চলমান কথা

গত ১১ মে, ২০২০ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার শুভ উদ্বোধন করেন প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপিএসসিএল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু; স্বপ্ন হলো সত্যি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সাথে স্বপ্ন যাবে বাড়ি।

Friday, July 10, 2020

02. বিরোধমূলক/বিরোধাভাস অলঙ্কার: যেখানে দুইটি বস্তুকে আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী মনে হলেও তাৎপর্য বিশ্লেষণে দেখা যায় এদের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোন বিরোধ নেই, তাকে বিরোধাভাস অলঙ্কার বলে।যেমন:

   ১. ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে-
       ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।--গোলাম মোস্তফা।
"শিশুদের অন্তরে " শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে,আপাতবিরোধী বক্তব্য।কিন্তু 'Child is the father of man' – এ সত্য বিরোধের অবসান।

২. হেলা করি চলি গেলা
    বীর।বাঁচিতাম, সে মুহূর্তে মরিতাম
    যদি                                    --রবীন্দ্রনাথ।
অর্জুন পুরুষবেশী-চিত্রাঙ্গদাকে উপেক্ষা করে চলে গেছে বন-অন্তরালে।রূপমুগ্ধা নারী (চিত্রাঙ্গদা) আহত হয়েছেন এ নীরব অবহেলায়।এখানে বাঁচিতাম"- নীরব উপেক্ষার অপমান থেকে মুক্তি পেতাম অর্থে গ্রহণ করলেই বিরোধের অবসান ঘটে।

৩. তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।--রবীন্দ্রনাথ।

ক. বিভাবনা: কারণের অভাবের জন্য কার্যভাবনাকে বিভাবনা বলে। সোজা কথায়, কারণ ছাড়া কোন কাজ হলেই বিভাবনা অলঙ্কার হয়। যেমন :
এলে জীবনের বিমূঢ় অন্ধকারে
ঘরে দীপ নেই তবু আলোকোজ্জ্বল
তোমার সৃষ্টায় দেখে নিই আপনারে।
এখানে কারণ ছাড়াই অন্ধকার উজ্জ্বল হয়ে উঠেছ।

খ. বিশেষোক্তি : কারণ থাকা সত্ত্বেও কাজ না হলে বিশেষেক্তি অলঙ্কার হয়। কবিতার উৎকর্ষের জন্য এ রকম ভারের অবতারণা হয়। যেমন:
আছে চক্ষু, কিন্তু তার দেখা নাহি যায়।
আছে কর্ণ, কিন্তু তাহে শব্দ নাহি ধায়।–ঈশ্বরগুপ্ত।
এখানে চোখ থাকতেও দেখা য়ায় না, কান আছে কিন্তু শোনা যায় না।

শাশুড়ী ননদী নাহি নাহি তোর সতা।
কার সনে দ্বন্দ্ব করি চক্ষু কৈলি রাতা।।--মুকুন্দরাম।
এখানে ফুল্লরার ঘরে শাশুড়ী, ননদিনী কিংবা সতীন কেউ (কারণ) নেই, তবু তার চোখ রাতা কেন?

গ.বিষম : বিসদৃত বস্তুর বর্ণনাকে বিষম অলঙ্কার বলে, অবশ্য বর্ণনা চমৎকার হতে হয়। অন্যকথায়, কার্য ও কারণের মধ্যে যদি কোনো বৈষম্য দেখা যায়। কিংবা যেখানে কোনো আরদ্ধ বিষয়ের বিফলতা বোঝায়। তাহলেই বিষম অলঙ্কার হয়। যেমন:
১. যমুনার জলে যদি দেই গিয়া ঝাঁপ।
পরাণ জুড়াবে কি, অধিক উঠে তাপ।

২. সুখের লাগি এ ঘর বাঁধিনু
অনলে পুড়িয়া গেল।–চণ্ডীদাস।

ঘ. অসংগতি : কার্য ও কারণের স্থান যদি বিভিন্ন হয় অর্থাৎ এক যায়গায় কারণ ঘটে আর অন্য যায়গায় ফল দেখা যায়, তাহলে অসংগতি অলঙ্কার হয়। যেমন:
ওদের বনে ঝরে শ্রাবণ ধারা
আমার বনে কদম ফুটে ওঠে।
এখানে এক স্থানে শ্রাবণের ধারা অন্য স্থানে কদম ফুল ফুটে।

ঙ. অধিক: যদি আধার এবং আধেয় পরস্পরের যোগ্য না হয়, কিংবা সম্পূর্ণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, তবে তাকে অধিক অলঙ্কার বলে। যেমন:
দেখিতে দেখিতে কবির অধরে
হাসিরাশি আর কিছুতে না ধরে,
মুগ্ধ হৃদয় গলিয়া আদরে
ফাটিয়া বাহির হয়।–রবীন্দ্রনাথ।
এখানে আধার-কবির অধর এবং আধেয়-হাসি রাশি-আর কিছুতে না ধরে বা অযোগ্য।

চ. অন্যান্য: যদি দুটো বস্তু পরস্পর পরস্পরের কারণ হয়ে ওঠে তবে তাকে অন্যান্য অলঙ্কার বলে। যেমন:
সোনার হাতে সোনার চুড়ী
কে কার অলঙ্কার?
এখানে সোনার হাত এবং সোনার চুড়ী পরস্পর পরস্পরের কারণ হয়ে ওঠেছে।

ছ. অনুকূল: যদি প্রতিকূল বা বিপরীত বস্তু অনুকূল হয়ে উঠে, তবে তাকে অনুকূল অলঙ্কার বলে। যেমন:
অপরাধ করিয়াছি হুজুরে হাজির আছি
ভুজপাশে বাঁধি কর দণ্ড।–ভারতচন্দ্র।
নায়িকা অপরাধ করেছে তাই তার জেল হবে কারগারে কিন্তু  নায়ককে তার কোমল বাহুতে আবদ্ধ করতে বলেছে-তাই অনুকূল অলঙ্কার।
তথ্যসূত্র: অলঙ্কার-অন্বেষা: নরেন বিশ্বাস।

No comments: