চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Friday, May 7, 2021

আমার পরিচয়

 

আমার পরিচয়
সৈয়দ শামসুল হক
 
আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?
 
আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।
 
এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
 
আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি কমলার দীঘি মহুয়ার পালা থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।
 
এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।
 
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?
 
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।
 
পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হলো ইতিহাস।
 
এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।

মাগো, ওরা বলে

 

মাগো, ওরা বলে

--আবু জাফর ওবাইদুল্লাহ

 

কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজেন ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা, তুই কবে আসবি? কবে ছুটি?

চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

মাগো ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে

গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ী ফিরবো।
লক্ষ্মী মা, রাগ করো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।


পাগল ছেলে, মা পড়ে আর হাসে,
তোর ওপরে রাগ করতে পারি!
নারকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে,
এটা-সেটা আরো কতো কি!
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে ক্লান্ত খোকা।

কুমড়ো ফুল শুকিয়ে গেছে,
ঝরে পড়েছে ডাঁটা,
পুঁই লতাটা নেতানো
খোকা এলি?
ঝাপ্সা চোখে মা তাকায় উঠানে উঠানে
যেখানে খোকার শব শকুনীরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন মার চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনীদের।
তারপর দাওয়ায় বসে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার কখন আসে কখন আসে!

এখন মার চোখে শিশির-ভোর
স্নেহের রোদে ভিটে ভরেছে।

শোন একটি মুজিবরের থেকে

 

শোন একটি মুজিবরের থেকে

--গৌরী প্রসন্ন মজুমদার

শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণী
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।।

এই সবুজের বুকে চেরা মেঠো পথে
আবার যে যাব ফিরে, আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে
হায়রে এমন সোনার খনি।।

বিশ্ব কবির ‘সোনার বাংলা’,
নজরুলের ‘বাংলাদেশ’,
জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’
রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।

জয় বাংলা বলতে মন রে আমার
এখনও কেন ভাবো আবার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
অন্ধকারে পূর্বাকাশে-, উঠবে আবার দিনমণি।।

রৌদ্র লেখে জয়

 

রৌদ্র লেখে জয় – শামসুর রাহমান


বর্গি এলো খাজনা নিতে,
        মারল মানুষ কত।
পুড়ল শহর, পুড়ল শ্যামল
        গ্রাম যে শত শত।

হানাদারের সঙ্গে জোরে
        লড়ে মুক্তিসেনা,
তাদের কথা দেশের মানুষ
        কখনো ভুলবে না।

আবার দেখি নীল আকাশে
        পায়রা মেলে পাখা,
মা হয়ে যায় দেশের মাটি,
        তার বুকেতেই থাকা।

কাল যেখানে আঁধার ছিল
        আজ সেখানে আলো।
কাল যেখানে মন্দ ছিল,
        আজ সেখানে ভালো।

কাল যেখানে পরাজয়ের
        কালো সন্ধ্যা হয়,
আজ সেখানে নতুন করে
        রৌদ্র লেখে জয়।

মুক্তির ছড়া

 

মুক্তির ছড়া
--সানাউল হক


তোমার বাংলা আমার বাংলা
সোনার বাংলাদেশ-
সবুজ সোনালি ফিরোজা রুপালি
রূপের নেই তে শেষ।


আমি তো মরেছি যতবার যায় মরা,
নবীন যাত্রী তোমাকে শোনাই ছড়া।
এদেশ আমার এদেশ তোমার
সবিশষ মুজিবের,
হয়তো অধিক মুক্তিপাগল
সহস্র শহীদের।

আমি হব

 

আমি হব
--কাজী নজরুল ইসলাম

আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে
উঠব আমি ডাকি।


সুয্যি মামা জাগার আগে
উঠব আমি জেগে,
হয় নি সকাল, ঘুমো এখন,
মা বলবেন রেগে!


বলব আমি- আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল, তাই বলে কি
সকাল হবে না ক!


আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা
রাত পোহাবে তবে।

Thursday, May 6, 2021

রচনা

 অপসংস্কৃতি ও বর্তমান যুবসমাজ

     সংকেত: 
💜 ভূমিকা; 
💜 জীবনের সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক; 
💜 অপসংস্কৃতির উৎস; 
💜 জাতীয় জীবনে অপসংস্কৃতির অশনি সংকেত; 
💜 অপসংস্কৃতি ও আমাদের যুবসমাজ; 
💜 পোশাক-পরিচ্ছদের উপর প্রভাব; 
💜 খাদ্যাভাসের উপর প্রভাব; 
💜 ভাষা ও সংলাপের উপর প্রভাব; 
💜 ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর প্রভাব; 
💜 অপসংস্কৃতি রোধের উপায়; 
💜 উপসংহার।

ভূমিকা: সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন- সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নৈমিত্তিক প্রচেষ্টাই সংস্কৃতি, আর অপসংস্কৃতি হলো এর বিপরীত। আত্মার মৃত্যু ঘটিয়ে অসুন্দরের উপাসনা করে, অকল্যাণের হাত ধরে বেঁচে থাকাই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে শ্রীহীনতার দিকে ঠেলে দেয়।

জীবনের সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক: জীবনের সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সমাজে বসবাসরত মানুষের প্রত্যেকটি কার্যকলাপই তাদের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। কোনো সমাজই তাদের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না। মূলত সংস্কৃতি এবং জীবন একে অপরের পরিপূরক।

অপসংস্কৃতির উৎস: উনিশ শতকের বাংলায় পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উদ্দাম ভোগ-বিলাসিতা ও উচ্ছ্বংখলতার জন্ম দেয়। নতুন সংস্কৃতির উন্মত্ততায় সে সময়ে যে অনাচার ও উচ্ছৃংখলতা দেখা দিয়েছিল সেগুলোকে বর্জন করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সদর্থক ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিল সমাজ-সংস্কারক বাঙালি মনীষীরা। বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অবাধ সুযোগে আমাদের জাতীয় জীবনে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। পাশ্চাত্য যুবসমাজ যে মাদক নেশা ও অবক্ষয়ে আক্রান্ত, আকাশ-সংস্কৃতির মাধ্যমে তা ক্রমবিস্তার লাভ করছে আমাদের তরুণ সমাজে। অসংযত পাশ্চাত্য মানসিকতা, উগ্র বিদেশিয়ানা ও ভোগপ্রবণ স্থূলতা আজ আমাদের সংস্কৃতির মূলধারাকে গ্রাস করতে বসেছে। বৈদেশিক সংস্কৃতির নির্বিকার গ্রহণ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য এখন হুমকিস্বরূপ।

জাতীয় জীবনে অপসংস্কৃতির অশনি সংকেত: বাংলাদেশে জাতীয় জীবনে অপসংস্কৃতির প্রবল প্রতাপ লক্ষনীয়। অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত লোভ-লালসা চরিতার্থ করার এক উদ্ভট জোয়ার চলছে এ দেশে। বিশেষত এ দেশের তরুণ সমাজ আজ দিকভ্রান্ত, দিশেহারা। তাদের বেঁচে থাকার সাথে নীতির সম্পর্ক নেই। এই বোধ থেকেই অপসংস্কৃতির জন্ম হয়। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা এখন হাস্যকর দুর্নীতি এখন সামাজিকভাবে স্বীকৃত। আর এখন অনৈতিকতার সূত্রপাত হচ্ছে মানুষের অসৎ জীবিকার্জনের হাত ধরে। সৎভাবে যে জীবিকার্জন না করে তার পক্ষে অপসংস্কৃতির দাসত্ব ছাড়া উপায় নেই। প্রতিদিনের সংবাদপত্র আমাদের সামনে যে চালচিত্র তুলে ধরে, তাতে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন অতি স্পষ্ট। অশ্লীলতা, নোংরামি, খুন, ছিনতাই, প্রতারণা- সবই অপসংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন নাম। আমাদের সমাজ আজ এসবেরই দাসত্ব করে চলেছে।

অপসংস্কৃতি ও আমাদের যুবসমাজ: সমাজবিজ্ঞানী E.B Taylor বলেন- “Calture perrersion might lead the youth gearation.” আজকের তরুণেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু অপসংস্কৃতি তাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজ শুদ্ধ সংস্কৃতি সাধনার পথ থেকে বিচ্যুত। তারা অসুন্দর ও কলুষিত সংস্কৃতি তথা অপসংস্কৃতির শিকার। যুবসমাজের একটা বড় অংশকে সুকৌশলে করা হয়েছে আদর্শভ্রষ্ট। সুন্দর জীবনের পথ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্ধকার জীবনের পথে। তারা তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে, অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে মাদকের নেশায়। বিপুল সংখ্যক তরুণের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে অস্ত্র, জড়িয়ে ফেলা হয়েছে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে। তারা লিপ্ত হচ্ছে অসামাজিক কাজে। হিংসাশ্রয়ী-অশ্লীল চলচ্চিত্র, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী বিকৃত রুচির নাচ-গান, রুচিগর্হিত পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি তাদেরকে আকৃষ্ট ও অনুরক্ত করার গভীর নীলনকশা ধীরে ধীরে কার্যকর হচ্ছে।

পোশাক-পরিচ্ছদের উপর প্রভাব: পোশাক-পরিচ্ছদে আমাদের নিজস্ব একটি ঐতিহ্য ছিল। বিদেশি সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ও চর্চা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। জিন্স, টি-শার্ট, স্কার্ট এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের খুবই প্রিয়। শাড়ি-লুঙ্গি কিংবা পাজমা-পাঞ্জাবি এখন আর তাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। আমাদের মেয়েদের অনেকেই স্বল্পবসনকে আধুনিক জীবনের নমুনা বলে ভুল করে। পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণের ফলে তারা একদিকে যেমন আধুনিক জীবনের ধারাকে ধরতে পারে না তেমনি দেশীয় সংস্কৃতির সাথেও নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তারা একটি দোদুল্যমান অবস্থায় পতিত হয় অবশেষে জীবন হয়ে পড়ে লক্ষ্যহীন ও হতাশাপূর্ণ।

খাদ্যাভ্যাসের উপর প্রভাব: বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে যুবসমাজে খাদ্যাভ্যাসে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। কোনো খাবারের পুষ্টিমান বিবেচনা না করে টেলিভিশন চ্যানেলে খাবারের বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতির নতুন সংযোজন হচ্ছে ফাস্টফুড সংস্কৃতি। বর্তমানে তরুণ-তরুণীসহ শিশু-কিশোর এমনকি বয়স্কদের মাঝেও এ সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। যা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব খাবারগুলোকে ক্রমান্বয়ে অস্বীকার করার প্রবণতা তৈরি করছে।

ভাষা ও সংলাপের উপর প্রভাব: বিশ্বায়নের আর একটি প্রত্যক্ষ ও বাহ্যিক প্রভাব আমাদের তরুণ প্রজন্মের কথাবার্তার পরিবর্তন। বর্তমান শিশুরা বাবা-মাকে বাংলা ভাষায় সম্বোধন না করে বিদেশি ভাষা বিশেষত ইংরেজিতে পাপা, মাম্মি বা মম ডাকতে আগ্রহী। কথায় কথায় তারা অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করে। বাংলা ইংরেজি, হিন্দি একসাথে মিলিয়ে পরস্পরের সাথে কথা বলে, একে তারা আধুনিকতা মনে করে। তাছাড়া বাংলা শব্দের বিকৃতি এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।

ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর প্রভাব: বিদেশি সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় জীবনে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে চরমভাবে আঘাত করছে, সেটি হলো আমাদের ধর্মীয় জীবনবোধ ও নৈতিক শিক্ষা। পশ্চিমা ভোগবাদী সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচারের ফলে আমাদের যুবসমাজে ধর্মনিষ্ঠা এবং নৈতিকতা বোধ ক্রমহ্রাসমান। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা আর অ্যালকোহলিক সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী। সুখী সুন্দর ও শান্তিময় জীবনের জন্য এসব কিছুর চেয়ে ধর্মীয় জীবনের নীতি অনুসরণ খুবই জরুরি। বিদেশি সংস্কৃতির আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।

অপসংস্কৃতি রোধের উপায়: পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে বিশ্ব সম্রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় আমাদের নেই। তাই এর মধ্যে থেকেই নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আর স্বার্থকে বাঁচিয়ে রেখে চলতে হবে। যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুব সমাজের এই বিপথগামিতা, সেই পরিবেশের আমূল সংস্কার অপরিহার্য। এ ব্যাপারে সকল শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে অপসংস্কৃতির বেসাতি। তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে নতুন মূল্যবোধে। সুযোগ দিতে হবে আত্মবিকাশের। মনে রাখতে হবে, আদর্শভ্রষ্টতাই এ কালের যুব সমাজের একমাত্র চিত্র নয়। এক শ্রেণির যুবসমাজ বেশ সক্রিয়, সজাগ ও আদর্শবাদী। সামাজিক অবিচার, অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক শঠতা সবকিছুর বিরুদ্ধেই এরা সোচ্চার। তাই আজ যারা অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আটকে গিয়ে অলস তন্দ্রায় আচ্ছন্ন, সঠিক পথনির্দেশনা পেলে এই যুবসমাজই আবার উজ্জীবিত হবে দুর্বার প্রাণশক্তিতে। ফিরে পাবে তাদের হারানো শুভবুদ্ধি। যুবসমাজকে অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা করতে হলে বিদেশি সংস্কৃতির দরজা বন্ধ করে নিজেদেরকে আরও বেশি প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতির লালন করতে হবে। আর বিদেশি সংস্কৃতির মোকাবেলায় টিকে থাকার জন্য দেশীয় সংস্কৃতিকে করে তুলতে হবে যুগোপযোগী। বিদেশি সংস্কৃতি অনুসরণ ও অনুকরণের ক্ষেত্রে আরও বেশি সজাগ হতে হবে। বিজাতীয় করুচিপূর্ণ সংস্কৃতি বন্ধের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রকাশই আভিজাত্যের পরিচায়ক তরুণদের এ ধারণা ঘোচাতে হবে।

উপসংহার: সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে যুবসমাজকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যুবশক্তির পুনরুজ্জীবনে চাই শুভ সুন্দর জীবনের নবতর দীক্ষা। মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানবপ্রেমে ব্রতী করে যুবসমাজকে পরিচালিত করতে হবে সামাজিক অন্যায়-অবিচার, অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক শঠতার বিরুদ্ধে।

--- সমাপ্ত --- 

রচনা

  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

 

      #         ভূমিকা;
#         বিজ্ঞানের উৎস;
#         রোজকার জীবনে বিজ্ঞানের বিবর্তন;
#         বিজ্ঞানের দৈনন্দিন প্রভাব;
#         চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান;
#         বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি;
#         অন্যান্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞান;
#         বিজ্ঞান বনাম মানুষ;
#         প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও দারিদ্র;
#         বিজ্ঞানের অপকারিতা;
#         উপসংহার।

ভূমিকা: পৃথিবীতে যেইদিন থেকে মানবজাতির পথ চলা শুরু হয়েছে সেই দিন থেকেই মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে বিজ্ঞান অনস্বীকার্য প্রভাব রেখে গিয়েছে। মানুষ তার উন্নত বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানকে প্রতিনিয়ত প্রয়োগ করেছে জীবনের নানা ক্ষেত্রে। সুকৌশলে বানানো প্রস্তর যুগের অস্ত্রাদি থেকে শুরু করে মানবসভ্যতায় বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া আগুন; সবকিছুই বিজ্ঞানের দান।

এই বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই মানুষ আবিষ্কার করেছে চাকা, অট্টালিকা তথা উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা নির্মাণের কৌশল আয়ত্ত করেছে। উন্নত বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রয়োগমূলক বিজ্ঞানের সিঁড়ির ওপর ভর করেই মানুষ আজ সভ্যতার শিখরচুড়ায় অধিষ্ঠান করছে। আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনাকাল হিসেবে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরবর্তী পর্বকে মোটামুটি চিহ্নিত করা যায়।

আজকের দিনে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আশ্চর্যকর আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে, বদলে দিচ্ছে মানসিকতাকেও। অসুস্থ মানুষ আজ আর রোগ নিরাময়ের জন্যে ওঝার কাছে ছুটে যায়না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মন্দিরে মাথা ঠোকেনা। বিজ্ঞানের দানে আজ ভগবানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন চিকিৎসক। রাত্রির কালো অন্ধকারে আর মানুষ পথ হারায় না, রাত্রি এখন আলোকজ্জ্বল। প্রতিদিনের জীবনে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমস্ত কিছুর মধ্যেই রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান।

বিজ্ঞানের উৎস: বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ নামের ব্যাখ্যা থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে পৃথিবীতে বিজ্ঞান অলৌকিক ইন্দ্রজাল কিংবা ভোজবাজির খেলা নয়। এ হলো বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর মধ্যে স্থিত বিভিন্ন উপাদানকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা। বিজ্ঞানের দান হিসেবে যে সমস্ত আবিষ্কার আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের নিয়ত সরলীকরণ করে চলেছে তার পেছনে রয়েছে মানুষের প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং নানান প্রাকৃতিক উপাদানের মেলবন্ধন। এই দুইই বিজ্ঞানের প্রকৃত উৎস। মানব সভ্যতায় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু পাথরে পাথর ঘষে সেই আগুন আবিষ্কার থেকে। তারপর থেকেই মানবজগৎ তথা সমগ্র পৃথিবীর জীবকুল বিজ্ঞানের খারাপ-ভালো উভয়প্রকার ফল ভোগ করে আসছে।

রোজকার জীবনে বিজ্ঞানের বিবর্তন: সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে বিজ্ঞান অনস্বীকার্য অবদান রেখে চলেছে। সেই সময় প্রতিদিনকার খাবার সংগ্রহ থেকে শুরু করে আত্মরক্ষা আশ্রয় সবকিছুর জন্যই মানুষ সাধারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর নির্ভর করত। সময় যত এগিয়েছে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ততই পরিবর্তন ঘটেছে। খাদ্য সংগ্রহ কথা আশ্রয়ের মত প্রাথমিক প্রয়োজন মিটিয়ে মানুষ বিজ্ঞানকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে জীবনের আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে।

আজকের যুগে মানুষ সেই প্রচেষ্টারই বহুমুখী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে মাত্র। আজ আধুনিক জীবনের চরম উৎকর্ষের এবং অফুরন্ত ঐশ্বর্যের মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের অবদানে আমাদের জীবন আজ পরিপূর্ণ। প্রতিদিনকার জীবনে আধুনিক বিজ্ঞানের এই ব্যবহারিক প্রয়োগ আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস তথা মননকেও আমূল বদলে দিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হলে আমাদের জীবন অচল হয়ে পড়ে।

শহর অঞ্চলের মানুষেরা মুহূর্তের জন্য নিজেদের জীবনকে ইন্টারনেটবিহীন ভাবতে পারে না। স্মার্ট ফোন এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া মানুষ আজকাল নিজেকে অসহায় বলে মনে করে। তার খুব স্বাভাবিক কারণ হলো মানুষের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তথা সভ্যতা এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপাদানগুলির উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার আমাদের জীবনকে কোন ধারায় নিয়ে চলেছে তা বলে শেষ করার মতো নয়।

বিজ্ঞানের দৈনন্দিন প্রভাব: সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর অ্যালার্ম, বিছানা ছেড়ে টুথ পেস্ট,গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না , অফিস যাওয়ার গাড়ী, কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, মোবাইল, টেলিভিশন, বাস, ট্রেন, এরোপ্লেন সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞান। আমাদের জীবনকে সহজ থেকে আরো সহজতর এবং দ্রুত থেকে আরো দ্রুততর করে তোলার পথে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। বিজ্ঞানহীন হয়ে মানব সভ্যতার অগ্রগতি এমনকি অস্তিত্ব রক্ষা; কোনটাই সম্ভব নয়। 

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ সরল আরামদায়ক করে তুলেছে। অসহ্য গরমে তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, মানুষের সুবিদার্থে বিজ্ঞানীরা ঘুরিয়ে দিয়েছেন নদীর গতিপথ, উষ্ণ মরুকে তা করেছে শস্য শ্যামল। হাড় ভাঙা পরিশ্রমকে বিজ্ঞান অনেক সহজ করে দিয়েছে। আজকের কর্মব্যস্ত মানুষ বিজ্ঞান ছাড়া একপাও এগোতে পারে না।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: সভ্যতার সেই শুরুর দিন থেকেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান তার অবদান রেখে চলেছে। আর আজ প্রযুক্তি বিজ্ঞানের দানে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চূড়ান্ত উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বভাবতই মানুষের গড় আয়ু আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগের প্রতিকারের জন্য মানুষ আজ ওঝার কাছে না দৌড়িয়ে হাসপাতালমুখী হয়েছে।

প্রতিনিয়ত গভীর গবেষণালব্ধ বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধ মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে কৃত্রিম অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের মতো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আপৎকালীন মুহূর্তে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে চলেছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলস্বরুপ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভ্যাকসিন নানাবিধ রোগকে পৃথিবী থেকে নির্মূল করতে সাহায্য করেছে। সর্বোপরি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক ব্যবহার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অনেক বেশি সহজ এবং যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব আলোচনায় তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখ থাকবে না, এমনটা হতেই পারে না। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের সম্ভবত সবচেয়ে যুগান্তকারী দানটি হল তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনকার জীবনকে আমূল বদলে দিয়েছে। মানুষের সামাজিক, পারিবারিক তথা প্রশাসনিক জীবন সহ সর্বক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

আর এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানের দুই উল্লেখযোগ্য ফসল: কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা। জীবনধারণে অভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তথা মননের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাছাড়া এই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান বলে শেষ করার মত নয়। পূর্ব উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলি তার অতি সামান্য কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। ওই উদাহরণগুলি বাদ দিয়ে মানুষ আজও খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিক্ষেত্রে যেমন বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে থাকে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রয়োগ হয়ে থাকে।

অন্যদিকে শিক্ষাও আজ সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক হয়ে উঠেছে। তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার সম্ভব হয়েছে। অনেক জটিল প্রক্রিয়ার অত্যন্ত সহজ সমাধান মানুষ করে ফেলছে শুধুমাত্র বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে। বিজ্ঞান আজ দূরকে করেছে নিকট, সমগ্র বিশ্বকে বন্দী করেছে হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের দানে আঙ্গুলের একটিমাত্র ছোঁয়ায় পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের তথ্যও এক নিমেষে ভেসে উঠছে মানুষের চোখের সামনে।

বিজ্ঞান বনাম মানুষ: তবে বিজ্ঞানের প্রভাবে মানুষ আজ যন্ত্রমানবে পরিণত হয়েছে, তাকে অনুসরণ করে যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় না বরং যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সময়ের মানুষ চালিত হয়। জীবনকে সহজ ও সুখের করে তোলার জন্য মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা তাকে নতুন নতুন আবিষ্কার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। পনেরোই যন্ত্রভিত্তিক জীবন আজ যান্ত্রিক জীবনে পরিণত হয়েছে।

ইলেকট্রনিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে রোবট ও কম্পিউটারের আবিষ্কার মানুষের জীবনধারার পটচিত্রকে আমুল বদলে দিয়েছে। ফলস্বরূপ প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পরিণত হয়েছে যন্ত্রের আজ্ঞাবহ দাসানুদাসে। এক মুহুর্ত আধুনিক প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া মানুষ আজ অত্যন্ত অসহায়, নিরুপায় বোধ করে।

প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও দারিদ্র: প্রযুক্তি বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে সহজ ও সুখের করে তুলেছে এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে এমন সমূহ অগ্রগতি সত্ত্বেও বিজ্ঞান আজও পৃথিবী থেকে অভিশাপরূপি দারিদ্র্যকে নির্মূল করতে পারেনি। কিছু ক্ষেত্রে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সহায়তা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ধনী-দরিদ্র্যের আর্থিক বৈষম্যের ব্যবধানকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে।

তাছাড়া প্রযুক্তি বিজ্ঞানের নানান অভিনব আবিষ্কার উপভোগ করতে প্রয়োজন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। যেখানে আমাদের দেশের বহু মানুষ দারিদ্র সমস্যায় জর্জরিত সেখানে প্রযুক্তিগত এইসব অভিনব উপাদানের ব্যবহার, বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের নানান সুবিধা গুলো যেদিন গরীব মানুষদের কাছেও পৌঁছে যাবে সেদিনই আধুনিক বিজ্ঞানের দানে সভ্যতা সার্থক হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞানের অপকারিতা: পৃথিবীতে সকল জিনিসেরই খারাপ ভালো উভয় দিকই বর্তমান। যন্ত্রের উপর নির্ভর করতে গিয়ে আজ মানুষ দিনদিন শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছে, ক্রমশ কমে যাচ্ছে মানুষের স্বনির্ভরতা। ফলে শরীরে নানান রোগ এসে বাসা বাঁধছে।

বিজ্ঞান হল বর্তমান মানুষের হাতিয়ার। এই হাতিয়ারকে সৎ অসৎ যেকোনো কাজেই ব্যবহার করা সম্ভব। বিজ্ঞানের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে প্রয়োগ কর্তার উপর। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পরমাণু শক্তি যেমন ব্যাপক মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারে, তেমনই এক মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে পারে সম্পূর্ণ পৃথিবীর জীবজগৎকে।

বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানো যেমন সম্ভব, তেমনি সেই বিজ্ঞানেরই দানে কেবলমাত্র একটি বোতাম টিপে এক সম্পূর্ণ জনপদ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াও সম্ভব। মানুষের লোভ, হিংসা তথা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দিনদিন বিজ্ঞান নানান খারাপ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 উপসংহার: বিজ্ঞানের প্রাথমিক অবদানগুলি আজও সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমান ভাবে পৌঁছায়নি। দারিদ্রতার কারনে কোটি কোটি মানুষের জীবন আজও বিজ্ঞানের আশীর্বাদশুন্য রয়ে গিয়েছে। যদিও প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার, ভালো রাস্তা বানিয়ে গ্রাম গুলির যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটানোর, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উন্নয়নের।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রয়োজনের তুলনায় এই প্রচেষ্টা নিতান্তই অপ্রতুল এবং তা সারা পৃথিবী জুড়েই সত্য। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরে সার্বিক প্রচেষ্টা। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্র তৈরি কিংবা মহাকাশ গবেষণার হেতু অন্তরীক্ষে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণের প্রয়োজন যেমন রয়েছে তেমনই প্রয়োজন রয়েছে মানুষের জীবনকে তৃণমূল স্তর থেকে বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তোলার।

বুদ্ধিমত্তার ইন্দ্রজাল এই বিজ্ঞান যেদিন ধ্বংসযজ্ঞকে পাশ কাটিয়ে সমগ্র মানবজাতির সার্বিক মানোন্নয়নে নিয়োজিত হবে সেই দিনই মানুষ লাভ করবে তার সভ্যতার পরম সার্থকতা।

--- সমাপ্ত ---

রচনা

  বৃক্ষরোপণ বা সামাজিক বনায়ণ

              রচনার সংকেত-

     #        ভূমিকা;
#        অরণ্য উচ্ছেদ;
#        বৃক্ষরোপণ তথা বনমহোৎসব;
#        বৃক্ষরোপণ অভিযান;
#        বনসংরক্ষণ;
#        অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব এবং প্রতিকার;
#        অরন্যের পুনরুদ্ধার: আমাদের অঙ্গীকার;
#        উপসংহার।

ভূমিকা:  আধুনিক নগরজীবনে ক্লান্ত বিধ্বস্ত কবি একদিন ব্যাকুল হয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর। এ বিশ্বে সৃষ্টির আদি হল উদ্ভিদ। এই ধরীত্রির সৃষ্টিলগ্নে বিশ্বসংসার পরিপূর্ণ ছিল বৃক্ষরাজি দ্বারা গঠিত সুবিশাল অরণ্যে। কিন্তু কালের বিবর্তনে যখন সমগ্র প্রাণীকূল তথা মানুষের উদ্ভব ঘটে, তখন মানুষ নিজের প্রয়োজন হেতু পৃথিবীর বুক চিরে নির্বিচারে অরণ্যচ্ছেদন করে আপন সভ্যতার জয়যাত্রা অব্যাহত রাখে। সময়ের লহমায় পৃথিবী তথা সমগ্র জীবকুলের নিয়ম বদলাতে থাকে, বিশ্বজুড়ে মানবসভ্যতা সর্বশ্রেষ্ঠ মাত্রা পায়।

তবুও মানুষ এবং উদ্ভিদকুলের মধ্যে একটা সমতা বরাবর বজায় ছিল। কিন্তু মানুষের ভোগের বাসনার কোন অন্ত ছিল না কোনদিন। আদিম সেই নির্মম বাসনাই নবজাগরণ পরবর্তী তথাকথিত আধুনিক বিজ্ঞানের আবির্ভাবের পর চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।

আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পৃথিবী জুড়ে গড়ে উঠতে থাকে অসংখ্য নতুন নতুন নগর, কলকারখানা বন্দর আরো কত কি। আপন জৈবিক লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে পরিবেশকে নিজের ইচ্ছে মতন ব্যবহার ও শোষণ অব্যাহত থাকে।

অরণ্য উচ্ছেদ: শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, সৃষ্টির আদি ছিল অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত। প্রাচীনকালে পৃথিবীর সমগ্র স্থলভাগের প্রায় সমগ্র অংশই ছিল আরণ্যাবৃত। সময় নাটকের নিয়ম অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সেই জনবসতির বিস্তার ও কৃষি জমি প্রসারের উদ্দেশ্যে বনভূমির বুক থেকে বৃক্ষ ছেদনের নির্মম খেলায় কোমর বেঁধে কুঠার ধরলো মানুষ।

হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত বনভূমি এই ভাবেই শেষ হতে থাকলো। এইখানেই অরণ্য ধ্বংসের শুরু। তারপর সময় যত এগিয়েছে মানুষ নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সভ্যতার প্রসারের আকাঙ্ক্ষায় গড়ে তুলতে শুরু করেছিল নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা বন্দর। এরপর এসেছে আধুনিক নগর সভ্যতার যুগ।

এই যুগে মানুষ হয়ে উঠেছে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য, মূল্যবোধহীন ভোগসর্বস্ব জীব। পরিবেশের ভারসাম্য কে সামান্যতম রেয়াত না করেই চলেছে অরণ্যধ্বংস। যার আধুনিকতম উদাহরণ দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য সম্পর্কে চূড়ান্ত অবহেলা, সেখানকার বিধ্বংসী দাবানল এবং প্রায় মনুষ্যসৃষ্ট ভয়ঙ্কর এক বিপর্যয়।

মোট বনভূমি বা অরণ্যের প্রায় অর্ধেক অংশ এভাবেই নির্বিচারে শেষ করে ফেলেছে মানুষ।শেষ পর্যন্ত যে অরণ্য পরিত্রাণ পেয়ে নিজের অস্তিত্বকে এখনো অব্দি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, তার পরিমাণ হল পৃথিবীর মোট স্থলভাগের শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ।

বৃক্ষরোপণ তথা বনমহোৎসব: গাছ আমাদের একমাত্র অকৃত্রিম বন্ধু। গাছপালা বাদ দিয়ে পৃথিবীতে অন্য কোনো জীবের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায়না। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রত্যেকটি জীব প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। আর বাস্তুতন্ত্রের অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি প্রানীই  উদ্ভিদের সাথে জৈবিক আদান প্রদানের মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করে থাকে।

কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই একমাত্র অকৃত্রিম বন্ধুটির প্রতি মানুষের চূড়ান্ত এক অবহেলার রূপ লক্ষ্য করা যায়। সেজন্যই হয়তো সমগ্র পরিবেশ আজ সংকটের সম্মুখীন। একথা সত্য যে মানব সভ্যতার অগ্রগতি হেতু পরিমিত বৃক্ষছেদনের প্রয়োজন আছে, তবে সেই স্থানে নতুন বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তাও সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে।

কিন্তু চারা গাছ লাগানো নয়, শুধুমাত্র গাছ কাটার প্রতিই মানুষের মনোযোগ বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই নতুন গাছ লাগানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।আমাদের এই আধুনিক যন্ত্র পরিচালিত জীবনে বৃক্ষরোপনের প্রয়োজন একান্ত আমাদের নিজেদেরই স্বার্থে। স্বাভাবিকভাবে এইযে বৃক্ষরোপনের উদ্যোগে মানুষের এত অবহেলা, তারই বিশেষ কার্যক্রম বনমহোৎসব নামে পরিচিত।

আজ থেকে প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রমবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বর্ষার দিনে বনমহোৎসব পালন করতেন। যদিও বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে।

তাই উক্ত বনোমহোৎসব আজ বিশ্বায়িত হয়ে এক আন্তর্জাতিক উৎসবের আকার ধারণ করেছে। আজকাল সরকারি ও বহু বেসরকারি উদ্যোগে তথা বনমহোৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

বৃক্ষরোপণ অভিযান: বনজ সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর সম্প্রসারণের জন্য দেশে বিদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রত্যেক বছর বৃক্ষরোপণ অভিযান  দুএক সপ্তাহ জুড়ে বা মাসব্যাপী চলে। এসময় বিনামূল্যে সাধারণ মানুষকে চারা গাছ দেওয়া হয় রোপন করবার জন্যে।

এছাড়াও প্রচার করা হয় বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তা, গাছ লাগানো ও সংরক্ষণের সঠিক উপায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় বৃক্ষরোপণ অভিযান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদ্যোগ গুলির মধ্যে একটি।

অরণ্যের আচ্ছাদনকে বাঁচিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। তাই বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার জন্য শুধুমাত্র সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলির উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এসমস্ত উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ হয় ঠিকই, কিন্তু তা প্রতিনিয়ত হয়ে চলা বিশ্বব্যাপী অরণ্যছেদনের তুলনায় নিতান্তই সামান্য।

এই ধরনের সংগঠিত উদ্যোগ মানুষকে নিয়মের গণ্ডিতে নিশ্চয়ই বেঁধে দিতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে তা কতখানি স্বতঃস্ফূর্ত প্রভাব ফেলে সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর পরিবেশের বিষয়ে একমাত্র সার্বিক স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগই সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে। সেজন্য বৃক্ষরোপণের বিষয়ে সার্বিক সচেতনতা এবং সাধারণ উদ্যোগ গড়ে তোলার বিকল্প কিছু হতে পারে না।

বনসংরক্ষণ: বনসংরক্ষণ ব্যতীত বৃক্ষরোপণ একবারেই অর্থহীন। গাছ লাগানোর সাথে সাথে বনভূমিতে যেসব গাছ রয়েছে তাদের বাঁচিয়ে রাখাটাও মানুষেরই দায়িত্বের অঙ্গ। পৃথিবীকে দূষণমুক্ত সবুজ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয় ,এর জন্য প্রথমে অনিয়ন্ত্রিত অরণ্যধ্বংস বন্ধ করা প্রয়োজন। এছাড়াও, নতুন যে সমস্ত বৃক্ষচারা রোপন করা হচ্ছে সেইগুলি যাতে নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে সেদিকেও সচেতন নজর দেওয়া দরকার।

ভূমিকাতেই উল্লেখ করেছি, আজও মানুষের ভোগ ও লোভের বাসনায় লাগাম টানা যায়নি। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে বহু মূল্যবান গাছ কেটে ফেলছে। এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের যত শীঘ্র সম্ভব সুসংগঠিত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

তদুপরি কোনো বিশেষ প্রয়োজনে একটি গাছ উচ্ছেদ করলে তার বদলে অন্তত দশটি চারা গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রেও শুধুমাত্র সরকারি বা বেসরকারি সংগঠিত উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। স্বতঃস্ফূর্ত সার্বিক উদ্যোগ সচেতনতাই বন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাফল্য এনে দেবে এবং বৃক্ষরোপণের প্রকৃত উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হবে।

অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব এবং প্রতিকার: শোষণের হতাশায় পৃথিবীর দীর্ঘশ্বাসে স্বাভাবিকভাবেই জল স্থল সমগ্র আবহাওয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দূষণের বীজাণু। জলবায়ু হয়ে ওঠে বিষাক্ত। দূষিত এই পরিবেশেই মানুষ প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে কাজের সন্ধানে,আশ্রয়ের আশায়, প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে _এ যেন অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতা, কে কার আগে পৌঁছাবে তারই কলরব। আর অন্যদিকে এই ইঁদুর দৌড়ের মধ্যে দূষিত পরিবেশে নিজের মধ্যেই নিজের মৃত্যুবীজ মানুষ বুনে দিয়ে যাচ্ছে অচিরেই।

এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ, সবুজ প্রান্তর, বনরাজির স্নিগ্ধ আচ্ছাদন। একথা আজ পৃথিবীর যেকোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই অনুধাবন করতে পারেন খুব সহজেই।

দূষণ প্রতিকার করতে ও সুন্দর শ্যামল পরিবেশ গড়ে তুলতে বনসংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেজন্যেই আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের এত গুরুত্ব, এত আলোচনা, এত সম্মান।

বন সংরক্ষণ তথা বনসৃজন এর উদ্দেশ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অবশ্যপালনীয় কিছু কর্তব্য:

  v  অরণ্যের অবাধ ও যথেচ্ছ উচ্ছেদ নিবারণ।
v  অপরিণত বৃক্ষ ছেদন বন্ধ করা।
v  দাবানলের হাত থেকে বন জঙ্গলকে রক্ষা হেতু উদ্যোগ গ্রহণ করা।
v  অরণ্য গবেষণার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করা।
v  যথেচ্ছ পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা।
v  তৃণমূল স্তর থেকে বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। 
v  রোপন করা চারা গাছের সংরক্ষণ।
v  বনসৃজন ও বন সংরক্ষণের ব্যাপারে স্থানীয় মানুষের যোগদানে উৎসাহ দেওয়া।
v  প্রাথমিক মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশ শিক্ষার ব্যাপক প্রচার।
v 
বনসৃজন এবং বন সংরক্ষনের জন্য সার্বিক স্বতস্ফূর্ত সাধারণ উদ্যোগ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সমাজের সর্বস্তরে সংশ্লিষ্ট বিষয় ভিত্তিক সচেতনতার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার।

অরন্যের পুনরুদ্ধার: আমাদের অঙ্গীকার: বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের এই মহাযজ্ঞে যদি আমরা সফল হই তাহলে হয়তো আবার কোন দিন বীজাণু মুক্ত স্নিগ্ধ বাতাসে আমাদের কোন এক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শ্বাস নিতে পারবে। হয়তো আমরা সত্যিই এ পৃথিবীর জীবকুলকে এক অমোঘ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো।

আবারো এ পৃথিবীর প্রাণী ও উদ্ভিদকূল প্রকৃতির নিয়মে পারস্পারিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরম শান্তিতে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করতে পারবে। তাই আজ পরিবেশের এই সংকট কালে দূর ভবিষ্যতের সোনালী স্বপ্নকে চোখে রেখে সমগ্র মানবজাতির অঙ্গীকার হোক পরিবেশ রক্ষা।কবির ভাষায়- 

চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

উপসংহার: আধুনিক যন্ত্র পরিচালিত জীবনের কলুষিত পরিবেশ মানুষকে প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় আরণ্যক সভ্যতার উদার প্রশান্ত জীবনের কথা। কিন্তু এই আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক নগরজীবন ত্যাগ করে অরণ্যের যুগে ফিরে যাওয়ার চিন্তা মানুষের পক্ষে নিতান্তই এক আকাশ কুসুম কল্পনা। পাশাপাশি একথাও সত্য যে পরিমিত অরণ্য ব্যতীত প্রাণীকুলের অস্তিত্ব রক্ষাও কোনভাবে সম্ভব নয়। সভ্যতার অগ্রগতির বীজাণু যখন সেই সভ্যতারই গলা টিপে ধরতে চাইছে, তখন একমাত্র মানুষের অকৃত্রিম বন্ধুই পারে বিশ্ব সংসারকে এই চূড়ান্ত সংকটের হাত থেকে রক্ষা করতে। সেজন্য নিজের স্বার্থেই, মানবকূলকে আজ শামিল হতে হবে পৃথিবীর ফুসফুস কে পুনরায় সুস্থ করে তোলবার উদ্যোগে।

--- সমাপ্ত ---

Wednesday, May 5, 2021

রচনা

 দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা                 

 রচনা সংকেত

      v  ভূমিকা;
v  ছাত্রসমাজ তারুণ্যের উজ্জ্বল দীপ্তি; 
v  অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়;
v  দেশ ও জাতির সমস্যা ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা;
v  বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র;
Ø  ক. দেশপ্রেম;
Ø  খ. ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি;
Ø  গ. নিরক্ষরতা দূরীকরণ;
Ø  ঘ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে; 
Ø  ঙ. নৈতিক অবয় রোধ ও রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা;
Ø  চ. সন্ত্রাস নিরসনে;
Ø  ছ. বেকারত্ব নিরসনে; 
Ø  জ. কৃষি ক্ষেত্রে;
Ø  ঝ. সাংস্কৃতিক অবদান;
v উপসংহার।

 ১। ভূমিকা: জ্ঞানশক্তি ও তারুণ্যশক্তি এই দুই শক্তির সমন্বয় করে ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে । আজকের ছাত্ররাই জাতির সম্ভাবনাময় প্রজন্ম ।ছাত্রজীবন হলো মানবজীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে "Student life is seedtime of life" অর্থাৎ জীবনের বীজ বপনের সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। প্রকৃতপক্ষে, মানব চরিত্রের মহৎ গুণাবলীগুলো আয়ত্ত করার উপযুক্ত সময় এই ছাত্রজীবন। কেবলমাত্র অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের একমাত্র কর্তব্য হতে পারে না বরং একজন ছাত্রের অধ্যয়নের পাশাপাশি নিজেকে মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আরো অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয়। দেশ ও জাতির উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছাত্রদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন অপরিহার্য।

আমরা রচি ভালবাসার / আশার ভবিষ্যৎ
মোদের স্বর্গ-পথের আভাস / আকাশ ছায়াপথ।  -কাজী নজরুল ইসলাম।

২। ছাত্রসমাজ তারুণ্যের উজ্জ্বল দীপ্তি:  ছাত্রসমাজ চিরকালই নবশক্তির উদ্বোধক হিসেবে কাজ করেছে । তাদের চোখে থাকে জ্ঞানের আলো, বুকে থাকে স্বপ্নময় ভবিষ্যতের অগ্নিমন্ত্র । অর্জিত জ্ঞানের আলো নিয়ে তারা দেশ ও সমাজের দিকে তাকায় । তাদের দেশগঠনমূলক ভূমিকা ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত । ছাত্রসমাজ রচনা করেছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস । বায়ান্নর ভাষা - আন্দোলনে এ দেশের ছাত্রসমাজের রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান । ঊনসত্তরের গণ - অভ্যুত্থান , একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ , নব্বইয়ের গণ - আন্দোলনে ছাত্রসমাজই পালন করেছে মুখ্য ভূমিকা । রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়ে এ দেশের ছাত্রসমাজ জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে । বুকের রক্ত দিয়ে রফিক , শফিক , সালাম , বরকত যে বাংলাভাষার নাম লিখেছিল , তা আজ স্বমহিমায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত । 

৩। অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়:  বলা হয়- ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ অর্থাৎ অধ্যয়নই হচ্ছে ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। দেশ ও জাতি গঠনে অংশ নিতে হলে ছাত্রদের উচিত কঠোর অধ্যবসায়ে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা। দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে গোটা ছাত্রসমাজকে উপযুক্ত এবং সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিরক্ষর, শ্রমবিমুখ, অলস জনগোষ্ঠী কখনোই জাতিগঠনে সহায়ক শক্তি হতে পারে না বরং জাতির জন্য তারা বোঝা স্বরূপ। একটি দেশের সাফল্যের প্রথম শর্ত, সেই জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং পরবর্তী শর্ত, কঠোর ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী করে গড়ে তোলা। আর তাই ছাত্রদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব নিজেকে পরবর্তী কর্মজীবনের জন্য যোগ্য করে তৈরি করা এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে দেশগঠনে অংশ নেয়া।

৪। দেশ ও জাতির সমস্যা ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা:  ছাত্ররা সাধারণত অর্থনৈতিক বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকে না । বন্ধনহীন মুক্তজীবন আর খোলা চোখ নিয়ে তাকায় বলে , তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের ত্রুটিগুলো সহজে দেখতে পায় । চিহ্নিত করতে পারে সমস্যার কারণ এবং সমাধানের উপায়ও তারা খুঁজে বের করতে পারে । লোভ বা স্বার্থপরতার কাছে পরাজিত না হয়ে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে । ছাত্রসমাজ মানেই সংঘবদ্ধ একটা শক্তি । এই সংঘবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশগঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব । প্রচলিত ধারার নষ্ট রাজনীতি কখনো কখনো ছাত্রসমাজকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করছে । কলুষিত করছে ছাত্রসমাজকে । ছাত্রসমাজের গৌরবময় ঐতিহ্য রক্ষা করার স্বার্থেই ওই নষ্ট রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । ছাত্রসমাজকে কাজ করতে হবে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে , অপরিসীম দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে । মনে রাখতে হবে , এ দেশের প্রত্যেকটি ছাত্র এক - একজন সূর্যসন্তান । দেশমাতৃকার সেবা - শক্তির প্রতীক । 

৫। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র: সমাজ, দেশ ও জাতির সমস্যাসমূহ দূর করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশ গঠনের সুমহান কার্যক্রম। এসব সমস্যা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্যে প্রথমেই প্রয়োজন দেশপ্রেম।

ক. দেশপ্রেম: একটি মানুষের চরিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল তার দেশপ্রেম। জ্ঞানার্জনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ছাত্রের মাঝে উপ্ত হয় সেবার আদর্শ, দেশপ্রেমের ক্ষুদ্র বীজ যা তার পরবর্তী কর্মবহুল-জীবনে ধারণ করে বিশাল মহীরূহের আকার। বাস্তবজ্ঞানের আলোকে দেশের কর্তব্যের আহ্বানে ছাত্রদলই পারে দেশপ্রেমের আদর্শে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে এবং স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বছরগুলোর ভাষা আন্দোলনে এ দেশের ছাত্রসমাজ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে মহান আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তা আজও ইতিহাস হয়ে আছে। দেশের ছাত্রসমাজই পারে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে এবং সেই সাথে দেশের সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মহান ঐক্য ও সংহতির পক্ষপাতহীন মন্ত্রবাণী।

খ. ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি: মহাত্মা গান্ধী বলেছেন- "The Students are the future leaders of the country who could fulfill country's hopes being capable." উপমহাদেশীয় রাজনীতির অঙ্গনের একটা বড় জায়গা দখল করে আছে ছাত্ররা। এ অঞ্চলের বড় বড় আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রামগুলোর পরিচালনা করেছে মূলত ছাত্ররাই। যখনই কোনো অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে তখনই দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্ররাই প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ গঠনের পেছনে সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে এ দেশের ছাত্ররাই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবাদ ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সর্বোপরি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রসমাজ। যদিও বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে তবু ইতিহাসে এর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।

গ. নিরক্ষরতা দূরীকরণ: দেশের মূল সমস্যাগুলোর অন্যতম সমস্যা নিরক্ষরতা। এর অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার কাজে ছাত্রসমাজের ভূমিকা সবচেয়ে কার্যকর। একজন শিক্ষিত ছাত্র তার পরিবারের ভেতরে যেমন শিক্ষার আলো ছড়াতে পারে, তেমনি তার প্রতিবেশী নিরক্ষরদের মধ্যেও জ্বালাতে পারে জ্ঞানের প্রদীপ। সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ যদি নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষরদের মধ্যেও জ্বালাতে পারে জ্ঞানের প্রদীপ। সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ যদি নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষরতা দূরীকরণে ব্রতী হয়, তা হলে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা অনেক সহজহর হতে পারে।

ঘ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। ছাত্রসমাজ এ ক্ষেত্রে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে সবচেয়ে বেশি। কেননা, ছাত্রদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উঁচু ধারণা পোষণ করে। ফলে ছাত্রদের যেকোন পরামর্শই তারা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে। সুতরাং, এ বিবেচনায় ছাত্রসমাজ নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। ফলে জনসংখ্যার অভিশাপ থেকে দেশ হতে পারে সম্পূর্ণ মুক্ত।

ঙ. নৈতিক অবয় রোধ ও রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা: ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের বহু অন্যায় উচ্ছেদ করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীত ইতিহাসে এর একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। আর আজকের ছাত্রই আগামীদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার এক একটি অংশ। সুতরাং, ছাত্ররা যদি ঘুষ-দুর্নীতিসহ সকল প্রকার নৈতিক অবয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেরাও সততার অনুশীলন করে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হতে পারে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ।

চ. সন্ত্রাস নিরসনে:  শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস আজ দেশ গড়ার পথে এক মারাক্তক অন্তরায় হয়ে আছে। সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ আজ বিনষ্ট হতে চলেছে। শিাঙ্গনে সন্ত্রাস নিরসনে সরকারি উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, ততোধিক প্রয়োজন ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

ছ. বেকারত্ব নিরসনে: কর্মসংস্থানের অভাবে বা বেকারত্ব বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির হথে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা। ছাত্রসমাজ যদি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে, তা হলে বেকারত্বের অভিশাপ অনেকখানি দূর হবে।

জ. কৃষি ক্ষেত্রে: উচ্চশিতি হলে কৃষিকাজ করা যাবে না, এমন প্রাচীন ধারণা ত্যাগ করা গেলে ছাত্রসমাজ উৎপাদন কর্মকান্ডে রাখতে পারে বিপুল অবদান। যেমন- কৃষি, মৎস্য ছাত্র, পশু, হাঁসমুরগির খামার, বাগান করা, গাছপালা রোপণ ইত্যাদি আর্থিক উন্নয়নমূলক কাজে তথা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ছাত্রসমাজই দেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম।

ঝ. সাংস্কৃতিক অবদান: একটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাতীয় পরিচয় তুলে ধরতে ছাত্রসমাজ সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা যথা: কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রভৃতি চর্চার মাধ্যমে তারা বিশ্বের বুকে দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারে।

৬। উপসংহার:  ছাত্রসমাজ হচ্ছে সংঘবদ্ধ শক্তিতে বলীয়ান । সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম থাকলে তারা দেশের কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে । দেশের অগ্রগতি ও জাতির প্রত্যাশিত আকাঙ্ক্ষা পূরণে ছাত্রসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে ।

                                                                   --- সমাপ্ত ---