চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Thursday, July 15, 2021

 স্বরধ্বনির উচ্চারণ

অ-ধ্বনির উচ্চারণ

শব্দে অবস্থানভেদে ‘অ’ দুইভাবে লিখিত হয়। যেমন:

১. স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন: অমর, অনেক।

২. শব্দের মধ্যে অন্য বর্ণের সঙ্গে বিলীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন: কর, বল। এখানে ক ও র আর ব ও ল বর্ণের সঙ্গে অ বিলীন হয়ে আছে। (ক্+অর্++অ; ব্+অ+ল্+অ)।

 

শব্দের অ-ধ্বনির দুই রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়

১. বিবৃত বা স্বাভাবিক(অ এর উচ্চারণ অ) উচ্চারণ। অর্থাৎ ঠোট গোল হয় না। যেমন: অমল, অনেক, কত।

২. সংবৃত বা ও-ধ্বনির মতো উচ্চারণ। অর্থাৎ ঠোট গোল হয়। যেমন: অধীর, অতুল, মন। এ উচ্চারণগুলোতে অ-এর উচ্চারণ অনেকটা ও-এর মতো (ওধীর, ওতুল, মোন)।

 

‘অ’-ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ

ক. শব্দের আদিতে

১. শব্দের আদিতে না-বোধক ‘অ’ যেমন: অটল, অনাচার।

২. ‘অ’ কিংবা ‘আ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন: অমানিশা, অনাচার, কথা।

 

খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে

১. পূর্ব স্বরের সঙ্গে মিল রেখে স্বরসঙ্গতির কারণে বিবৃত ‘অ’। যেমন: কলম, বৈধতা, যত, শ্রেয়ঃ।

২. ঋ-ধ্বনি, এ-ধ্বনি, ঐ-ধ্বনি এবং ঔ-ধ্বনির পরবর্তী ‘অ’ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমন: তৃণ, দেব, বৈধ, নোলক, মৌন।

৩. অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন: গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।

অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ

অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে চোয়াল বেশি ফাঁক হয়। ঠোঁট তত বাঁকা বা গোল হয় না। কিন্তু সংবৃত উচ্চারণে চোয়ালের ফাঁক কম ও ঠোঁট গোলাকৃত হয়ে ‘ও’-এর মতো উচ্চারিত হয়। সংবৃত উচ্চারণকে ‘বিকৃত’, ‘অপ্রকৃত’ বা ‘অস্বাভাবিক’ উচ্চারণ বলা অপ্রাসঙ্গিক। সংবৃত উচ্চারণও ‘স্বাভাবিক’, ‘অবিকৃত’ ও ‘প্রকৃত’ উচ্চারণ।

 

ক. শব্দের আদিতে

১. পরবর্তী স্বর সংবৃত হলে শব্দের আদি ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: অতি (ওতি), করুণ (কোরুণ), করে (অসমাপিকা ‘কোরে’)। কিন্তু সমাপিকা ‘করে’ শব্দের ‘অ’ বিবৃত।

২. পরবর্তী ই, উ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ববর্তী র-ফলাযুক্ত ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: প্রতিভা (প্রোতিভা), প্রচুর (প্রোচুর) ইত্যাদি। কিন্তু অ, আ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ব ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন: প্রভাত, প্রত্যয়, প্রণাম ইত্যাদি।

৩. শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমনঅদ্য (ওদদো), কন্যা (কোননা) ইত্যাদি।

৪. ‘অ’-এর পরে ‘ক্ষ’ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ ধ্বনির মতো হয়। যেমনঅক্ষ (ওকখো), দক্ষ (দোকখো) ইত্যাদি।

৫. শব্দের প্রথমে ‘অ’-যুক্ত ‘র’ ফলা থাকলে সে ক্ষেত্রেও আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’কারের মতো হয়। যেমনক্রম (ক্রোমো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।

 

খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে

১. তর, তম, তন প্রত্যয়যুক্ত বিশ্লেষণ পদের অন্ত্য স্বর ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: প্রিয়তম (প্রিয়তমো), গুরুতর (গুরুতরো)।

২. ই, উ-এর পরবর্তী মধ্য ও অন্ত্য ‘অ’ সংবৃত। যেমন: পিয় (পিয়ো), যাবতীয় (যাবতীয়য়ো) ইত্যাদি।

 

বাংলায় একাক্ষর / Monosyllabic শব্দে ‘অ’ দীর্ঘ হয়। যেমন: কাজ শব্দের ‘অ’ দীর্ঘ এবং কাল শব্দের ‘আ’ হ্রস্ব। এরূপ: যা, পান, ধান, সাজ, চাল, চাঁদ, বাঁশ।

ই ঈ: বাংলায় সাধারণত হ্রস্ব ই-ধ্বনি এবং দীর্ঘ ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। একাক্ষর শব্দের ই বা ঈ-দুটোই দীর্ঘ হয়। যেমন: বিষ, বিশ, দীন, দিন, শীত।

উ ঊ: বাংলায় উ বা ঊ ধ্বনির উচ্চারণে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। ই বা ঈ-ধ্বনির মতো একাক্ষর শব্দে এবং বহু অক্ষর-বিশিষ্ট বদ্ধাক্ষরে বা প্রান্তিক যুক্তাক্ষরে উচ্চারণ সামান্য দীর্ঘ হয়। যেমন: চুল (দীর্ঘ), চুলা (হ্রস্ব), ভূত, মুক্ত, তুলতুলে, তুফান, বহু, অজু, করুণ।

ঋ: স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে ঋ-এর উচ্চারণ রি অথবা রী-এর মতো হয়। আর ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হলে র-ফলা+ই-কার এর মতো হয়। যেমন: ঋণ, ঋতু, (রীন, রীতু), মাতৃ (মাত্রি), কৃষ্টি (ক্রিষ্টি)।

 

এ-ধ্বনির উচ্চারণ

সংস্কৃত প্রয়োগ অনুসারেই বাংলা বর্ণমালায় এটি স্বরবর্ণের মধ্যে রক্ষিত হয়েছে।

এ: এ-ধ্বনির উচ্চারণ দুই রকম: সংবৃত ও বিবৃত। যেমন: মেঘ, সংবৃত/বিবৃত, খেলা (খ্যালা), বিবৃত।

১. সংবৃত

ক. পদের অন্তে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: পথে, ঘাটে, দোষে, গুণে, আসে ইত্যাদি।

খ. তৎসম শব্দের প্রথমে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন: দেশ, প্রেম, শেষ ইত্যাদি।

গ. একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: কে, সে, যে।

ঘ. ‘হ’ কিংবা আকারবিহীন যুক্তধ্বনি পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: দেহ, কেহ, কেষ্ট।

ঙ. ‘ই’ বা ‘উ’-কার পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: দেখি, রেণু, বেলুন।


২. বিবৃত:

‘এ’ ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ ইংরেজি ক্যাট/ cat ও ব্যাট / bat -এর ‘এ’ /ধ-এর মতো। যেমন: দেখ (দ্যাখ), একা (এ্যাকা) ইত্যাদি।

ধ্বনির এই বিবৃত উচ্চারণ কেবল শব্দের আদিতেই পাওয়া যায়, শব্দের মধ্যে ও অন্তে পাওয়া যায় না।

ক. দুই অক্ষর বিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয় পদে। যেমন: এত, হেন, কেন ইত্যাদি। কিন্তু ব্যতিক্রম-যেমন, সেথা, হেথা।

খ. অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দু যুক্ত ধ্বনির আগের ধ্বনি বিবৃত। যেমন: খেংড়া, চেংড়া, স্যাঁতসেঁতে, গেঁজেল।

গ. খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন: খেমটা, ঢেপসা, তেলাপোকা, তেনা, দেওর।

ঘ. এক, এগার, তের কয়টি সংখ্যাবাচক শব্দে। ‘এক’ যুক্ত শব্দেও। যেমন: একচোট, একতলা, একঘরে ইত্যাদি।

ঙ. ক্রিয়াপদের বর্তমান কালের অনুজ্ঞায়, তুচ্ছার্থ ও সাধারণ মধ্যম পুরুষের রূপে। যেমন: দেখ্ (দ্যাখ), দেখ (দ্যাখো), খেল্ (খ্যাল), খেল (খ্যালো), ফেল (ফ্যাল), ফেল (ফ্যালো) ইত্যাদি।

 

ঐ: ধ্বনিটি একটি যৌগিক স্বরধ্বনি। অ+ই কিংবা ও+ই=অই, ওই। অ, ই দুটো স্বরের মিলিত ধ্বনিতে ঐ-ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যেমন: ক +অ+ই=কই/কৈ, বৃ +ই+ধ=বৈধ ইত্যাদি। এরূপ: বৈদেশিক, ঐক্য, চৈতন্য।

ও: বাংলা একাক্ষর শব্দে ও-কার দীর্ঘ হয়। যেমন: গো, জোর, রোগ, ভোর, কোন, বোন ইত্যাদি অন্যত্র সাধারণত হ্রস্ব হয়। যেমন: সোনা, কারো, পুরোভাগ। ও-এর উচ্চারণ ইংরেজি বোট / boat শব্দের / oa -এর মতো।

--যবনিকা পাত--

No comments: