চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Wednesday, September 9, 2020

# আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে পৌরসভার চেয়ারম্যানের নিকট আবেদনপত্র লেখ।

২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ খৃ:

পৌর মেয়র,

আশুগঞ্জ পৌরসভা,

আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।


বিষয়: আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ প্রসঙ্গে ।


জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ পৌরসভার অধিবাসী। আপনি অবগত আছেন এ পৌরসভাটিতে প্রায় এক লক্ষ লোকের বসবাস; যা এর আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে এ এলাকায় যে খাবার পানি ব্যবহৃত হয় তাতে আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। কিছু টিউবয়েলের পানি আর্সেনিকমুক্ত, তবে তাতে পানি সরবরাহ নেই বললেই চলে। তাছাড়া আর্সেনিকযুক্ত টিউবয়েলগুলো এখনো চিহ্নিতও করা হয় নি। এমতাবস্থায় এলাকার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। কিন্তু বিকল্প হিসেবে এখনো এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয় নি। ফলে পানিহীন অবস্থায় সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে। 


অতএব, জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমাদের এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে আমাদের বাধিত করবেন।


নিবেদিকা-


বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষে

মুমতারিন মালিহা

শুপতা ইসলাম

 আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

পত্র লেখার সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে:

­ পত্রের ভাষা সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ও আড়ম্বরহীন হতে হবে।

­ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সুষ্ঠ জ্ঞান থাকতে হবে।

­ সংক্ষেপে পত্র লিখতে হবে।

­ বিষয়ভেদে আবেগ-উচ্ছ্বাসে মাত্রাজ্ঞান থাকতে হবে।

­ যতি চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ থাকতে হবে।

­ পত্র লেখার পরিচ্ছন্নতা ও সুরুচির পরিচয় দিতে হবে।

­ সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

­ বানান শুদ্ধ হতে হবে।

 মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোন আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কার। মোবাইল ফোন বলতে আমরা সেই ফোনকে বুঝি যা যে কোন জায়গায় বহন করা যায় এবং অন্যের সাথে যোগাযোগ করা যায়। এটি আমাদের জীবন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে । এটি একটি টেলিফোন ব্যবস্থা যা কোন তার ছাড়াই কাজ করে। মোবাইল ফোনকে সহজে এবং দ্রূত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা যায়। আমরা যে কোন সময় সংবাদ প্রেরণ করতে পারি। আমরা যে কোন স্থান থেকে অন্যের সাথে যোগাযোগ  করে কথা বলতে পারি। বর্তমানে মোবাইল ফোন বহুবিধ কাজ করে । বর্তমানে মোবাইল ফোন গুলিকে স্মার্টফোনও বলা হয় । মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ প্রেরণ করা যায়, খেলাধুলা করা যায়, সময় জানা যায়, গণনার কাজ করা যায়, এবং বিভিন্ন ধরনের সংবাদ জানা যায়। আজকাল মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ফলে এর কার্যক্ষেত্র বুহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনের কিছু খারাপ দিকও আছে। বৈজ্ঞানিকগণ সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে, মোবাইল ফোন ক্যান্সার ঘটাতে পারে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী যদি মোবাইল ফোনে ২ মিনিটের বেশি কথা বলে তবে তার Blood brain barrier ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অধিকন্তু যুবক ছেলেমেয়েদের নিকট মোবাইল ফোন রাখা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আজকাল মোবাইল ফোনে তরুণীদের গোপণ অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ক্লিপ ধারণ করে তা অসৎ উদেশ্যে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। বস্তুত, মোবাইল ফোন বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করেছে ।

একটি বর্ষণমুখর দিন 

একটি বর্ষণমুখর দিন বলতে আমরা বর্ষাকালের একটি অবিরাম বর্ষণমুখর দিনকে বুঝে থাকি। বাংলা সন অনুযায়ী আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। এই দুই মাসের মধ্যে বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কখনও কখনও সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়। শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধলোকজন ঘরে আশ্রয় নেয় ।গ্রামাঞ্চলের মানুষরা ঘরের টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পায়। বর্ষণমুখর দিনে ধরণীতে কলো মেঘের জন্য চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় । বর্ষণমুখর দিনে হঠ্যৎ প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে,চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। প্রকৃতির এ হঠাৎ পরিবর্তন মানুষ ও জীব-জন্তুর উপরও প্রভাব পড়ে । পাখিরা নিজেদের বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে আশ্রয় নেয় গাছের ওপর । চারদিকে বৃষ্টি হচ্ছে, কখনও মুষলধারে ; কখনও থেমে থেমে। গাছের পাতায় পাতায় টুপটাপ ফোটা পড়ছে। থেমে থেমে ঝি ঝি পােকা ডাকছে। একটি বর্ষণমুখর দিনে পথিকের কষ্টের সীমা থাকে না। গ্রামের মেঠোপথ বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়। পথের বিভিন্ন জায়গায় কাদা-পানি জমে থাকে। পথিক কাপড় গুটিয়ে এবং তা মাথায় দিয়ে পথ চলতে থাকে অতি সাবধানে। শহর এলাকায় একটি বর্ষণমুখর দিন ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করে। তবে এ সময় মানুষ ঘরে বসে থাকলেও হকারগণ রাস্তায় বের হয়ে পড়ে। রাজ্যের যত গান, যত সুর, যত কথা, যত স্মৃতি সবই বর্ষণমূখর দিনে মনের কোণে ভেসে উঠে , তা মানুষকে বিষন্ন করে তােলে আবার কারো কারো মন রোমাঞ্চ করে তোলে । শহর বা গ্রাম সবখানেই বর্ষণমূখর দিনে কর্মচঞ্চলতা থেমে যায়,স্বাভাবিক জীবনে সাময়িক ছেদ ঘটে।দিনমজুরদের কারো অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাতে হয় । বর্ষণমুখর দিনের অভিজ্ঞতা একেক জনের একে রকম ।


 বৃক্ষরোপণ

আমাদের বাড়ির চারপাশে, রাস্তাঘাটে, পার্কে, বাগানে, রেল লাইনের ধারে এবং পতিত জমিতে তথা যেকোনো ফাকা স্থানে চারা গাছ লাগানােই হলো বৃক্ষরােপণ। গাছপালা আমাদের পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাছপালা নানাভাবে আমাদেরকে সাহায্য করে। গাছপালা আমাদেরকে ফুল ও ফল দেয়। তীব্র রােদের সময় ছায়া দেয়। গাছপালা বৃষ্টি হতে সহায়তা করে এবং ভূমির ক্ষয় রােধ করে। গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষ রােপণ খুবই জরুরি। বিশ্বের তাপমাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর চারপাশে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। আমাদের দেশের পরিবেশ বিশেষ করে শহর অঞ্চলের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আমাদের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানি ও বাসস্থানের প্রয়ােজনে মানুষ নির্বিচারে গাছ কাটছে ও বন জঙ্গল নিধন করছে। এভাবে গাছকাটার ফলে বনাঞ্চলের গাছপালা উজার হয়ে যাচ্ছে। গাছপালা বায়ু দূষণ রােধ করতে সহায়তা করে। বনাঞ্চল পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। একটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য কমপক্ষে তার মোট ভূখণ্ডের ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়ােজন। কিন্তু আমাদের দেশের ভূখণ্ডের মাত্র ৯% বনভূমি আছে। বর্তমান হারে বনের গাছপালা কাটা বন্ধ না হলে অচিরেই আমাদের বনাঞ্চল গাছপালা শূন্য হয়ে পড়বে। আমাদের দেশে ও বনে গাছপালা না থাকলে দেশ একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদেরকে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে , বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে ।

 


 স্কুল গ্রহ্নাগার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে ভবন বা কক্ষে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পড়ার জন্য এবং ধার দেয়ার জন্য বই পুস্তক,সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন রাখা ইয় তাকে স্কুল গ্রন্থাগার বলা হয়। স্কুল গ্রন্থাগার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি সাধারণত স্কুলের একপ্রান্তে বা আলাদা ভবনে অবস্থিত থাকে । অধিকাংশ স্কুলে এটি নিচতলায় অবস্থিত। একটি স্কুল গ্রহ্নাগার ভালোভাবে সুসজ্জিত থাকে। সাধারণত স্কুল গ্রহ্নাগারে দুইটি অংশ থাকে। একটি অংশে ছাত্রছাত্রীদের পড়ার জন্য একটি পাঠ কক্ষ আছে এবং ছাত্রদের মাঝে বই ইস্যু করার জন্য কাউন্টার আছে। অন্য অংশে আলমারী এবং বইয়ের তাকে বই সাজিয়ে রাখা হয়। পাঠ কক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যক চেয়ার এবং টেবিল আছে। একটি স্কুল গ্রহ্নাগারে বিভিন্ন ধরনের বই থাকে। এগুলাের মধ্যে পাঠ্য পুস্তক, উপন্যাস, গল্প, নাটক, কবিতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া গ্রন্থাগারে দৈনিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনও রাখা হয়। ছাত্রদের মাঝে বই ইস্যু করার জন্য একজন গ্রন্থাগারিক থাকে। বই জমা দেয়া ও ধার নেওয়ার জন্য প্রত্যেক ছাত্রের একটি গ্রন্থাগার কার্ড থাকে। স্কুল গ্রন্থাগার ছাত্রদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ছাত্ররা গ্রন্থাগারের বিভিন্ন বইয়ের সাহায্য নিয়ে নােট তৈরি করতে পারে। তাছাড়া স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে বা অবসর সময়ে গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে বসে বই পড়ে তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারে। এ কারণে স্কুলের গ্রন্থাগার ছাত্রদের নিকট একটি আকর্ষণীয় স্থান।


 শীতের সকাল 

শীতের সকালে চারদিকে শুধু ঘন কুয়াশা দেখা যায় । মনে হয় পৃথিবী কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমােচ্ছে । সকালে কনকনে হিমেল হায়া বইতে থাকে। বাংলাদেশে শীতের সকালের প্রকৃতি হয় শান্ত ও মধুর । শীতের সকালে হাড় কাপানাে শীতে মানুষ জড়সড় হয়ে ঘরে বসে থাকে। অনেকে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে। সূর্যও দেরিতে উঠে এবং মানুষ দেরি করে কাজে যায়। গাছের পাতা, ফসলের মাঠ , মাঠের সবুজ ঘাস সবই কুয়াশার শিশিরে ভরে যায়। টিনের ঘরের চাল থেকে সারারাত টপটপ করে ফোটায় ফোটায় শিশির ঝরতে থাকে। পুরাে প্রকৃতি কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সহসা দূরের কোন কিছু দেখা যায় না। শীতের সকালে মানুষ গরম কাপড় পরিধান করে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ চাদর মুড়ি দিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করে। গায়ের মানুষ খড়কুটা পুড়িয়ে আগুনের কুণ্ড তৈরি করে এবং আগুনের চারপাশে বসে দুহাতের তালু রেখে শীত নিবারনের চেষ্টা করে। শীতের সকালে সুর্যের রশ্মি সকলের নিকট পরম প্রত্যাশার বন্ধু। সূর্যের রশি যখন শিশির সিক্ত গাছের পাতা কিংবা মেঠো পথেৱ ঘাসের উপর পতিত হয় তখন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শীতের সকাল গরিবের জনা কষ্টের হলেও ধনী লােকেরা শীতের সকালকে উপভোগ করে। তাদের বাড়িতে সকালে নানা ধরনের সুষাদু খাবার রান্না হয় এবং তারা খুব মজা করে শীতের বিশেষ ধরনের পিঠা খায়। ভাপপিঠা,খেজুরের রস ও পায়েস শীতের সকালের খুবই জনপ্রিয় খাবার। শীতের সকালে প্রকৃতি ভিন্নরূপ ধারণ করে ।

 

 ইন্টারনেট

ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল হলো ইন্টারনেটওয়ার্কের (ওহঃবত্হবঃড়িত্শ) সংক্ষিপ্তরূপ। ইন্টারনেট এমন এক প্রযুক্তি, যা সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অনেক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। আইপি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডাটা বা তথ্য আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন করে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি পরীক্ষামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে এ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলে। সেটিই সূচনা। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম। তথ্য আদান-প্রদান, সংবাদপত্র, পড়া, সামাজিক, যোগাযোগ, পড়াশোনা, গবেষণা, টেলিভিশন দেখা, রেডিও শোনা, তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি তথা মানুষের পুরো জীবনব্যবস্থাই হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটনির্ভর। মানুষের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়ে উঠেছে সহজ ও সাশ্রয়ী। ইন্টারনেট পৃথিবীর দূরত্বকে কমিয়ে দিচ্ছে। পুরো পৃথিবী ক্রমান্বয়ে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হচ্ছে। মানুষ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে এর সুফল ভোগ করছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, আধুনিক জীবনযাত্রায় ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম।



 আমার প্রিয় শিক্ষক

সৃষ্টির সেরা মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। জীবনপথে চলতে চলতে তাকে নানা মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। আর নানা মানুষের সংস্পর্শে থেকে মানুষকে জীবনসংগ্রামের অনেক কিছুই শিখে নিতে হয়। তেমনি আমিও প্রতিনিয়ত শিখছি। অসংখ্য মানুষের ভেতর থেকে যিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন আমার প্রিয় শিক্ষক আনসার আলী। তিনি ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক, এলাকায় পণ্ডিত স্যার নামে পরিচিত। সুন্দর, লম্বা, শ্বেত-শুভ্র-শ্মশ্রুমণ্ডিত। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, আবার ভয়ও পাই বেশি। তিনি এত ভালো পড়ান, যা বলে প্রকাশ করতে পারব না। বাংলা ব্যাকরণের মতো নীরস বিষয়কেও খুব সহজ-সরল করে উপস্থাপন করেন। তাঁর শেখানো ছয়টি কারক নির্ণয়ের সহজ কৌশল আমি কখনোই ভুলব না। ইচ্ছা হয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও যদি তাঁকে পেতাম। তিনি শুধু একজন শিক্ষক হিসেবেই নয়, সমাজের একজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি হিসেবেও সমধিক পরিচিত। নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজেও আমরা তাঁকে দেখতে পাই। মসজিদ-মাদ্রাসার নানা স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড থেকে সমাজের নানা পর্যায়ের নানা শুভকাজে তাঁর অগ্রগণ্য ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও তিনি অনুসরণযোগ্য। তাঁর বুক টান করে মাথা উঁচু করে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য যতবার দেখেছি, ততবারই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি নিজেকে বদলে ফেলার জন্য, দেশের স্বার্থে শুভকাজ করার জন্য। তিনি স্পষ্টভাষী, সব অশুভ যেন তাঁর পায়ের কাছে এসে মাথা নত করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যিনি আলোর সন্ধান দিচ্ছেন, তাঁর সামনে তো অন্ধকার মাথা নত করবেই। আর এই দৃশ্যই যেন চাক্ষুষ হয়ে এক সন্ধ্যায় আমার সামনে ধরা পড়েছিলফুলকোচা বাজারে স্যারের সঙ্গে দেখা। বাজার সেরে তিনি সন্ধ্যার আধো আলো-অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পরনে লুঙ্গি আর সাদা পাঞ্জাবি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সামনের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াতে ছড়াতে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয় আনসার স্যার।


 আমার প্রিয় বই

জীবনপথে চলতে চলতে নানা বিষয়, নানা ঘটনা মানুষের মনে দাগ কাটে, প্রিয় হয়ে ওঠে। অনেক বই আমি পড়েছি, পড়েও যাচ্ছি নিয়মিত; কিন্তু একটি বই আমার যেমন ভালো লেগেছে, এত ভালো লাগেনি আর কোনো বই। আমার প্রিয় সেই বইটি হচ্ছে জীবন আমার বোন। বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটি। জীবন আমার বোন একটি অ্যান্টি-রিয়ালিস্ট উপন্যাস। তার পটভূমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকাল। ওই সময়ের একজন ব্যক্তির চোখের লেন্সে ধারণ করা এক টুকরো উত্তাল বাংলাদেশ প্রতিফলিত হয়েছে জীবন আমার বোন উপন্যাসে। সাধারণত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে লেখকেরা উপন্যাসের নায়ককে মুক্তিযোদ্ধা বানান। সব ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে উপন্যাসের নায়ককে রেখে ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা হাজির করেন। কিন্তু মাহমুদুল হক এখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। জীবন আমার বোন মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করলেও যুদ্ধ আর বীরত্বগাথা নিয়ে মেতে থাকেনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ওই সময়ের একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আগের রাজনৈতিক অবস্থা দেখানোর চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল হক। বলতে গেলে মাহমুদুল হকই মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক পটভূমিতে অবস্থান করা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত ইতিহাস নির্মাণ করেছেন। কারণ বিপুল জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা আর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা কমই ছিল। মাহমুদুল হক সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের চিত্র অঙ্কন করেছেন। উপন্যাসের নায়ক খোকাও একজন সাধারণ মানুষ। উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে ঔপন্যাসিকও স্বীকার করে নিয়েছেন খোকা গল্পের এখানেই সমাপ্তি, কেননা খোকা এমন কিছুই করেনি যে ইতিহাসের পাতায় তার নাম থাকবে। মুমূর্ষু বাঙালি জাতি ইতিহাস তৈরির নেশায় মেতে উঠেছিল; এক পলায়ন ছাড়া সেখানে খোকার কোনো ভূমিকা নেই। ইতিহাসের ধূসর আড়ালে খোকারই তো প্রথম মুখ লুকোবার কথা।