কালো জিরা সব রোগের
মহৌষধ
সব রোগের মোহা ঔষুধ হচ্ছে কালো
জিরা। আজকে কালো জিরার কিছু উপকার সম্পর্কে আপনাদের জানাব। আসুন জেনে নেই কালি
জিরার উপকার ও স্বাস্থ্যগুণ:
·
মাথাব্যথা, চুলপড়া, অনিদ্রা, মুখশ্রী
ও সৌন্দর্য রক্ষা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা,
মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালো জিরা উপযোগী।
·
মাথা ব্যথায়: কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তি
স্থানে দৈনিক তিন চার বার কালোজিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
·
প্রতি দিন চায়ের সাথে নিয়মিত কালো জিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল
বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদ ও বিগলিত হয়।
·
মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও
সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
·
জ্বর, গায়ের ব্যথা, কফ দূর করার জন্য কালো জিরা
যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও
গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায় কালো জিরা ।
·
সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালো জিরা পিষে খেলে শিশু দুধ খেতে
পাবে বেশি পরিমাণে।
·
কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের
রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ
(ছোঁয়াচে রোগ) হয় না।
·
কালো জিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালিজিরা
নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক।
·
দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালো জিরা দিয়ে কুলি করলে
ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।
·
মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে
তুলতে সাহায্য করে।
·
কালো জিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে।
·
দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে।
·
কালো জিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত
হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা হয়।
·
প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালো জিরা খাওয়া হয়।
·
বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন
রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
·
মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে
প্রতিদিন রাত্রে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে
থাকুন। ইনশাআল্লাহ্ মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ
সমস্যা সমাধানে কালোজিরা-র ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। যারা জানেন না
তাদের জন্য ভর্তা বানানোর প্রক্রিয়া পরে পোস্ট করা হবে।
·
নিয়মিত কালিজিরা খান। এটি মস্তিষ্কে
রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার দরুন স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে এটি
প্রাণশক্তি বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে।
কালো জিরার গুনাগুণ, ইসলাম ও বিজ্ঞান কী বলছে
বিশ্বনবী হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন: “ তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে
একমাত্র মৃত্যৃ ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি এতে রয়েছে”।
তিরমিযী,বুখারী,মুসলিম থেকে নেয়া—
হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, “প্রতিদিন ২১টি কালোজিরার ১টি পুটলি তৈরী করে পানিতে ভিজাবে এবং পুটলির পানির ফোঁটা এ নিয়মে নাশারন্দ্রে (নাশিকা, নাক) ব্যবহার করবে-“প্রথমবার ডান নাকেরছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। দ্বিতীয়বার বাম নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। তৃতীয়বার ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা ও বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা।”
হযরত আনাস (রাঃ)
বর্ণনা করেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশী কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ
কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে।”– মুজামুল
আওসাত: তাবরানী।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কালো জিরার আরো
কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা:
কালো জিরাকে সব রোগের
ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অন্যান্য সব ভেষজের মতো কালিজিরা নিয়েও
গবেষণা কম হয় নি। ১৯৬০ সালে মিসরের গবেষকরা নিশ্চিত হন যে, কালো
জিরায় বিদ্যমান নাইজেলনের কারণে হাঁপানি উপশম হয়। জার্মানি গবেষকরা বলেন, কালো জিরার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইকোটিক প্রভাব
রয়েছে। এটি বোনম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উত্তেজিত করে এবং ইন্টারফেরন
তৈরি বাড়িয়ে দেয়। আমেরিকার গবেষকরা প্রথম কালো জিরার টিউমারবিরোধী প্রভাব
সম্পর্কে মতামত দেন। শরীরে ক্যান্সার উত্পািদনকারী ফ্রি-রেডিক্যাল অপসারিত
করতে পারে কালিজিরা। মোটকথা, কালো জিরা সব
ধরনের রোগের বিরুদ্ধে তুলনাহীন। আসুন জেনে নিই কালিজিরার এমন কিছু ব্যবহার, যেগুলো একেবারেই অপ্রচলিত।
·
স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে: কালো জিরা
মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন নিয়ম করে আধা চা চামচ কাঁচা কালিজিরা অথবা ১ চা চামচ কালিজিরার তেল
খান।
·
চুল পড়া রোধে: কালোজিরা চুলের গোড়ায়
পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুল পড়া রোধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ২ টেবিল
চামচ অলিভ অয়েল ও ১ চা চামচ কালিজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে
নিন। চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট মাসাজ করুন। ১ ঘণ্টা পর
চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
·
ব্যথা কমাতে: যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কালো
জিরার জুড়ি নেই। কালিজিরার তেল হালকা গরম করে নিয়ে ব্যথার জায়গায়
মালিশ করুন, ব্যথা সেরে যাবে। বিশেষ করে বাতের ব্যথায় বেশ ভালো উপকার
পাওয়া যায়।
·
ফোঁড়া সারাতে: ব্যথাযুক্ত ফোঁড়া সারাতে
কালো জিরা সাহায্য করে। তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাটা বা কালিজিরার
তেল মিশিয়ে ফোঁড়াতে লাগালে ব্যথা উপশম হয় ও ফোঁড়া সেরে যায়।
·
মেদ কমাতে: চায়ের সাথে কালো জিরার মিশিয়ে
পান করলে তা বাড়তি মেদ ঝরে যেতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে পানি নিয়ে
চুলার ওপরে দিন। পানি ফুটে উঠলে চাপাতা ও সমপরিমাণ কালিজিরা পানিতে দিন।
চায়ের রং হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সাধারণ চায়ের মতোই পান করুন।
·
দাঁতের ব্যথায়: দাঁত ব্যথা হলে, মাঢ়ি
ফুলে গেলে বা রক্ত পড়লে কালো জিরা তা উপশম করতে পারে। পানিতে কালিজিরা
দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এই পানির তাপমাত্রা কমে উষ্ণ অবস্থায় এলে তা দিয়ে
কুলি করুন। এতে দাঁত ব্যথা কমে যাবে, মাঢ়ির
ফোলা বা রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এছাড়া জিহ্বা, তালু
ও মুখের জীবাণু ধ্বংস হবে।
· মাথা ব্যথায়: ঠাণ্ডাজনিত মাথাব্যথা দূর করতে কালো জিরা সাহায্য করে। একটি সুতি কাপড়ের টুকরায় খানিকটা কালিজিরা নিয়ে পুঁটুলি তৈরি করুন। এই পুঁটুলি নাকের কাছে নিয়ে শ্বাস টানতে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা সেরে যাবে।’