চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Wednesday, May 5, 2021

রচনা

 দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা                 

 রচনা সংকেত

      v  ভূমিকা;
v  ছাত্রসমাজ তারুণ্যের উজ্জ্বল দীপ্তি; 
v  অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়;
v  দেশ ও জাতির সমস্যা ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা;
v  বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র;
Ø  ক. দেশপ্রেম;
Ø  খ. ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি;
Ø  গ. নিরক্ষরতা দূরীকরণ;
Ø  ঘ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে; 
Ø  ঙ. নৈতিক অবয় রোধ ও রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা;
Ø  চ. সন্ত্রাস নিরসনে;
Ø  ছ. বেকারত্ব নিরসনে; 
Ø  জ. কৃষি ক্ষেত্রে;
Ø  ঝ. সাংস্কৃতিক অবদান;
v উপসংহার।

 ১। ভূমিকা: জ্ঞানশক্তি ও তারুণ্যশক্তি এই দুই শক্তির সমন্বয় করে ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে । আজকের ছাত্ররাই জাতির সম্ভাবনাময় প্রজন্ম ।ছাত্রজীবন হলো মানবজীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে "Student life is seedtime of life" অর্থাৎ জীবনের বীজ বপনের সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। প্রকৃতপক্ষে, মানব চরিত্রের মহৎ গুণাবলীগুলো আয়ত্ত করার উপযুক্ত সময় এই ছাত্রজীবন। কেবলমাত্র অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের একমাত্র কর্তব্য হতে পারে না বরং একজন ছাত্রের অধ্যয়নের পাশাপাশি নিজেকে মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আরো অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয়। দেশ ও জাতির উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছাত্রদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন অপরিহার্য।

আমরা রচি ভালবাসার / আশার ভবিষ্যৎ
মোদের স্বর্গ-পথের আভাস / আকাশ ছায়াপথ।  -কাজী নজরুল ইসলাম।

২। ছাত্রসমাজ তারুণ্যের উজ্জ্বল দীপ্তি:  ছাত্রসমাজ চিরকালই নবশক্তির উদ্বোধক হিসেবে কাজ করেছে । তাদের চোখে থাকে জ্ঞানের আলো, বুকে থাকে স্বপ্নময় ভবিষ্যতের অগ্নিমন্ত্র । অর্জিত জ্ঞানের আলো নিয়ে তারা দেশ ও সমাজের দিকে তাকায় । তাদের দেশগঠনমূলক ভূমিকা ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত । ছাত্রসমাজ রচনা করেছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস । বায়ান্নর ভাষা - আন্দোলনে এ দেশের ছাত্রসমাজের রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান । ঊনসত্তরের গণ - অভ্যুত্থান , একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ , নব্বইয়ের গণ - আন্দোলনে ছাত্রসমাজই পালন করেছে মুখ্য ভূমিকা । রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়ে এ দেশের ছাত্রসমাজ জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে । বুকের রক্ত দিয়ে রফিক , শফিক , সালাম , বরকত যে বাংলাভাষার নাম লিখেছিল , তা আজ স্বমহিমায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত । 

৩। অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়:  বলা হয়- ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ অর্থাৎ অধ্যয়নই হচ্ছে ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। দেশ ও জাতি গঠনে অংশ নিতে হলে ছাত্রদের উচিত কঠোর অধ্যবসায়ে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা। দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে গোটা ছাত্রসমাজকে উপযুক্ত এবং সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিরক্ষর, শ্রমবিমুখ, অলস জনগোষ্ঠী কখনোই জাতিগঠনে সহায়ক শক্তি হতে পারে না বরং জাতির জন্য তারা বোঝা স্বরূপ। একটি দেশের সাফল্যের প্রথম শর্ত, সেই জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং পরবর্তী শর্ত, কঠোর ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী করে গড়ে তোলা। আর তাই ছাত্রদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব নিজেকে পরবর্তী কর্মজীবনের জন্য যোগ্য করে তৈরি করা এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে দেশগঠনে অংশ নেয়া।

৪। দেশ ও জাতির সমস্যা ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা:  ছাত্ররা সাধারণত অর্থনৈতিক বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকে না । বন্ধনহীন মুক্তজীবন আর খোলা চোখ নিয়ে তাকায় বলে , তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের ত্রুটিগুলো সহজে দেখতে পায় । চিহ্নিত করতে পারে সমস্যার কারণ এবং সমাধানের উপায়ও তারা খুঁজে বের করতে পারে । লোভ বা স্বার্থপরতার কাছে পরাজিত না হয়ে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে । ছাত্রসমাজ মানেই সংঘবদ্ধ একটা শক্তি । এই সংঘবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশগঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব । প্রচলিত ধারার নষ্ট রাজনীতি কখনো কখনো ছাত্রসমাজকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করছে । কলুষিত করছে ছাত্রসমাজকে । ছাত্রসমাজের গৌরবময় ঐতিহ্য রক্ষা করার স্বার্থেই ওই নষ্ট রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । ছাত্রসমাজকে কাজ করতে হবে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে , অপরিসীম দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে । মনে রাখতে হবে , এ দেশের প্রত্যেকটি ছাত্র এক - একজন সূর্যসন্তান । দেশমাতৃকার সেবা - শক্তির প্রতীক । 

৫। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র: সমাজ, দেশ ও জাতির সমস্যাসমূহ দূর করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশ গঠনের সুমহান কার্যক্রম। এসব সমস্যা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্যে প্রথমেই প্রয়োজন দেশপ্রেম।

ক. দেশপ্রেম: একটি মানুষের চরিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল তার দেশপ্রেম। জ্ঞানার্জনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ছাত্রের মাঝে উপ্ত হয় সেবার আদর্শ, দেশপ্রেমের ক্ষুদ্র বীজ যা তার পরবর্তী কর্মবহুল-জীবনে ধারণ করে বিশাল মহীরূহের আকার। বাস্তবজ্ঞানের আলোকে দেশের কর্তব্যের আহ্বানে ছাত্রদলই পারে দেশপ্রেমের আদর্শে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে এবং স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বছরগুলোর ভাষা আন্দোলনে এ দেশের ছাত্রসমাজ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে মহান আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তা আজও ইতিহাস হয়ে আছে। দেশের ছাত্রসমাজই পারে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে এবং সেই সাথে দেশের সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মহান ঐক্য ও সংহতির পক্ষপাতহীন মন্ত্রবাণী।

খ. ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি: মহাত্মা গান্ধী বলেছেন- "The Students are the future leaders of the country who could fulfill country's hopes being capable." উপমহাদেশীয় রাজনীতির অঙ্গনের একটা বড় জায়গা দখল করে আছে ছাত্ররা। এ অঞ্চলের বড় বড় আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রামগুলোর পরিচালনা করেছে মূলত ছাত্ররাই। যখনই কোনো অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে তখনই দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্ররাই প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ গঠনের পেছনে সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে এ দেশের ছাত্ররাই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবাদ ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সর্বোপরি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রসমাজ। যদিও বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে তবু ইতিহাসে এর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।

গ. নিরক্ষরতা দূরীকরণ: দেশের মূল সমস্যাগুলোর অন্যতম সমস্যা নিরক্ষরতা। এর অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার কাজে ছাত্রসমাজের ভূমিকা সবচেয়ে কার্যকর। একজন শিক্ষিত ছাত্র তার পরিবারের ভেতরে যেমন শিক্ষার আলো ছড়াতে পারে, তেমনি তার প্রতিবেশী নিরক্ষরদের মধ্যেও জ্বালাতে পারে জ্ঞানের প্রদীপ। সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ যদি নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষরদের মধ্যেও জ্বালাতে পারে জ্ঞানের প্রদীপ। সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ যদি নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষরতা দূরীকরণে ব্রতী হয়, তা হলে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা অনেক সহজহর হতে পারে।

ঘ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। ছাত্রসমাজ এ ক্ষেত্রে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে সবচেয়ে বেশি। কেননা, ছাত্রদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উঁচু ধারণা পোষণ করে। ফলে ছাত্রদের যেকোন পরামর্শই তারা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে। সুতরাং, এ বিবেচনায় ছাত্রসমাজ নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। ফলে জনসংখ্যার অভিশাপ থেকে দেশ হতে পারে সম্পূর্ণ মুক্ত।

ঙ. নৈতিক অবয় রোধ ও রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা: ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের বহু অন্যায় উচ্ছেদ করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীত ইতিহাসে এর একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। আর আজকের ছাত্রই আগামীদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার এক একটি অংশ। সুতরাং, ছাত্ররা যদি ঘুষ-দুর্নীতিসহ সকল প্রকার নৈতিক অবয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেরাও সততার অনুশীলন করে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হতে পারে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ।

চ. সন্ত্রাস নিরসনে:  শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস আজ দেশ গড়ার পথে এক মারাক্তক অন্তরায় হয়ে আছে। সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ আজ বিনষ্ট হতে চলেছে। শিাঙ্গনে সন্ত্রাস নিরসনে সরকারি উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, ততোধিক প্রয়োজন ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

ছ. বেকারত্ব নিরসনে: কর্মসংস্থানের অভাবে বা বেকারত্ব বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির হথে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা। ছাত্রসমাজ যদি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে, তা হলে বেকারত্বের অভিশাপ অনেকখানি দূর হবে।

জ. কৃষি ক্ষেত্রে: উচ্চশিতি হলে কৃষিকাজ করা যাবে না, এমন প্রাচীন ধারণা ত্যাগ করা গেলে ছাত্রসমাজ উৎপাদন কর্মকান্ডে রাখতে পারে বিপুল অবদান। যেমন- কৃষি, মৎস্য ছাত্র, পশু, হাঁসমুরগির খামার, বাগান করা, গাছপালা রোপণ ইত্যাদি আর্থিক উন্নয়নমূলক কাজে তথা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ছাত্রসমাজই দেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম।

ঝ. সাংস্কৃতিক অবদান: একটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাতীয় পরিচয় তুলে ধরতে ছাত্রসমাজ সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা যথা: কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রভৃতি চর্চার মাধ্যমে তারা বিশ্বের বুকে দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারে।

৬। উপসংহার:  ছাত্রসমাজ হচ্ছে সংঘবদ্ধ শক্তিতে বলীয়ান । সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম থাকলে তারা দেশের কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে । দেশের অগ্রগতি ও জাতির প্রত্যাশিত আকাঙ্ক্ষা পূরণে ছাত্রসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে ।

                                                                   --- সমাপ্ত ---

No comments: