# বেকার সমস্যার কারণ ও প্রতিকার জানিয়ে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন রচনা কর।
প্রতিবেদনের
প্রকৃতি : বিশেষ প্রতিবেদন/সংবাদ
প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের
শিরোনাম : বেকারত্ব জাতির জন্য অভিশাপ
সরোজমিনে
পরিদর্শন : এই বিষয়ে সংশিষ্টদের সাক্ষাৎকার
প্রস্তুতের
সময় ও তারিখ : রাত ৯টা, ১৮ মে, ২০২১
প্রতিবেদকের
নাম : মুমতারিন মালিহা
বেকারত্ব জাতির জন্য অভিশাপ
বেকারত্ব
প্রতিটি জাতির জন্য অভিশাপ। কারণ মানুষ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাজের সুযোগ না পেলে মেধা
ও সামর্থ্যরে অপচয় ঘটে। বেকারত্ব তরুণ সমাজের মধ্যে ভয়াবহ হতাশা তৈরি করে। এতে একদিকে
তারুণ্যের অপচয় ঘটে, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। বেকারত্ব অসংখ্য সামাজিক সমস্যার
জন্ম দেয়। এককথায় বেকারত্বের সংজ্ঞা দেয়া কঠিন, তবে বলা যায়, যার কর্ম নেই, সে বেকার।
আর বেকার ব্যক্তির অবস্থানকেই বেকারত্ব বলে। অর্থাৎ কর্মক্ষম ব্যক্তির কর্মহীনতা হলো
বেকারত্ব। সুস্থ, কর্মক্ষম ব্যক্তির কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তির কর্মসংস্থানের
অভাবকে বেকারত্ব বলে। তবে, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, অক্ষম, শিশু বা বৃদ্ধের কর্মহীনতাকে
বেকারত্ব বলা যায় না।
বেকারত্বের কারণসমূহ:
বাংলাদেশে
বেকারত্ব একটি গুরুতর আর্থ-সামাজিক সমস্যা, এই সমস্যা কোন একক কারণে সৃষ্টি হয়নি। এই
সমস্যার বহুবিধ কারণ রয়েছে। নিম্নে বেকারত্বের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. বাংলাদেশে
বেকারত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি
পাচ্ছে সে হারে বিনিয়োগ না হওয়ায় ক্রমান্বয়ে বেকারত্ব বাড়ছে। এ দেশে প্রতি বছর শতকরা
১.৪৮ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ফি বছর সাড়ে সাত লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রয়োজন।
২. বাংলাদেশের
কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হচ্ছে কৃষি। কৃষি ঋতুকালীন কর্মকা- দ্বারা প্রভাবিত। বাংলাদেশের
বেকারত্বের ক্ষেত্রে ঋতুকালীন প্রভাব বিশেষভাবে বিদ্যমান। তাই মৌসুমী বেকারের প্রধান
কারণ প্রকৃতি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা।
৩. বাংলাদেশের
অর্থনৈতিক কাঠামো অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর। ফলে এদেশে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। তাই
এদেশে বেকারত্ব বাড়ছে।
৪. রাজনৈতিক
অস্থিরতা, বাস্তবমুখী শিল্পনীতির অনুপস্থিতি, বিদেশী সাহায্য ও প্রযুক্তিনির্ভর অপরিকল্পিত
শিল্পায়ন প্রক্রিয়া, ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির কর্মসংস্থান না হওয়ায় বেকারত্ব ক্রমান্বয়ে
বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. বাংলাদেশের
অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল, ফলে এদেশে অর্ধ বেকারত্ব বা প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব দেখা
যায়।
৬. আমাদের
মত অনুন্নত ও জনবহুল দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কুটির শিল্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু শিল্পায়নের ফলে এদেশে কুটির শিল্পের প্রায় অবলুপ্তি ঘটেছে। আর কুটির শিল্পে
নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়েছে।
৭. বর্তমান
বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের শ্রমজীবী শ্রেণীর প্রায় সবাই নিরক্ষর এবং কারিগরি
জ্ঞান ও দক্ষতা বর্জিত। সেজন্য বাইরে যেমন তারা কর্মসংস্থান করতে পারে না, তেমনি নিজেরাও
কিছু করে বাঁচতে পারে না।
৮. বাংলাদেশে
প্রতি বছর নদীর ভাঙ্গন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, প্রভৃতি আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত
কারণে বিপুল পরিমাণে কৃষি শ্রমিক বেকারত্বের শিকার হচ্ছে।
৯. বাংলাদেশের
জনগণের মাথাপিছু আয় কম বলে মাথাপিছু সঞ্চয়ও অত্যন্ত কম। তাই মূলধন সৃষ্টি হচ্ছে না।
মূলধনের অভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে।
১০. আমাদের
জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। কিন্তু রক্ষণশীলতা ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে নারীদের বৃহৎ অংশ
গৃহবন্দি। অর্থকরী কাজের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বেকার জীবন
যাপন করতে হয়।
১১. দেশের
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক রদবদলের ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো ক্রমান্বয়ে
দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে অক্ষম।
বেকার সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ:
বেকারত্ব
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে এক প্রকট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। তাই এই সমস্যার সমাধান
দেশের কল্যাণে একান্ত অপরিহার্য। নিম্নলিখিত উপায়ে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধান
করা যায়-
১. সামাজিক
জরিপের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা, বেকারত্বের ধরন, তার প্রকৃত কারণ প্রভৃতির
একটি তালিকা তৈরি করে সেই অনুযায়ী শ্রমের যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।
২. আমাদের
দুর্বল ও নড়বড়ে অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়ন সাধন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে
হবে। সেইজন্য উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাঠামোকে সদৃঢ় করতে হবে।
৩. শিল্পোন্নয়ন
ছাড়া বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই সুপরিকল্পিতভাবে শিল্পোন্নয়ন করে
এদেশে বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৪. বাংলাদেশের
বেকারত্ব দূর করতে কুটির শিল্পের পুনরুদ্ধার একান্ত প্রয়োজন এবং সাথে সাথে এর উন্নয়নও
দরকার, যাতে এদেশের দরিদ্র জনগণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সাময়িক বেকারত্বের
সময় উপার্জনের সুযোগ লাভ করতে পারে।
৫. দেশের
জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় বেকারত্ব বাড়ছে,
তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৬. আমাদের
অধিকাংশ জমিতে বছরে মাত্র একবার ফসল ফলানো হয়। তাই অন্য মৌসুমে কৃষকরা বেকার হয়ে পড়ে।
এ সকল জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের চাষের ব্যবস্থা করে বেকারত্ব দূর করা যায়।
৭. আমাদের
জনশক্তির অর্ধেক স্থান নারীরা দখল করে আছে। কিন্তু পর্দা-প্রথা, কুসংস্কার ইত্যাদির
কারণে তাদের বৃহৎ অংশ ঘরে আবদ্ধ হয়ে আছে। ঐ সব কুসংস্কার দূর করে তাদের কর্মোৎসাহী
করতে হবে এবং পুরুষের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. জনশক্তি
রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব এবং তাতে বেকারত্বও দূর করা
যায়। তাই পরিকল্পিত পরিকল্পনা এবং সরকারি নীতিমালার অধীনে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির
মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।
৯. স্বল্প
পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ছোট ছোট স্বকর্ম প্রকল্প গ্রহণে গামীণ এবং শহুরে জনগণকে আর্থিক
সাহায্য দানের ব্যবস্থা করে বেকারত্ব সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
১০. বেকারত্ব
সমাধানের জন্য বাংলাদেশে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়ন করা দরকার, কারণ শুধু বিচ্ছিন্ন
এবং অসংগঠিত কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে বেকারত্বের ন্যায় ব্যাপক সমস্যার সমাধান আশা করা
যায় না।
পরিশেষে
বলা যায়, বেকারত্ব দূর করা সহজ বা কোনো যাদু ভাবা ঠিক হবে না। উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো
গ্রহণ করে, দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচি হাতে নিলে এ সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে আমরা বিশ্বাস
করি।
প্রতিবেদক-
মো: আবুল
খায়ের
পাধবপাশা,
বরিশাল।
প্রেরক,
|
ঢাক টিকেট
প্রাপক, |
No comments:
Post a Comment