চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Tuesday, May 4, 2021

অনুচ্ছেদ

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ

প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের মানুষ তার চারপাশের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে জীবনযাপন করে আসছে। পরিবেশ কথাটির অর্থ হলো আমরা যে যেখানে থাকি তার চারপাশের জগৎ, অর্থাৎ গাছপালা, মাটি, পানি, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, প্রাণী, উদ্ভিদ ইত্যাদি মিলেই পরিবেশ। মানুষ আর পরিবেশের মধ্যে যতদিন সমন্বয় বিদ্যমান ছিল ততদিন মানুষের কোনো দুর্ভাবনা ছিল না। কিন্তু সভ্যতার বিকাশ আর মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।

ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরায়ণ, অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা স্থাপন, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোয়া, অধিকমাত্রায় বৃক্ষনিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, বনভূমি ধ্বংস ইতাদি কারণে প্রতিদিন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাস্পশক্তি ও বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের মূলে রয়েছে দহন। এই দহনের ফলে বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় রশ্মি পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ বৃদ্ধি পেতে পারে বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এসব গ্যাস সূর্য থেকে আসা স্বল্প দৈর্ঘ্য বিকিরণের জন্যে স্বচ্ছ কিন্তু লম্বা দৈর্ঘ্য বিকিরণ ধরে রেখে ভূপৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করে তোলে। বায়ুমণ্ডলে পরিবেশ দূষণের ফলে যেসব গ্যাস জমছে তার অবর্তমানে লম্বা দৈর্ঘ্যের বিকিরণ মহাশূন্যে হারিয়ে যেতো। এসব গ্যাস হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি। এসব গ্যাস যদি বর্তমান হারে বাড়তে থাকে তবে ২০১৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাতে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ ১.৫ ডিগ্রি থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বৃদ্ধির এই পরিমাণ মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় ঘটনা বলে বিবেচিত হবে। কেননা এক ডিগ্রি তাপের কয়েক দশমাংশ উত্তাপ বৃদ্ধি বিশ্বের আবহাওয়ায় এক বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার ফলে সাগরের তলদেশের উচ্চতা বেড়ে যাবে, ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে, উপকূলমণ্ডল ও নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বাড়বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এতে বিশ্বের বহুভূমি বন্যাকবলিত হবে আর ছড়িয়ে পড়বে লবণাক্ততা। পরিণামে শিল্পকারখানা, জনবসতি, কৃষি উৎপাদন, মৎস্য চাষ এবং বনাঞ্চলের ওপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেবে। গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের জন্যে। একুশ শতকের মাঝামাঝি আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ বেড়ে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মতো ব-দ্বীপ অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে অনুভূত হবে। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে বাংলাদেশে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তাই এখন থেকেই পরিবেশ দূষণ রোধ করে ভবিষ্যতের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।

অনুচ্ছেদ

 গ্রাম্যমেলা

মেলা হচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। মেলা লোক সংস্কৃতিরই এক বিশেষ ধমনী। এই ধমনীতেই জীবনের স্পন্দন। এরই মধ্যে বাঙালী খুঁজে পেয়েছে নিজেকে। মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন। মেলার নামে সবার মন এক অভূতপূর্ব আনন্দের উচ্ছাসে ওঠে নেচে। মেলার আনন্দের স্মৃতি সকলের মনেই থাকে গভীরভাবে মুদ্রিত। মেলা পরস্পরের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ও ভাব-সম্মিলনের সংযোগ সেতু। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রাম্য মেলার গুরুত্ব তাই অসীম। বিশেষ কোন পর্ব উপলক্ষে মেলার প্রচলন হলেও এখন গ্রামীণ-জীবনে এটি একটি স্বাভাবিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। সাধারণত বছরের শেষে অথবা বছরের শুরুতে এই মেলা বসে অথবা বিশেষ কোন পর্ব উপলক্ষেও মেলার আায়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই নানা ধরনের মেলার প্রচলন রয়েছে। স্থান বিশেষে রয়েছে কিছু বিখ্যাত মেলা। যা ঐ স্থানের নামেই সুপরিচিত

সাধারণত মেলা বসার জন্য হাট-বাজারের ন্যায় নির্দিষ্ট কোন স্থান নির্ধারিত থাকে না। গ্রামের কেন্দ্রস্থলে খোলা মাঠে, মন্দির প্রাঙ্গনে, নদীর তীরে অথবা বড় বৃক্ষের নিচে গ্রাম্য মেলা বসতে দেখা যায়। পূর্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী এসব স্থানে মেলার আয়ােজন করা হয়। মেলার প্যানে সাময়িকভাবে দোকানপাট বসার মত চালা নির্মাণ করা হয়। মেলা শেষ হওয়ার পর এগুলো ভেঙে ফেলা হয়। বছরের শেষে মেলার আনন্দে আবারও মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার সে স্থানে। বাংলাদেশে প্রচলিত মেলাগুলোর কোনটি একদিন, কোনটি এক সপ্তাহ, কোনটি পনের দিন আবার কোন কোন মেলা এক মাসব্যাপী চলতে থাকে। আজকাল শুধু গ্রাম নয়, শহর বা আধা শহরেও মেলার আসর বসে। তবে গ্রামই মেলার উপযুক্ত পটভূমি। আমাদের দেশে গ্রামে সাধারণত ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পহেলা বৈশাখ, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিজয়া দশমী, দশই মহরম, চৈত্র সংক্রান্তি এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মেলা বসে থাকে। তবে উপলক্ষ যাই হোক না কেন মেলা বাঙালি সমাজ ও মানুষের নিকট খুব জনপ্রিয় ও আনন্দের দিন। মেলায় সমাজের সর্ব শ্রেণীর মানুষ, ধনী-নির্ধন, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলেই এসে মিলিত হয়। বিভেদের পার্থক্য ভুলে গিয়ে সকলেই এক আনন্দের জোয়ারে গা ভাসায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম্য মেলা শুধু আনন্দ চিত্তের শান্তিই দেয় না, বিত্তের শক্তি যোগায়। মেলায় কৃষি ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যাদি বেচাকেনা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের কামার-কুমার, তাঁতী, সুতারদের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস বানানাের হিড়িক পড়ে যায়। তাই দেখা যাচ্ছে, মেলার মাধ্যমে গ্রামীণ অনেক মানুষের কিছু উপার্জনের পথও প্রশস্ত হয়।

মেলাকে আশ্রয় করেই গ্রামীণ মানুষের আনন্দ-উৎসের রুদ্ধ দুয়ার খোলে যায়। এর মধ্যেই সে খুঁজে পায় বেঁচে থাকার সার্থকতা। খুঁজে পায় মুক্তির আনন্দ। সত্যপীর, শীতলা, মনসা, ষষ্ঠী, ওলাবিবি, সতী-মা এমনি কত লৌকিক দেবদেবী গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কত শত শতাব্দীর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর ধর্মীয় আকুতির সঙ্গে এঁদের আত্মিক সম্পর্ক। এদের কেন্দ্র করে কত লোকগাথা, কত ব্রতকথা, পাঁচালী, ছড়া, গ্রাম্য সাহিত্য-সঙ্গীতের ধারা আজও চলে আসছে। মেলা গ্রামীণ জীবনের শুকনো খাতে নিয়ে আসে প্রবল আনন্দ-জোয়ার। সেই জোয়ারেই বাঙালীর চিত্তভূমি সিক্ত হয়েছে।

অনুচ্ছেদ

 শব্দদূষণ 

শব্দ বা আওয়াজ হলো ধ্বনি-তরঙ্গ। এটি মানুষের বাগ্যন্ত্র বা অন্য কোনো উৎস থেকে উৎপাদিত বা সৃষ্টি হয়ে আমাদের কর্ণকুহরে এসে পৌছায়। এসব শব্দ কখনো কখনো আমাদের জন্য ক্ষতিকর ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে, আর সেটিই হলো শব্দদূষণ।

পাখপাখালির ডাক, মৃদু শব্দ, সংগীতের সুর শ্রুতিমধুর, যানবাহনের হর্নের আওয়াজ, রেডিও-টেলিভিশনের উচ্চ শব্দ, কলকারখানার সাইরেন, মাইকের আওয়াজ, উডড়োজাহাজের শব্দ ইত্যাদি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কারণ এ শব্দগুলো অতিমাত্রার ফলে শব্দদূষণ ঘটছে। শব্দদূষণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। শব্দদূষণের ফলে শিশু ও বড়দের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে মানুষ। মানসিক অবসাদগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের ফলে বিভিন্ন রোগেরও সৃষ্টি হচ্ছে। উচ্চ শব্দযুক্ত শিল্পকারখানায় যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের প্রবণশক্তি ১০ বছরে অর্ধেক হ্রাস পায়। শব্দদূষণের ফলে নানা ধরনের মানসিক বিকার ও অসুখের সৃষ্টি হয়। উন্নত দেশে আইন প্রণয়ন ও পালনের মাধ্যমে শব্দদূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও তৃতীয় বিশ্বে এর প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। আমরা সচেতন হলে শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আজকের দিনে শব্দদূষণ প্রতিকারে উদ্যোগ ও সচেতনতা অতীব প্রয়োজনীয়। সেই সাথে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা।


অনুচ্ছেদ

 35.  শিক্ষা সফর

বৈচিত্র্যের সন্ধানী মানুষ কখনো স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। নতুন আকর্ষণে মানুষ প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। দেশ সফর মানুষের জ্ঞান সঞ্চয়ের ও অবকাশ যাপনের একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। এতে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং হৃদয়ের প্রসার ঘটে। এই উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা বই-পুস্তক পাঠ করে দেশ-বিদেশের ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান ও বস্তুসমূহের সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারে। কিন্তু নিজের চোখে দেখলে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ হয় অনেক বেশি।

বই পড়ে কোনো একটি স্থান ও বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন সম্পূর্ণ হয় না বলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ছাত্রদের শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা করেন। এর অন্যতম উদ্দেশ্য একাডেমিক প্রয়োজন মেটানো। কিন্তু শিক্ষা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এইজন্য যে, এটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভাবের আদান-প্রদান ঘটায়। ছাত্ররা জাতির মেরুদণ্ড, ছাত্রদের সুশিক্ষা দানের মধ্যে রয়েছে দেশ গড়ার কার্যকারিতা। আর হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণই সুশিক্ষার অন্যতম পন্থা যা শিক্ষা। সফরের মাধ্যমে সম্ভব। শিক্ষা শুধু বইয়ের কয়েকটা পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার আলো সর্বত্রই বিচরণ করে। আর শিক্ষা সফর সেই আলোকে ছড়িয়ে দেয় উন্মুক্ত আকাশে। শিক্ষা সফরের মূল আনন্দ হলো প্রকৃতির আবার সৌন্দর্য্যকে প্রাণ খুলে অবলোকন করা। কিছুটা সময় প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা এবং প্রকৃতির মাঝেই নিজেকে আবিষ্কার করা এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। ভ্রমণের আনন্দ একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করার মাধ্যমে সেই অনুভূতি হয়ে উঠে আনন্দের মহাসমুদ্র। 

শুধু যে আনন্দই শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য তা কিন্তু নয়। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থী অনেক স্থান এবং ওই স্থানের জীবন যাপনের ধরণ এবং বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতির সম্পর্কে জানতে পারে। তাদের কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পায়। শরীর এবং মননের বিকাশ ঘটে। পড়াশুনার একঘেমেয়ি দূর হয়। মন প্রফুল্ল থাকে যা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীকে পূনরায় পড়াশুনায় উজ্জীবিত করে। সুতরাং শিক্ষা সফরের গুরুত্ব অত্যধিক ও অপরিসীম।

অনুচ্ছেদ

 মাদকাসক্তি

বিশ্বমাঝারে নানান আসক্তির মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। যেসব খাদ্য, পানীয় বস্তু সুস্থ মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে এবং নেশা সৃষ্টি করে সেগুলোকে আমরা মাদকদ্রব্য বলে থাকি। মাদক জাতীয় উপাদান ও ওষুধের ব্যবহারের প্রবণতাই মাদকাসক্তি।


মাদকাসক্তি বর্তমান বিশ্বের মারাত্মক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাদকাসক্তি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গ্রহণযোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ করা ও তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া। বিভিন্ন কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়। এর মধ্যে সঙ্গদোষ, কৌতূহল, পারিবারিক কলহ, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতি ও মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে যুবসমাজই মাদকাসক্তিতে সবচেয়ে বেশি আচ্ছন্ন। বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য চালু আছে। মদ, ভাং, গাঁজা, আফিম ইত্যাদি নেশা বহু প্রাচীনকালের। বর্তমানে মাদকদ্রব্য হিসাবে হেরোইন, মারিজুয়ানা, এলএসডি, প্যাথেড্রিন, কোকেন, হাসিস, মরফিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মাদকাসক্তির কারণে মানসিক ও শারীরিক শক্তি লোপ পেলে ব্যক্তির সামাজিক আচরণে কিছু বিকার দেখা যায়। মানুষের কর্মশক্তি লোপ পায়, আয়ু কমে যায়। মাদকাসক্তির প্রভাবে যুবক শ্রেণির নৈতিক অধঃপতন ঘটছে। নেশাগ্রস্তদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তারা স্বাভাবিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনকে বিসর্জন দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। মাদকাসক্তির ব্যক্তিগত দিক ছাড়াও এর আরও একটি ব্যবসায়িক দিক রয়েছে, যা বিশাল অপরাধ জগতের সাথে সম্পর্কিত। মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশ মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের ১৭ ভাগ মানুষ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে। এর বিরুদ্ধে সচেতনতার পাশাপাশি এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগে আগামী প্রজন্মকে উপহার দিতে হবে একটি মাদকমুক্ত সমাজ।

অনুচ্ছেদ

 দেশপ্রেম

নিজের দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। নিজের দেশকে ভালোবাসে না এমন কে আছে? দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। সামাজিক মানুষের দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধই হলো দেশপ্রেম। মা, মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার মধ্যেই দেশপ্রেমের মূল সত্য নিহিত। প্রত্যেক মানুষের দেহ মন বিশ্বাস আদর্শ সবকিছুই স্বদেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা পুষ্ট।তাই সে দেশের ভাষা-সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি এবং জীবন ও পরিবেশকে ভালােবাসতে শুরু করে। এই ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম।


শুধু মুখে মুখে এই ভালোবাসার কথা বললেই দেশপ্রেম হয় না। চিন্তায়, কথায় ও কাজে দেশের জন্য যে ভালোবাসা প্রকাশ পায় সেটাই প্রকৃত দেশপ্রেম। ফলে স্বদেশের জন্যে তার যে প্রেম তা কৃতজ্ঞতার, কর্তব্যের এবং দায়িত্বের। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মধ্যে কোনো সংকীর্ণ চিন্তা থাকে না। দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধিই দেশপ্রেমিকের সর্বক্ষণের চিন্তা ও কর্মের বিষয়। দেশের স্বার্থকে তিনি সবকিছুর উর্ধে স্থান দিয়ে থাকেন। নিজের অহংকার, মেধা, প্রজ্ঞা ও গৌরব স্বদেশের জন্য নিবেদন করেন। দেশের জন্য নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে দেশের মর্যাদা রক্ষা করেন। যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতার লড়াইয়ে জীবন দিয়েছেন তীতুমীর (Titumir), প্রীতিলতা (Pritilata Waddedar)। ফাঁসির মঞ্চে জীবন উৎসর্গ করেছেন ক্ষুদিরাম (Khudiram Bose, সূর্য সেন (Surya Sen)। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য শহীদ, রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা-সংগ্রামে আত্ম-বিসর্জিত অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, লক্ষ লক্ষ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অকুতোভয় সৈনিকদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে পারি। দেশপ্রেমের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল।


মানুষ জীবনে যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থান থেকে দেশকে ভালোবাসতে পারে। নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। যদিও আমরা জন্মের পরেই দেশকে ভালোবাসতে শুরু করি, তদুপরি ছাত্রজীবন দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট সময়। দেশপ্রেম হৃদয়ে থাকলে দেশের মাটি, মানুষ, প্রকৃতি সবকিছুই অতি আপন বলে মনে হয়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ছাত্ররাও নানাভাবে দেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারে। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজের দৈন্যদশাকে তুচ্ছ করতে হবে এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। একটি মহৎ গুণ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কিছু না কিছু অবদান রাখা প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য

অনুচ্ছেদ

   বিশ্বায়ন

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। এটি সম্ভব হয়েছে বিশ্বায়নের কারণে। রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, জ্ঞানবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রভাবকে বলা হয় বিশ্বায়ন। বিশ্বায়ন একটি বিশ্বব্যাপী ক্রিয়া। যুগে যুগে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দর্শন মানবসমাজ এবং রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট জীবনধারাকে প্রভাবিত করেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের ফলে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইউরোপে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে উৎপাদিত সেবা ও পণ্য এবং পুঁজির শুল্কবিহীন অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। এরপর বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতির জগতে প্রবেশ করে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগের যুগ বলা হলেও বাস্তবে তা খুবই কম পূরণ হয়েছে। বাজার উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক হারে বিদেশি পণ্যে দেশের ব্যাপক বাজার ভরে যাচ্ছে। ফলে মার খায় দেশীয় পণ্য ও দেশীয় শিল্প। আমাদের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পােশাক খাতও আজ হুমকির সম্মুখীন। ২০০৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর Multi Fiber Agreement বা MFA এর মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য রাষ্ট্রে এখন কোঠা সুবিধা রহিত হয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে, আমাদের কৃষিখাতও হুমকির মুখে। দেশীয় বীজের পরিবর্তে স্থান কাল করেছে বহুজাতিক কর্পোরেশন কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজ। অপরদিকে, বিশ্বায়নের ফলে দেশীয় সংস্কৃতিতেও চলছে ব্যবস্থা। দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিবর্তে স্থান দখল করে নিচ্ছে আকাশ সংস্কৃতি। বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে দেশকে নিতে হলে শ্রম ব্যবস্থাপনার সহযােগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টি এবং সুনির্দিষ্ট কল্যাণমুখী উদ্দেশ্যে শিল্প পরিচালনা করে আমাদের দেশীয় শিল্পে দক্ষতা সৃষ্টি করতে হবে। আর তা করতে পারলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটা হবে সাফল্যমণ্ডিত।

অনুচ্ছেদ

   শব্দদূষণ 

শব্দ বা আওয়াজ হলো ধ্বনি-তরঙ্গ। এটি মানুষের বাগ্যন্ত্র বা অন্য কোনো উৎস থেকে উৎপাদিত বা সৃষ্টি হয়ে আমাদের কর্ণকুহরে এসে পৌছায়। এসব শব্দ কখনো কখনো আমাদের জন্য ক্ষতিকর ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে, আর সেটিই হলো শব্দদূষণ।

পাখপাখালির ডাক, মৃদু শব্দ, সংগীতের সুর শ্রুতিমধুর, যানবাহনের হর্নের আওয়াজ, রেডিও-টেলিভিশনের উচ্চ শব্দ, কলকারখানার সাইরেন, মাইকের আওয়াজ, উড়োজাহাজের শব্দ ইত্যাদি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কারণ এ শব্দগুলো অতিমাত্রার ফলে শব্দদূষণ ঘটছে। শব্দদূষণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। শব্দদূষণের ফলে শিশু ও বড়দের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে মানুষ। মানসিক অবসাদগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের ফলে বিভিন্ন রোগেরও সৃষ্টি হচ্ছে। উচ্চ শব্দযুক্ত শিল্পকারখানায় যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের প্রবণশক্তি ১০ বছরে অর্ধেক হ্রাস পায়। শব্দদূষণের ফলে নানা ধরনের মানসিক বিকার ও অসুখের সৃষ্টি হয়। উন্নত দেশে আইন প্রণয়ন ও পালনের মাধ্যমে শব্দদূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও তৃতীয় বিশ্বে এর প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। আমরা সচেতন হলে শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আজকের দিনে শব্দদূষণ প্রতিকারে উদ্যোগ ও সচেতনতা অতীব প্রয়োজনীয়। সেই সাথে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা।

ভাব-সম্প্রসারণ

  # দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।

মূলভাব: জ্ঞান মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করে। তবে বিদ্বান হলেই মানুষ চরিত্রবান হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর কোনো চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তাকে এড়িয়ে চলা উচিত। 

সম্প্রসারিত ভাব: শুধু মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ মানবিক গুণসম্পন্ন হয় না। জন্মের পরে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। বিদ্যা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। এজন্য মানুষ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে বিদ্যার্জন করে। বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্রই সম্মানের পাত্র। সকলেই তাঁকে মান্য করে। তাই বিদ্যা মূল্যবান এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তার চেয়েও মূল্যবান। চরিত্র মানুষের সাধনার ফল। সাধনার জন্য প্রয়োজন তপস্যা; যা মানুষের প্রবৃত্তিকে প্রখর করে, বুদ্ধিকে শানিত করে, আচরণকে মার্জিত করে, হৃদয়কে প্রশস্ত করে, মনকে দৃঢ় করে, শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে। চরিত্রই মানুষের মনুষ্যত্বের রক্ষাকবচ। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন। এসব চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি দুর্জন ব্যক্তি হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। সমাজের সকলেই তাকে পরিত্যাগ করে। 

কেননা এসব দুর্জন ব্যক্তি স্বীয় স্বার্থোদ্ধারে অপরের মারাত্মক ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধে করে না। বিদ্যাকে তারা মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করে। এসব লোকের সাহচর্যে গেলে মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সাপের মতো হিংস্র ও বিষাক্ত। প্রবাদ আছে, বিষাক্ত সাপের মাথায় মহামূল্যবান মণি থাকে। বিষাক্ত সাপের মাথার মণি আর চরিত্রহীন ব্যক্তির বিদ্যা প্রায় সমার্থক। মণি লাভের আশায় কেউ বিষাক্ত সাপের সংস্পর্শে যায় না। তার কারণ বিষাক্ত সাপের ধর্ম ছােবল মারা। দুধকলা দিয়ে পুষলেও সুযোগে পেলেই সে ছোবল মারবে। এতে মৃত্যু অবধারিত। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সাপের মতোই বিপজ্জনক। বিদ্যার্জনেরজন্য তার  সংস্পর্শে গেলে সুযোগ পেলেই সে ক্ষতি করবে। একথা সবাই জানে যে, বিদ্বান ব্যক্তি উত্তম চরিত্রের হলে জগতের অশেষ কল্যাণ হয়, আর দুশ্চরিত্রের বিদ্বান ব্যক্তি দ্বারা জগতের অশেষ ক্ষতি হয়। তাই দুর্জন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ কারানো কাম্য নয়। 

মন্তব্য: বিদ্বান অথচ চরিত্রহীন ব্যক্তির সাহচর্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা, বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন হওয়ার কারণে তার সংস্পর্শে গেলে নিজের চরিত্র খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  #   দুর্নীতি জাতীয় জীবনের সকল উন্নতির অন্তরায়।

মূলভাব: যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে নীতিহীনতাই দুর্নীতি। আর যে নীতিহীন সে হয় স্বার্থান্ধ। এ ধরনের লোকে দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

সম্প্রসারিত ভাব: বর্তমানে উন্নতি এবং দুর্নীতি কথা দুটি মানুষের মুখে মুখে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেননা, উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে যেটি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হলো দুর্নীতি। নৈতিকভাবে উন্নত, সৎ, বিবেকবান মানুষ যে পদেই থাকুন কেন, তিনি সমাজ ও জাতির বড় সম্পদ। তাকে দিয়ে উপকার না হলেও অন্তত ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে না। অপরদিকে নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি যতই উচ্চ আসনে অবস্থান করুক না কেন, তিনি মোটেও শ্রদ্ধার পাত্র নন। পদমর্যাদার কারণে তাকে হয়তো মানুষ সামনে কিছু বলে না কিন্তু পেছনে অন্তর থেকে ঘৃণা করে। তার দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি। 

কারণ, তিনি স্বার্থান্ধ, বিবেকবর্জিত। তিনি সবসময় নিজের স্বার্থসিদ্ধির মতলবে থাকেন। স্বার্থান্ধ ব্যক্তি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজেই ব্যস্ত থাকেন। সমাজের কল্যাণ, দেশের মঙ্গলের কথা তিনি ভাবেন না। জাতীয় জীবনের উন্নতি, সমৃদ্ধির কথা ভাবতে তার বিবেক সায় দেয় না। এজন্য বিবেকবর্জিত, দুর্নীতিগ্রস্ত লোকে দেশের সকল উন্নতির পথে বাধাস্বরূপ।

মন্তব্য: বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ছিল লজ্জাজনক অবস্থানে। বর্তমানে তা কিছুটা লাঘব হয়েছে। তবে আমাদেরকে এ লজ্জাজনক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে দেশের জনগণ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও তাদের বিজয়ী হতে হবে। তবেই দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।