সবিতা
- জীবনানন্দ দাশ---বনলতা সেন
সবিতা,
মানুষজন্ম আমরা পেয়েছি
মনে
হয় কোনো এক বসন্তের রাতে:
ভূমধ্যসাগর
ঘিরে সেই সব জাতি,
তাহাদের
সাথে
সিন্ধুর
আঁধার পথে করেছি গুঞ্জন;
মনে
পড়ে নিবিড় মেরুন আলো, মুক্তার শিকারী,
রেশম,
মদের সার্থবাহ,
দুধের
মতন শাদা নারী।
অন্তত
রৌদ্রের থেকে তারা
শাশ্বত
রাত্রির দিকে তবে
সহসা
বিকেলবেলা শেষ হয়ে গেলে
চলে
যেত কেমন নীরবে।
চারি
দিকে ছায়া ঘুম সপ্তর্ষি নক্ষত্র;
মধ্যযুগের
অবসান
স্থির
করে দিতে গিয়ে ইউরোপ গ্রীস
হতেছে
উজ্জ্বল খৃষ্টান।
তবুও
অতীত থেকে উঠে এসে তুমি আমি ওরা–
সিন্ধুর
রাত্রির জল জানে–
আধেক
যেতাম নব পৃথিবীর দিকে;
কেমন
অনন্যোপায় হাওয়ার আহ্বানে
আমরা
অকূল হয়ে উঠে
মানুষকে
মানুষের প্রয়াসকে শ্রদ্ধা করা হবে
জেনে
তবু পৃথিবীর মৃত সভ্যতায়
যেতাম
তো সাগরের স্নিগ্ধ কলরবে।
এখন
অপর আলো পৃথিবীতে জ্বলে;
কী
এক অপব্যয়ী অক্লান্ত আগুন!
তোমার
নিবিড় কালো চুলের ভিতরে
কবেকার
সমুদ্রের নুন;
তোমার
মুখের রেখা আজো
মৃত
কত পৌত্তলিক খৃষ্টান সিন্ধুর
অন্ধকার
থেকে এসে নব সূর্যে জাগার মতন;
কত
আছে — তবু কত দূরে।
No comments:
Post a Comment