বাংলা কবিতা
কবিতা
বোঝার বিষয়টি নির্ভর করে শব্দার্থ, সঠিক উচ্চারণ, কবিতা আবৃত্তির খুঁটিনাটি বিষয় ও
ভাষাজ্ঞানের ওপর। তাই কবিতা কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে এখানে আলোচনা করব যেন কবিতা
সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়।
ছন্দ:
কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি
হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ: জীবেন্দ্র সিংহরায়)
ছন্দ
কাকে বলে?
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘বাক্যস্থিত পদগুলিকে যেভাবে সাজাইলে বাক্যটি শ্রুতিমধুর হয় ও তার মধ্যে ভাবগত, ধ্বনিগত সুষমা উপলব্ধ হয়, পদ সাজাইবার সেই পদ্ধতিকে ছন্দ বলে।
অর্থাৎ,
কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা
দান করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির
সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়।
অক্ষর:
(বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর
বা দল বলে। এই অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত। যেমন-
শর্বরী-
শর, বো, রী- ৩ অক্ষর
চিরজীবী-
চি, রো, জী, বী- ৪ অক্ষর
কুঞ্জ-
কুন, জো- ২ অক্ষর
যতি বা
ছন্দ-যতি: কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর
যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়, তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি মূলত
২ প্রকার- হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি। অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে
হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়। আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি
ব্যবহৃত হয়।
পর্ব:
বাক্য বা পদের হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলে। যেমন:
একলা
ছিলেম।কয়োর
ধারে। নিমের ছায়া
।তলে॥
কলস নিয়ে।সবাই তখন।পাড়ায় গেছে । চলে ॥ --রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রতি
চরণে ৪ টি করে পর্ব আছে।
মাত্রা:
একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে।
শ্বাষাঘাত:
বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোড় দিয়ে পড়তে হয়। এই
অতিরিক্ত জোড় দিয়ে পাঠ বা আবৃত্তি করাকেই শ্বাসাঘাত বলে। যেমন:
আমরা
আছি। হাজার বছর
।ঘুমের
ঘোরের। গাঁয়ে॥
আমরা
ভেসে ।বেড়াই
স্রোতের ।শেওলা
ঘেরা ।নায়ে॥--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চরণ:
পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা অংশকে চরণ বলে।
পদ: আর
চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলোকে পদ বলে। যেমন:
তরুতলে
আছি।একেলা
পড়িয়া ।দলিত
পত্র।শয়নে॥
তোমাতে
আমাতে।রত
ছিনু যবে।কাননে
কুসুম।চয়নে॥--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
স্তবক:
কতগুলো চরণ মিলে একটি ভাব প্রকাশ পেলে তাকে স্তবক বলে
মিল:
একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। পদের
শেষের মিলকে অন্তমিল বলে। যেমন:
যত চাও
তত লও তরণী-পরে
আর আছে-আর
নাই, দিয়েছি ভরে ॥--রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
No comments:
Post a Comment