চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Tuesday, May 4, 2021

ভাব-সম্প্রসারণ

  # দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।

মূলভাব: জ্ঞান মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করে। তবে বিদ্বান হলেই মানুষ চরিত্রবান হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর কোনো চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তাকে এড়িয়ে চলা উচিত। 

সম্প্রসারিত ভাব: শুধু মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ মানবিক গুণসম্পন্ন হয় না। জন্মের পরে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। বিদ্যা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। এজন্য মানুষ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে বিদ্যার্জন করে। বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্রই সম্মানের পাত্র। সকলেই তাঁকে মান্য করে। তাই বিদ্যা মূল্যবান এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তার চেয়েও মূল্যবান। চরিত্র মানুষের সাধনার ফল। সাধনার জন্য প্রয়োজন তপস্যা; যা মানুষের প্রবৃত্তিকে প্রখর করে, বুদ্ধিকে শানিত করে, আচরণকে মার্জিত করে, হৃদয়কে প্রশস্ত করে, মনকে দৃঢ় করে, শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে। চরিত্রই মানুষের মনুষ্যত্বের রক্ষাকবচ। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন। এসব চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি দুর্জন ব্যক্তি হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। সমাজের সকলেই তাকে পরিত্যাগ করে। 

কেননা এসব দুর্জন ব্যক্তি স্বীয় স্বার্থোদ্ধারে অপরের মারাত্মক ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধে করে না। বিদ্যাকে তারা মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করে। এসব লোকের সাহচর্যে গেলে মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সাপের মতো হিংস্র ও বিষাক্ত। প্রবাদ আছে, বিষাক্ত সাপের মাথায় মহামূল্যবান মণি থাকে। বিষাক্ত সাপের মাথার মণি আর চরিত্রহীন ব্যক্তির বিদ্যা প্রায় সমার্থক। মণি লাভের আশায় কেউ বিষাক্ত সাপের সংস্পর্শে যায় না। তার কারণ বিষাক্ত সাপের ধর্ম ছােবল মারা। দুধকলা দিয়ে পুষলেও সুযোগে পেলেই সে ছোবল মারবে। এতে মৃত্যু অবধারিত। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সাপের মতোই বিপজ্জনক। বিদ্যার্জনেরজন্য তার  সংস্পর্শে গেলে সুযোগ পেলেই সে ক্ষতি করবে। একথা সবাই জানে যে, বিদ্বান ব্যক্তি উত্তম চরিত্রের হলে জগতের অশেষ কল্যাণ হয়, আর দুশ্চরিত্রের বিদ্বান ব্যক্তি দ্বারা জগতের অশেষ ক্ষতি হয়। তাই দুর্জন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ কারানো কাম্য নয়। 

মন্তব্য: বিদ্বান অথচ চরিত্রহীন ব্যক্তির সাহচর্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা, বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন হওয়ার কারণে তার সংস্পর্শে গেলে নিজের চরিত্র খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  #   দুর্নীতি জাতীয় জীবনের সকল উন্নতির অন্তরায়।

মূলভাব: যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে নীতিহীনতাই দুর্নীতি। আর যে নীতিহীন সে হয় স্বার্থান্ধ। এ ধরনের লোকে দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

সম্প্রসারিত ভাব: বর্তমানে উন্নতি এবং দুর্নীতি কথা দুটি মানুষের মুখে মুখে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেননা, উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে যেটি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হলো দুর্নীতি। নৈতিকভাবে উন্নত, সৎ, বিবেকবান মানুষ যে পদেই থাকুন কেন, তিনি সমাজ ও জাতির বড় সম্পদ। তাকে দিয়ে উপকার না হলেও অন্তত ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে না। অপরদিকে নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি যতই উচ্চ আসনে অবস্থান করুক না কেন, তিনি মোটেও শ্রদ্ধার পাত্র নন। পদমর্যাদার কারণে তাকে হয়তো মানুষ সামনে কিছু বলে না কিন্তু পেছনে অন্তর থেকে ঘৃণা করে। তার দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি। 

কারণ, তিনি স্বার্থান্ধ, বিবেকবর্জিত। তিনি সবসময় নিজের স্বার্থসিদ্ধির মতলবে থাকেন। স্বার্থান্ধ ব্যক্তি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজেই ব্যস্ত থাকেন। সমাজের কল্যাণ, দেশের মঙ্গলের কথা তিনি ভাবেন না। জাতীয় জীবনের উন্নতি, সমৃদ্ধির কথা ভাবতে তার বিবেক সায় দেয় না। এজন্য বিবেকবর্জিত, দুর্নীতিগ্রস্ত লোকে দেশের সকল উন্নতির পথে বাধাস্বরূপ।

মন্তব্য: বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ছিল লজ্জাজনক অবস্থানে। বর্তমানে তা কিছুটা লাঘব হয়েছে। তবে আমাদেরকে এ লজ্জাজনক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে দেশের জনগণ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও তাদের বিজয়ী হতে হবে। তবেই দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

 মূলভাব: মহান স্রষ্টা নারী ও পুরুষের মধ্য দিয়ে তার সষ্টিকর্মের পূর্ণতা দান করেছেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে, এর স্থপতি কেবল পুরুষই নয়, নারীও বটে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানবসমাজ অধিকাংশই পুরুষশাসিত। বলতে গেলে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই পুরুষজাতি সমাজ শাসন করে আসছে। আর পুরুষশাসিত এ সমাজে নারীকে অন্তঃপুরে আবদ্ধ রাখা হয়। নারীর প্রতিভার কোনো মূল্যায়নই হয় না। নারীকে কেবল সৌন্দর্যের প্রতীক  হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। কখনো কখনো তার মূল্যায়ন ভোগের সামগ্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। কেবল তৃতীয় বিশ্বেই নয়, উন্নত বিশ্বেও নারীরা নিরাপত্তাহীন এবং পুরুষশাসিত সমাজের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত। কিন্তু বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারীরা কর্ম ও মেধাশক্তিতে পুরুষের চেয়ে কোন অংশে  কম নয়। আর এর নজির ইতোমধ্যেই নারীরা রেখেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারারী রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। তাই আজ নারীদের মধ্যে আমরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব, অর্থনীতিবিদ, পুলিশ কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা, পাইলট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখকে দেখছি। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নারীরা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। 

আজকের এই জ্ঞানবিজ্ঞানসমদ্ধ বিশ্ব নারী-পুরুষের মিলিত শ্রমের ফসল। আর এ বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে পুরুষের কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভ আছে। আর এ বিষয়টি অস্বীকার করার মধ্যে পুরুষ-নারী তথা বিশ্ববাসী সকলেরই অকল্যাণ রয়েছে। আসলে নারীকে গৃহলক্ষ্মী আখ্যায়িত করে গৃহবন্দি করে রাখার যুগ শেষ হয়ে গেছে। আজকের আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান দক্ষতায় কাজ করে যাচ্ছে। যে পুরুষ নারীগর্ভে জন্ম নিয়েও নারীর অধিকারকে স্বীকার করে না, নারীর প্রতিভার স্বীকৃতি দেয় না, সে নিশ্চয়ই জ্ঞানহীন মূর্খ। প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষের যৌথ উদ্যোগেই পৃথিবীর সমস্ত কল্যাণধারা প্রবহমান। তাই নারীকে কোনো রকম অবমূল্যায়ন না করে নারী-পুরুষ মিলে বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়াই সময়ের দাবি। আর এ দাবি মেনে নিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই বিশ্বকে সুন্দর করে গড়ে তােলা সম্ভব। আর এ ব্যাপারে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে।

মন্তব্য: সমাজ বিনির্মাণে নারী-পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে। নারীকে বাদ দিয়ে সমাজ উন্নয়নের কথা চিন্তাও করা যায় না। তাই নারীকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবেই সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

ভাব-সম্প্রসারণ

  ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।

অথবা, ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। 
অথবা, ত্যাগে সুখ নাই, কর্ম-সম্পাদনেই প্রকৃত সুখ।
অথবা, ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের প্রকাশ।
অথবা, ভোগে নয়, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ

 মূলভাব: পরার্থে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতে পারার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। স্বার্থপরতার মাঝে কোনো সুখ নিহিত নেই বরং অন্যের স্বার্থের জন্যে কাজ করার মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রকৃত সুখ এবং মনুষ্যত্ব

সম্প্রসারিত ভাব: ভোগ-লালসার কোনো সীমারেখা নেই। মানুষ যত ভোগ করে, ততই তার ভোগের লালসা বেড়ে চলে। অতৃপ্ত কামনা তার হৃদয়ে এক তীব্র দহন জ্বালা ও দুঃখানুভূতির সৃষ্টি করে। দহন জ্বালা ও দুঃখানুভূতি মানুষকে স্বার্থান্বেষী করে তোলে। আর স্বার্থান্বেষী মানুষ মাত্রই বিচার-বুদ্ধিহীন। তাদের কাছে ভোগের বস্তু যত বেশিই থাকুক না কেন; সেগুলো তাদের কাছে পর্যাপ্ত মনে হয় না। অত্যধিক ভোগে-লালসা তাদেরকে এমনভাবে পেয়ে বসে যে, তাদের কাছে যত সুখ-সম্পদই থাকুক না কেন, আরও বেশি পাওয়ার জন্য তারা সদা তৎপর থাকে। কিন্তু মানুষ সবসময় সবকিছু চাইলেই পায় না। সংগত কারণেই মানুষের সব চাওয়া পূরণ হয় না। কিন্তু এ বিষয়টি তারা সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। ফলে না পাওয়ার দুঃখ তাদের হৃদয়কে দংশন করতে থাকে। তাদের জীবনের সকল আনন্দ নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তাদের কাছে জীবন অর্থহীন মনে হয় । মনের দুঃখে তারা তখন মরণকে আহ্বান করতে থাকে। পক্ষান্তরে, সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা স্বজন, প্রতিবেশী, সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে। 

সমাজ এবং দেশের প্রতি এই দায়িত্ববোধে তাদেরকে মহান ও উদার করে তোলে। ফলে তারা স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থের চেয়ে দেশ-জাতি-সমাজ তথা মানবতার কল্যাণে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই অনাবিল আনন্দ খুঁজে পায়। পৃথিবীর সব ভালো কাজের পিছনে রয়েছে কারো না কারো ত্যাগ। আর ত্যাগের মূর্ত প্রতীক হয়ে আজও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ ), যীশু খ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ, রামকৃষ্ণ, সক্রেটিস, নেনসন মেন্ডেলা, মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখের নাম আজও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। চারপাশের শত-সহস্র অসহায়-দুঃস্থ ও আর্ত-পীড়িতের সেবার মধ্যে তারা স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করে। এ ধরনের অনাবিল আনন্দের লেশমাত্র ভোগের মধ্যে নেই। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ সূর্যসন্তানরা যদি রাজপথে তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ না করতেন তাহলে হয়তো আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে পেতাম না। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ত্যাগ বিলিয়ে দিতে হয়েছিল। জাতি হিসেবে আমরা আজও সেই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। তাই বলা হয়ে থাকে, ভোগে সত্যিকারের সুখ নেই; বরং পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই প্রকৃত সুখ নিহিত।

 মন্তব্য: যথার্থ সুখের নাগাল পেতে হলে অবশ্যই ভোগের মােহ ত্যাগ করতে হবে। ভোগ করার ইচ্ছা মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। পক্ষান্তরে ত্যাগী মানুষের নাম পৃথীর বুকে অমর হয়ে থাকে সম্মানের সাথে।

ভাব-সম্প্রসারণ

 #  মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কাবা নাই।

মূলভাব: পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ উপাসনালয় হচ্ছে মানবহৃদয়। কেননা, স্রষ্টা মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করেন। মানুষের হৃদয় হচ্ছে তার প্রকৃত উপাসনালয়। সৃষ্টিকর্তা সর্বত্র বিরাজমান, তিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্বশ্রোতা। শুধু উপাসনালয়ের মধ্যেই তার অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ নয়। 

সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানুষ সেরা। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অন্যান্য জীবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ এতে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষকে ন্যায়-অন্যায় ও পাপ-পুণ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে চলতে হয়। মানুষকে পাপ-পুণ্য, ভালাে-মন্দ ও ধর্ম-অধর্ম বিচার-বিবেচনা করে চলতে সাহায্য করে তার হৃদয়। হৃদয় বা মন আছে বলেই মানুষ ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য বিচার করে চলতে পারে। হৃদয় বা মন উদার হলে একজন মানুষ যেমন নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে পারে, তেমনই অন্যের দুঃখ-বেদনায় সমব্যথী হতে পারে।

এই হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়েই মানুষ সৎকাজের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষই সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, দয়া প্রভৃতি সগুণ দ্বারা কল্যাণের পথে পরিচালিত হয়। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার যে মনোবৃত্তি মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে, তার উৎসস্থল হচ্ছে হৃদয় বা মন।

আর স্রষ্টার প্রার্থনা করার উৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে মসজিদ-মন্দির। মসজিদ-মন্দিরে দিন-রাত অবস্থান করে প্রার্থনা করার মূলে রয়েছে সুন্দর ও মোহমুক্ত পবিত্র পরিবেশে হৃদয়কে ষড়রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা এবং স্রষ্টার নির্ধারিত পথে চলে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। হৃদয় কলুষিত হলে দিন-রাত প্রার্থনা করলেও কোনো ফল হবে না। অতএব, মানুষের হৃদয়ই হচ্ছে সমস্ত উপাসনালয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপাসনালয়। মানুষের নির্মল ও তুষ্ট হৃদয়ই শ্রেষ্ঠ ইবাদতখানা। নিষ্কলুষ হৃদয় মানুষকে ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে, ধর্মের পথে চালিত করে মসজিদ-মন্দিরের উপাসনাকে সার্থকতা প্রদান করে। 

মন্তব্য: নির্মল ও তুষ্ট হৃদয়ের স্থান বহু অর্থ ব্যয়ে সুশোভিত অট্টালিকায় নির্মিত মসজিদ-মন্দিরের চেয়ে অনেক উপরে। সুতরাং মানুষের হৃদয়কে মনকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

ভাব-সম্প্রসারণ

 স্বদেশের উপকারে নাই যার মন। কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন।

মূলভাব: স্বদেশ বা মাতৃভূমি জননীর মতো। স্বদেশকে ভালোবাসা সবারই কর্তব্য হওয়া উচিত। আমাদের উচিত মাতৃভূমির উপকারে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া। নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে স্বদেশকে নিজ মায়ের মতো ভালোবাসার নামই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।

সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী হলো মানবজাতি। মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্ব কোনো স্বতঃসিদ্ধ বিষয় নয়। মানুষকে বিভিন্ন প্রকার মানবীয় গুণ ও সদাচারের মাধ্যমে এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হয়। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারক গুণগুলোর মধ্যে স্বদেশপ্রেম অন্যতম। স্বদেশকে ভালোবেসেই একজন মানুষ সম্মানিত ও পরিতৃপ্ত হতে পারেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন তারা তাদের সমস্ত মেধা ও ক্ষমতা উৎসর্গ করেছেন স্বদেশের কল্যাণে। তারা তাদের জীবনের চেয়েও মাতৃভূমিকে বেশি ভালোবেসেছেন। স্বদেশের উপকার করার অনেক উপায় আছে। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশের যে কোনো বিপদকালে নিজের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন। দেশের জন্য আত্মদানের ইতিহাস বাঙালি জাতির অনেক পুরনো। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক বাঙালিরা ১৮৫৭, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন। 

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই কেবল নয় দেশের সেবা করার আরও অনেক উপায় রয়েছে। নিরলস পরিশ্রম জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা, সামাজিক প্রগতিতে অবদান রাখা, ব্যক্তিগত জীবনে সততার চর্চা করা স্বদেশপ্রেমের পরিচায়ক। বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রয়ােজনীয় ভূমিকা পালনও দেশসেবার পর্যায়ভুক্ত। গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, জনহিতকর কাজে ভূমিকা পালন, পরিবেশ সুরক্ষা করা, শিক্ষা বিস্তার, জনমত গঠন- এসবও আজকের দিনে দেশসেবার অন্যতম পন্থা। কিন্তু যারা কুঁড়ে, অসদাচারী, দুর্বৃত্ত তারা দেশের অকৃতজ্ঞ সন্তান। যেসব মানুষের কর্ণকুহরে দেশমাতৃকার আকুতি পৌছায় না, যারা শ্রম ও সাধনায় দেশের কল্যাণ করে না, তারা পশুর চেয়েও নীচ। 

মন্তব্য: দেশমাতৃকার সংকটে যিনি আত্মোৎসর্গ করেন, তিনিই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অন্যদিকে, দেশের প্রতি যারা মমতাহীন, দায়িত্বহীন, তারা পশুর সমান। এজন্যই আমাদের উচিত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া।

ভাব-সম্প্রসারণ

 #  স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক মিত্র অপেক্ষা ভালো।
অথবা, স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক বন্ধু অপেক্ষা ভালো
অথবা, অন্তরে অনিষ্ট চিন্তা মখেতে মিষ্টতা, তার চেয়ে ঢের ভালো প্রকাশ্যে শক্রতা।

মূলভাব: মানুষের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া প্রকৃত বন্ধুর কাজ। অথচ নির্বাক বন্ধু এ থেকে বিরত থাকে আর স্পষ্টবাদী শত্রু ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে প্রকৃত বন্ধুর মতোই কাজ করে।

সম্প্রসারিত ভাব: প্রতিটি মানুষেরই শত্রু-মিত্র উভয়ই আছে। শত্রুরা মানুষের অনিষ্ট সাধনে লিপ্ত থাকে, আর মিত্র বুদ্ধি, পরামর্শ ও শক্তি দিয়ে সাহায্য করে। মনীষীরা বলে থাকেন মিত্র হচ্ছে ছায়াদানকারী বৃক্ষের মতো, যার ওপর একজন মানুষ অনেকাংশে নির্ভরশীল থাকে। এক্ষেত্রে মিত্রের কাজ শুধু আশ্রয় বা সমর্থন দান নয়, ভুল-ত্রুটিও ধরিয়ে দেওয়া। আসলে ভুল করাটা মানুষের এ জন্য স্বাভাবিক। মানুষমাত্রই ভুল করে থাকে। মানুষের ভুলটা যদি ধরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে, ভুল ধরিয়ে না দিলে সে বারবার ভুল করতে থাকে। তাই যারা প্রকৃত বন্ধু তারা ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়। কিন্তু অনেক বন্ধু আছে যারা বন্ধুর ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে না দিয়ে নির্বাক থাকে।

তাছাড়া জীবন চলার পথে মানুষকে অসংখ্য কাজ করতে হয়। আর কাজ করতে গেলে, সকল মানুষের পক্ষে সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও অনেক ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধুর কাজ সংঘটিত ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু নির্বাক বন্ধুরা তা করে মৌনতা করে। একে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কাজের ভালো-মন্দ কোনোটাই জানতে পারে না। ফলে সংশোধনও হতে পারে । কিন্তু স্পষ্টবাদী শত্রু নির্বাক বন্ধুর মতো কখনই নির্বাক থাকে না। বরং শত্রুতার জন্য হলেও ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কৃতকর্ম সংশোধন করার সুযোগ পায়।

তাছাড়া স্পষ্টবাদী শত্রুর কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকেই তাদের কাজ-কর্ম যথাসাধ্য ত্রুটিমুক্তভাবে সম্পন্ন করতে সচেষ্ট থাকে। এতেও কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। আর এজন্যই মনীষীরা নির্বাক বন্ধুর চেয়ে স্পষ্টবাদী শত্ৰকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

মন্তব্য: শত্রুর শত্রুতার আশঙ্কায় মানুষ সবসময় সচেতন থাকে। এতে কল্যাণ বৈ অকল্যাণ হয় না। কিন্তু বন্ধু যদি বন্ধুর গঠনমূলক সমালোচনা থেকে বিরত থাকে, তাহলে সীমাহীন অকল্যাণ সাধিত হয়।

ভাব-সম্প্রসারণ

  শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির, লিখে রেখ এক ফোঁটা দিলেম শিশির।

মূলভাব: এ ধরায় কিছু লােক আছে, যারা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না। বরং তারা সামান্য উপকার করতে পারলেই দম্ভভরে তা প্রচার করে বেড়ায়। 

সম্প্রসারিত ভাব: সম্প্রসারিত ভাব: দিঘির অগাধ জলরাশিতে শৈবালের অবস্থান। এই শৈবালের উপর জমেছে ভােরের শিশির। শিশিরের ক্ষুদ্র ফোঁটা গড়িয়ে পড়েছে দিঘির অগাধ জলে। এই সামান্য শিশির-ফোটাকে শৈবাল দিঘির প্রতি তার মহৎ দান বলে গণ্য করছে। অথচ দিঘির বিশাল জলরাশির কাছে এক ফোঁটা শিশির অতি তুচ্ছ। দিঘির জলেই যার অস্তিত্ব, সেই দিঘির প্রতি শৈবালের এমন দম্ভোক্তি সত্যি হীনম্মন্যতার পরিচায়ক। 

শৈবালের মতো মানবসমাজেও এমন অনেক অকৃতজ্ঞ লোকে আছে, যারা পরের দয়াদাক্ষিণ্য দুহাতে গ্রহণ করে কিন্তু সামান্য উপকার করতে পারলেই মনে করে আমি মহৎ কিছু করে ফেলেছি। প্রকৃতপক্ষে যিনি মহৎএবং যথার্থ পরোপকারী তিনি অপরের উপকার করে কখনো দম্ভ প্রকাশ করেন না। নিছক আত্মপ্রচারের জন্য নয়, বরং নিঃস্বার্থভাবেই তিনি পরের উপকার করেন। এজন্য তার মনে কোনো অহংকার জন্ম নেয় না। অহংকার জন্ম নিলে মহতেরা মহৎ কাজ করতেন না। 

মন্তব্য: মন্তব্য: প্রতিদানের প্রত্যাশা নয়, মানবকল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে পরের উপকার করাই মহৎপ্রাণ ব্যক্তির কাজ। সুতরাং উপকারভোগীদের উচিত উপকারকারীর কথা স্মরণ রাখা। 

ভাব-সম্প্রসারণ

  নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা?

মূলভাব:মানুষ জন্মের পরে মায়ের কাছ থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শিখে সে ভাষাই তার মাতৃভাষা বা স্বদেশি ভাষা। স্বদেশি ভাষায় মনের ভাব যত সহজে প্রকাশ করা যায়, অন্য কোন ভাষায় তা সম্ভব নয়।

সম্প্রসারিত ভাব:বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি-গুষ্ঠির লোকের বসবাস করে। এদের কথাবার্তা, চালচলন, আচার-ব্যবহার একেক রকম। ভাষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশের লোক বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। আমরা বাঙালি, বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশে আমাদের বসবাস। এদেশের প্রতিটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। সুতরাং বাংলা এদেশের স্বদেশি ভাষা। বাংলা ভাষায় কথা বলে এদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পায়। পৃথিবীর এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের চেহারার যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনই ভাষারও অনেক পার্থক্য রয়েছে।

চেহারার বৈচিত্র্যের মতো পৃথিবীতে রয়েছে নানা জাতির মানুষের নানা ভাষা। একেক দেশের মানুষ একেক ভাষায় কথা বলে। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে এবং মাতাপিতা যে ভাষা ব্যবহার করে, সেটাই তার স্বদেশি ভাষা। স্বদেশি ভাষার মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞানের যাবতীয় বিষয় সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করতে এবং প্রকাশে সক্ষম। এমন অনেকে আছেন যারা স্বদেশি ভাষার সাথে অন্য ভাষাও আয়ত্ত করে থাকে। কিন্তু অন্য ভাষার কোন কিছু বুঝতে হলেও তা কেবল স্বদেশি ভাষার মাধ্যমেই বুঝতে হয়। কাজকর্মের সুবিধার্থে ক্ষেত্রবিশেষে স্বদেশি ভাষার বাইরে অন্য একাধিক ভাষায় কথা বললেও স্বদেশি ভাষায় কথা বলে মানুষ যত আত্মতৃপ্তি লাভ করে অন্য ভাষায় কথা বলে তা পায় না। তাছাড়া স্বদেশি ভাষাকে উপেক্ষা করে কেউ কোনোদিন তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে না। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মূলত স্বদেশি ভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় কোন  আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় না। যারা দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকে, বিদেশি ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হলেও তাদের আত্মতৃপ্তি ঘটে স্বদেশি ভাষাভাষী মানুষের সাথে কথা বলেই। তাছাড়া। আত্মবিকাশে স্বদেশি ভাষার কোন বিকল্প নেই। মিল্টন পাহাড়ি ঝরনার কলধ্বনিতে স্বদেশি ভাষার সুর শুনতে পেতেন। স্বদেশি ভাষা মানবজীবনে, জাতীয় জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলেই বাঙালিরা স্বদেশি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে।

মন্তব্য:স্বদেশি ভাষা পরিহার করে কোন ব্যক্তি বা জাতির পক্ষে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, স্বদেশি ভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।

  প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।

মূলভাব: পরম করুণাময় স্রষ্টা পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে মানুষও একটি সৃষ্টি। মানুষের প্রাণ আছে। সে হিসেবে মানুষও প্রাণী। কিন্তু মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের মন আছে। এ মন আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণী। 

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে প্রাণের অধিকারী অনেক প্রাণীর মধ্যে একমাত্র মানুষেরই মন আছে। আর মন আছে বলেই মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে পারে। এ হৃদয়বৃত্তির বিকাশের ক্ষেত্রেও মানুষভেদে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। কেউ কেউ বিদ্যার্জন করে হৃদয়বৃত্তির প্রসার ঘটিয়ে জনকল্যাণে অক্ষয় কীর্তি স্থাপনে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ অপার বিদ্যার্জন করেও হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের দ্বারা সমাজ, দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। ফলে তারা মানুষ হয়ে পুরোপুরি মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে না। তারা অনেকটা প্রাণী সদৃশ। 

তাছাড়া মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে অন্য যেসব প্রাণী আছে সেগুলো প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মগ্রহণ করে। প্রাকৃতিক নিয়মে পূর্ণতা লাভ করে। এ পূর্ণতা লাভে তাদের নিজেদের কোনো কৃতিত্ব নেই। কিন্তু মানুষের বেলায় সম্পূর্ণ বিপরীত। মানুষের প্রাণ আছে এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়। মানুষের প্রকৃত পরিচয় হলো তার মন আছে। মন আছে বলেই তার মধ্যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালােবাসা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া একমাত্র মনের কারণেই মানুষের মধ্যে বিবেকবোধের সৃষ্টি হয়। এ বিবেকবোধ মানুষকে ন্যায়-অন্যায় বুঝতে সহায়তা করে, যা অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে চিন্তাও করা যায় না। তবে সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের মন বিবেক থাকলেই তারা তা কাজে লাগায় না। 

খেয়েপরে বেঁচে থাকাতেই তাদের আনন্দ। মানুষ হিসেবে খাওয়াপরাও ছাড়াও আরও দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তারা তা মানতেই চায় না। এরা মানুষ হয়েও, আসলে প্রাণী। এসব মানুষ সদৃশ প্রাণীদের বুঝতেই মনীষীরা আলোচ্য ভাবটির অবতারণা করেছেন।

মন্তব্য:মানুষ হিসাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য সকলেরই উচিত মানবিক গুণাবলি অর্জন এবং চিন্তা-চেতনার উন্নতি সাধন করে যথাযথ মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা।