স্বরধ্বনির উচ্চারণ
অ-ধ্বনির উচ্চারণ
শব্দে
অবস্থানভেদে ‘অ’ দুইভাবে লিখিত হয়। যেমন:
১.
স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন: অমর, অনেক।
২.
শব্দের মধ্যে অন্য বর্ণের সঙ্গে বিলীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন: কর, বল। এখানে ক ও র
আর ব ও ল বর্ণের সঙ্গে অ বিলীন হয়ে আছে। (ক্+অর্++অ; ব্+অ+ল্+অ)।
শব্দের অ-ধ্বনির দুই রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়
১.
বিবৃত বা স্বাভাবিক(অ এর উচ্চারণ অ) উচ্চারণ। অর্থাৎ ঠোট গোল হয় না। যেমন: অমল,
অনেক, কত।
২.
সংবৃত বা ও-ধ্বনির মতো উচ্চারণ। অর্থাৎ ঠোট গোল হয়। যেমন: অধীর, অতুল, মন। এ
উচ্চারণগুলোতে অ-এর উচ্চারণ অনেকটা ও-এর মতো (ওধীর, ওতুল, মোন)।
‘অ’-ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ
ক. শব্দের আদিতে
১.
শব্দের আদিতে না-বোধক ‘অ’ যেমন: অটল, অনাচার।
২.
‘অ’ কিংবা ‘আ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন: অমানিশা, অনাচার,
কথা।
খ. শব্দের মধ্যে ও
অন্তে
১.
পূর্ব স্বরের সঙ্গে মিল রেখে স্বরসঙ্গতির কারণে বিবৃত ‘অ’। যেমন: কলম, বৈধতা, যত,
শ্রেয়ঃ।
২.
ঋ-ধ্বনি, এ-ধ্বনি, ঐ-ধ্বনি এবং ঔ-ধ্বনির পরবর্তী ‘অ’ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমন: তৃণ,
দেব, বৈধ, নোলক, মৌন।
৩.
অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন: গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।
অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ
অ-ধ্বনির
বিবৃত উচ্চারণে চোয়াল বেশি ফাঁক হয়। ঠোঁট তত বাঁকা বা গোল হয় না। কিন্তু সংবৃত
উচ্চারণে চোয়ালের ফাঁক কম ও ঠোঁট গোলাকৃত হয়ে ‘ও’-এর মতো উচ্চারিত হয়। সংবৃত
উচ্চারণকে ‘বিকৃত’, ‘অপ্রকৃত’ বা ‘অস্বাভাবিক’ উচ্চারণ বলা অপ্রাসঙ্গিক। সংবৃত
উচ্চারণও ‘স্বাভাবিক’, ‘অবিকৃত’ ও ‘প্রকৃত’ উচ্চারণ।
ক. শব্দের আদিতে
১.
পরবর্তী স্বর সংবৃত হলে শব্দের আদি ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: অতি (ওতি), করুণ (কোরুণ),
করে (অসমাপিকা ‘কোরে’)। কিন্তু সমাপিকা ‘করে’ শব্দের ‘অ’ বিবৃত।
২.
পরবর্তী ই, উ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ববর্তী র-ফলাযুক্ত ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: প্রতিভা
(প্রোতিভা), প্রচুর (প্রোচুর) ইত্যাদি। কিন্তু অ, আ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ব ‘অ’
বিবৃত হয়। যেমন: প্রভাত, প্রত্যয়, প্রণাম ইত্যাদি।
৩.
শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর
উচ্চারণ ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন—অদ্য (ওদদো), কন্যা (কোননা) ইত্যাদি।
৪.
‘অ’-এর পরে ‘ক্ষ’ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ ধ্বনির মতো হয়। যেমন—অক্ষ
(ওকখো), দক্ষ (দোকখো) ইত্যাদি।
৫.
শব্দের প্রথমে ‘অ’-যুক্ত ‘র’ ফলা থাকলে সে ক্ষেত্রেও আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’কারের
মতো হয়। যেমন—ক্রম
(ক্রোমো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।
খ. শব্দের মধ্যে ও
অন্তে
১.
তর, তম, তন প্রত্যয়যুক্ত বিশ্লেষণ পদের অন্ত্য স্বর ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন: প্রিয়তম
(প্রিয়তমো), গুরুতর (গুরুতরো)।
২.
ই, উ-এর পরবর্তী মধ্য ও অন্ত্য ‘অ’ সংবৃত। যেমন: পিয় (পিয়ো), যাবতীয় (যাবতীয়য়ো) ইত্যাদি।
বাংলায়
একাক্ষর / Monosyllabic
শব্দে ‘অ’ দীর্ঘ হয়। যেমন: কাজ শব্দের ‘অ’ দীর্ঘ এবং কাল শব্দের ‘আ’ হ্রস্ব। এরূপ:
যা, পান, ধান, সাজ, চাল, চাঁদ, বাঁশ।
ই
ঈ: বাংলায় সাধারণত হ্রস্ব ই-ধ্বনি এবং দীর্ঘ ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে কোনো পার্থক্য দেখা
যায় না। একাক্ষর শব্দের ই বা ঈ-দুটোই দীর্ঘ হয়। যেমন: বিষ, বিশ, দীন, দিন, শীত।
উ
ঊ: বাংলায় উ বা ঊ ধ্বনির উচ্চারণে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। ই বা ঈ-ধ্বনির
মতো একাক্ষর শব্দে এবং বহু অক্ষর-বিশিষ্ট বদ্ধাক্ষরে বা প্রান্তিক যুক্তাক্ষরে
উচ্চারণ সামান্য দীর্ঘ হয়। যেমন: চুল (দীর্ঘ), চুলা (হ্রস্ব), ভূত, মুক্ত,
তুলতুলে, তুফান, বহু, অজু, করুণ।
ঋ:
স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে ঋ-এর উচ্চারণ রি অথবা রী-এর মতো হয়। আর ব্যঞ্জন ধ্বনির
সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হলে র-ফলা+ই-কার এর মতো হয়। যেমন: ঋণ, ঋতু, (রীন, রীতু),
মাতৃ (মাত্রি), কৃষ্টি (ক্রিষ্টি)।
এ-ধ্বনির উচ্চারণ
সংস্কৃত প্রয়োগ অনুসারেই বাংলা বর্ণমালায়
এটি স্বরবর্ণের মধ্যে রক্ষিত হয়েছে।
এ: এ-ধ্বনির উচ্চারণ দুই রকম: সংবৃত
ও বিবৃত। যেমন: মেঘ, সংবৃত/বিবৃত, খেলা (খ্যালা), বিবৃত।
১. সংবৃত
ক. পদের অন্তে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন:
পথে, ঘাটে, দোষে, গুণে, আসে ইত্যাদি।
খ. তৎসম শব্দের প্রথমে ব্যঞ্জনধ্বনির
সঙ্গে যুক্ত ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন: দেশ, প্রেম, শেষ ইত্যাদি।
গ. একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সংবৃত
হয়। যেমন: কে, সে, যে।
ঘ. ‘হ’ কিংবা আকারবিহীন যুক্তধ্বনি
পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন: দেহ, কেহ, কেষ্ট।
ঙ. ‘ই’ বা ‘উ’-কার পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত
হয়। যেমন: দেখি, রেণু, বেলুন।
২. বিবৃত:
‘এ’ ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ ইংরেজি ক্যাট/
cat ও ব্যাট / bat -এর ‘এ’ /ধ-এর মতো। যেমন: দেখ (দ্যাখ), একা (এ্যাকা) ইত্যাদি।
ধ্বনির এই বিবৃত উচ্চারণ কেবল শব্দের
আদিতেই পাওয়া যায়, শব্দের মধ্যে ও অন্তে পাওয়া যায় না।
ক. দুই অক্ষর বিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয়
পদে। যেমন: এত, হেন, কেন ইত্যাদি। কিন্তু ব্যতিক্রম-যেমন, সেথা, হেথা।
খ. অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দু যুক্ত
ধ্বনির আগের ধ্বনি বিবৃত। যেমন: খেংড়া, চেংড়া, স্যাঁতসেঁতে, গেঁজেল।
গ. খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন: খেমটা,
ঢেপসা, তেলাপোকা, তেনা, দেওর।
ঘ. এক, এগার, তের কয়টি সংখ্যাবাচক শব্দে।
‘এক’ যুক্ত শব্দেও। যেমন: একচোট, একতলা, একঘরে ইত্যাদি।
ঙ. ক্রিয়াপদের বর্তমান কালের অনুজ্ঞায়,
তুচ্ছার্থ ও সাধারণ মধ্যম পুরুষের রূপে। যেমন: দেখ্ (দ্যাখ), দেখ (দ্যাখো), খেল্ (খ্যাল),
খেল (খ্যালো), ফেল (ফ্যাল), ফেল (ফ্যালো) ইত্যাদি।
ঐ: ধ্বনিটি একটি যৌগিক স্বরধ্বনি।
অ+ই কিংবা ও+ই=অই, ওই। অ, ই দুটো স্বরের মিলিত ধ্বনিতে ঐ-ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যেমন: ক
+অ+ই=কই/কৈ, বৃ +ই+ধ=বৈধ ইত্যাদি। এরূপ: বৈদেশিক, ঐক্য, চৈতন্য।
ও: বাংলা একাক্ষর শব্দে ও-কার দীর্ঘ
হয়। যেমন: গো, জোর, রোগ, ভোর, কোন, বোন ইত্যাদি অন্যত্র সাধারণত হ্রস্ব হয়। যেমন: সোনা,
কারো, পুরোভাগ। ও-এর উচ্চারণ ইংরেজি বোট / boat শব্দের / oa -এর মতো।
--যবনিকা পাত--
No comments:
Post a Comment