আমার প্রিয় বই
জীবনপথে চলতে চলতে নানা বিষয়, নানা ঘটনা মানুষের মনে দাগ কাটে, প্রিয় হয়ে ওঠে। অনেক বই আমি পড়েছি, পড়েও যাচ্ছি নিয়মিত; কিন্তু একটি বই আমার যেমন ভালো লেগেছে, এত ভালো লাগেনি আর কোনো বই। আমার প্রিয় সেই বইটি হচ্ছে ‘জীবন আমার বোন’। বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটি। ‘জীবন আমার বোন’ একটি অ্যান্টি-রিয়ালিস্ট উপন্যাস। তার পটভূমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকাল। ওই সময়ের একজন ব্যক্তির চোখের লেন্সে ধারণ করা এক টুকরো উত্তাল বাংলাদেশ প্রতিফলিত হয়েছে ‘জীবন আমার বোন’ উপন্যাসে। সাধারণত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে লেখকেরা উপন্যাসের নায়ককে মুক্তিযোদ্ধা বানান। সব ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে উপন্যাসের নায়ককে রেখে ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা হাজির করেন। কিন্তু মাহমুদুল হক এখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ‘জীবন আমার বোন’ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করলেও যুদ্ধ আর বীরত্বগাথা নিয়ে মেতে থাকেনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ওই সময়ের একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আগের রাজনৈতিক অবস্থা দেখানোর চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল হক। বলতে গেলে মাহমুদুল হকই মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক পটভূমিতে অবস্থান করা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত ইতিহাস নির্মাণ করেছেন। কারণ বিপুল জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা আর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা কমই ছিল। মাহমুদুল হক সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের চিত্র অঙ্কন করেছেন। উপন্যাসের নায়ক ‘খোকা’ও একজন সাধারণ মানুষ। উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে ঔপন্যাসিকও স্বীকার করে নিয়েছেন ‘খোকা’ গল্পের এখানেই সমাপ্তি, কেননা খোকা এমন কিছুই করেনি যে ইতিহাসের পাতায় তার নাম থাকবে। মুমূর্ষু বাঙালি জাতি ইতিহাস তৈরির নেশায় মেতে উঠেছিল; এক পলায়ন ছাড়া সেখানে খোকার কোনো ভূমিকা নেই। ইতিহাসের ধূসর আড়ালে খোকারই তো প্রথম মুখ লুকোবার কথা।
No comments:
Post a Comment