চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Sunday, September 20, 2020

 চাঁদিনীতে

-জীবনানন্দ দাশ---ঝরা পালক


বেবিলোন কোথা হারায়ে গিয়েছে,-মিশর-অসুর কুয়াশাকালো;

চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক,- মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!

সে যে জানে কত পাথারের কথা,- কত ভাঙা হাট মাঠের স্মৃতি!

কত যুগ কত যুগান্তরের সে ছিল জ্যোৎস্না, শুক্লাতিথি!

হয়তো সেদিনো আমাদেরি মতো পিলুবারোয়াঁর বাঁশিটি নিয়া

ঘাসের ফরাশে বসিত এমনি দূর পরদেশী প্রিয় ও প্রিয়া!

হয়তো তাহারা আমাদেরই মতো মধু-উৎসবে উঠিত মেতে

চাঁদের আলোয় চাঁদমারী জুড়ে,- সবুজ চরায়,- সবজি ক্ষেতে!

হয়তো তাহার দুপুর- যামিনী বালুর জাজিমে সাগরতীরে

চাঁদের আলোয় দিগদিগন্তে চকোরের মতো চরিত ফিরে!

হয়তো তাহারা মদঘূর্ণনে নাচিত কাঞ্চীবাধঁন খুলে

এম্নি কোন এক চাঁদের আলোয়,-মরু- ওয়েসিসে তরুর মূলে!

বীর যুবাদল শত্রুর সনে বহুদিনব্যাপী রণের শেষে

এম্নি কোন এক চাঁদিনীবেলায় দাঁড়াত নগরীতোরণে এসে!

কুমারীর ভিড় আসিত ছুটিয়া, প্রণয়ীর গ্রীবা জড়ায়ে নিয়া

হেঁটে যেত তারা জোড়ায় জোড়ায় ছায়াবীথিকার পথটি দিয়া!

তাদের পায়ের আঙুলের ঘায়ে খড়- খড় পাতা উঠিত বাজি,

তাদের শিয়রে দুলিত জ্যোৎস্না- চাঁচর চিকন পত্ররাজি!

দখিনা উঠিত মর্মরি মধুবনানীর লতা-পল্লব ঘিরে,

চপল মেয়েরা উঠিত হাসিয়া,-এল বল্লভ,-এল রে ফিরে!

-তুমি ঢুলে যেতে, দশমীর চাঁদ তাহাদের শিরে সারাটি নিশি,

নয়নে তাদের দুলে যেতে তুমি,-চাঁদিনী-শরাব,-সুরার শিশি!

সেদিনো এম্নি মেঘের আসরে জ্বলছে পরীর বাসরবাতি,

হয়তো সেদিনো ফুটেছে মোতিয়া,-ঝরেছে চন্দ্রমল্লীপাঁতি!

হয়তো সেদিনো নেশাখোর মাছি গুমরিয়া গেছে আঙুরবনে,

হয়তো সেদিনো আপেলের ফুল কেপেঁছে আঢুল হাওয়ার সনে!

হয়তো সেদিনো এলাচির বন আতরের শিশি দিয়েছে ঢেলে,

হয়তো আলেয়া গেছে ভিজা মাঠে এমনি ভূতুরে প্রদীপ জ্বেলে!

হয়তো সেদিনো ডেকেছে পাপিয়া কাঁপিয়া কাঁপিয়া সরোর শাখে,

হয়তো সেদিনো পাড়ার নাগরী ফিরেছে এমনি গাগরি কাঁখে!

হয়তো সেদিনো পানসী দুলায়ে গেছে মাঝি বাকাঁ ঢেউটি বেয়ে,

হয়তো সেদিনো মেঘের শকুনডানায় গেছিল আকাশ ছেয়ে!

হয়তো সেদিনো মানিকজোড়ের মরা পাখাটির ঠিকানা মেগে

অসীম আকাশে ঘুরেছে পাখিনী ছট্‌ফট্‌ দুটি পাখার বেগে!

হয়তো সেদিনো খুর খুর করে খরগোশছানা গিয়েছে ঘুরে

ঘন-মেহগিনি- টার্পিন- তলে- বালির জর্দা বিছানা ফুঁড়ে!

হয়তো সেদিনো জানালার নীল জাফরির পাশে একেলা বসি

মনের হরিনী হেরেছে তোমারে-বনের পারের ডাগর শশী!

শুক্লা একাদশীর নিশীথে মণিহরমের তোরণে গিয়া

পারাবত-দূত পাঠায়ে দিয়েছে প্রিয়ের তরেতে হয়তো প্রিয়ো!

অলিভকুঞ্জে হা হা করে হাওয়া কেঁদেছে কাতর যামিনী ভরি!

ঘাসের শাটিনে আলোর ঝালরে মার্টিল পাতা পড়েছে ঝরি!

উইলোর বন উঠেছে ফুঁপায়ে,-ইউ তরুশাখা গিয়েছে ভেঙে,

তরুনীর দুধ-ধবধবে বুকে সাপিনীর দাঁত উঠেছে রেঙে!

কোন্‌ গ্রীস,- কোন্‌ কার্থেজ, রোম, ত্রুবেদুর- যুগ কোন,-

চাঁদের আলোয় স্মৃতির কবর- সফরে বেড়ায় মন!

জানি না তো কিছু,-মনে হয় শুধু এম্নি তুহিন চাঁদের নিচে

কত দিকে দিকে-কত কালে কালে হয়ে গেছে কত কী যে!

কত যে শ্মশান,-মশান কত যে,-কত যে কামনা- পিপাস-আশা

অস্তচাঁদের আকাশে বেঁধেছে আরব-উপন্যাসের বাসা! 

No comments: