চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Friday, September 4, 2020

 যৌতুক প্রথা

বিয়ের চুক্তি অনুসারে কন্যাপক্ষ বরপক্ষকে বা বরপক্ষ কন্যাপক্ষকে যে সম্পত্তি বা অর্থ দেয়, তাকে যৌতুক বা পণ বলে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দেখা যায়, উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা প্রচুর যৌতুকসহ শতাধিক বিয়ে করতেন। এসব স্ত্রী তাঁদের পিতৃগৃহেই থাকতেন এবং স্বামীরা হয়তো বছরে একবার তাঁদের দেখতে এসে প্রচুর আতিথেয়তা ভোগ করে আরো কিছু যৌতুক নিয়ে যেতেন। বাংলাদেশের হিন্দু সমাজে কুলীনত্বের কারণে যৌতুক প্রথা বেশ ব্যাপক। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন বেশি। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও কুলীনত্বের মর্যাদা লাভ করেছে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কনের পিতার জন্য অত্যাচারের আরো বড় হাতিয়ার হয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো চাকরি পায় বলে তা বরের বাজারদর বাড়িয়ে দেয়। ইংরেজি উচ্চশিক্ষার কারণে মুসলমানদের মধ্যেও ক্রমে এই কুলীনত্বের ব্যাপক প্রসার ঘটে। তাদের মধ্যে খানদানি পরিবারের কুলীনত্বের সঙ্গে এই নতুন শিক্ষার কুলীনত্ব যুক্ত হয়ে যৌতুকের প্রথা আরো শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশে ১৯৮০ সালে যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন অনুসারে যৌতুক নেওয়া বা দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ সমাজে এটি একটি সচরাচর ঘটনা যে যৌতুকের কারণে স্ত্রীদের ওপর অত্যাচার ও তাদের হত্যাও করা হয়। মুসলমানদের ব্যক্তি আইন বা শরিয়ত আইন অনুসারে বিয়ের কাবিননামায় লিখিত বা অলিখিত চুক্তির অধীনে স্বামী স্ত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে যে মোহরানা দেয়, তাকে যৌতুক বলা হয় না। ইসলামিক আইনে দেনমোহর সম্পূর্ণভাবে স্ত্রীর প্রাপ্য। বাংলাদেশের আইনে যৌতুক দেওয়া বা দাবি করার জন্য যেকোনো লোককে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যায়। ১৯৮৩, ১৯৯৫ ও ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় যদি কোনো স্বামী অথবা তার আত্মীয়স্বজন যৌতুকের কারণে স্ত্রীর মৃত্যু ঘটায় বা গুরুতরভাবে আহত করে বা করার চেষ্টা করে, তবে তার বা তার আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাবাস দেওয়া হয়। তার পরও এই উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে যৌতুকের ব্যাপারটি আগের মতোই রয়ে গেছে এবং সরকার যৌতুকের কারণে নারীদের প্রতি অত্যাচার কিভাবে রোধ করা যায়, তার আইনি উপায় খুঁজতে ব্যস্ত। ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নারীরা এখনো উচ্চশিক্ষা এবং ভালো উপার্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তার পরও সরকার এ ঘৃণ্য প্রথা দূরীকরণের যেসব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

 পরিবেশদূষণ

সভ্যতার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃতিকে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছে নিজের পরিবেশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ পেয়েছে অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। কিছু জিনিসের অপব্যবহার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ ক্রমেই দূষিত হয়ে উঠছে। মানুষই প্রকৃতির পানি-মাটি-বাতাসকে করেছে দূষিত। পরিবেশদূষণ মূলত দুটি কারণে হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে প্রকৃতিগত। যেমন: ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অগ্ন্যুত্পাত, ভূমিকম্প। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মানুষের সৃষ্ট। যেমন: পানিদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মাটিদূষণ ইত্যাদি। কীটনাশক, গুঁড়া সাবান, ওষুধপত্র ও প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলেও পরিবেশদূষণ হয়ে থাকে। এসব দূষণের কারণে আজ মানবসভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ সংরক্ষণে তাই বিশ্বের সচেতন মানুষ জেগে উঠেছে। গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ কীভাবে কমানো যায়, জলবায়ু মোকাবিলায় করণীয় কী, বন্য প্রাণী ও বনজ সম্পদ রক্ষা, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ রোধে মানুষ গ্রহণ করছে নানামুখী পরিকল্পনা। বিশ্বের পরিবেশবাদীদের প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষও আজ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের সংবিধানেও যুক্ত হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা ও সাধারণ মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করলে পরিবেশদূষণ রোধ করা সম্ভব।


 শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জয়নুল আবেদিন ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁঁকা পছন্দ করতেন। শৈশবে চারপাশের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা জিনিস এঁকে তিনি মা-বাবাকে দেখাতেন। ছবি ও চিত্রকলার প্রতি তিনি এতটাই আকৃষ্ট ছিলেন যে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছিলেন কেবল কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। এই প্রতিষ্ঠানটি দেখে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় আর তাঁর মন বসছিল না। ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা বাদ দিয়ে জয়নুল আবেদিন কলকাতায় চলে যান এবং গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে ভর্তি হন। ছেলের প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে তাঁর মা ভর্তির খরচ জোগাতে নিজের গলার হার বিক্রি করে দেন। জয়নুল আবেদিন একজন স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে পরবর্তী জীবনে মায়ের সেই ভালোবাসার ঋণ শোধ করেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বর্তমান বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সূচনা ঘটে তাঁর হাত দিয়েই। ১৯৪৮ সালে জনসন রোডে মাত্র ১৮ জন ছাত্র নিয়ে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট নামে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক। দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়সহ আরও অনেক ছবি জয়নুল আবেদিনের আঁকা প্রখ্যাত চিত্রকর্ম হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭০ সালে গ্রামবাংলার উত্সব নিয়ে তিনি আঁঁকেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ তাঁর বিখ্যাত ছবি নবান্ন। শৈল্পিক দক্ষতা, আদর্শ ও দূরদর্শিতার কারণে তিনি বাংলাদেশে শিল্পাচার্য হিসেবে খ্যাত। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬১ বছর বয়সে এই গুণী শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।



 বই মেলা

বই মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা। বই মানুষকে পূর্ণতা দেয়; জীবনকে করে সমৃদ্ধ। বইমেলা প্রত্যেক জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। মানুষের মধ্যে বই সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি, বই পাঠের ব্যাপক প্রসার এবং মননশীলতা বৃদ্ধিতে বইমেলা অর্থবহ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্ব ইতিহাসে ১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আসর বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে। ১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ প্রকাশক মিলে নিউ ইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে বৃহৎ এক বইমেলার। ওই মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার বই। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের বৃহৎ বইমেলা। সেখান থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শুভযাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে দেশে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই আন্তর্জাতিক মানের বইমেলার আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ১৯৭২ সালে মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা নিজের উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক বইমেলার আয়োজন করে। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলার নাম দেওয়া হয় 'একুশে বইমেলা'। এই মেলা এখন বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। লেখক, প্রকাশক ও লাখ লাখ পাঠক এ মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। প্রতিবছর ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই বইমেলা। বইমেলা নিছক একটি আনন্দ মেলা নয়। এ মেলা লেখক-লেখিকা ও প্রকাশক-বিক্রেতার মধ্যে অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন ঘটায়। কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক ইত্যাকার মননশীল মানুষ তৈরিতেও বইমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ মেলায়ই মিলন ঘটে লেখক, পাঠকের ও প্রকাশক-লেখকের। বইমেলার উৎসবে যোগ দিয়ে পাঠক পরিচিত হন নিত্যনতুন বইয়ের সঙ্গে। বিচিত্র লেখকের, বিচিত্র বর্ণের, বিচিত্র বিষয়ের উন্নতমানের বই মন কেড়ে নেয় পাঠকদের। বইয়ের প্রতি তাঁদের আকর্ষণ বাড়ে; তৈরি হয় বই কেনার মানসিকতা। সর্বসাধারণকে পাঠমুখী করা এবং মননশীল জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।


 বিজয় দিবস                                    

আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় লাভ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্বর পাকিস্তানিদের পরাজিত করে এ দিনটিতে আমরা বিজয় অর্জন করি। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ হয়েছিল হানাদারমুক্ত। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ। একটি নিজস্ব মানচিত্র ও পতাকা। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঠিকানা। এ বিজয়ের গৌরব ও আনন্দ অম্লান হয়ে থাকবে চিরদিন। কিন্তু এ বিজয় সহজে আসেনি। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলে এ বিজয় লাভ সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করে। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে। বীর বাঙালিও পাকিস্তানিদের এ বর্বর আক্রমণ রুখে দেয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তাই এ দিনটিকে বিজয় দিবস বলা হয়। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিনটি পালন করা হয়। বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবস। তাই বিজয় দিবসের চেতনাকে জাতীয় জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বিজয় দিবসের সত্যিকারের তাৎপর্য আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হবো। বিজয় দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একযোগে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।

 বাংলা নববর্ষ

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে একটি আনন্দময় উৎসব হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। পহেলা বৈশাখ আমাদের নববর্ষের প্রথম দিন। এটি সরকারি ছুটির দিন। গতানুগতিক জীবযাপন প্রণালির মধ্যে নববর্ষ নিয়ে আসে নতুন সুর, নতুন উন্মাদনা। জীবনকে এক নতুন দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ আসে তখন। অতীতকে বিসর্জন দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ে উপনীত করে নববর্ষ জীবনকে এক নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করে। দিনটি যাতে ভালোভাবে উপভোগ করা যায়, সে জন্য নানা উৎসব, খেলা, প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পারিবারিক জীবনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব হয় আমন্ত্রিত। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পালিত হয় হালখাতা অনুষ্ঠান। পুরনো হিসাব শেষ করে নতুন হিসাবের খাতা খোলা হয়। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু উপহার দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এভাবে ব্যক্তিজীবন নববর্ষের আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। জাতীয় জীবনেও নববর্ষ এক সর্বজনীন উৎসবের রূপ ধারণ করে আছে। নববর্ষের মেলা অর্থাৎ বৈশাখী মেলা এ দেশের এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। বিচিত্র জিনিসের সমাহার ও আনন্দ-কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে বৈশাখী মেলা। এ মেলার মধ্যেই নববর্ষের যথার্থ আনন্দময় রূপটি প্রত্যক্ষ করা যায়। মোট কথা, নববর্ষ আমাদের জীবনে পরম আনন্দের উৎসব। এটি জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করার দিন। জাতীয় জীবনেও নববর্ষের তাৎপর্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

স্বাধীনতা দিবস

স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরব ও তাৎপর্যময় দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। এ দিনটি জাতীয় জীবনের ঐতিহ্য, অগ্রগতি ও বিকাশের প্রতীক। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ঢাকা শহর এক বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। এ দেশের মানুষ উপলব্ধি করে যে স্বাধীনতা ছাড়া সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। সে জন্য ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। প্রতিবছর এ মহান দিনটি লাখো শহীদের স্মৃতি নিয়ে আমাদের সামনে দেখা দেয়। জাতীয় মর্যাদায় উদ্‌যাপিত হয় দিবসটি। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, কী উদ্দেশ্য এবং কী পটভূমিকায় এই মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। দেশের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে স্বাধীনতাকে যদি অর্থবহ করে তোলা যায়, যদি সবাই স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করতে পারে, তবেই স্বাধীনতা দিবসটি সার্থক হয়ে উঠবে।

নারী শিক্ষা

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনায় ও কর্মজীবনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের স্থান করে দিতে হবে। সমাজের ভারসাম্য ও স্থিতি নির্ভর করে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর। উচ্চশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কর্মের ক্ষেত্রে নারীকে আসন দিতে হলে যে মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, সহশিক্ষা তার পথ নির্মাণ করবে। উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের ফলে ইউরোপ ও আমাদের দেশে কখনো কখনো যে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেনি তা নয়। কিন্তু এর জন্য নারী শিক্ষাকে দায়ী না করে ব্যক্তি ও তার পরিবেশকেই দায়ী করা উচিত। অনেকে মনে করে, নারী শিক্ষার ধুয়াটি নিতান্ত হাল আমলের সৃষ্টি। আসলে তা সত্য নয়। এই উপমহাদেশে প্রাচীন যুগেও নারী শিক্ষার প্রচলন ছিল। গুল বদন ও জেবুন্নিসার মতো বিদুষী মুঘল রমণীর গৌরবময় ইতিহাস সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। ইসলাম নির্দেশিত পর্দাপ্রথা যখন অবরোধ ব্যবস্থায় পরিণত হলো, তখন থেকে মুসলিম নারীদের অধ্যয়নের পথ সংকুচিত হয়েছে। মনুর সমাজব্যবস্থা থেকেই কিন্তু নারী শিক্ষার পথ দুর্গম হয়ে ওঠে। ইংরেজ শাসনকালে শিক্ষা বিস্তারের জন্য যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার ফলে নারী শিক্ষার পুনর্বিস্তার ঘটে। নারী শিক্ষা বিষয়ে সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব আজ এক প্রকার পর্যুদস্ত হয়েছে বলা হয়। আমাদের দেশে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। দেশের অনগ্রসরতা দূর করার জন্য পুরুষের পাশাপাশি জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজকে যথার্থ কাজে লাগাতে হবে। তাই নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

 নারী নির্যাতন

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছাড়াও পৃথিবীতে নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ ও নীতিমালা রয়েছে। এই সনদগুলোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতনের খবর পাই। যার ফলে নারীর মানবাধিকার খর্ব হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০১২) মতে, বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায় একজন করে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী নির্যাতনের মূল কারণ হচ্ছে পুরুষের তুলনায় নারী বা মেয়েদের নিম্ন সামাজিক মর্যাদা। এছাড়াও শিক্ষার অভাব, দারিদ্র, অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, বিভিন্ন কুসংস্কার নারী নির্যাতনের কারণ।সমাজে নারী নির্যাতনের প্রভাব অনেক ক্ষতিকর যেমন- পারিবারিকভাবে নারী নির্যাতন হলে নির্যাতিত নারীর শারীরিক, মানসিক ক্ষতি হয়। যেসব পরিবারে মায়েরা নির্যাতনের শিকার হয় সেসব পরিবারে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধা পায়। নির্যাতিত নারী সময়মতো কাজে যেতে পারে না। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। পারিবারিকভাবে নারী নির্যাতনের একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে যৌতুক। যা একটি ব্যাধির মতো সমাজে ছড়িয়ে আছে। যৌতুক দিতে হয় বলে মেয়েশিশুকে পারিবারের বোঝা মনে করা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথেও মেয়েরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে। এধরনের নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজের উপরই। যদি আমরা বাড়ি, বিদ্যালয় ও সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি যত্নবান হই তবে নারী নির্যাতনও বন্ধ হবে। তাই ছোটবেলা থেকেই কাউকে ছেলে বা কাউকে মেয়ে এভাবে না দেখে সবাইকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। সমাজের উন্নতির জন্য আমরা বাড়িতে মা-বাবাকে সাহায্য করব। কোন কাজ ছেলের বা কোন কাজ মেয়ের বলে মনে করব না। পরিবারের মা-বোন ইত্যাদি মেয়ে সদস্যদের প্রতি এবং পরিবারের বাইরে সকল মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব। নিজের কাজ নিজে করব। সহপাঠী ছেলে বা মেয়ে যেই হোক একসাথে পড়ালেখা করব, খেলা করব। বাড়িতে,বিদ্যালয়ে  বা রাস্তাঘাটে কোন মেয়ে যাতে  নির্যাতিত বা হয়রানির শিকার না হয়, তারা যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা সবসময় সচেতন থাকব। এভাবে ছেলেমেয়ে সকলে মিলেমিশে চলার মধ্য দিয়েই আমরা হতে পারি প্রকৃত মানুষ।

অতিথি পাখি 

প্রতি বছর শীতকালে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য পাখি আমাদের দেশে আসে|এগুলো পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিত| অতিথি পাখিরা শীতপ্রধান দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এদেশে আসে| প্রধানত সাইবেরিয়া, তিব্বত, হিমালয়ের পাদদেশসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক মাসের জন্য আসে অতিথি পাখিরা| তীব্র শীতের প্রকোপ খাদ্যাভাব থেকে বাঁচার জন্য এদেশে আশ্রয় খুঁজে নেয় এরা| এসব পাখির মধ্যে অধিকাংশ জলচর| প্রাকৃতিক লীলা-বৈচিত্র্যের এদেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখিদের অবদান অনেক| এই পাখিরা আমাদের দেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, এসব পাখি দেখার জন্য এদেশে আগমন ঘটে পর্যটকদের| ফলে অতিথি পাখিদের সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব| কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু মাংসলোভী লোক এবং ব্যবসায়ী নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এসব পাখি শিকার করে খায় এবং বিক্রি করে| ভাবতে অবাক লাগে যে, হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে যে পাখিরা আসে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, তারাই তাদের অস্তিত্ব বিসর্জন দেয় হৃদয়হীন লোকদের খাবার টেবিলে| অথচ মানুষের কর্তব্য অতিথি পাখিদের অভ্যর্থনা জানানো| তাদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করা| তাদের আশ্রয়কালীন সময়টুকু নিরাপদ আনন্দময় করে তোলা| এজন্য মানুষকে তার লোভ রসনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে| বিচিত্র ধরনের এসব পাখি যেন কারও লোভের শিকার হতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে|প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন মানুষের আরো সজাগ সচেতন হওয়া|পাখিরা পাখনায় ভর করে যেসুদূরের গন্ধ নিয়ে আসে তাকে স্তব্ধ করার অধিকার কোনো সভ্য মানুষের নেই| তাই শীতের অতিথি পাখিদের সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে|একই সাথে শিকারিদের দমন করতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে|