আমার প্রিয় শিক্ষক
সৃষ্টির সেরা মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। জীবনপথে চলতে চলতে তাকে নানা মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। আর নানা মানুষের সংস্পর্শে থেকে মানুষকে জীবনসংগ্রামের অনেক কিছুই শিখে নিতে হয়। তেমনি আমিও প্রতিনিয়ত শিখছি। অসংখ্য মানুষের ভেতর থেকে যিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন আমার প্রিয় শিক্ষক আনসার আলী। তিনি ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক, এলাকায় ‘পণ্ডিত স্যার’ নামে পরিচিত। সুন্দর, লম্বা, শ্বেত-শুভ্র-শ্মশ্রুমণ্ডিত। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, আবার ভয়ও পাই বেশি। তিনি এত ভালো পড়ান, যা বলে প্রকাশ করতে পারব না। বাংলা ব্যাকরণের মতো নীরস বিষয়কেও খুব সহজ-সরল করে উপস্থাপন করেন। তাঁর শেখানো ‘ছয়টি কারক নির্ণয়ের সহজ কৌশল’ আমি কখনোই ভুলব না। ইচ্ছা হয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও যদি তাঁকে পেতাম। তিনি শুধু একজন শিক্ষক হিসেবেই নয়, সমাজের একজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি হিসেবেও সমধিক পরিচিত। নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজেও আমরা তাঁকে দেখতে পাই। মসজিদ-মাদ্রাসার নানা স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড থেকে সমাজের নানা পর্যায়ের নানা শুভকাজে তাঁর অগ্রগণ্য ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও তিনি অনুসরণযোগ্য। তাঁর বুক টান করে মাথা উঁচু করে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য যতবার দেখেছি, ততবারই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি নিজেকে বদলে ফেলার জন্য, দেশের স্বার্থে শুভকাজ করার জন্য। তিনি স্পষ্টভাষী, সব অশুভ যেন তাঁর পায়ের কাছে এসে মাথা নত করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যিনি আলোর সন্ধান দিচ্ছেন, তাঁর সামনে তো অন্ধকার মাথা নত করবেই। আর এই দৃশ্যই যেন চাক্ষুষ হয়ে এক সন্ধ্যায় আমার সামনে ধরা পড়েছিল—ফুলকোচা বাজারে স্যারের সঙ্গে দেখা। বাজার সেরে তিনি সন্ধ্যার আধো আলো-অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পরনে লুঙ্গি আর সাদা পাঞ্জাবি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সামনের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াতে ছড়াতে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয় আনসার স্যার।
No comments:
Post a Comment