চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Sunday, July 26, 2020

                           শ্রমের মর্যাদা

(সংকেত: ভূমিকা; শ্রম কী এবং শ্রমের ধরণ; শ্রমের ক্ষেত্র; শ্রমের আবশ্যকতা; শ্রমের মহিমা; শ্রম ও সভ্যতা; ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে শ্রমের মর্যাদা; শ্রমের জয়; শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ; কর্ম ও শ্রমবিমুখ ব্যক্তির অবস্থা; শ্রমিক লঞ্চনা; মানসিক বিকাশে শ্রমের গুরুত্ব; ছাত্র-জীবনে শ্রমের গুরুত্ব; জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব; উপসংহার।)

ভূমিকা: “কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন
             হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন”
                                                  -ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

পৃথিবীর সব জিনিস মানুষের শ্রমলব্ধ। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম করেই বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবন-যাত্রার মান বাড়াতে হলে, জীবনকে সুখী করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। জীবনে অর্থ, বিদ্যা, যশ, প্রতিপত্তি অর্জন করতে হলে তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। কর্মসাধনার মাধ্যমেই জীবনে সফলতার স্বর্ণ দুয়ারে পৌঁছানো সম্ভব। তাই শ্রমেই সফলতা, শ্রমেই সুখ, শ্রমই জীবন।

শ্রম কী এবং শ্রমের ধরণ: মানুষ কোনো কাজ সম্পন্ন করতে যে শারীরিক বা মানসিক শক্তি দিয়ে থাকে তাকে শ্রম বলে। শ্রম সাধারণত দু’ধরণের । যথা: মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করতে হলে সব মানুষকেই কম-বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম করতে হয়। প্রত্যেক মানুষই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে থাকে।

মানসিক শ্রম: মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে মানুষ তার মেধা মনন দিয়ে যে শ্রম দেয় তাই মানসিক শ্রম। মানুষের জীবনে মানসিক শ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক শ্রম ব্যতীত মানুষের মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়। কথায় বলে- “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ শ্রমবিমুখ ব্যক্তির মনে কখনও ভালো চিন্তার উদয় হয় না। পক্ষান্তরে পরিশ্রমী ব্যক্তির মন সব সময় সতেজ হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও শিল্পীর পরিশ্রম মূলত মানসিক।

শারীরিক বা কায়িক শ্রম: মানুষ তার শারিরীক শক্তি দিয়ে কোনো কাজে যে শ্রম দেয় তাই শারীরিক শ্রম। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য মানসিক ও শরীরিক দুই প্রকার শ্রমকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক শ্রম মূলত কাজের প্রেরণা যোগায় আর শারীরিক শ্রম তা সমাধান করতে সাহায্য করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের শরীরিক কাজকর্ম করার জন্য বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ দান করেছেন। এ সব ব্যবহার করে যে শ্রম দেয়া হয় তাই শারিরীক শ্রম।

শ্রমের ক্ষেত্র: "Man is the architect of this fortune" অর্থাৎ “মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রা”। এ কর্মমুখর জীবনে মানুষকে নিরন্তর কোনো না কোনো প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে হয়। "Life isnot a bed of rose" জীবন পুষ্প-শয্যা নয়। মানুষকে এ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হলে একমাত্র শ্রমের সাহায্যেই টিকে থাকতে হবে। তাই বলা যেতে পারে মানবজীবন মাত্রই শ্রমের কর্মশালা আর পৃথিবী হলো কর্মক্ষেত্র।

শ্রমের আবশ্যকতা: শ্রমই মানুষকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়। শ্রম ব্যতিত পৃথিবীতে কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। পৃথিবীর যে জাতি যতবেশি পরিশ্রমী, সে জাতি ততো বেশি উন্নত ও সম্পদশালী। যেকোনো শ্রমেরই মূল্য আছে। যার জীবনে শ্রমের যন্ত্রণা নেই, তার কিছুই আশা করা উচিত নয়। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমই মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে পারে।

শ্রমের মহিমা: ‘মর্যাদা’ শব্দের অভিধানিক অর্থ মূল্যায়ন বা সম্মান প্রদর্শন করা। অর্থাৎ মানুষের সকল প্রকার শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের প্রতি যথাযথ সম্মান বা মূল্যায়ন প্রদর্শন করাকে শ্রমের মর্যাদা বলে। আমাদের উচিত সব ধরণের শ্রমকে সম্মানের চোখে দেখা। নিজের হাতে কাজ করাকে হীন মনে করা যাবে না। অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন, সমাজের সব শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। কুলি-মজুর, মেথর, চাষী, ডাক-হরকরা, দোকানী, কেরানী প্রভৃতি ব্যক্তিদের শ্রমকে খাটো করে দেখা যাবে না। এসব শ্রমজীবী মানুষ ছাড়া আমাদের সমাজ এক মুহূর্তও চলবে না। তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য দিতে হবে।

শ্রম ও সভ্যতা: সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে শুরু হয়েছে শ্রমের বন্যা, আজও তার শেষ নেই। বর্তমান শতাব্দীর উন্নতির মূলেও রয়েছে নিরলস শ্রমের অবদান। শ্রমজীবী মানুষই নতুন নতুন সভ্যতার সৃষ্টি করেছে। শ্রম শুধু মানুষের সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রকই নয়, সভ্যতা বিকাশেরও অন্যতম একটি হাতিয়ার। পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার মূলে রয়েছে মানুষের পরিশ্রম। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, জাপান, জার্মানি প্রভৃতি দেশ শ্রমের জন্যই উন্নত। আজ বিশ্বে তারা সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় পেয়েছে শ্রমের কারণে। তাই আমাদের সভ্যতাকে বিকশিত করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে।

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে শ্রমের মর্যাদা: সব ধর্মেই শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও শ্রমের মর্যাদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) নিজের সকল কাজ নিজ হাতে করতেন। তিনি কোনো কাজকে ছোট মনে করতেন না। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকেও নিজ হাতে কাজ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। শ্রমের মর্যাদা দিতে গিয়ে মহানবী (স.) বলেছেন- “শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার পাওনা পরিশোধ করে দাও।” আবার উপনিষদে বলা হয়েছে ‘শ্রম বিনা শ্রী হয় না’। এতে শ্রমের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

শ্রমের জয়: এক সময় মানুষ অনেক ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করলেও তার যথাযথ প্রাপ্য ও মূল্যায়ন পেত না। তাদেরকে নানাভাবে শাসন ও শোষণ করা হতো। তাই মানুষ শ্রমের মর্যাদা লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে এবং আন্দোলনে লিপ্ত হয়। ১৮৮৫ সালের মে মাসে আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য দাবি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে। এতে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হয়। ঐ দিন থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্ব মে দিবস পালন করা হয় এবং শ্রমিকেরা শ্রমক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অধিকার লাভ করে। বিশ্ব মে দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকে সচেতন করা।

শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ: পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিগণ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেন- “আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দূরূহ তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।” বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এক হাজার বারের চেষ্টায় বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করতে পেরেছেন। দার্শনিক ডাল্টন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- “লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না।” ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) আজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, আইনস্টাইন প্রমুখ মনীষী ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী।

কর্মবিমুখ ব্যক্তির অবস্থা: শ্রম ব্যতিত ব্যক্তি জীবনে সফলতা আসে না। শ্রমবিমুখ ব্যক্তি তার জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। সে তার জীবনে চলার পথে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। হতাশার জাল তাকে ঘিরে ফেলে। ফলে তার জীবন সমাজের অন্ধকার অতল গহ্বরের দিকে ধাবিত হয়।

শ্রমিক লাঞ্ছনা: মানব সভ্যতায় শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম। শ্রমিকেরাই মূলত সভ্যতার চাকাকে গতিশীল রাখছে। অথচ তারাই সমাজে সবচেয়ে বঞ্চিত। শ্রমিকরা অনেক সময় তাদের প্রাপ্য মজুরি পায় না। সমাজেও তারা নানাভাবে লাঞ্ছিত হয়। সমাজের উঁচু শ্রেণির অনেক মানুষ তাদের ঘৃণা করে। শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

মানসিক বিকাশে শ্রমের গুরুত্ব: কথায় আছে- “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” যখন কোনো মানুষ অলস থাকে, তখন নানা ধরণের খারাপ চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খায় এবং সে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু যখন সে শ্রম দিয়ে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কাজ করবে তখন তার মানসিক উন্নতি হবে। সে যখন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, তখন সে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে। এতে তার উন্নতির পথ উন্মুক্ত হয়।

ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব: ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন পরিশ্রমী ছাত্র বা ছাত্রী স্বল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। সমাজবিজ্ঞানী পার্সো বলেন- “প্রতিভা বলে কিছুই নেই, সাধনা কর; সিদ্ধি লাভ হবেই।”

জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব: শ্রমহীন কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা সমবেত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি। শ্রমের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারি। জাতীয় সম্পদের উন্নতির জন্য চাই সাধনা ও ধৈর্য। মূলত শ্রমের উপরই নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

উপসংহার: পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় হতে হলে, সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হলে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শ্রমের বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত শ্রমের সমষ্টিতে আসে জাতীয় জীবনে সফলতা। নিরলস পরিশ্রম করে মানুষ জগতের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ মহৎ কার্যাবলী সম্পাদন করে। এ সম্পর্কে মার্কুস বলেন- “জীবন যার মহৎ কাজে পরিপূর্ণ, মৃত্যুর পর তার কবরে মার্বেল পাথরের কারুকাজ না থাকলেও কিছু আসে যায় না।” শ্রমই মানুষের জীবনকে মহৎ করে তোলে। তাই আমাদের সবাইকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।
        পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

(সংকেত: ভূমিকা; পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী; পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ; পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণ; পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া; পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন; পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া; প্রতিরোধে করণীয়; বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ; বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপ; উপসংহার।)

ভূমিকা: সৃষ্টির আদিলগ্নে মানুষ ছিল একান্তভাবে পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। মানুষ ও পরিবেশ তখন একই সূত্রে গাঁথা ছিল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবেশ ও মানুষের মধ্যকার মৈত্রী সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। যেদিন মানুষ নিজেদের রুচি অনুসারে পরিবেশ গড়ে তুলতে চায় সেদিন থেকেই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। জীবনের তাগিদে, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে।

পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী: ইংরেজি Environment এর বাংলা প্রতিশব্দ পরিবেশ। এটি এসেছে ফরাসি শব্দ Environment থেকে যার অর্থ বেষ্টন করা বা ঘেরা। সাধারণভাবে বলতে গেলে আমাদের চারপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা, দালানকোঠা, নদ-নদী, খাল-বিল, মাটি, বায়ু, পানি ইত্যাদি সব কিছু মিলেই তৈরি হয় পরিবেশ। কিন্তু ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ ও অনূজীবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককেই পরিবেশ বলে। এস.সি কেন্ডেইগ-এর মতে- ‘পরিবেশ বলতে জৈবিক ও অজৈবিক বস্তুর যোগফল যা কোনো সৃষ্টির পরিবর্তনে সাহায্য করে তাকে বুঝি।’ কোনো কারণে যদি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের কাক্সিক্ষত মাত্রা বিনষ্ট হয় বা পরিবেশ জীব জগতের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে, তবে সেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে পরিবেশ দূষণ বলে।

পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ: পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব প্রাকৃতিক কারণ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী তার মধ্যে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি অন্যতম। এই বিপর্যয়ের ফলে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ব্যাপক ধ্বংসলীলা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এতে পরিবেশে মারাত্মক দূষণের সৃষ্টি হয়। ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে ব্যাপক সম্পদ ও প্রাণহানি ঘটে। বাংলাদেশ, চীন, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ঘূর্ণিঝড়ে, জাপান ও ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে অগ্নুৎপাতে এবং জাপান, ভারত, ইরানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের কারণে পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হয়।

পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণ: পরিবেশ দূষণের জন্য মানুষসৃষ্ট কারণগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী। কারণগুলো হলো-

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ: জনসংখ্যা বিস্ফোরণ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। একটি জরিপে দেখা গেছে ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি, সেখানে ২০১২ সালে তা প্রায় ৭০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই চাপে পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।

শিল্প বিপ্লব: অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শিল্পের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের সাথে সাথে তার প্রসার ঘটেছে। এই শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যাপকহারে বনজ ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শিল্প কারখানার নির্গত ধোয়া ও বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করছে।

বনভূমি ধ্বংস: বর্তমানে পরিবেশ দূষণের বড় কারণ বনজ সম্পদের ধ্বংস। একটি সুস্থ পরিবেশের জন্য যেখানে মোট ভূখন্ডের ২৫% বনভূমি থাকার দরকার তা পৃথিবীর বহু দেশে নেই। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা মেটাতে, ঘরবাড়ি, আসবাপপত্র ও শিল্প কারখানা প্রভৃতির জন্য ব্যাপক পরিমাণে বৃক্ষনিধন চলছে। এক জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে বিশ্বে বার্ষিক বন ধ্বংসের পরিমাণ ২ কোটি হেক্টর। বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষা মতে- পৃথিবীতে বছরে যে পরিমাণে বন ধ্বংস হচ্ছে তার পরিমাণ প্রতি দশ বছরে ভারতের মোট ভূখন্ডের সমান। উপগ্রহের চিত্রের সাহায্যে দেখা গেছে আফ্রিকার ৫৩% এবং এশিয়ায় ৩৫% এলাকায় কোনো না কোনো মাত্রায় মরুময়তা বিরাজ করে। পৃথিবীতে বনজ সম্পদ ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের অনেক অঞ্চলই মরুভূমিতে পরিণত হবে।

যুদ্ধ ও দুর্ঘটনা: যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্র, বোমা ও মরণাস্ত্রের ব্যবহার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৯৪৫ সালে জাপানের আনবিক বোমার বিস্ফোরণ, পরবর্তীতে রাশিয়ার চেরোনবিল দূর্ঘটনা, ভারতের ভূপালে গ্যাস দুর্ঘটনা, ২০০৩-০৪ সালে ইরাকে মরণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার ঐ সকল এলাকার পরিবেশকে ভয়াবহভাবে দূষিত করে তুলেছে।

পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া: প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণগুলোর জন্যই মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই দূষণের ফলেই পরিবেশ হয়ে উঠছে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। বাতাসে অতিমাত্রায় মিশ্রিত ক্ষতিকর গ্যাস এবং বিভিন্ন কলকারখানা, মোটরযান ও জ্বালানির ধোঁয়া থেকে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত হচ্ছে। রাসায়নিক সার, বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় আবর্জনা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে তেমনি মাটি দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন জৈব ও অজৈব, রাসায়নিক পদার্থ ও জীবানু দ্বারা দূষিত হচ্ছে পানি। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রের জোরালো শব্দের জন্য ঘটছে শব্দ দূষণ।

পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের হার বেড়েই চলছে। তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর ওপর। যার ফলে জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইট, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর তাপমাত্রা ব্যাপকহারে বাড়ছে যা গ্রিন হাউজ ইফেক্ট নামে পরিচিত। জার্মান ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘পস্টজাম ইনস্টিটিউট ফল ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ’ এর দেয়া তথ্য মতে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪০ বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে সমুদ্রের পানি ২০ থেকে ১৪০ সে.মি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার অনেক দেশই পানিতে ডুবে যাবে। মানবজাতির জন্য এটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া: পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনজীবনের উপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ যার শতকরা ৭০ ভাগ পানি দূষণের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়া বায়ু দূষণের ফলে সৃষ্ট শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত কারণে ঘটা মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখের মতো। অন্যদিকে জাতিসংঘ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে পরিবেশ দূষণের ফলে এশিয়ার আকাশে তিন কিলোমিটার পুরু ধোঁয়াশা জমেছে। যা এসিড বৃষ্টি ঘটাতে পারে। এটি এশিয়ার কোটি কোটি মানুষের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া প্রাকৃতিক দূষণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হেপাটাইটিস বি, সংক্রামণ সেরিব্রাল, পোলিও, কলেরা ইত্যাদি রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সাথে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে চামড়ার ক্যান্সার ও চোখের ছানি পড়া রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি খাদ্যশষ্যে তেজস্ক্রিয়াও বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়: পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। যন্ত্র ও গাড়ি থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস রোধ করতে হবে। এর বিকল্প স্বরূপ প্রাকৃতিক গ্যাস ও সৌরশক্তি নির্ভর যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ: পরিবেশ দূষণের মারাত্মক প্রতিফলন দেখে বিশ্ববাসী আজ উদ্বিগ্ন। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিভিন্ন সম্মেলন। ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালিত হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ ও ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিওতে, ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে, ২০০৯ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সম্মেলন যাতে পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপ: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে। এজন্যই ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পাশ করা হয় বাংলাদেশে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে সংশোধিত পরিবেশ সংরক্ষণ বিল ও পরিবেশ আদালত বিল পাশ হয়েছে। এছাড়া টু-স্টোক যানবাহন নিষিদ্ধ করে এর পরিবর্তে সিএনজি চালিত যানবাহনের ব্যবহার আরম্ভ হয়েছে। এমনকি ২০০২ সাল থেকে সারাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

উপসংহার: আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ বিশ্বজগতের জন্য একটি বিরাট হুমকি। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের অস্তিত্ব আজ চরম সংকটে। তাই পরিবেশ দূষণরোধে ব্যক্তিগতভাবে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সমষ্টিগতভাবে তা প্রতিরোধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আগামী দিনের জন্য একটি সুস্থ ও বসবাস উপযোগী দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলাই হোক সকলের অঙ্গীকার।
     বাংলাদেশে বেকার সমস্যা ও তার সমাধান

ভূমিকা: বেকার সমস্যা বেকার ব্যক্তির উপর যেমন অভিশাপস্বরূপ তেমনি কোনো দেশ বা জাতি কিংবা দেশের অর্থনীতির উপরও অভিশাপস্বরূপ। বাংলাদেশের যাবতীয় জটিল সমস্যাবলির মধ্যে বেকার সমস্যা অন্যতম প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে যেখানে শতকরা মাত্র ২৫ জন লোক শিক্ষিত সেখানে যদি অসংখ্য কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন বা বেকার হয়ে পড়ে, তাহলে দেশের সংকট যেকোনো স্তরে গিয়ে পৌঁছায় তা বলাই বাহুল্য।

বেকার: ‘বেকার’ শব্দটি ‘কার’ শব্দের পূর্বে ফরাসি ‘বে’ উপসর্গ যোগে সৃষ্টি। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কর্মহীন। সাধারণ অর্থে যার কোনো কাজ নেই বা যেকোনো কাজ করে না সে-ই বেকার। সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায়- বেকার হচ্ছে তারা যারা সামাজিক অবস্থায় যথেষ্ট কর্মক্ষম হওয়ার বিপরীতে কাজ পায় না। অর্থনীতির দৃষ্টিতে- কাজ করার যোগ্যতা বা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ না থাকার নাম বেকারত্ব। আর যে বা যারা কাজের সামর্থ্য ও ইচ্ছা থাকার পরও কাজের সুযোগ পায় না তারাই বেকার। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণভাবে বেকার বলতে আমরা দুই শ্রেণিকে বুঝি।

(ক) ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকার পরও যারা কাজের সুযোগ বঞ্চিত
(খ) সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরও যারা কাজ করে না।

সাধারণত কর্মহীনতাকে বেকারত্ব বলে। সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ হতে বেকারত্ব বলতে এমন একটি পরিস্থিতিতে বোঝায়, যাতে কর্মক্ষম ব্যক্তি বর্তমান মজুরিতে কর্মে ইচ্ছুক থাকা সত্ত্বেও কর্মে নিয়োগ লাভ করতে সক্ষম নয়। অর্থাৎ কর্মক্ষম ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বকে সামাজিক বেকারত্ব বলে।

অধ্যাপক পিগু বেকারত্ব সম্পর্কে বলেন,
“এখন কর্মক্ষম লোকেরা যোগ্যতা অনুসারে প্রচলিত মজুরীর ভিত্তিতে কাজ করতে চায় অথচ কাজ পায় না সে অবস্থাকে বেকারত্ব বলা হয়।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব: বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে সপ্তম। মাত্র ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কি. মি. এর এদেশে প্রায় ১৬ কোটি লোকের বসবাস। হিসেব মতে, কর্মক্ষম লোকের ২৭.৯৫ শতাংশ বেকার সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশের বেকারত্বের অন্যতম প্রধান কারণ কৃষিনির্ভরতা। মোট শ্রমশক্তির ৫১.৬৯ ভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল। চাষ ও ফসল কর্তনের সময় ব্যতিত তারা কোনো কাজ করে না। ফলে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় তারা বেকার থাকে। তাছাড়া কর্মমুখী শিক্ষার অভাব দিন দিন শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত লোকের শতকরা ৫০ ভাগ তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ পায় না। ফলে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন লোক যথার্থ কাজ পায় না। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতার কাজ করতে বাধ্য হয়। এটিও বেকারত্বের আর একটি বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণ:
(১) জনসংখ্যা বৃদ্ধি: বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান না হওয়ায় ক্রমান্বয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনও শতকরা ১.৪৮ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষিজ জমিতে বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে ফলে কৃষক তার ফসলী জমি হারাচ্ছে।

(২) ক্রটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা: ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থা আজও পরিবর্তিত হয় নি। তারা মূলত কেরানি তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও প্রচলিত আছে। শিক্ষিত লোক বাড়ছে অথচ কর্মমুখী শিক্ষিত লোক বাড়ছে না। ফলে শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেকার সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।

(৩) রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য এদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কম হওয়ায় পর্যাপ্ত কলকারখানা গড়ে ওঠে না, ফলে দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না।

(৪) মূলধনের অভাব: এদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কম বলে সঞ্চয়ের হারও কম। সঞ্চয় কম বলে বিনিয়োগ কম। এটিও বেকারত্বের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

(৫) কারিগরি জ্ঞানের অভাব: বাংলাদেশে বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে সে অনুপাতে দক্ষ শ্রমিক যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে, অদক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে থাকে।

(৬) চাকরি নিয়োগ অধ্যাদেশ: মাঝে মাঝে সরকার চাকরি নিয়োগ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করায় এদেশে সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে।

(৭) অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা: বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুন্নত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু আমাদের দেশের কৃষি মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভরশীল, সেহেতু বৃষ্টিপাত কম বেশি হলে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। ফলে বেকারত্বও বৃদ্ধি পায়।

(৮) কুটির শিল্পের অভাব: দেশীয় কাঁচামাল ও প্রযুক্তিনির্ভর কুটির শিল্পের প্রসার হয় নি এদেশে। যেগুলো আছে সেগুলোও পুঁজির অভাবে বিলুপ্তির পথে। তাই এদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো শিল্পের প্রায় বিলুপ্তি।

(৯) ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনা: দীর্ঘকালীন ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও বঞ্চনার কারণেও বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে। দুইশত বছরের শোষণ এবং পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের শোষণে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যায় এবং এদেশ পরিণত হয় বিদেশি বাজারে। এর ফলেও বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

(১০) মানসিক হীনম্মন্যতা: বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকাররা হীনম্মন্যতায় ভোগে। শারীরিক শ্রম বা ছোট চাকরিকে তারা অসম্মানের চোখে দেখে। তাছাড়া, পারিবারিক মানসম্মানের কথা চিন্তা করে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতার কাজ করতে চায় না। ফলে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

(১১) প্রাকৃতিক দুর্যোগ: নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ আক্রান্ত। বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নদী ভাঙ্গন ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। কৃষিপ্রধান এদেশে বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয় এবং কৃষক বেকার হয়ে যায়। তাছাড়া, নদী ভাঙ্গনে প্রতি বছর প্রচুর লোক গৃহহীন ও বেকার হচ্ছে।

(১২) নদীর নাব্যতা কমে যাওযা: নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে, জেলেরা এবং মাছ বিক্রেতারা বেকার হয়ে যাচ্ছে।

বেকারত্বের প্রভাব আর্থসামাজিক অবস্থা: পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পর্যন্ত বেকারত্ব একটি মারাত্বক সমস্যা। বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। আর্থ-সামাজিক অবস্থার বেকারত্বের প্রভাব-

(ক) বেকারত্বের কারণে ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে হতাশা এবং ক্ষোভ। এ হতাশা অনেক সময় তরুণ সমাজকে মাদকাসক্ত করে ফেলে।

(খ) অভাবে পড়ে মানুষ অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনে সচেষ্ট হয়। যেমন- চোরাচালানী, ছিনতাই, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতিসহ নানাবিধ অবৈধ উপায়ে মানুষ অর্থ উপার্জন করতে চেষ্টা করে ফলে সমাজ জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

(গ) বেকারত্বে ভুগতে ভুগতে মানুষ হতাশ হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত নানা ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।

(ঘ) পারিবারিক জীবনে বেকারত্ব এক মর্মান্তিক অভিশাপ। সংসার জীবনে অভাবের ফলে দাম্পত্য কলহ থেকে শুরু করে নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়।

(ঙ) বেকারত্ব যেহেতু মানুষকে হতাশ করে এবং মানুষ অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় তাই তারা দেশের উন্নয়নমূলক কাজ থেকে দূরে সরে যায়। বিশাল একটি জনগোষ্ঠী যদি দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদন থেকে দূরে সরে যায় এবং তার উপরে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তবে তা জাতীয় জীবনের জন্য হয় ভয়াবহ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রভাব পড়ে।
বেকার সমস্যার প্রতিকার / সমাধান : বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে সীমিত সম্পদ নিয়ে বেকারত্ব মোকাবিলা করা খুবই কঠিন কাজ। দীর্ঘ ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ব্যতিত এ সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না। বাংলাদেশের বেকার সমস্যা প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন-

(১) কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগবৃদ্ধি: ভূমির মালিকানার কাঠামো পরিবর্তন করে, খাস জমির সুষ্ঠু বণ্টন করে, কৃষিতে প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব।

(২) শিল্পক্ষেত্রে নিয়োগ: কুটির শিল্প এবং বৃহদায়তন শিল্প কারখানা স্থাপন করে এদেশে বেকার সমস্যার সমাধান করা যায়।

(৩) শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন: শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে উৎপাদন ও বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়।

(৪) নারী শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ ও উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়।

(৫) বিদেশে নিয়োগ বৃদ্ধি: আমাদের বেকার জনশক্তির একটা অংশকে প্রশিক্ষণ দান করে বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

(৬) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

(৭) কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ: আমাদের হারানো ঐহিহ্য কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে এবং মুমূর্ষু প্রায় কুটির শিল্পগুলোর জাগরণ ঘটাতে হবে। তাছাড়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এবং কদর বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য এক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সাহায্য দরকার।

(৮) কারিগরি শিক্ষার প্রসার: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের করার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। দেশে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনসমষ্টি সৃষ্টি করতে হবে।

(৯) সরকারি নিয়োগের গতি বৃদ্ধি: সরকারি নিয়োগের গতি ত্বরান্বিত করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় অনেক ক্ষেত্রে পদ শূন্য থাকে অথচ নিয়োগ দেওয়া হয় না।

(১০) বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি: বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রক্রিয়ায় বিদেশি দাতা গোষ্ঠীদের আকৃষ্ট করে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।

উপসংহার: জাতি হিসেবে আমাদের বাঁচতে হলে চাই এ বিরাট জাতীয় সমস্যার (বেকার সমস্যার) আশু সমাধান। নচেৎ আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য চাই সরকারি উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতা।

# তোমার বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ খ্রি.
প্রধান শিক্ষক, 
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন সম্পর্কিত প্রতিবেদন।
সূত্র: আতাবিকেউবি/২০১৮/১৪১

জনাব,
আতাবিকেউবি/২০১৮/১৪১ নম্বর স্মারক অনুযায়ী আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের ওপর প্রতিবেদন তৈরির জন্যে আদিষ্ট হয়ে নিচের প্রতিবেদনটি আপনার সমীপে পেশ করলাম।

আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত

১. গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

২. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক।

৩. রাত ১২টা ০১মিনিটে শহিদ মিনারে পুষ্প অর্পণের মধ্য দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। 

৪. বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবাই উপস্থিত ছিল। সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়েছিল একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ 

৫. সকাল ১০টায় শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একুশ নিয়ে রচিত কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতা শেষে আলোচনা সভা। 

৬. আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। কবিতা আবৃত্তির পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ছাত্র-শিক্ষক।

 ৭. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য’ বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণ করে ছাত্র, শিক্ষক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এপিএসসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলৗ এএমএম সাজ্জাদুর রহমান।

৮. আলোচনার পর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে মূল্যবান বই তুলে দেন মাননীয় প্রধান অতিথি।

পরিশেষে বলা যায়, অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠামালা শেষ হয়।

প্রতিবেদক-
মুমতারিন মালিহা
উজরিপুর, বরশিাল।
# তোমার বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিজ্ঞান মেলার উপর একটি প্রতিবেদন রচনা কর।

১৮ জুন, ২০১৮ খ্রি.
প্রধান শিক্ষক, 
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিজ্ঞান মেলার বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদন।
সূত্র: আতাবিকেউবি/২০১৮/১৫২

জনাব,
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিজ্ঞান মেলা সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরির জন্যে আতাবিকেউবি/২০১৮/১৫২ নম্বর স্মারক অনুযায়ী আদিষ্ট হয়ে নিচের প্রতিবেদনটি আপনার সমীপে পেশ করলাম।

আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত

১. গত ১৮ জুন, ২০১৮ তারিখে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী এক বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। সকাল ১০ টায় এপিএসসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলৗ এএমএম সাজ্জাদুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এ দিনটি আমার কাছে একটি আনন্দ ও গৌরবের দিন। দিনটি আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে। 

২. বিজ্ঞান মেলার শোভাবর্ধনের জন্য স্কুল মাঠটি নান রকম সাজে সজ্জিত করা হয়েছিল। স্কুলের প্রবেশ দ্বারটি নানা রকম ফুল দিয়ে খুবই সুন্দরভাবে সাজানো হয়। সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ঐ অনুষ্ঠান চলছিল। 

৩. শরীর চর্চা শিক্ষকের নের্তৃত্বে স্কাউট দল মেলার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। নির্দিষ্ট কর্মসূচি অনুযায়ী উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্কুলের প্রতিযোগীগণ তাদের তৈরি প্রদর্শনী বস্তু নিয়ে নিজ নিজ স্টলে বসে পড়ে। আমাদের স্কুলও উক্ত মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। স্টলের সংখ্যা ছিল ১৫ টি। 

৪. আগত অতিথিরা, শিক্ষার্থীরা এবং দর্শকবৃন্দ অত্যন্ত আগ্রহের সাথে প্রত্যেকটি স্টল ঘুরে দেখেন। বিজ্ঞানের কৃতিত্ব দেখে আনন্দ লাভ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এপিএসসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলৗ এএমএম সাজ্জাদুর রহমান। তিনি সবগুলো স্টল ঘুরে দেখেন এবং আমাদেরকে উৎসাহিত করেন। আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি দেখে সবাই বেশ প্রশংসা করেন। বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেন প্রধান অতিথিসহ অনেকে।

৫. দশম শ্রেণির একটি দল সরু তারদিয়ে টিলিফোন বানিয়েছিলাম এবং ইঁদুর মারার কল বানিয়েছিলাম। দুটো প্রদর্শনী সবার কাছে সমাদৃত হয়েছিল। আর ষষ্ঠ শ্রেণির একটি দল দেখায় পরিত্যক্ত কলম ও বাল্ব দ্বারা পেপারওয়েট বানানো যায়।

৬. মেলা বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে। প্রতিটি শ্রেণির একটি দলকে মেলা শেষে ৫০০০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেন মামনীয় প্রধান অতিথি। সভাপতি মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞান মেলায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখার মতো ছিল। অনেক শিক্ষার্থী এ ধরণের কাজে আগ্রহ দেখিয়েছে। অঅএব, বিজ্ঞান মেলার আয়োজন সার্থক হয়েছে এক কথায় বলা যায়।

প্রতিবেদক-
মুমতারিন মালিহা
উজরিপুর, বরশিাল।
# বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ ও এর প্রতিকার সম্বন্ধে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রচনা কর।

প্রতিবেদনের প্রকৃতি : বিশেষ প্রতিবেদন/সংবাদ প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের শিরোনাম : বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ ও তার প্রতিকার
পতিবেদনের লক্ষ্য : বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ খঁজে বের করা ও এর প্রতিকার
সরোজমিনে পরিদর্শন : এই বিষয়ে সংশিষ্টদের সাক্ষাৎকার
প্রস্তুতের সময় ও তারিখ  : রাত ৯টা, ১৮ জুন, ২০১৮ 
প্রতিবেদকের নাম : মুমতারিন মালিহা

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ ও তার প্রতিকার

বর্তমান সভ্যতা সর্বতোভাবে বিদ্যুৎনির্ভর হলেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট অত্যন্ত প্রকট। এ তীব্র বিদ্যুৎ ঘাটতি এদেশের জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রাত্যহিক জীবনযাপন থেকে শুরু করে শিল্পায়ন, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রেই মানুষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনে ও রাতে একাধিরবার দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বিদ্যুৎ সংযোগ যে আছে মাঝে মাঝে সেকথা ভুলে যেতে হয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ নির্ণয় করে তার আশু সমাধান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। 

অনুসন্ধানে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের নিম্নলিখিত কারণগুলো ধরা পড়েছে-

১. দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী বিদুৎ উৎপাদন প্রয়োজন প্রায় ৯০০০ মেগাওয়াট, কিন্তু গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ৬০০০ মেগাওয়াট।

২. বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার আনুপাতিক হারে যোগান বাড়ে নি গত পঁচিশ বছরে।
৩. আমলাতান্ত্রিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কোনো সংস্কার হয় নি।
৪. বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি সারাদেশে সমভাবে বণ্টন করলে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট কিছুটা হলেও কম হতো।
৫. জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামালের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
৬. নতুন উৎপাদন কেন্দ্রস্থাপনের অর্থ, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অভাব।
৭. সরকারের পরনির্ভরশীল মনোভাব।
৮. অবৈধ সংযোগ, সিস্টেম লস ও কৃচ্ছতার অভাব।
৯. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক জটিলতা।
১০. বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থাপন না করা।
১১. অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থাপন না করা।

বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের পরিমাণ কমিয়ে আনা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের প্রতিকারকল্পে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমে আসবে বলে অনেকে মনে করেন।

১. প্রয়্রোজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রস্থাপন ও পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সংস্কার করা।
২. অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা।
৩. উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুষমভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করা।
৪. সেচ পাম্পগুলো দিনের বেলায় বন্ধ রেখে রাতের বেলায় চালানো।
৫. মার্কেট ও বিপনিবিতানগুলোতে আলোকসজ্জা কমিয়ে আনা।
৬. সৌর বিদ্যুৎখাতে সরকারি ভর্তুকি বাড়িয়ে দিয়ে এর ব্যবহার জনপ্রিয় করা।
৭. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এনার্জি সেভিংস বাল্ব কম মূল্যে সাধারণ জনগণের মাঝে সরবরাহ করা।
৮. রাতের বেলা দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা।
৯. বায়োগ্যাসের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১০. বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থাপন করা।
১১. অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থাপন করা।

উপর্যুক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করলে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট অনেকাংশে কমে আসবে। গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে। কৃষিজ ও শিল্পজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে আলোকিত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে।

প্রতিবেদক-
মুমতারিন মালিহা
উজিরপুর, বরিশাল।

  
প্রেরক, 
মুমতারিন মালিহা 
গ্রাম + পো: ডহরপাড়া 
উপজেলা: উজিরপুর 
জেলা: বরিশাল।
 ডাক টিকিট
প্রাপক, 
সম্পাদক 
দৈনিক ইত্তেফাক, 
১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, 
ঢাকা-১২০৫।

Friday, July 24, 2020

# বিদ্যালয়ে ক্যান্টিন স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট আবেদনপত্র লেখ।

২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ খৃ:
প্রধান শিক্ষক,
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: বিদ্যালয়ে ক্যান্টিন স্থাপনের জন্যে আবেদন।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা আপনার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী। আমাদের বিদ্যালয় অত্র অঞ্চলের নামকরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত অধ্যনরত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের বিদ্যালয়ে এখ নপর্যন্ত কোনো ক্যান্টিনের ব্যবষ্থা করা হয় নি। আমাদের ক্লাস সকাল আটটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত হয়। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থী বেশ দূর থেকে আসে।তারা বিদ্যালয়ে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করে। অথচ ওই সময়ে ক্ষুধার্ত থাকলেও কোনো কিছু কিনে খাওয়ার সুযোগ পায় না। আর বিদ্যালয়ের পাশে, রাস্তার ধারে যেসম দোকান আছে সেগুলোতে যেসব খাবার পাওয়া যায় তা অধিক মূল্যে ক্রয় করতে হয় এবং খাবারগুলো মানসম্মতও নয়। এরকম অবস্থায় আমরা সব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ক্যান্টিন স্থাপনের আবেদন করছি।

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমাদের বিদ্যালয়ে ক্যান্টিন স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাধিত করবেন।

নিবেদিক-
বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষে
মুমতারিন মালিহা-১০ম-খ-০১
শুপতা ইসলাম-১০ম-খ-০২

# শিক্ষা সফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট আবেদনপত্র লেখ

২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ খৃ:
প্রধান শিক্ষক,
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অনুমতির জন্য আবেদন।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা আপনার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা শিক্ষাসফরে যাওয়ার  মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। পাঠ্যসূচিভুক্ত তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে শিক্ষাসফরের কোনো বিকল্প নেই, সে বিষয়ে সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী প্রায়ই আমাদের অবগত করেন। বাস্তবিকই শিক্ষাসফর শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত, সে বিষয়টা পড়ার পাশাপাশি যদি বাস্তবে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় তবে তা যে জ্ঞান লাভে আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে, সে ব্যাপারে আপনি আমাদের চেয়েও ভাল জানেন। তাই আপনার অনুমতি সাপেক্ষে আমরা বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শিক্ষাসফরে যেতে ইচ্ছুক। মহাস্থানগড় সম্পর্কে আমরা পাঠ্যসূচিতে পড়েছি, এবার এ ঐতিহাসিক স্থানটি বাস্তবে দেখতে চাই।

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমাদেরকে শিক্ষাসফরের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে বাধিত করবেন।

নিবেদিক-
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে
শুপতা ইসলাম
শ্রেণি: অষ্টম  
রোল নং ০১
শাখা: খ

তোমার এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা জানিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি পত্র লেখ।

২০ মার্চ, ২০১৮ খৃ:
সম্পাদক,
দৈনিক ইত্তেফাক,
১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,
ঢাকা-১২০৩।

বিষয়: চিঠিপত্র কলামে নিচের সংবাদটি প্রকাশের আবেদন।

জনাব,
আপনার সম্পাদিত বহুল প্রচলিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিম্নোক্ত পত্রটি প্রকাশ করে এলাকাবাসীর উপকারে অবদান রাখার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক-
মো: মোহায়মনি
ডহরপাড়া, বরিশাল।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চাই

বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার ডহরপাড়া একটি গ্রাম। এই গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে শান্তিতে বসবাস করে আসছিল। এলাকার বেশির ভাগ লোক শিক্ষিত এবং ব্যবসায়ী। অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে ডহরপাড়া অঞ্চলে। ফলে এখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানা ধরনের মানুষের সমাবেশ ঘটে। আস্তে আস্তে পরিবেশ ঘোলাটে হয়ে ওঠে। জমে ওঠে নেশার আড্ডা। নানা ধরনের অপকৃীর্তি শুরু হয় সমাজে। সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হলেই সন্ত্রাসী, নেশাখোর, চাঁদাবাজ আর ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়তে হয়। মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে বকাটে ছেলেদের দ্বারা উত্যক্ত হয়ে থাকে। এলাকা থেকে থানা সদর অনেক দূরে  হওয়ায় বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে যে, ঘর থেকে বের হওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজদের ভয়ে ঘরে বসেও মানুষ আজ স্বস্থির নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। সারাক্ষণ একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকায়। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে অত্র অঞ্চলের জনগণকে শান্তিতে বসবাস করতে দিন।

সুতরাং উপর্যুক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাছি।

নিবেদক-
এলাকাবাসীর পক্ষে 
মো: মোহায়মিন


   
   প্রেরক,
   মো:মোহায়মিন
   গ্রা:+পো: ডহড়পাড়া
   উপজেলা: উজিরপুর
   জেলা: বরিশাল।
                                         ডাক টিকিট
 প্রাপক,                                
   সম্পাদক,
   দৈনিক ইত্তেফাক,
   ১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,
   ঢাকা-১২০৩।

#  তোমার এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিকার চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি পত্র লেখ।

২০ মার্চ, ২০১১খৃঃ
সম্পাদক,
দৈনিক ইত্তেফাক,
১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,
ঢাকা-১২০৩।

বিষয়: চিঠিপত্র কলামে নিচের সংবাদটি প্রকাশের আবেদন।

জনাব,
আপনার সম্পাদিত বহুল প্রচলিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিম্নোক্ত পত্রটি প্রকাশ করে এলাকাবাসীর উপকারে অবদান রাখার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক-
মো: মোহায়মিন 
ডহরপাড়া, বরিশাল।

নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ চাই

বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার অন্তর্গত ডহরপাড়া একটি জনবহুল গ্রাম। এ গ্রামে প্রায় আট হাজার লোকের বাস। পাঁচ বছর পূর্বে গ্রামটি বিদ্যুতায়িত হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বিদ্যুতায়নের পর থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট এ এলাকা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ১০/১২ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। বিদ্যুতের এ লুকোচুরি খেলায় এলাকাবাসী নানামুখী সমস্যার শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে নানাভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হলেও কোনো সুফল আসে নি। বিদ্যুতের যাওয়া-আসার বিড়ম্বনা থেকে আমাদের আর মুক্তি হবে কিনা, কেউই তা জানে না।

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা কোন ঋতুতেই বিদ্যুতের বিড়ম্বনা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায় আর আসে রাত এগারটার দিকে। এটি একটি নিয়মিত ব্যাপার। যে সময় বিদ্যুৎ মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সে সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। সারাদিন বিদ্যুৎ থাকলেও ঘন ঘন তার আসা-যাওয়া চলেই। বিদ্যুৎ সরবরাহের এ অনিয়মের কারণে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ এক বিড়ম্বনা রূপে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছে না। এলাকায় ছোটখাট যে উৎপাদনশীল কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। ফলে মালিকপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেচ ব্যবস্থাতেও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে প্রায়ই চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের অনিয়ম এলাকায় ছিঁচকে চোরের উপদ্রব মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামবাসীর রাতের ঘুম প্রায় হারাম হতে বসেছে। এই বিড়ম্বনা থেকে ডহরপাড়া বাসীকে মুক্তি দিতে নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নিবেদক-
এলাকাবাসীর পক্ষে-
মো: মোহায়মিন 
ডহরপাড়া, বরিশাল।


   প্রেরক,
   মো:মোহায়মিন
   গ্রা:+পো: ডহড়পাড়া
   উপজেলা: উজিরপুর
   জেলা: বরিশাল।
                                         ডাক টিকিট
  প্রাপক,                                
   সম্পাদক,
   দৈনিক ইত্তেফাক,
   ১, রামকৃষ্ণ মিশন রোড,
   ঢাকা-১২০৩।