বই মেলা
বই মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা। বই মানুষকে পূর্ণতা দেয়; জীবনকে করে সমৃদ্ধ। বইমেলা প্রত্যেক জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। মানুষের মধ্যে বই সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি, বই পাঠের ব্যাপক প্রসার এবং মননশীলতা বৃদ্ধিতে বইমেলা অর্থবহ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্ব ইতিহাসে ১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আসর বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে। ১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ প্রকাশক মিলে নিউ ইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে বৃহৎ এক বইমেলার। ওই মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার বই। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের বৃহৎ বইমেলা। সেখান থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শুভযাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে দেশে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই আন্তর্জাতিক মানের বইমেলার আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ১৯৭২ সালে মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা নিজের উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক বইমেলার আয়োজন করে। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলার নাম দেওয়া হয় 'একুশে বইমেলা'। এই মেলা এখন বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। লেখক, প্রকাশক ও লাখ লাখ পাঠক এ মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। প্রতিবছর ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই বইমেলা। বইমেলা নিছক একটি আনন্দ মেলা নয়। এ মেলা লেখক-লেখিকা ও প্রকাশক-বিক্রেতার মধ্যে অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন ঘটায়। কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক ইত্যাকার মননশীল মানুষ তৈরিতেও বইমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ মেলায়ই মিলন ঘটে লেখক, পাঠকের ও প্রকাশক-লেখকের। বইমেলার উৎসবে যোগ দিয়ে পাঠক পরিচিত হন নিত্যনতুন বইয়ের সঙ্গে। বিচিত্র লেখকের, বিচিত্র বর্ণের, বিচিত্র বিষয়ের উন্নতমানের বই মন কেড়ে নেয় পাঠকদের। বইয়ের প্রতি তাঁদের আকর্ষণ বাড়ে; তৈরি হয় বই কেনার মানসিকতা। সর্বসাধারণকে পাঠমুখী করা এবং মননশীল জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।
No comments:
Post a Comment