স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।
মূলভাব: স্বাধীনতা মানুষের আজন্ম সাধনার জিনিস। যা অর্জনেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না বরং এর মর্যাদা ও মাহাত্মাকে সমুন্নত রাখাই দুঃসাধ্য বিষয়।
সম্প্রসারিত ভাব: স্বাধীনতাহীনতায় কোনো ব্যক্তি বা জাতি বাঁচতে চায় না। স্বাধীনতাহীনতা বস্তুত জীবনহীনতারই সমতুল্য। কেননা মৃত ব্যক্তি যেমন অসাড়, তেমনি পরাধীন ব্যক্তির জীবনও অবরুদ্ধ, অসাড়। পরাধীনতা মানবতাকে খর্ব করে, মানুষের জীবনকে করে অপমানিত। পরাধীন মানুষ ও সমাজের আত্মবিকাশের সুযোগ নেই। নেই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। অন্যের নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে মানুষের উচ্চবৃত্তি ও সুন্দর ভাবনাগুলোর অপমৃত্যু ঘটায়। ব্যক্তির মনোজাগতিক বিনাশ সমাজকেও করে অচলায়তন-বন্দি। সে জন্যই যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর পরাধীন জাতিগুলো স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। একদা সারা বিশ্বই কয়েকটি ঔপনিবেশিক জাতির শাসনাধীনে বন্দি হয়ে পড়েছিল। তার থেকে মুক্ত পেতে বিশ্বকে কম রক্ত দিতে হয় নি। আমাদের দেশ দুদশ বছর ইংরেজ শাসনাধীনে এবং পঁচিশ বছর পাকিস্তানি শাসকদের অধীনে ছিল। লাখ লাখ মানুষ এ পরাধীনতা-শৃঙ্খলমুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো পরাধীন জাতিই রক্তের বিনিময় ছাড়া স্বাধীনতার ছোঁয়া পায় নি। তবে প্রকৃত বিচারে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো একে রক্ষা করা। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে একে রক্ষা করার জন্যে সদাপ্রস্তুত থাকা একান্ত প্রয়োজন। স্বাধীনতা লাভের পর পরাধীনতার মতো জীবনযাপন না করে বলিষ্ঠ ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে স্বাধীনতাকে অম্লান রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তবেই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। নতুবা ঈপ্সিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হবে। আপন কর্মপ্রেরণা, চিন্তাধারা ও শৃঙ্খলা বোধের দ্বারাই প্রমাণ করতে হবে কাঙ্ক্ষিত-স্বাধীনতার যৌক্তিকতা। আর মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের মূল উদ্দশ্য হচ্ছে স্বাধীনতাপূর্ণ গৌরবোজ্জ্বল জীবনের বিকাশ।
মন্তব্য: পরাধীন জাতি কঠিন ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম, সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই স্বাধীনতার ব্যাপকতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
No comments:
Post a Comment