চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Wednesday, May 5, 2021

রচনা

 দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা

রচনা সংকেত

  Ø  ভূমিকা;
Ø  আমাদের ছাত্রসমাজ;
Ø  ছাত্রসমাজে সুপ্ত প্রতিভা;
Ø  দেশের ধারণা;
Ø  ছাত্র সমাজ ও দেশের সম্পর্ক;
Ø  অনন্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও দেশের উন্নতি;
Ø  বর্তমানের ছাত্র, ভবিষ্যতের দেশনেতা;
Ø  বিশ্বে দেশগঠনের পথপ্রদর্শক হিসেবে ছাত্রসমাজ;
Ø  উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশ ও ছাত্রসমাজ ও
Ø  উপসংহার।


ভূমিকা: মানব সভ্যতার সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানসিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে আলাদা আলাদা সমাজ, যা ইতিহাসে পরিণতি পেয়েছে রাষ্ট্র বা দেশ হিসেবে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত প্রখর বুদ্ধিমত্তার দ্বারা প্রতিটি সমাজ তথা দেশের ব্যাপক ও বহুমুখী অগ্রগতির মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে সমগ্র মানব সভ্যতা অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করেছে। এইসকল সমাজ তথা দেশের উন্নতির পেছনে কাজ করে অসংখ্য ছোট-বড় বিষয়। এই অসংখ্য ভিন্নধর্মী উপাদান একত্রিত হয়েই একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই কল দেশ গঠনকারী শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো সংশ্লিষ্ট দেশ বা রাষ্ট্রের ছাত্রসমাজের ভূমিকা। যেকোনো সমাজ তথা বৃহত্তর পরিসরে রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক বিষয়ের ছাত্র সমাজের সক্রিয়  অংশগ্রহণ। এই অংশগ্রহণ ছাড়া কোনদিনই একটি দেশ অগ্রগতির কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারে না। 

আমাদের ছাত্রসমাজ: কোন একটি দেশের গঠনে ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে বোঝা প্রয়োজন, ছাত্রসমাজের মূলগত চরিত্র আসলে কি! পৃথিবীতে সমাজ, সংস্কৃতি বা দেশ যতই ভিন্ন প্রকৃতির হোক প্রতিটি জায়গার ছাত্র সমাজের মধ্যে কিছু মৌলিক চরিত্র লক্ষ্য করা যায়। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ছাত্র সমাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অফুরন্ত প্রাণশক্তির কথা।

বয়স এবং মানসিকতায় তরুণ হওয়ার কারণে ছাত্রসমাজ অদম্য প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ থাকে। এই প্রানশক্তির মাধ্যমে তাদের মনের অন্তঃস্থলে জাগরিত তরুণ দেশপ্রেম দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট সমাজ তথা দেশের গঠনমূলক কার্যক্রমে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে চায়। কখনো কখনো তরুণ বয়সের অনর্থক আবেগপ্রবণতা তাদেরকে সিদ্ধান্তগত দিক থেকে ভুল পথে চালিত করলেও দেশ গঠনের ক্ষেত্রে এই ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণের ভূমিকা কখনোই অস্বীকার করা যায় না।

ছাত্রসমাজে সুপ্ত প্রতিভা: দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের উত্তরে অনিবার্যভাবে উঠে আসে ছাত্র সমাজের মধ্যে সুপ্ত ব্যাপক প্রতিভা সম্পর্কিত আলোচনা। কোন সমাজ বা দেশ গঠিত হয় অদম্য প্রতিভাময় সম্ভাবনা দ্বারা। সেই সকল গঠনমূলক প্রতিভা সুপ্ত থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের ছাত্র সমাজের মধ্যে। সমাজের এই অংশ হলো ভবিষ্যতের অনন্ত সম্ভাবনার পরম আধার।

বর্তমানে যে সকল মানুষ দেশের উন্নতির পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে চলেছে, অতীতে একদিন তারাও সাধারণ ছাত্র ছিল। তাই একইভাবে আজ যারা সাধারণ ছাত্র হিসেবে দিনযাপন করছে কাল তারাই দেশকে নানা দিক থেকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ছাত্রাবস্থাতেই মানুষ নিজের অন্তরের সুপ্ত প্রতিভাকে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে শেখে। সেই সম্ভাবনা ভবিষ্যতে পরিণতি পায় দেশ গঠনে। 

দেশের ধারণা: সমাজতত্ত্বের একটি অতি জনপ্রিয় বিতর্ক হল দেশের প্রকৃত ধারণা আসলে কি! এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানান মুনির নানান মত। তবে এই প্রতিবেদনে আমাদের আলোচ্য বিষয় হল ছাত্র সমাজের মধ্যে দেশের ধারণা কিভাবে পরিণতি পায়। সাধারণভাবে বলা যায় কোন একটি নির্দিষ্ট ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সভ্যতার গণ্ডিকেই আধুনিককালে দেশ বলে অভিহিত করা হয়।

আমাদের ছাত্রসমাজ স্বভাবতই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। সে কারণে দেশের এই তাত্ত্বিক সংজ্ঞা তাদের কাছে নেহাতই তত্ত্বরূপে পরিণতি পায় না। বরং বড় হয়ে ওঠার পথে দেশের তাত্ত্বিক সংজ্ঞা ছাত্র সমাজের কাছে ব্যক্তিগত আবেগের বিষয় হয়ে ওঠে। এই আবেগের বশবর্তি হয়ে অদম্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছাত্রসমাজ যেকোনো মূল্যে দেশের সেবা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে।

ছাত্র সমাজ ও দেশের সম্পর্ক: দেশ এবং ছাত্র সমাজের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মানব সভ্যতার এই দুই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে। ছাত্রসমাজ একদিকে যেমন দেশীয় সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে শিক্ষার উপাদান সংগ্রহ করে জীবনে আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে যায়। তেমনি দেশও সমৃদ্ধি পরম আশা নিয়ে এই ছাত্র সমাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেশের মহান ছত্রছায়া ভিন্ন ছাত্রসমাজ যেমন অস্তিত্বশীল থাকতে পারেনা, তেমনি ছাত্রসমাজের কাঁধে ভর না করে কোন সমাজের অগ্রগতির চাকাও সচল থাকতে পারে না। সেকারণে সভ্যতার প্রয়োজনে ছাত্র সমাজ এবং দেশ একে অপরের ওপর পারস্পারিক নির্ভরতার দ্বারা অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখে।

অনন্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও দেশের উন্নতি: ছাত্র সমাজের মধ্যে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রতিভার ব্যাপক সংমিশ্রনের ফলে শারীরিকভাবে এই সমাজের মধ্যে নিহিত থাকে অনন্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনার ওপর ভর করেই সমগ্র সভ্যতা ভবিষ্যতে উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। ইতিহাস সাক্ষী আছে পৃথিবীতে যত উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে তাতে সবথেকে বেশি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে ছাত্রসমাজের মধ্য থেকেই। এই ছাত্রসমাজই নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা দ্বারা বিভিন্ন উদ্ভাবনের সৃষ্টির মাধ্যমে নানা সময়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এই ছাত্র সমাজের মধ্যে থেকেই উঠে আসে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী, সৈনিক, প্রশাসক কিংবা আদর্শ শিক্ষকরা। তারা ছাত্রাবস্থায় অর্জিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সার্বিকভাবে দেশকে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

বর্তমানের ছাত্র, ভবিষ্যতের দেশনেতা: দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞানী, সৈনিক, শিক্ষক, প্রশাসক প্রমুখদের প্রয়োজন থাকলেও যার মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের সকল উদ্যোগ দেশের উন্নতিতে সার্থকভাবে বিকশিত হয় তিনি হলেন একজন রাষ্ট্রনেতা। রাষ্ট্রনেতা কোনদিন হঠাৎ করে তৈরি হতে পারে না। ছাত্রাবস্থায় থেকে নিজের অন্তঃস্থলে অপার দেশপ্রেম ও জাতির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে ধীরে ধীরে দেশের জন্য কাজ করতে করতে একজন দেশ নেতা গড়ে ওঠে। যে ছাত্র বর্তমানে স্কুল কিংবা কলেজের কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে শিক্ষক কিংবা কর্তৃপক্ষের সাথে বিতর্ক করে চলেছে, সেই ছাত্রই হয়তো কোন নিজের দেশের জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে একদিন বক্তব্য রাখবে কোনো এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে। ছাত্র সমাজের মধ্যেকার দেশপ্রেমের চূড়ান্ত বিকশিত ও পরিণত হল একজন সার্থক রাষ্ট্রনেতা।

বিশ্বে দেশগঠনের পথপ্রদর্শক হিসেবে ছাত্রসমাজ: আধুনিক যুগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ দেশ গঠনের পথে নানান বাধা অতিক্রম করার জন্য পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর উদাহরণ আমরা বিংশ শতাব্দী থেকেই বারবার দেখতে পেয়েছি সমগ্র বিশ্বজুড়ে। কখনো দেখেছি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধের আর্জি জানিয়ে ছাত্র সমাজে ব্যাপক মিছিল; কখনো দেখা গেছে পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতায় শিহরিত হবা ছাত্রসমাজের শান্তি মিছিল। আবার কখনো এই দূষিত বিশ্বে বিজ্ঞানীদের বারংবার আবেদন সত্বেও সাধারণ মানুষ যখন প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে এগিয়ে আসছে না, তখন ছাত্রসমাজকে দেখা গিয়েছে পরিবেশের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশে ছাত্র সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউরোপের সুইডেনের পরিবেশ কর্মী স্কুলপড়ুয়া গ্রেটা থুনবার্গ এর কথা তো বর্তমানে বিশ্ব বিদিত।

উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশ ও ছাত্রসমাজ: ভারতীয় উপমহাদেশে ছাত্র সমাজ ও দেশের এক অত্যন্ত গূঢ় সম্পর্ক সেই প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান রয়েছে। অতীতকালে যখন ভারতের প্রতিটি ঘর থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছাত্র জীবন কাটানোর উদ্দেশ্যে গুরুগৃহে গমন করত, তখন থেকেই দেশের সাথে তাদের নাড়ির টান গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত। দেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বারা এই প্রতিভাবান ছাত্র সমাজকে শিক্ষিত করে তুলে তাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলা হতো ঐতিহ্যগত আবেগ। ছাত্রাবস্থা থেকেই দেশের বিভিন্ন গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের নিদর্শন এই উপমহাদেশে রয়েছে। ছাত্র সমাজের এই প্রবণতা একইভাবে বর্তমান রয়েছে আধুনিক যুগেও। এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বহু ক্ষেত্রে উপমহাদেশের বৃহত্তর আন্দোলনগুলিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল এদেশের ছাত্র সমাজ। তাছাড়া স্বাধীনতার পরেও বহু গঠনমূলক গণ আন্দোলন, জাতীয় স্বার্থমূলক নানা দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য দরবার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের ভূমিকা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। তাছাড়া অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে সুষ্ঠু যানজট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দাবিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের কথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

উপসংহার: সমাজ যদি একটি শরীর স্বরূপ হয়, ছাত্রসমাজ তাহলে সেই শরীরের ডান হাত। জাতীয় উন্নয়ন মূলক যে কোন প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন ছাত্র সমাজকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। সে কারণে কোন দেশের ছাত্র সমাজকে যদি অক্ষম করে রাখা হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে সেই দেশের মূল চালিকাশক্তিই স্তব্ধ হয়ে পড়বে। তাই ছাত্রসমাজকে জাতীয় সংস্কৃতির সকল নির্যাস দিয়ে স্বাধীন মনে  প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দ্বারা মৌলিক গঠনমূলক কর্মসূচি রূপায়ণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

No comments: