চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Saturday, July 4, 2020

শিক্ষা সফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট আবেদনপত্র লেখ

২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ খৃ:
প্রধান শিক্ষক,
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অনুমতির জন্য আবেদন।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা আপনার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা শিক্ষাসফরে যাওয়ার  মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। পাঠ্যসূচিভুক্ত তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে শিক্ষাসফরের কোনো বিকল্প নেই, সে বিষয়ে সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী প্রায়ই আমাদের অবগত করেন। বাস্তবিকই শিক্ষাসফর শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত, সে বিষয়টা পড়ার পাশাপাশি যদি বাস্তবে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় তবে তা যে জ্ঞান লাভে আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে, সে ব্যাপারে আপনি আমাদের চেয়েও ভাল জানেন। তাই আপনার অনুমতি সাপেক্ষে আমরা বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শিক্ষাসফরে যেতে ইচ্ছুক। মহাস্থানগড় সম্পর্কে আমরা পাঠ্যসূচিতে পড়েছি, এবার এ ঐতিহাসিক স্থানটি বাস্তবে দেখতে চাই।

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমাদেরকে শিক্ষাসফরের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে বাধিত করবেন।

নিবেদক-
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে
শুপতা ইসলাম
শ্রেণি: অষ্টম  
রোল নং ০১
শাখা: খ

আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

💛 পত্র লেখার সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে:
­ 💛পত্রের ভাষা সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ও আড়ম্বরহীন হতে হবে।
­ 💛 কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সুষ্ঠ জ্ঞান থাকতে হবে।
💛 ­ সংক্ষেপে পত্র লিখতে হবে।
­💛  বিষয়ভেদে আবেগ-উচ্ছ্বাসে মাত্রাজ্ঞান থাকতে হবে।
­ 💛 যতি চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ থাকতে হবে।
­ 💛 পত্র লেখার পরিচ্ছন্নতা ও সুরুচির পরিচয় দিতে হবে।
­ 💛 সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
­ 💛 বানান শুদ্ধ হতে হবে।

আবেদন পত্র 

ছাত্রকল্যাণ দরিদ্র তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট আবেদনপত্র লেখ।

২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ খৃ:
প্রধান শিক্ষক,
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়,
আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বিষয়: ছাত্রকল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্যের আবেদন।

জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্রী। গত বার্ষিক পরীক্ষায় আমি প্রথম স্থান অধিকার করে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমাদের ছয় সদস্যের পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামান্য বেতনভোগী কেরানি। পরিবারের ভরণপোষণ ছাড়াও আমাদের তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ তাঁকেই চালাতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে হঠাৎ এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আমার বাবা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এমতবস্থায় এ বছর নতুন বই-পুস্তক ক্রয় করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

অতএব, জনাবের নিকট আমার আকুল আবদেন এই যে, নতুন শিক্ষা বছরে বই পুস্তক ও খাতাপত্র কেনার জন্য আমাকে বিদ্যালয়ের দরিদ্র তহবিল হতে এককালীন কিছু অর্থ অনুদানের ব্যবস্থা করে বাধিত করবেন।

নিবেদক-
শুপতা ইসলাম
শ্রেণি: অষ্টম  
রোল নং ০১
শাখা: খ

Friday, July 3, 2020

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান।

মূলভাব: মানুষের জীবনে সবচয়েে মূল্যবান জিনিস হল তার জ্ঞান। জ্ঞানহীন মানুষরে সাথে পশুর র্পাথক্য থাকে খুব সামান্যই।

সম্প্রসারতি ভাব: জৈবিক পরিচয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ প্রাণী। প্রাণের অস্তিত্ব হেতু মানুষের সাথে অন্যান্য ইতর প্রাণীর কোনো মৌলিক র্পাথক্য নেই। কিন্তু এ কথা সত্য, মানুষ সৃষ্টির সেরা। তার সম্মান আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে র্সবোচ্চ র্পযায়ে বিশ্বের অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। মানুষও সব কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠা করেছে তার আধিপত্য। ইতর প্রাণী  থেকে  মানুষের শ্নুরেষ্ষঠ হবার রহস্রেয কোথায়? বস্তুত মানুষ জ্ঞান শক্তির কল্যাণে সমগ্র  বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও মূল্যবোধের কারণে মানুষ নিজের জীবন নিজের চেষ্টায় সুন্দর করতে পারে। ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ প্রভৃতির র্পাথক্য করে নিজের জীবন এবং দেশ ও জাতিকে কল্যাণময় করার ক্ষমতা কেবল মানুষেরই আছে। বুদ্ধিমান প্রাণী বলেই প্রাণী বলেই একদিকে মানুষের রয়েছে জ্ঞানশক্ত, অন্যদিকে রয়েছে মনুষ্যত্বের ছোঁয়ায় নৈতিক শক্তি। অথচ অন্যান্য প্রাণী জ্ঞানহীন বলে তাদের জীবন বিকাশ জৈবিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সুন্দর-অসুন্দর, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা এ সবের বালাই নেই পশুজীবনে। পশুরা ইন্দ্রিয় ও প্রানর্সবস্ব। খাওয়া আর অন্যান্য কর্মের মধ্যেই পশুর জীবন আর্বতিত। নিজেদের চেষ্টায়তারা তাদের জীবনকে চালাতে পারে না, করতে পারে না বিকশিত। ফলে তারা প্রাকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কন্তিু পৃথিবীতে সকল মানুষ জন্মমাত্রই যে জ্ঞানবুদ্ধির অধিকারি তথা আশরাফুল মাখলুকাতরূপে শ্রেষ্ঠত্বের র্গব প্রাপ্য তা নয়। যে মানুষ যথাযথ পড়ালেখা, অভজ্ঞিতা ও মানবকি সাহর্চযে জ্ঞার্নাজনে র্ব্যথ হয়, র্ব্যথ হয় নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে, সে মানুষ হয়েও পশুর র্পযায়ভুক্ত। সে ভালমন্দ, সুন্দর-অসুন্দর বলে কোনো কিছুর র্পাথক্য করতে পারে না। সৌজন্য ও নৈতিকতাও তার কাছে ধরা দেয় না। ফলে সে ইন্দ্রিয়পরায়ণ হয়ে  পড়ে । মানবতার কল্যাণ চেতনা থেকে তারা হয় বঞ্চিত।

মন্তব্য: জ্ঞানহীন মানুষের দ্বারা কেউ উপকৃত হয় না। তার সঙ্গও কেউ কামনা করে না। তাই জীবনে জ্ঞানের সঞ্চয় করা দরকার।

আত্মশক্তি র্অজনই শক্ষিার উদ্দশ্যে।

মূলভাব: শক্ষিার প্রকৃত উদ্দশ্যেই হল আত্মশক্তি র্অজন করা। আত্মশক্তি র্অজন করা প্রতটিা মানুষরে র্কতব্য। যে ব্যক্তরি কোনো আত্মশক্তি নইে সে পরনর্ভিরশীল।

সম্প্রসারতি ভাব: মানুষের বিভিন্ন মানবীয় ও মহৎ গুনাবলরি মধ্যে আত্মশক্তি অন্যতম। কেউ আত্মশক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে,  আবার কেউ পারে না। আত্মশক্তির বলে মানুষ নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে ও কাজর্কম করতে পারে। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখন সামান্য কাজেও তাকে অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। আত্মশক্তি মানুষের মাঝে গুপ্তধনের মতোই অজ্ঞাতভাবে থাকে। আত্মশক্তি মানুষের একটি সুপ্ত প্রতিভা। শিক্ষার মাধ্যমেই এটা একজন মানুষের অন্তরে পুরোপুরিভাবে বিকশিত হতে পারে।  যে শিক্ষা মানুষকে তার আত্মপ্রত্যয়ে উজ্জীবতি করে না, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। কারণ শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের এ সুপ্ত প্রতিভাবে পুরোপুরিভাবে বিকশিত করা। শিক্ষা মানুষকে আত্মবশ্বিাস প্রসারে সাহায্য করে। আত্মবশ্বিাস আত্মশক্তিরই নামান্তর। মানুষকে সুন্দর, সমৃদ্ধি ও সুখী জীবন লাভ করার জন্য অন্যকে দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়, অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয় এবং অনেক প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ এ সংগ্রামে বিজয়ী হতে পারে না। আত্মশক্তি দ্বারা মানুষ নিজের দোষ-গুণ, ভালােমন্দ বুঝতে পারে। নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে আস্থাশীল হয়, জীবনরে চরম ও পরম সত্য লাভ করতে সর্মথ হয়। নিজেকে বুঝতে, শিখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। শিক্ষাজীবনকে সুন্দর, সুচারু এবং আত্মনর্ভিরশীলরূপে গড়ে তোলে। জীবন র্সাথক হয়। হাদিসে আছে, যে শিক্ষা গ্রহণ করে, তার মৃত্যু  নেই। মূলকথা হল, মানুষকে আত্মশক্তি র্অজন করতে হলে শিক্ষিত হতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সুতারং শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ যাতে আত্মবশ্বিাসে বলীয়ান হয় সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আর  নিজেকে জানা, নিজের ক্ষমতা-অক্ষমতা, নিজের শক্তি-দুর্বলতা সম্বন্ধে সম্যক উপলব্ধি করতে পারা শিক্ষার উদ্দেশ্য।

মন্তব্য: আত্মশক্তি মানুষেরএকটি সুপ্ত প্রতিভা, শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের অন্তরে যাতে আত্মশক্তি বিকশিত হয় সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ আত্মশক্তিহীন মানুষ পরমুখাপক্ষেী, যা কাম্য নয়।


লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

মূলভাব: লোভ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয় ও তাকে অসৎ উপায় অবলম্বন করতে প্ররোচিত করে। লোভের পরিণাম অতি ভয়াবহ-এমনকী মৃত্যুও বিচিত্র নয়।

সম্প্রসারিত ভাব: লোভী মানুষ পাপকার্য করতে দ্বিধাবোধ করে না। ভোগের নিমিত্তে উদ্ভ্রান্ত আবেগ আর অদম্য বাসনা থেকেই জাগতিক যাবতীয় পাপের উৎপত্তি। লোভের মোহে থেকে মানুষ সত্য ও সুন্দরকে অবজ্ঞা করে। সে পার্থিব ধন-সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন সে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তখন সে পাপাচারে লিপ্ত হয়। সে ক্রমান্বয়ে অবৈধ ও মন্দ পথের দিকে অগ্রসর হয়। ভোগের লালসায় শুরু হয় পাপের উৎসব। মানুষ এ সময় হয়ে ওঠে পশুর মত। তার এ পাপাচার তাকে মৃত্যুও দিকে ঠেলে দেয়। অপরদিকে নির্লোভ ব্যক্তি পাপ মুক্ত সত্য ও সুন্দর জীবন লাভ করে। তার জীবনে লোভের তাড়না থাকে না, থাকে না পাপের অস্তিত্ব। লোভী ব্যক্তি অন্যায়, অসত্য আর পাপের পথে ধাবিত হয়ে অকাল মৃত্যুও মুখোমখি হয়। 

মন্তব্য: লোভ বর্জন না করলে জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায় না। নির্লোভ জীবন সকলের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্জন করে।

একতাই বল।

মূলভাব: সকলে মিলেমিশে কাজ করার মধ্যে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি সবাই মিলে যে কোনো কঠিন কাজও সহজে করা যায়। পৃথিবীতে যে ব্যক্তি নিঃসঙ্গ ও একা, সে নিঃসন্দেহে অসহায়।  

সম্প্রসারিত ভাব: একজন মানুষ যখন একা তখন তার শক্তি থাকে সীমিত। কিন্তু যখন একতাবদ্ধ হয়ে দশজন একসঙ্গে কোনো কাজে হাত দেয় তখন সে হয় অনেক সবল ও শক্তিশালী। এই একতাবদ্ধ শক্তি তখন রূপ নেয় প্রচণ্ড শক্তিতে। তখন যে কোনো কঠিন কাজ আর কঠিন মনে হয় না। এজন্য প্রয়োজন একতার। পৃথিবীর আদিপর্বে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। কারণ তখন সে ছিল একা। সভ্যতার উষালগ্নে মানুষ উপলব্ধি করল যে, ঐক্যবদ্ধ জীবন ছাড়া এ পৃথিবীর সমস্ত প্রতিকূলতার কাছে সে ছিল তুচ্ছ। তাই মানুষ স্বীয় প্রয়োজনে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করার জন্যে গড়ে তোলে সমাজবদ্ধ জীবন, হয়ে ওঠে সামাজিক বলে বলিয়ান। পৃথিবীতে যে একা, সেই অসহায়। আর যে অসহায় তার সামর্থ্য নেই বললেই চলে। বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা মিলে তৈরি হয় বিশাল জলরাশি। ঠিক অনেক ব্যক্তি মিলে গঠিত হয় জাতীয় শক্তি, যা জাতীয় জীবনে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হয়। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ ছিল বলে পাক বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছিল। শুধু জাতীয় জীবনে নয়, আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও একতার প্রয়োজন।

মন্তব্য: সভ্যতার বিকাশে চাই মানুষের একতাবদ্ধ প্রয়াস।

বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।

মূলভাব: বাঙালি জাতি গৌরবময় ইতিহাসে সমৃদ্ধ। কোনো অন্যায়ের সাথে আপোস করে না।

সম্পসারিত ভাব: বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস। এ জাতি কারও অধীনতা কোনো দিন মেনে নেয় নি। অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থান চিরকালই ছিল বজ্রকঠিন। তাই এখানে বার বার বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। দীর্ঘ দুইশ বছরের শাসন, শোষণ শেষে বাংলাকে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে নামমাত্র স্বাধীনতা দেওয়া হয়। পাকিস্তানের বিমাতাসুলভ আচরণ বাঙালিদের অল্প পরেই মুক্তির জন্য সংগ্রামী করে তোলে। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মুক্তি-সংগ্রামের দিকে। ১৯৫৮ ও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসক বাংলার দামাল ছেলেদের ওপর গুলি চালায়। গুলি করে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানেও। বারবার বাঙালির বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তবুও তাদের স্বাধীনতার দাবিকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি জান্তা-বাহিনী। তাই তারা ১৯৭১-এ বাঙালির ওপর চ’ড়ান্ত আঘাত হানে। তখন বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি-সংগ্রামে। বাঙালির বুকের তাজা রক্তে লাল হয় বাংলার মাটি। 

মন্তব্য: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলার স্বাধীনতা।

সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।

মূলভাব: মানুষ যে সমাজের ওপর নির্ভর করে বসবাস করে সে সমাজে আছে নানা ধরনের লোক; ভালো আর মন্দ। সঙ্গ নির্বাচনে একমাত্র বিবেচনার দিক হল গুণী ব্যক্তি-যার সহায়তায় জীবন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেখানে দুর্জন বা চরিত্রহীন মানুষকে জীবন ভর দূরে রাখতে হবে।

সম্প্রসারতি ভাব: মানুষের বড় গুণ তার চরিত্র। চরিত্রের গুণেই মানুষ শ্রেষ্ট আদর্শের মর্যাদা পায়। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো আবশ্যক। তাই কুসঙ্গ নয়, সৎসঙ্গের মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে হবে। কুসঙ্গে মানুষ অমানুষ হয়ে ওঠে, তার সদগুণগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে পশুর মত অধম। জন্মগত ভাবেই মানুষ সত্যকে ভালোবাসে। আর অসৎ পথে যাওয়ার মূল কারণ অসৎসঙ্গ। অসৎসঙ্গের মধ্য দিয়ে মানুষের চরিত্র কুলষিত হয়। যেমন- রোহা ওজনে খুব ভারী বলে তা পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু লোহা যদি হালকা কাঠ বা অসার কোনো পদার্থের সাথে বেঁধে দেওয়া যায়, তাহলে লোহা ভেসে ওঠে, ডুবে না। মানুষও অসৎ সঙ্গের প্রভাবে পাল্টে যায়। কুসঙ্গ চরিত্রহীনতার অন্যতম কারণ। অথচ চরিত্রের মাধ্যমেই ঘোষিত হয় মানুষের জীবনের গৌরব। চরিত্র দিয়ে সত্যিকার মানুষের গৌরবময় বৈশিষ্ট্য তা অন্য কিছু দিয়ে সম্ভব নয় বলে সবার ওপরে চরিত্রের সুমহান মর্যাদা স্বীকৃত। সমাজের মানুষের শ্রদ্ধা, ভারোবাসা পাওয়ার মূলে থাকে তার উত্তম চরিত্র। পরশ পাথরের স্পর্শে যেমন লোহা সোনায় পরিণত হয়, তেমনি সৎ সঙ্গে মানুষ উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়। আবার অসৎসঙ্গে মানুষ পশুর চেয়ে অধম হয়ে পড়ে।

মন্তব্য: এজগতে যত লোকের অধঃপতন হয়েছে তার অন্যতম কারণ অসৎসঙ্গ। তাই সঙ্গ নির্বাচনে আমাদের সর্তক হতে হবে। 

হে সূর্য! শতের সূর্য!
হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য, তুমি তো জানো,
আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুঠো জ্বালিয়ে
এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!
সকালের এক টুকরো রোদ্দুরে-
এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।

সারমর্ম: সূর্যের শক্তিতে পৃথিবীর সব গাছপালা, মানুষ, প্রাণী জীবনধারন করে। আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন অসহায় মানুষ সূর্যের উত্তাপের জন্য সারারাত অপেক্ষা করে। সমাজের অবহেলিত ও সুবিধা-বঞ্চিত এসব মানুসের কাছে সূর্যের উত্তাপ সোনার চেয়েও দামি।

কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতেই সুরাসুর।
 রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
 আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
 স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।

সারমর্ম: স্বর্গ ও নরকের অবস্থান দূরে নয় বরং খুব কাছেই। মানুষের মধ্যেই স্বর্গ-নরক রয়েছে। রিপুর তাড়নায় মানুষ বিবেকহীন আচরণে নরকের যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে প্রীতিমুগ্ধ এবং কল্যাণময় আচরণ দারিদ্র্যের কুঁড়েঘরে স্বর্গীয় সুখ নিয়ে আসে। 
এই যে বিটপি-শ্রেণি হেরি সারি সারি-
কি আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি!
কেহ বা সরল সাধু-হৃদয় যেমন,
ফল-ভরে নত কেহ গুণীর মতন।
এদের স্বভাব ভালো মানবের চেয়ে,
ই”ছা যার দেখ জ্ঞানচক্ষে চেয়ে।
যখন মানবকূল ধনবান হয়,
তখন তাদের শির সমুন্নত রয়।
কিন্তু‘ ফলশালী হলে এই তরুগণ,
অহংকারে উ”চশির না করে কখন।
ফলশূন্য হলে সদা থাকে সমুন্নত,
নীচ প্রায় কার ঠাঁই নহে অবনত।

সারমর্ম: গাছ ফলে পরিপূর্ণ হয়ে নত হয়। তাতে তার গৌরব থাকলেও অহংকার থাকে না। মানুষ সম্পদশালী হলে অহংকারী হয়ে ওঠে; যা করা মোটেও উচিৎ নয়। ফলশূন্য গাছ মাথা সোজা করে দাড়িয়ে থাকে। কারো কাছে মাথা নত করে না। এ থেকে মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।

সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-সতম্ভেও গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়ী-লক্ষী নারী।

সারমর্ম: আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত সভ্যতার উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। অথচ ইতিহাসে পুরুষের কথা যতটা আছে, নারীর কথা ততটা নেই। এখন সময় এসেছে সম-অধিকার দেওয়ার। সাবই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে, তবেই জাতির সমৃদ্ধি আসবে।

সারমর্ম

                                 
নমঃ নমঃ নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগণললাট চুমে তব পদধূলি
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল-নিশীথ শীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে-
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।

সারমর্ম: মা ও মাতৃভূমি সবার কাছে প্রিয়। বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি-এর আকাশ-বাতাস, নদী তীর, মাঠ-ঘাট, ফর ও ফুলের বাগান প্রকৃতি-নিসর্গ, মানুষ সবই আমাদের ভালোবাসার ধন।বাংলার আবহমান অপরূপ রূপে সকল বাঙালির মন আকৃষ্ট হয়।

ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।
দেখা হরেই মিষ্ট অতি,
মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্ট গতি,
গৃহের প্রতি টান-
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রা রসে ভরা
মাথায় ছোট বহরে বড় বাঙালি সন্তান।
ইহার চেযে হতাম যদি আরব বেদুইন,
চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন।
ছুটছে ঘোড়া উড়ছে বালি,
জীবন স্রোত আকাশে ঢালি
হৃদয়-তলে বহ্নি জ্বালি চলেছে নিশিদিন-
বরশা হাতে, ভরসা প্রাণে,
সদাই নিরুদ্দেশ
মরুর ঝড় যেমন বহে সকল বাধা-হীন।

সারমর্ম: বাঙালি শান্তশিষ্ট, কর্মহীন, আরামপ্রিয় ও অলস জাতি। এ জীবন আমাদের কাম্য হতে পারে না। তার চেয়ে সাহসী, কর্মী ও চঞ্চলতা মুখর জীবনের অধিকারী হওয়া অনেক বেশি সম্মানের।


# শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ কর। কালিধুলার মাঝে, রৌদ্রবৃষ্টিতে কাজের ডাকে নেমে যাও। বাবু হয়ে ছায়ায় পাখার তলে থাকবার কোনো দরকার নেই। এ হচ্ছে মৃত্যুর আয়োজন। কাজের ভিতর কুবুদ্ধি, কুমতলব মানবচিত্তে বাসা বাঁধতে পারে না। কাজে শরীরে সামর্থ্য জন্মে, স্বাস্থ্য, শক্তি, আনন্দ, স্ফূর্তি সকলই ভাল হয়। পরিশ্রমের পর যে অবকাশ লাভ হয় তা পরম আনন্দের অবকাশ। তখন কৃত্রিম আয়োজন করে আনন্দ করবার কোনো প্রয়োজন হয় না। শুধু চিন্তার দ্বারা জগতের হিত সাধন হয় না। শুধু চিন্তা করে মানুষ পূর্ন জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয় না। মানবসমাজে মানুষের সঙ্গে কজে, রাস্তায়, কারখানায়, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করে। চিন্তা ও পুস্তক মানব মনের পাঁপড়ি খুলে দেয় মাত্র, বাকি কাজ সাধিত হয় সংসারের কর্মক্ষেত্রে।

সারাংশ: আলস্য মানবজীবনের মৃত্যু ডেকে আনে আর কাজ জীবনকে সুন্দর করে তোলে। শুধু চিন্তা দিয়ে জগতের হিত সাধন হয় না বরং চিন্তার সঙ্গে যখন কর্ম যোগ হয় তখনই মানব কল্যাণ সাধিত হয়, সুন্দর হয় বিশ্বজগৎ।

# প্রকৃত জ্ঞানের স্পৃহা না থাকলে শিক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তখন পরীক্ষা পাস করাটাই বড় হয় এবং পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠায় জ্ঞান সীমাবদ্ধ থাকে। এই কারণে পরীক্ষা পাস করা লোকের অভাব নেই আমাদের দেশে, কিন্তু অভাব আছে জ্ঞানের। যেখানেই পরীক্ষা পাসের মোহ তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের উৎকণ্ঠিত রাখে সেখানেই জ্ঞান নির্বাসিত জীবন যাপন করে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জগতের বুকে অক্ষয় অমর লাভ করতে হলে জ্ঞানের প্রতি তরুণ সমাজের উন্মুখ করতে হবে। সহজ লাভ আপাতত সুখের হইলেও পরিণামে কল্যাণ বহন করে না। পরীক্ষা পাসের মোহ থেকে মুক্ত না হলে তরুণ সমাজের সামনে কখনোই জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচিত হবে না।

সারাংশ: শিক্ষায় জ্ঞানের আগ্রহ না থাকলে সেই শিক্ষা ব্যর্থ হয়। কেবল পরীক্ষা পাস নয়, জ্ঞানার্জনই শিক্ষার লক্ষ্য। জ্ঞানচর্চার মধ্যে স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিহত। কাজেই পরীক্ষা পাসের সহজ লাভ থেকে দৃষ্টি পরিবর্তন করে জ্ঞানচর্চায় মনোযোগী হওয়া আবশ্যক।