সংসার
সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা।
প্রতিনিয়ত মানুষ পৃথিবীকে সুন্দর করে
সাজাতে চায়। চায় মায়া মমতার বন্ধনে আবদ্ধ সুখের সংসার। কিন্তু মানবজীবন পুষ্পশয্যা
নয়। সংসারে আছে জটিলতা, নানা সমস্যা আর চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্ব। কখনো দুঃখ এসে তছনছ
করে দেয় সুখের সাজানো সংসার। স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নানা প্রতিবন্ধকতা।
জীবনের চরম বিপর্যয়ের দিনগুলোতেও মানুষ
আশায় বুক বাঁধে। সংসার সাগরে একদিকে দুঃখ খেলা করে অন্যদিকে সে খেলায় টিকে থাকার জন্য
মানুষের অবলম্বন আশা। মানুষ আশাকে ভরসা করেই জীবনতরীর হাল ধরে শক্ত করে। উত্তাল সাগরের
বুকে জাহাজ চালানো খুবই কঠিন। তারপরও নাবিক বেঁচে থাকার আশায় তীরে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ
চেষ্টা করে।
তেমনি সংসাররূপ উত্তাল দুঃখের সাগর
মানুষ পাড়ি দেয় আশার তরণী ভাসিয়ে। মানুষ রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, তাই জীবনকে সামনের
দিকে নিয়ে যায় এই আশাতে যে,্আগামী দিনগুলো সুন্দর হবে। কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না। স্বপ্ন
একদিন পূরণ হবে, ধরা দিবে বাস্তবে এসে। তাই মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হলো আশা। সাফল্যের
পথে আশা মানুষকে দেয় প্রেরণা। কেননা, পৃথিবীর সব ছোট-বড় সৃষ্টির পেছনে কাজ করেছে আশা।
শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে যারা আশা নিয়ে পরিশ্রম করে গেছেন তারাই হয়েছেন স্মরণীয়-বরণীয়।
কখনো দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে হয়তো দুরাশা এসে মন দখল করতে পারে।
কিন্তু সেটা ক্ষণস্থায়ী। দুরাশার দুঃসময়েও
মানুষ নতুন করে আশায় উদ্দীপ্ত হয়। চায় নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে। আশাই মানুষের
জীবনীশক্তি। তাইতো বলা হয়- ‘আশায় বসতি।’ আশা ভাগ্যহতকে শোনায় জেগে উঠার গান। আশার ভেলায়
ভর করেই চলছে পৃথিবী, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সমাজব্যবস্থা। আশা আছে বলেই শত প্রতিকূলতার
মধ্যেও প্রতিটি মানুষ বাঁচতে শেখে।
শিক্ষা: এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষকে
নানা বাধা বিঘ্ন পার হতে হয়, পুড়তে হয় দুঃখের আগুনে। কিন্তু আশা মানুষকে পথ দেখায় কীভাবে
দুঃখের আগুনে পুড়ে সুখ লাভ করা যায়, প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়।
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে
ঈশ্বর।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। চারপাশের
জীব-জগৎ নিয়েই মানুষ জীবনযাপন করে। কেননা, সৃষ্টিকর্তা বহুরকম উপাদান দিয়ে পৃথিবীকে
সাজিয়েছেন। প্রত্যেক জীবের সাথে অন্য জীবের কোনো না কোনোভাবে সম্পর্ক রয়েছে। জ্ঞান-বুদ্ধির
অধিকারী মানুষও সেই সম্পর্ক বা বন্ধনে আবদ্ধ। যে সৃষ্টিকর্তা তাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে
পাঠিয়েছেন মানুষের কর্তব্য তাঁর উপাসনা করা, তাঁকে খুশি করা। মানুষ তাঁকে খুশি করতে
পারে উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার মাধ্যমে এবং তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবেসে সেবা করে।
স্রষ্টার সৃষ্টিকে না ভালোবেসে, মসজিদ-মন্দিরে
গিয়ে যদি আমরা সারা দিন রাত তাঁকে ডাকি তিনি খুশি হবেন না। কেননা, সৃষ্টিকর্তা সবকিছুই
সৃষ্টি করেছেন পরম ভালোবেসে। ক্ষুদ্র থেকে বিশাল সবকিছুর প্রতিই তাঁর দৃষ্টি রয়েছে।
আর সব কিছু তিনিই লালন-পালন করছেন। তাই তাঁর সৃষ্টির সেবার মাঝেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া
যায়। সৃষ্টির বৈচিত্র্যতার মাঝেই রয়েছে স্রষ্টার বিশালত্ব। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সাথে
সম্পর্কচ্ছেদ করে, সংসার ত্যাগী হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে তাঁকে খুঁজলে পাওয়া যায় না। আমাদের
সমাজে যারা ঐশ্বর্যশালী মানুষ তাদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
এতে অসহায় মানুষগুলো খুশি হবে। মানুষের
এই খুশিই সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করবে। সমাজ হবে সুন্দর। শুধু মানুষ নয়, পশু পাখিকেও ভালোবাসতে
হবে। তাকে পেতে হলে জীবে দয়া করতে হবে। তাইতো সব ধর্মের মূল কথা জীবে দয়া করা। স্রষ্টার
সৃষ্টি যে কত মূল্যবান তা আমরা বৌদ্ধ ধর্মের ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ এই বাণী থেকে বুঝতে
পারি। হযরত মুহাম্মদ (স.) সব সময় জীবের সেবা করতেন এবং মানুষকে সবসময় জীবের প্রতি সদয়
হতে উৎসাহিত করেতেন। সর্বোপরি সৃষ্টির মাঝেই স্রষ্টার বহিঃপ্রকাশ। তাই ঈশ্বরকে সেবা
করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকেই সেবা করতে হবে।
শিক্ষা: সৃষ্টিবিহীন যেমন স্রষ্টার
কথা ভাবা যায় না, ঠিক তেমনি সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে স্রষ্টাকে খোঁজা বৃথা চেষ্টা ছাড়া আর
কিছুই নয়।
No comments:
Post a Comment