসিক।

শারীরিক বা কায়িক শ্রম: 
মানুষ তার শারিরীক শক্তি দিয়ে কোনো কাজে যে শ্রম দেয় তাই শারীরিক শ্রম। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য মানসিক ও শরীরিক দুই প্রকার শ্রমকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক শ্রম মূলত কাজের প্রেরণা যোগায় আর শারীরিক শ্রম তা সমাধান করতে সাহায্য করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের শরীরিক কাজকর্ম করার জন্য বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ দান করেছেন। এ সব ব্যবহার করে যে শ্রম দেয়া হয় তাই শারিরীক শ্রম।

শ্রমের ক্ষেত্র: 
"Man is the architect of this fortune" অর্থাৎ “মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রা”। এ কর্মমুখর জীবনে মানুষকে নিরন্তর কোনো না কোনো প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে হয়। "Life isnot a bed of rose"  জীবন পুষ্প-শয্যা নয়। মানুষকে এ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হলে একমাত্র শ্রমের সাহায্যেই টিকে থাকতে হবে। তাই বলা যেতে পারে মানবজীবন মাত্রই শ্রমের কর্মশালা আর পৃথিবী হলো কর্মক্ষেত্র।

শ্রমের আবশ্যকতা: 
শ্রমই মানুষকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়। শ্রম ব্যতিত পৃথিবীতে কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। পৃথিবীর যে জাতি যতবেশি পরিশ্রমী, সে জাতি ততো বেশি উন্নত ও সম্পদশালী। যেকোনো শ্রমেরই মূল্য আছে। যার জীবনে শ্রমের যন্ত্রণা নেই, তার কিছুই আশা করা উচিত নয়। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমই মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে পারে।

শ্রমের মহিমা: 
মর্যাদা’ শব্দের অভিধানিক অর্থ মূল্যায়ন বা সম্মান প্রদর্শন করা। অর্থাৎ মানুষের সকল প্রকার শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের প্রতি যথাযথ সম্মান বা মূল্যায়ন প্রদর্শন করাকে শ্রমের মর্যাদা বলে। আমাদের উচিত সব ধরণের শ্রমকে সম্মানের চোখে দেখা। নিজের হাতে কাজ করাকে হীন মনে করা যাবে না। অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন, সমাজের সব শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। কুলি-মজুর, মেথর, চাষী, ডাক-হরকরা, দোকানী, কেরানী প্রভৃতি ব্যক্তিদের শ্রমকে খাটো করে দেখা যাবে না। এসব শ্রমজীবী মানুষ ছাড়া আমাদের সমাজ এক মুহূর্তও চলবে না। তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য দিতে হবে।

শ্রম ও সভ্যতা: 
সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে শুরু হয়েছে শ্রমের বন্যা, আজও তার শেষ নেই। বর্তমান শতাব্দীর উন্নতির মূলেও রয়েছে নিরলস শ্রমের অবদান। শ্রমজীবী মানুষই নতুন নতুন সভ্যতার সৃষ্টি করেছে। শ্রম শুধু মানুষের সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রকই নয়, সভ্যতা বিকাশেরও অন্যতম একটি হাতিয়ার। পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার মূলে রয়েছে মানুষের পরিশ্রম। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, জাপান, জার্মানি প্রভৃতি দেশ শ্রমের জন্যই উন্নত। আজ বিশ্বে তারা সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় পেয়েছে শ্রমের কারণে। তাই আমাদের সভ্যতাকে বিকশিত করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে।

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে শ্রমের মর্যাদা: 
সব ধর্মেই শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও শ্রমের মর্যাদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) নিজের সকল কাজ নিজ হাতে করতেন। তিনি কোনো কাজকে ছোট মনে করতেন না। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকেও নিজ হাতে কাজ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। শ্রমের মর্যাদা দিতে গিয়ে মহানবী (স.) বলেছেন- “শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার পাওনা পরিশোধ করে দাও।” আবার উপনিষদে বলা হয়েছে ‘শ্রম বিনা শ্রী হয় না’। এতে শ্রমের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

শ্রমের জয়: 
এক সময় মানুষ অনেক ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করলেও তার যথাযথ প্রাপ্য ও মূল্যায়ন পেত না। তাদেরকে নানাভাবে শাসন ও শোষণ করা হতো। তাই মানুষ শ্রমের মর্যাদা লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে এবং আন্দোলনে লিপ্ত হয়। ১৮৮৫ সালের মে মাসে আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য দাবি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে। এতে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হয়। ঐ দিন থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্ব মে দিবস পালন করা হয় এবং শ্রমিকেরা শ্রমক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অধিকার লাভ করে। বিশ্ব মে দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকে সচেতন করা।

শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ: 
পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিগণ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেন- “আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দূরূহ তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।” বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এক হাজার বারের চেষ্টায় বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করতে পেরেছেন। দার্শনিক ডাল্টন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- “লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না।” ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) আজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, আইনস্টাইন প্রমুখ মনীষী ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী।

কর্মবিমুখ ব্যক্তির অবস্থা: 
শ্রম ব্যতিত ব্যক্তি জীবনে সফলতা আসে না। শ্রমবিমুখ ব্যক্তি তার জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। সে তার জীবনে চলার পথে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। হতাশার জাল তাকে ঘিরে ফেলে। ফলে তার জীবন সমাজের অন্ধকার অতল গহ্বরের দিকে ধাবিত হয়।

শ্রমিক লাঞ্ছনা: 
মানব সভ্যতায় শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম। শ্রমিকেরাই মূলত সভ্যতার চাকাকে গতিশীল রাখছে। অথচ তারাই সমাজে সবচেয়ে বঞ্চিত। শ্রমিকরা অনেক সময় তাদের প্রাপ্য মজুরি পায় না। সমাজেও তারা নানাভাবে লাঞ্ছিত হয়। সমাজের উঁচু শ্রেণির অনেক মানুষ তাদের ঘৃণা করে। শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

মানসিক বিকাশে শ্রমের গুরুত্ব: 
থায় আছে- “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” যখন কোনো মানুষ অলস থাকে, তখন নানা ধরণের খারাপ চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খায় এবং সে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু যখন সে শ্রম দিয়ে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কাজ করবে তখন তার মানসিক উন্নতি হবে। সে যখন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, তখন সে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে। এতে তার উন্নতির পথ উন্মুক্ত হয়।

ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব: 
ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন পরিশ্রমী ছাত্র বা ছাত্রী স্বল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। সমাজবিজ্ঞানী পার্সো বলেন- “প্রতিভা বলে কিছুই নেই, সাধনা কর; সিদ্ধি লাভ হবেই।”

জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব: 
শ্রমহীন কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা সমবেত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি। শ্রমের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারি। জাতীয় সম্পদের উন্নতির জন্য চাই সাধনা ও ধৈর্য। মূলত শ্রমের উপরই নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

উপসংহার: 
পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় হতে হলে, সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হলে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শ্রমের বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত শ্রমের সমষ্টিতে আসে জাতীয় জীবনে সফলতা। নিরলস পরিশ্রম করে মানুষ জগতের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ মহৎ কার্যাবলী সম্পাদন করে। এ সম্পর্কে মার্কুস বলেন- “জীবন যার মহৎ কাজে পরিপূর্ণ, মৃত্যুর পর তার কবরে মার্বেল পাথরের কারুকাজ না থাকলেও কিছু আসে যায় না।” শ্রমই মানুষের জীবনকে মহৎ করে তোলে। তাই আমাদের সবাইকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।
আমার কুঁড়েঘরে
- হুমায়ুন আজাদ---সংকলিত (হুমায়ুন আজাদ)

আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জমে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ পড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভরে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক

আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক

আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্বলে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল করে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক

আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গলে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক

আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জমে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ পড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভরে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক।
গোলাপ ফোটাবো
- হুমায়ুন আজাদ---সংকলিত (হুমায়ুন আজাদ)

ওষ্ঠ বাড়িয়ে দাও গোলাপ ফোটাবো,
বঙ্কিম গ্রীবা মেলো ঝরনা ছোটাবো।
যুগল পাহাড়ে পাবো অমৃতের স্বাদ,
জ্বলে যাবে দুই ঠোঁটে একজোড়া চাঁদ।
সুন্দরীর নৌকো ঢুকাবো বঙ্গোপসাগরে,
অতলে ডুববো উত্তাল আশ্বিনের ঝড়ে।
শিউলির বোঁটা থেকে চুষে নেবো রস,
এখনো আমার প্রিয় আঠারো বয়স।
তোমার পুষ্পের কলি মধুমদগন্ধময়,
সেখানে বিন্দু বিন্দু জমে আমার হৃদয়।